![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কি লিখবো বুঝতে পারছি না । কারণ আমি নিজেই বুঝিনা । কোন দোষ নেই, কোন গুণ ও নেই । এইতো লিখলাম। এতেই চালাও ।
সেদিনের পর থেকে তুমি আমার সাথে কোন কথা বলোনি । প্রায় এক মাস আমি ছিলাম ঐ বাড়িতে । আমার প্রতিটি প্রহর কাটত তোমার অপেক্ষায় , এই বুঝি তুমি এলে ,আমাকে বললে বড় বাবা আর রাত জেগে কাজ নেই । একটু শোও । সত্যিই মা ,আমি আর রাতে ঘুমাতে পারি না ।আমার ঘুম আসে না । মা আমি না ঘুমানো পর্যন্ত তুমি ও তো ঘুমাতে না । আম্মু তুমি ও কি জেগে থাকো ? মা তুমি কি আমার সেই টিয়াপাখিটাকে এখনো নিজ হাতে খাবার দাও । তোমার চুড়ির শব্দ শুনে ও কি বলে সোনা আম্মু , ভালো আম্মু , লক্ষ্মী আম্মু । মা আমার ও তো বলতে ইচ্ছে করে , সোনা আম্মু , ভালো আম্মু , লক্ষ্মী আম্মু । মা তুমি বড় দয়াশীলা । মা তোমার দোয়ায় বড় হয়েছি , বেঁচে আছি । মা তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয় ।
মা গতবছর চৈত্রে শায়নের বিয়ে হল । মা আজ যদি ঐ বাড়িতে আমি থাকতাম তাহলে তুমি নিজে ওর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব আমাকে দিতে আর বলতে অলস ছেলে কিচ্ছু করেনা । মা আমি চেয়েছিলাম একটা সুন্দর বিয়ে বাড়ির আয়োজন করি । নিতু আর শায়ন কে একটু আশীর্বাদ করি ওরা যেন বিদেশের মাটিতে ভালো থাকে আর সুস্থ থাকে । কিন্তু মা পারলাম কই ? আমি যে এখন তোমার কুলাঙ্গার ছেলে ।
মা যখন একা থাকি তখন ঐ মুখটির সাথে তোমার আর শায়নের মুখটি মনে পড়ে । কতই না সুখে ছিলাম আমরা ! জানো মা , আজ ও যখন বাড়ির পাশের রাস্তাটি দিয়ে হেঁটে যাই তখন আমি থমকে দাঁড়াই । প্রতিদিন ভাবি , তুমি বুঝি বলবে , বড় বাবা তুমি আবার আজ থেকে এই বাড়িতে থাকবে । কিন্তু মা তুমি কিছুই বলোনি কোনদিন । যেদিন জানালা খোলা থাকে , দাঁড়িয়ে থাকি ,তোমার মায়াময় কণ্ঠ শুনবো বলে , কিন্তু মা আমার মতই সিলিং ফ্যানটা ও বোধয় কুলাঙ্গার । সারাক্ষণ জোরে জোরে ঘুরতে থাকে । আমি তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই না । আবার চলে যাই । যাবার সময় বুঝতে পারি পেয়েরা গাছে কতকগুলো বেসুরো পাখি আর্তনাদ করে । ওরা আনিশার জন্য আজ ও কেঁদে যায় । আমি ঐ পেয়েরা গাছের দিকে তাকাই না , তোমার বারন আছে । মা আমি কি এতই অপরাধি ?
মা দশটা বর্ষাকাল কেটে গেছে । এবার ও বর্ষা এসেছে । মা এই বর্ষাকাল ই আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে । মা আজ আমরা পাশাপাশি থাকি তবু ও আজ এই কুম্ভকর্ণটার কান ধরে ঘুম ভাঙ্গাও না ।মনে হয় আমরা কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকি । মা আমাকে তুমি দূরে রেখেছ ঠিক ই কিন্তু মন থেকে কি দূরে রাখতে পেরেছ ? মা আমার জন্য তোমার প্রাণ কাঁদে ,তাই না মা ? মা আমার ও কাঁদে ।আমি সোমার দিকে তাকিয়ে থাকি । ঠিক ওর দাদিমার মতই আমাকে শাসন করে ও । আমাকে ও অনেক আদর করে । একদিন আমার চোখে জল দেখে বলে কাঁদছ কেন বাবা , কি হয়েছে তোমার ? আমি কিছুই বলে নি । কেবল মনে হচ্ছিল তুমি বুঝি বলছ সোনা বাবা কাঁদিস না , তোর মা তোর সাথে আছে ।
মা আমি কষ্টে থাকবো ।আমার খাওয়ার কষ্ট হবে ,আর তুমি বাড়িতে বসে খাবে , সে মা তুমি নও । তুমি শুধুই আমার কথা চিন্তা করে সনিয়ার সাথে আমার বিয়ে দিয়েছ যেন তোমার এই বোনের মেয়েটি আমার সমস্ত কষ্টের অংশীদার হয় । আমাকে যেন কষ্টে না রাখে । মা আমি তোমাকে ছেড়ে সুখে নেই । তুমি আছ কিনা জানি না । যখন সোমা এই পৃথিবীতে এলো , খবর শুনে তুমি ই প্রথম এলে হাস্পাতালে , আর শায়ন কে দিয়ে মিষ্টি আনিয়ে খেলে , সাবাইকে খাওয়ালে । কই মা আমাকে তো দিলে না । আবার ওর জন্মদিনটা ওর ফুফির মৃত্যুর তারিখের পাশে বাধিয়ে রেখেছ । এর মধ্যে তিনবার সো মা র জন্মদিন পালন করা হয়েছে ও বাড়িতে । আমাকে একটি বারের জন্য বললে না মা ।
মা একটা দুর্ঘটনার জন্য আমাকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছ । তবে মা এখন আর মশায় কামড়ালে আমার খারাপ লাগে না । কষ্ট হয় না । সেদিন সোনিয়ার জুরাজুরিতে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম । ডাক্তার শঙ্কিত কণ্ঠে বলল আমার নাকি ম্যালেরিয়া হয়েছে । আমার কিছু ই মনে হয় নি । সোনিয়া সেদিন আমার সামনে আসেনি । তবে আড়াল থেকে দেখেছি ওর চোখ দুটি অসম্ভব রকমের ফোলা । মা তুমি কি শুনেছ ?
মা আজ ও বৃষ্টি হচ্ছে । আজ ও মশা আমাকে ঘিরে ধরেছে । কিন্তু মা আজ আর মশার কয়েল আনছি না । আজকের বাড়িটা ও সে দিনের মতো ছনের নয় । ঘরের ভেতর আমার মেয়ে বসা । মা সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল , আনিশা বলেছিল , "ভাইয়া মত্তা"। আমি বলেছিলাম ,"সোনা আপু কোথায় মশা । বোস ,আমি কয়েল আনছি । "
মোমবাতিটা খাটের একপ্রান্তে ছিল । পাশে বসা ছিল ওর প্রিয় বিড়াল টা । আমি চলে যাবার পর হয়তো ও প্রিয় বিড়ালটা ধরতে গিয়েছিল । ছন্নছাড়া বিড়ালটার লাফে মোমবাতিটা বিছানার উপর পড়ে । নিমেষেই সব ছাই ।
মা পেয়েরা গাছটার নিচে আমার সোনা আপুটার কবর টা কি একবার ছুঁতে পারি না ?
©somewhere in net ltd.