নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলস বিড়ালের মস্তিস্ক

শূন্য সময়

খুবই অলস...প্রচন্ড রকমের ঘুম ও বিশ্রাম প্রিয়......

শূন্য সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

July: A Poetic Uprising

০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

শুরু থেকেই এই দিনটা কিন্তু ঐদিন অনেক পয়েটিক ছিলো।
হালকা বৃষ্টি, গুমোট বাতাস। সকাল থেকে চারপাশ নীরব। কি হবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। বিপ্লবী উপন্যাস গুলোতে এই লাইনগুলো খুবই কমন দেখবেন।

৫ তারিখের আগের দিন গুলো আরো পয়েটিক ছিল। একদিকে হাসিনার লাশ ফালানোর নেশা, অন্যদিকে দেশপ্রেমের এক অদ্ভুদ উৎসব। এইরকম গণআন্দোলন এর আগে দেখেছে কেউ? রাস্তায় রাস্তায় গ্রাফিতি আঁকার মাধ্যমে সবার মধ্যে দেশপ্রেমের যেই নেশা জেগে উঠেছিল, সেটা শত মিছিল দিয়েও হয়তো হয়ে উঠতো না।

রাস্তার গ্রাফিতির লাল রঙের সাথে কত শত শহীদের রক্তের লাল মিশে যেই মহাকাব্য তৈরী হয়েছে, যেই চিত্রকর্ম তৈরী হয়েছে -কোন কবির, কোন শিল্পীর সামর্থ্য আছে এমন অমর শিল্প তৈরী করার?

সেইজন্যই আমি বলি, হাসিনার পতন আসলে হাসিনার পতন থেকেও অনেক বেশি বড়। যেই দেশপ্রেম, যেই চেতনা আওয়ামী লীগ বেদখল করে ফেলেছিলো, সেইটা আবার সবার হয়ে গেলো।

৫ তারিখের পরের দিন গুলোতেই তাকান না!

তিন তিনটা দিন এই দেশে কোনো সরকার নাই, কোনো লিডার নাই। কে ধরে রেখেছিলো দেশটাকে? আমরা, আমি, আপনি। একটার পর একটা ষঢ়যন্ত্র কে থামিয়েছে? সাধারণ মানুষ! হাসিনা অস্ত্র দিয়ে ডাকাত বলে একদল সন্ত্রাসী নামায়ে দিলো। কে সামাল দিলো? এলাকাবাসী। সনাতনীদের উপর হামলা করে ভারতের ইন্টারভেশনের ষঢ়যন্ত্র করলো হাসিনা। দেশকে জঙ্গি দেশ হিসেবে দেখাইতে চাইলো ভারতকে। সেই দাড়ি-টুপির জঙ্গিরাই রাত জেগে পাহারা দিয়ে হাসিনার ষড়যন্ত্রের মুখে মুতে দিলো।

আমি আবারো বলি, তিন তিনটা দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। আপনি কি বুঝতে পারছেন এটা কত বড় একটা ঘটনা? ছোট্ট উদাহরণ দেই, সভ্য দেশ আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ১৯৭৭ সালে একবার মাত্র ২৫ ঘন্টার জন্য ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না। লুট, ডাকাতি, আগুন দিয়ে শহরে একটা এনার্কি তৈরী হয়েছিল।

আর আমরা, সদ্য খুঁজে পাওয়া দেশপ্রেম দিয়ে তিনটা দিন একটা দেশকে ধরে রেখেছিলাম। এই তিনদিন প্রমান করে, দেশের সাধারণ মানুষ কেউ কারো শত্রু না, কারো মাঝে কোনো পলিটিকাল বিভেদ নাই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলা, নিজেদের স্বার্থে আমাদের আলাদা করে রাখে সব সময়। কিন্তু কমন শত্রু তৈরী হইলে, এই সাধারণ মানুষ সব আবার এক হয়ে যায়, যাবে। ভবিষ্যতে জনগণের চাকর যারা হবে, তাদের জন্য এইটা একটা সিগনাল, সাধারণ মানুষের কমন শত্রু হয়ে উইঠেন না।

২.
জুলাইয়ের আন্দোলন আসলে কারা করলো? যেই বিপ্লবী ছাত্রদের কথা বলি আমরা, এরা কারা?
এরা স্কুলে থাকতে ভ্যাট আন্দোলন দেখেছে,
এরা আরেকটু বড় হয়ে নিজেরাই সড়ক আন্দোলন করেছে, এবং এই কম বয়সেই হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগকে প্রতিহত করেছে। রাব্বানীর হলে হলে গিয়ে ইন্টারভেশনের কথা মনে আছে তো?

