নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সর্ব মহলে উপেক্ষিত, অধিকার বঞ্চিত শিশুরা।

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১১



আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে শিশু শ্রমিকের সেবা নিচ্ছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসায় কাজ করতে আসা ছোট্ট শিশুটিকে দিয়ে যার শুরু। এরপরে রাস্তায় বুটপলিশ, চায়ের দোকানে চা বিক্রেতার সহযোগী, গাড়ির হেল্পার কারো না কারো সহযোগিতা কম বেশি নিতেই হয়। ভুল ভাল হলে দু একটা চড় থাপ্পড় মারতেও দ্বিধা করিনা।

এমনকি রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহৃত দুগ্ধ পোষ্য শিশুটিকে দেখেও আমাদের বোধোদয় হয়না আমরা কতটা নিচে নেমেছি।



যৌনকর্মে এবং নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিশুকে ব্যবহারের বিরুদ্ধেও আমরা একটি আওয়াজ করিনা অথচ দেশের পঁচিশটি টেলিভিশন চ্যানেলে দিবারাত্র উঠে বিশিষ্ট জনদের আলোচনার ঝড়। খবরের কাগজগুলিতে নানা ব্যানারে নানা কলামে বোদ্ধাদের ভুরি ভুরি আলোচনা-পর্যালোচনা। তাদের সে সব আলোচনা-পর্যালোচনা দেখে বা পড়ে বোঝার উপায় নেই, রাজনীতি ছাড়া এ দেশে আর কোন সমস্যা আছে।



রাজনীতি ছাড়াও সামাজিক অবক্ষয়, জন নিরাপত্তা, শিশু শ্রমের মত যে আরও অনেক জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা ক্রমশ এ সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে তা আমাদের বিজ্ঞ আলোচক এবং সঞ্চালকদের চেতনায় আছে বলে মনে হওয়ার কোন কারণ নেই। বিশেষ দিন ছাড়া এ বিষয়গুলি নিয়ে কেউ কোন কথা বলেন না। আর এই নীরবতার সুযোগেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ সমস্যা। যার একটি হচ্ছে শিশু নির্যাতন এবং শিশুকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রবণতা।



২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৮০ লাখের মতো। যা ইতিমধ্যে আরও বেড়েছে বৈ কমেনি। আমাদের দেশে শিশুরা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহৃত হয় মূলত-

রিকশা-ঠেলাগাড়ি-ভ্যান চালনায়,

মাছ ধরা-শুটকি শুকানো,

কৃষি ও গৃহাস্থলি কাজ

ছোট গাড়ির হেল্পার,

কাঠের দোকান,

ছোট খামার

ইটের ভাটা,

রংয়ের কাজ,

টার্মিনালে কুলি

রাস্তায় পিঠা বিক্রিতে

রেস্টুরেন্টে/ খাবারের দোকানে,

তাত ও নানা রকম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে,

এ ছাড়াও ইট ভাঙ্গা, রাজপথে খবরের কাগজ-ফুল-বই বিক্রি সহ নানা বিধ কাজে এ দেশের শিশুরা তাদের হার ভাঙ্গা শ্রম দিয়ে থাকে। আর এ সব খাত শিশু শ্রমের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, শিশু শ্রম বাদ দিয়ে এর উদ্যোক্তারা এ সব কাজ চালানোর চিন্তাও করতে পারেন না।

এর মুলে প্রধানত যে দুটি কারণ বিদ্যমান। তা হল-

এক, শিশু শ্রমের নামমাত্র মূল্য এবং কখনো কখনো বিনামূল্যে তাদের ব্যবহারের সুযোগ।

দুই, পর্যাপ্ত শিশু শ্রমের যোগান।



গত ১২/৬/১৩ ইং তারিখে বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘গৃহকর্মে শিশু শ্রমকে না বলুন’ শীর্ষক এক আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে শিশু শ্রম মুক্ত করা হবে। কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব? যেখানে ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত শিশুদের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে এবং এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের নিয়ে কোনও পরিকল্পনাই করা হয়নি।



শিশুরা কেন শ্রম দিচ্ছে আমরা কি সে বিষয়টি মাথায় রেখে কথা বলছি?

আইন করে শিশু শ্রম বন্ধ করবেন ভাল কথা। তারা খাবে কি? তাদের খাদ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে?

