নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
বিএনপির সঙ্গে যেকোনো জায়গায় আলোচনায় রাজি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মুহুর্তে দেশবাসীর জন্য এর থেকে স্বস্তির খবর আর কি হতে পারে? এমন একটি খবরের জন্য অনেক দিন ধরেই এ দেশের মানুষ অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে আমরা বহুল কাঙ্ক্ষিত এই খবরটি পেয়ে সত্যিই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছি। যে নেত্রী-দ্বয় নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময় করেন। যারা একজন অন্যজনের আহ্বানে সারা দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচী স্থগিত করেন তারা দেশের প্রয়োজনে একত্রে বসবেন এটাই সাধারণের কাম্য।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই মধ্যপন্থি। এরা একদিকে যেমন ধার্মিক অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক। চরমপন্থাকে এ দেশের মানুষ কখনোই প্রশ্রয় দেয়না। আর তা জেনেই ডান-বামরা সব সময়ই এ দেশের প্রধান দুটি মধ্যপন্থী দলের ঘারে সওয়ার হয়েছে এবং যথেষ্ট সফলও হয়েছে। প্রধান দুটি দলের মধ্যে দুরত্ব তৈরিতেও তারা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে,ক্ষতি যা কিছু হয়েছে তা এ দল দুটির, সর্বোপরি দেশের। আজ সাধারণ মানুষ চরম হতাশ হয় প্রিয় দলের আদর্শিক পরাজয়ে। আতংকিত হয় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
ইসলামি দলগুলো একত্রিত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবে। বাম ধারার দলগুলোও একত্রিত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবে। সেইসাথে আওয়ামী লিগ - বিএনপিও এককভাবে নির্বাচন করবে সাধারণ মানুষের কাছে এটাই কাম্য। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যাদেরকে চাইবে তারাই ক্ষমতায় আসুক। এটাই তারা আশা করে। কিন্তু জোটের নামে আওয়ামী লিগ বিএনপি যে ধারা তৈরি করেছে তা তাদের মতাদর্শের সমর্থকদের জন্য একটি ধাঁধাঁ সৃষ্টি করেছে। কেননা বিএনপির এমন অনেক সমর্থক রয়েছে যারা জামাতকে পছন্দ করেনা। আওয়ামী লিগের বেলায়ও তাই অনেক আওয়ামী লিগ সমর্থক আছেন যারা বাম দলগুলো পছন্দ করে না। বিশেষ করে জাতীয় পার্টিকে অপছন্দ করে। তথাপি দলীয় সিদ্ধান্তের কারণেই তারা এই অপছন্দনিয় লোকগুলোকে বাধ্য হয়েই সমর্থন দেয়, ভোট দেয়।
যখন যে জোট ক্ষমতায় যায় তারাও অনেক সময় শরিকদের চাপে এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন যা তাদের নিজেদেরই আদর্শের পরিপন্থী। তখন তাদের সমর্থকরা আরো বেশি হতাশ হন। আমি রাজনৈতিক জোটের বিরুদ্ধে কথা বলছি না। প্রয়োজনে রাজনৈতিক জোট হোক, তবে তা যেন দলীয় আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে না করা হয়।
আওয়ামী লীগ- বিএনপি উভয় দলই ভোটের রাজনীতিকে গুরুত্ব দিতে যেয়ে নিজেদের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলবে এটা সম্ভবত তাদের প্রতিপক্ষও চান না। তার প্রধান কারণ হল এ দল দুটিই পরীক্ষিত। দেশ বিরোধী, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কোন কাজ তারা করবেন না এটা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে নেবে। তাদের মধ্যে যে পার্থক্য তা কেবল দলগত। যদিও একজন বলছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ অন্যজন বাংলাদেশি। এ দুইয়ের মাঝে আদর্শগত খুব একটা যে পার্থক্য রয়েছে তা নয়। একদল বলে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা অন্যদল নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে প্রচার করে। এ দুয়ের দূরত্ব কি খুব একটা বেশি? মনে হয় না। তাদের যার যেটুকু ব্যার্থতা তা কেবল দূর্নীতি, দলীয় করন এবং সুশাষনের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে কেউই এর দায় মুক্ত নয়। পার্থক্য মাত্রগত কম-বেশিতে।
নব্বই এর পরে উভয় দলই যখন ক্ষমতায় এসেছে তারা লেজ বিশিষ্ট ছিল। ফলে তাদের সরকারের কার্যকলাপের দায়ভার তাদের ঘারে এসে পড়লেও অনেকটাই দায়ী ঐ লেজের কর্মকান্ড। এটা তারাও জানেন। কিন্তু ভোটের রাজনীতির কারণেই তারা লেজটাকে ঝেড়ে ফেলতে চান না বা ঝেরে ফেলার সাহস করেন না। অথচ আওয়ামী লিগ বিএনপি যদি একমত হয়ে উভয়েই এই লেজের রাজনীতি ঝেরে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারত। তাহলে অচিরেই এই পরজীবীদের অস্তিত্ব বিনাশ হত। যার ফলে একদিকে যেমন এই দল দুটি স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে সক্ষম হত। অন্যদিকে এ দেশবাসীকেও কারো হঠাৎ উল্লম্ফন দেখে শঙ্কিত হতে হত না।
আজ যেমন প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সারা দিয়ে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে আলোচনার আহবান জানিয়ে নিজেদেরই অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এখন বাকি রইল আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান। সে চাবিকাঠিও তাদের হাতেই রয়েছে। দুই নেত্রীর এই সমঝোতা তো এ দেশে নতুন নয়। নব্বইর গন আন্দোলনে দেখেছি, ফখরুদ্দিন সরকার হটানোর ক্ষেত্রে দেখেছি। আশা করছি এবারও দেখব। সবচেয়ে আশার কথা হল তারা যখনই একমত হয়েছেন তখনই সফল হয়েছেন। তাদের সফলতা মানেই অশুভ শক্তির অনিবার্য পরাজয়।
বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের আস্থার প্রমাণ মেলে যখন তাদের নেতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলোচনার প্রস্তাব চান। আর বিএনপির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নমনীয় মনোভাবের পরিচয় মেলে যখন তিনি তাদের প্রতি এই ভাষায় আলোচনার প্রস্তাব রাখেন। ‘আসুন, আমরা আলোচনায় বসি। আপনারা যেখানেই আলোচনায় বসতে চান, আমরা সেখানেই বসতে রাজি আছি।’
বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে আলোচনা হতে পারে। তবে সংসদ সবচেয়ে ভালো জায়গা, নিরপেক্ষ জায়গা। সংসদে আসুন, সংসদে আলোচনা হতে পারে।’ Click This Link
দুই নেত্রী আজ যেমন বুঝতে পেরেছেন সমস্যার সমাধান তাদেরই হাতে; আর সে জন্য তাদেরই ঐক্যমত্যে পৌছুতে হবে। তেমনি তারা একসময় নিজেদের আদর্শের পরিপন্থী পরজীবীদের ঝেরে ফেলার প্রয়োজনীয়তাও বুঝতে সক্ষম হবেন। আমরা সেই দিনটিরই অপেক্ষায় থাকলাম।
[email protected]
©somewhere in net ltd.