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছে? কেউ না। যদি কেন্দ্রীয় চরিত্রে কেউ থাকতো তাহলে এক দফা ঘোষণা কে কখন করবে সেটা জানার জন্য চাতক পাখির মতন হা করে সবাই তাকিয়ে থাকতো না। ৩ তারিখ আমি লিখেছিলাম, "কোনো প্রকার বড় রাজনৈতিক নেতার ডাক ছাড়াই এতো বড় স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার আগে/পরে দেখেনাই।"

নাহিদ, আসিফ, হাসনাতরা ইউজড হয়েছে, আমিও মানি। কিন্তু কাদের দ্বারা? দেশের সাধারণ মানুষের দ্বারা।
দেশের মানুষ গ্রাফিতি এঁকে, এনিমেশন করে, কার্টুন এঁকে অনেক আগেই জানান দিয়েছিলো তারা কি চায়। পিআর প্রেশারে পরে নাহিদেরা বাধ্য হয় ডিক্লেয়ার করতে। আমাদের দরকার ছিল কাউকে দিয়ে বলানোর, আমরা বলিয়েছি। ব্যাপরটা মুজিবের সাথেও যায়। মুজিব'ও তো স্বাধীনতার ঘোষণা নিজে নিজে দেয় নাই। দিতে বাধ্য হয়েছে তার আশেপাশের স্বাধীনতাকামী নেতা আর জনগণের চাপে

জুলাইয়ে কোনো মাস্টারমাইন্ড ছিল না, কোনো ঘোষক ছিল না। জুলাই ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
জামাত আর বিএনপি যতই বলুক তারা কৌশলের কারণে নিজেদের অংশগ্রহণ জানান দেয় নাই, বলে লাভ নাই। এরা খুব ভালো মতনই জানতো এরা ফ্রন্ট লাইনে আসা মানে সাধারণ মানুষ সরে যাবে। এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা মানুষের কাছে নাই।
গত ১৬ বছরে তারেক জিয়ার ডাকে কয়টা মানুষ রাস্তায় নেমেছে? জামাতের আমিরের নাম মানুষ জানতো কিনা আমার সন্দেহ আছে। আর খালেদা তো না-ই খেলায়। ছাত্রদলের এই চাচাকে কে চিনতো? শিবির বলে কিছু একটা ছিল এতটুকুই জানতো এই যুগের ছেলেমেয়েরা।

আর এখনের দাবি করে এদের কেউ মাস্টার মাইন্ড ছিলো, কেউ বলে তাদের অংশগ্রহণ না থাকলে এই আন্দোলন হইতো না। কেউ পাঁচ-দশদিন পরে স্টেটমেন্ট চেইঞ্জ করে ফেলে।

শুনেন, রাস্তার লেংটা পাগলের'ও কিছু চক্ষু লজ্জা আছে। রাজনীতিবিদদের সেটাও নাই।
আর জামাত তো মাশাল্লাহ একটা ক্রেডিট চোরের দল। সারাজীবন শার্ট-জিন্স পইড়া, ৫ তারিখের পর মাথায় টুপি দিয়া লালসালু সাইজা বসছে। মেধাবী বাটপারের দল।

এদেরকে নিয়ে বলতে গিয়ে আমার ভাষা আস্তে আস্তে চেইঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।

৩.
এটা সত্য জুলাই বিপ্লব আস্তে আস্তে বিপ্লব থেকে গণআন্দোলনে নেমে গেছে। মানুষ যেই উচ্চাশা নিয়ে জীবন দিলো তার ১% 'ও হয় নাই। না নাহিদেরা দেশের নতুন নেতা হয়ে উঠতে পারলো, না ইউনুস নতুন দেশের স্বপ্ন দেখাইতে পারলো, না বিএনপি তার চরিত্র পাল্টাইতে পারলো।