শিশু শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের আমরা সাধারণত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করে নিতে পারি।

এক, পিতৃ পরিচয় হীন এবং অভিভাবকহীন।

দুই, দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা পরিবারের শিশু।



অভিভাবকহীন শিশুরা কেবল দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার তাগিদেই কাজে নেমে পড়ে। কাজ করা ছাড়া এদের গত্যন্তর নেই। এই সুযোগে এদেরকে ব্যবহার করা হয় নৈতিক-অনৈতিক নানাবিধ কাজে। এ রাষ্ট্র এ সমাজ এই শিশুদের নুন্যতম নিরাপত্তাও দেয়ার চেষ্টা করেনা। আর তাই এই সব ছিন্নমূল শিশুরা একদিকে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে অন্যদিকে জড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। আমাদের দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূলত এরাই দায়ী।



আর দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা পরিবারগুলো থেকে যে শিশুরা তাদের শৈশব বিক্রি করে দেয় নুন্যতম মজুরিতে তাদের শ্রম দিতে বাধ্য করে রাষ্ট্রীয় দুঃশাসন।

কৃষক পায় না তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। শ্রমিক পায় না ঘামের সঠিক দাম। ফলে এই পরিবারগুলো শত চেষ্টায়ও দরিদ্রের অভিষাপমুক্ত হতে পারে না। ফলে বাধ্য হয়েই তারা তাদের সন্তানদের কাজে পাঠায়, শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে।

কি করে তাদের শ্রম দানে নিরুৎসাহিত করবেন? কি করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে বলবেন। যদি না এই পরিবারগুলোকে দারিদ্রমুক্ত করেন।

শিশু শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দিতে হলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। তা না করে সব জেনে বুঝেও যখন আমাদের মাননীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে শিশু শ্রম মুক্ত করা হবে’।

তখন একে উপহাস ছাড়া আর কীইবা বলা যায়।



“জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ অনুসারে ৫ থেকে ১৮ বছরের শিশু কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবেনা”।

দেশের শ্রম আইন বলছে, ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশু শ্রম নিয়োগকর্তার জন্য দণ্ডনীয় অপরাধ। তাহলে ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের দায়িত্ব কে নেবে? নাকি তারা না খেয়ে থাকবে। জবাবটি আইন প্রণেতাদেরই দিতে হবে। সমস্যাটা হল প্রশ্নটি করার মত বিজ্ঞ জনেরা ব্যস্ত থাকেন রাজনীতির পোস্টমর্টেমে। তাই এ সব উপহাস এই শিশুদের নীরবেই সয়ে যেতে হয়।

সরকার ৩৮টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কোথায়?

শিশু শ্রম আইনে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি অথচ আমাদের দেশে শিশু শ্রমিক বিশেষ করে মেয়ে শিশুর একটি বড় অংশই গৃহকর্মে নিয়োজিত।

আমাদের শ্রম আইনের মধ্যেও শিশু শ্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সরকারের এ সব কর্মকান্ড অধিকার বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে রাষ্ট্রের চরম উদাসীনতাই প্রমাণ করে।



অধিকার বঞ্চিত শিশুদের রক্ষায় অনতিবিলম্বে এ সব অধিকার বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে মহা পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। সেইসাথে -



** শিশু শ্রম কে স্পষ্টভাবে সনাক্ত করতে হবে। এবং তাদের কাজের পরিধি নির্ধারণ করে দিতে হবে।

** শিশুদের সব রকম অধিকার হরণের বিরুদ্ধে একটি যুগোপযোগী বলিষ্ঠ আইনি কাঠামো তৈরি করে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

** রাষ্ট্রের সাধ্য অনুযায়ী দেশের সকল ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

** শিশু শ্রমকে শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

** শিশু শ্রম আইনে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের স্বীকৃতি দিতে হবে।

** সর্বোপরি ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশু শ্রম নিয়োগকর্তার জন্য দণ্ডনীয় অপরাধ এই আইন সংশোধন করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত কাজে নিয়োগকর্তার জন্য দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।



আমাদের মনে রাখা উচিত আজকের এই অধিকার বঞ্চিত শিশুরা এ সমাজেরই অংশ। তারা বিপথে পরিচালিত হলে এ সমাজ এ রাষ্ট্রই সর্বাগ্রে আক্রান্ত হবে। আর তাই এ দেশের স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের দিকে সব মহলের মনোনিবেশ একান্ত জরুরী।



[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো একটা পোস্ট ++++

ভালো থাকবেন সবসময় ।

২| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০৭

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: অপূর্ন আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.