নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ তথাপিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসতে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাদের বিশেষ সুযোগ দানও নিশ্চয়ই অনভিপ্রেত নয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ জাতি তাদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। এসব নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু তাই বলে এসব জনগোষ্ঠীকে কোটা সুবিধা দিয়ে একটি মেধা শূন্য জনপ্রশাসন তৈরি করতে হবে কেন? এটাই কি কোন সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত?
প্রথম শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ মেধা ভিত্তিক এবং ৫৬ শতাংশ কোটা ভিত্তিক। এটা কি করে গ্রহনযোগ্য হতে পারে? যার মধ্যে আবার ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধা কোটা।
মুক্তিযোদ্ধারা এ জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান-
আমরা তাদের জন্যে নাম মাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে রেশ নিং এর ব্যবস্থা করতে পারি।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ পাসপোর্ট বা বিশেষ নাগরিকত্ব সনদপত্র প্রদান করতে পারি।
যা নিশ্চিত করবে তাদের সামাজিক মর্যাদা।
যে সনদ পত্র বলে দেশের প্রতিটি সরকারী বেসরকারি হাসপাতাল সহ সকল সেবা প্রতিষ্ঠান
বিনাখরচে তাদের সেবা দানে বাধ্য থাকবে।
রাষ্ট্র সকল মুক্তিযোদ্ধার আবাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধাদের এ সমাজে ও রাষ্ট্রে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান দিতে হবে। এবং সকল মুক্তিযোদ্ধাকে এক চোখে দেখতে হবে। কোন মুক্তিযোদ্ধা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরবেন আর কোন মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় রাজার হালে থাকবেন তা হতে পারে না। এভাবে তাঁদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়াও নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা স্বজনের নামে অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধা স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে তারও নিরসন হওয়া দরকার।
আমাদের দেশে মেধার অপব্যবহার চলছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রশাসন একদিকে কোটার আগ্রাসন অন্যদিকে ঘুস, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির দৌরাত্ম্য। প্রকৃত মেধাবীরা হচ্ছে সব ক্ষেত্রে হচ্ছে বঞ্চিত। যার ফলও সহজেই দৃষ্টিগোচর হয় দেশের প্রতিটি সেক্টরে।
অবস্থাদৃষ্টে পিএসসিকেই মনে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে মেধা শূন্য প্রতিষ্ঠান। নয়ত বিশেষ কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে কোটা খালি রাখার মত অদ্ভুত নিয়ম যারা চালু করেন। যাদের জ্ঞান প্রসূত নিয়মে সাধারণ পরীক্ষার্থী ৮০ পেয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি, কিন্তু কোটা ধারীরা ৫০ পেয়েই উত্তীর্ণ হয়ে যান। তাদের মেধার বৈকল্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিশেষ কোটায় যোগ্য প্রার্থীই যদি পাওয়া না যায় তাহলে সেই কোটার প্রয়োজনীয়তাই বা কি? প্রশ্নের উত্তরটি পিএসসির জানা আছে তো?
পিএসসির কাজ নিশ্চয়ই মেধাশূন্য জনপ্রশাসন সাজানো বা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করা নয়? কিন্তু তারা সে কাজটিই করছেন। কোটা পদ্ধতি আসলেই কতটা প্রয়োজন বা আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা তা নতুনভাবে ভেবে দেখা দরকার। সর্বাগ্রে বন্ধ করা প্রয়োজন কোটা পদ্ধতির অপব্যবহারের।
তবে নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় শুধু কোটা পদ্ধতি নয় পিএসসিরও সংস্কার প্রয়োজন। কেননা প্রশ্নপত্র ফাঁস ও মৌখিক পরীক্ষায় অনিয়ম, লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থী বেশি নম্বর পেয়েও মৌখিক পরীক্ষায় বাতিল হওয়া কিংবা লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েও মৌখিক পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার মত অসংখ্য অভিযোগে অভিযুক্ত পিএসসি। কলংক তিলক ছাড়া আর তো কিছুই তার দেখানোর মত নেই।
বলা বাহুল্য, জনপ্রশাসনে আজ আজ যে যোগ্যতা ও মেধার দুর্ভিক্ষ চলছে, তার জন্যও এই পিএসসি অনেকাংশেই দায়ী। আজ যদি সাধারণ পরীক্ষার্থী আর কোটা ধারীদের মধ্যে ৮০-৭৫ পার্থক্য থাকত তাহলে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা এতটা বিক্ষুব্ধ হত না। যতটা পার্থক্য নজরে এসেছে তা যে কাউকেই বিক্ষুব্ধ করে তুলবে। অথচ এসব বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদেরও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খোজা হচ্ছে। বর্তমান জনপ্রশাসনের এই যে চিন্তার বৈকল্য এর সবটুকু কৃতিত্বের দাবীদারও এই পিএসসি। নমস্য তাই পিএসসিকেই।
[email protected]
©somewhere in net ltd.