৭১ এর পরেও ৫০ বছর ধরে আমরা রাজাকার পালছি, জুলাইয়ের পরেও আমরা হাসিনার দোসরদের নিয়েই আছি। দুই দলই বিশ্বাস করে 'আগেই ভালো ছিলাম'। একদল মানে ভারতের কোলাবোরেশনে যুদ্ধ থেকে পাকিস্তানের আন্ডারে থাকা ভালো ছিল, আর এখনকার দোসরেরা ভাবে অন্য যে কোনো দেশের কন্সপারেসি থেকে ভারতের কাছে দেশ বেঁচে দিয়ে হাসিনাই দেশকে ভালো রেখেছিলো।
নোংরা সত্য হলো, এই অজাতরা আছে, থাকবে। জার্মানিতে এখনো কট্টর ডানপন্থি পার্টি আছে যারা নাজ্জি সাপোর্টার।

কিন্তু সবার একটা কমন গ্রাউন্ড আছে, যত যা হোক দেশ আগে। কিন্তু হাসিনার দোসরেরা দেশ দুচে না। এদের কাছে শেখ পরিবার আগে। এইজন্য আগুনে দেশের ছোট বাচ্চারা পুড়লেও এরা খুশি হয়।

৭১ এর পর রাজাকারদের যেমন মুজিব কন্ট্রোলে আনতে পারে নাই, ২৪ এর পরেও ইউনুস এই দেশদ্রোহীদের সামলাইতে পারে নাই।
এই সব সত্য মেনে নিলেও, হাসিনার পতন ছিল অনিবার্য এবং Must এবং আমাদের ভবিষৎ যেদিকেই যাক না কেন, জুলাই অন্তত জানান দিয়ে গেছে, এই দেশের সাধারণ মানুষের সংগ্রাম যদি চিরন্তন হয়, তাহলে মানুষ সেটাই করে যাবে। রেজিলিয়েন্স এই দেশের মানুষের রক্তে মেশা। আমাদের প্রাকৃতিক গঠনই এইরকম। কিছুই নাই আমাদের, তারপরেও একটার পর একটা ডিজাস্টার পার করে আমরা এখনো টিকে আছি।

৭১ এর জাগরণের গান যেমন জুলাইতে বেজেছে, জুলাইয়ের ডাক আবারো আমাদের মাঠে নামাবে যখন দরকার পড়বে তখন। যারা নামবে মাঠে এদের আপনে আলাদা করে চিনবেন না। এরা এই দেশের নিজস্ব রিজার্ভ বাহিনী। কিছুদিন আগে বর্ডারে দা-কাস্তে নিয়ে বিএসএফ এর সামনে বুক উঁচা করে দাঁড়িয়েছিল এরা, জুলাইয়ের সুন্দর পোশাকের টগবগে ছেলেমেয়েরাও এরাই।

জুলাই প্রমান করে গেছে সুকান্তের 'দুর্মর' কবিতা-
“হয় ধন নয় প্রাণ” এ শব্দে
সারা দেশ দিশাহারা,
একবার মরে ভুলে গেছে আজ
মৃত্যুর ভয় তারা।
সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়:
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

আমি জানি, দেশের সুপ্ত বাহিনী মনে মনে সব সময় বলে, কত স্বৈরাচার আসবি আয়। আমরাও রেডি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:০৪

কামাল১৮ বলেছেন: দেশ থেকে গজব এখনো দুর হয় নাই।কবে দুর হবে কেউ জানে না।সবার অংশ গ্রহনে একটা নির্বাচনই পারে সমাধানের পথ দেখাতে।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৮:৫৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: আন্দোলনে কোন নেতৃত্ব ছিল না , এই কথাটা ভুল। একক নেতৃত্ব ছিল না । বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংগঠনটি নেতৃত্বে ছিল। অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক। জনগনের ম্যন্ডেট না থাকা ১/১১ এর তত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে সাফল্য দেখাতে সমর্থ হয়েছিল, অন্তবর্তী সরকার জনগনের ম্যন্ডেট নিয়ে এসেও তার কানমাত্র সাফল্য দেখাতে পারেনি। ডক্টর ইউনুসকে কোন কাজই করতে দেয়া হয়নি। এর জন্য মুলত দায়ী দেশের বৃহত্তম রাজনৈ্তিক দল বিএনপি। ইন্টারিমের বেশিরভাগ উপদেষ্টাই বিএনপির মনোনিত। স্বরাস্ট্র ও আইন এই দুই বিভাগের উপদেষ্টাই বিএনপির নিয়োগকৃত। স্বরাস্ট্র ও বিচার বিভাগের অবস্থা দেখলে মনে হয় ক্ষমতায় এখনও আওয়ামিলীগ বসে আছে !!

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:২২

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ যতবার সরকারের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে যাবে, ততবার এরকম ঘটনা গঠবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.