নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জং জারি রাহে (প্রথম খন্ড)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩

চাইলেই ইতিহাস পালটে দেয়া যায় না। ঐতিহাসিক সত্যকে ইতিহাস নিজেই নিজের বুকে স্থান করে দেয়। আর সব মিথ্যেই এক সময় মুছেও যায়। এটাই ধ্রুব সত্য। ইতিহাসের রক্ষাকবচ ঘটনার পরম্পরা। যা সব ভ্রান্তি দূর করে সঠিক তথ্যকে করে তোলে দেদীপ্যমান। কথাগুলো এ জন্য বললাম যে, বাংলাদেশের ইতিহাস তার সংবিধানের মতই অসংখ্য বার কাঁটা ছেড়া হয়েছে। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ক্রমাগত চলেছে সংযোজন-বিয়োজন। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে করা হয়েছে বিভ্রান্ত।



বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রীদের হেয় করা। কর্নেল তাহেরদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং অবিচার করা। পক্ষান্তরে জিয়াউর রহমানকে মহানায়কে রূপান্তরের চেষ্টা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ শব্দটিকে মুছে দিয়ে গণ্ডগোলকে প্রতিস্থাপন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন এসবই এক সূত্রে গাথা।

জং জারি রাহে’র সেই উদ্ধত বক্তব্যকে যারা নিছকই কথার কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে ঘটানো হয়েছে প্রতিটি ঘটনা। যুদ্ধ একাত্তরে শেষ হয়নি। আর শেষ হয়নি বলেই ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরের মত বিয়োগান্তক ঘটনা গুলো ঘটেছে। দেখতে হয়েছে ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহ। দেখতে হয়েছে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরে সামরিক ক্ষমতাবলে জারি করা ফরমান-এ দালাল আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।



১৯৭৬ সালের জুলাই-এ স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা কারী মুসলিম লিগ রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন প্রাপ্ত হল। তখনকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে জামায়াতে ইসলামী ও নেজাম-ই-ইসলামির নেতারা একত্রিত হয়ে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লিগ (আইডিএল) গঠন করে প্রকাশ্য রাজনীতিতে এলো। এতকিছুর পরেও জামায়াতের দল গঠনের সুবিধার্থে ১৯৭৭ সালের ২৩ এপ্রিল সামরিক ফরমান জারি করে রাষ্ট্রীয় আদর্শ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতারই অবসান ঘটানো হল। এ সবই করা হয়েছে এদেশে জামায়াতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে। অন্য কথায় এ দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের যুদ্ধকে জিইয়ে রাখতে।



এরই ধারাবাহিকতায় এ দেশে জামায়াতের উত্থান পর্ব চলল ২০০১ সাল পর্যন্ত। বা বলা যায় ২০০৭সাল পর্যন্তই তারা থাকল নির্বিঘ্ন। জিয়া কর্তৃক প্রথমে রাজাকার আব্দুল হালিম আর পরবর্তীতে বেগম জিয়া কর্তৃক চিহ্নিত রাজাকার মুজাহিদ ও মতিউরের গাড়ীতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়ার মাধ্যমে ষোল কলা পূর্ণ হল। এবং একই সাথে ইত্যবসরে জামায়াত ইসলাম অর্থনৈতিকভাবে মজবুত ভিত্তির উপরে দাড়িয়ে গেল।



একই সাথে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের ভঙ্গুর অবস্থান থেকে প্রায় পূর্বের স্থানে ফিরে এলো আওয়ামীলীগও। পার্থক্য হল আওয়ামী লীগের রয়েছে ব্যাপক জনভীত্তি আর জামায়াতের রয়েছে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং পেশিশক্তি। যদিও যুদ্ধটা স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তির মধ্যে। সেক্ষেত্রে একপক্ষে জামায়াত এবং অন্যপক্ষে বাংলাদেশের সকল দলের এক জোট থাকার কথা থাকলেও এখানেও জামায়াত সুবিধাজনক অবস্থায় চলে এলো বিএনপিকে তাদের বশ্য করে নিতে পেরে। আর আওয়ামীলীগ পাশে পেল কিছু বাম দল এবং এ দেশের তরুন প্রজন্মকে।

এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক শুধু তারেক জিয়ারই কোমর ভাঙেনি ভেঙ্গেছিল বিএনপিরও। সে কোমর সোজা করে দাড়াতে বিএনপির প্রয়োজন ছিল জামায়াতের সাহায্য। তারা সে সাহায্য নিতে গিয়ে নিজেদেরই বিলিয়ে দিইয়ে বসল!



এ পর্যন্ত সবকিছু কম-বেশি জামায়াতের বা পাকিস্তানি ছকেই এগুচ্ছিল। বাধ সাধল ২০০৮ সালে নির্বাচিত বর্তমান সরকার। যারা মনে করল এ যুদ্ধের পরিণতি টানার এটাই উপযুক্ত সময়। আর তাই তারা এবার মানবতা বিরোধী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের নীতিতে স্থির রইল। আর এটা করতে গিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ মুক্তি যুদ্ধবিরোধী শক্তির আসল রূপটি। ১৯৭১ থেকে ২০১৩ এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্ব রাজনীতি পাল্টেছে অনেকখানি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের; ৭১ এর বিরুদ্ধ শক্তি আজো প্রায় একাট্টা। সেদিনের জাতিসংঘের ভূমিকা আর আজকের জাতিসংঘের ভূমিকা প্রায় একই। সেদিনের যুক্তরাষ্ট্র আর আজকের যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও এক। এমনকি চিন ও মধ্যপ্রাচ্যও এ প্রশ্নে খুব বেশি সরে এসেছে বলে মনে হয় না।



পাকিস্তান যে ৭১ এ যুদ্ধের ইতি টানেনই তার সর্বশেষ উদাহরণ “পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস করা”। ‘কাদের মোল্লা নির্দোষ” বলে ইমরান খানের দাবি করা।

পাকিস্তান জামায়াতের প্রকাশ্য ঘোষণা, কাদের মোল্লা তাদের দলের বাংলাদেশ শাখার প্রধান। এমনকি যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ায় বাংলাদেশ আক্রমণের জন্য নিজেদের সরকারের প্রতি তারা আহ্বান পর্যন্ত জানিয়েছে। এসবই একসুত্রে গাথা।



যা সেই বক্তব্যকেই সমর্থন করে, জং জারি রাহে। তাদের সেই অসমাপ্ত যুদ্ধে কখনো মুসতাক, কখনো জিয়া, কখনো এরশাদ কখনো বেগম জিয়া যাকে যখন প্রয়োজন হয়েছে তাকে সেভাবেই তারা ব্যবহার করেছে। আর এরাও বুঝে না বুঝে সব ধরনের সহযোগিতা করে গেছেন। এমনকি এ ক্ষেত্রে জামায়াত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করতেও ছাড়েনি। এ যুদ্ধ জারি রাখতে তারা প্রথমেই তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করল একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনিকে। পূর্বেই প্রাপ্ত বিশ্বাসঘাতকের সাথে তার সখ্যতাকে আরও গার করতে যা কিছু করা প্রয়োজন ছিল তার সবই করা হল।

এবং এই নব্য খুনিকে যায়গা মতো স্থানে বসানোর ব্যবস্থাটিও সুচারুরূপেই করা হল একই শক্তির চালে। এর পরেই হানা হল চূড়ান্ত আঘাত। শেষ করে ফেলা হল জাতীর জনককে। সেই সাথে শেষ করা হল তার পরবর্তীতে দেশ গড়ার কারিগরদেরও।



রাতা রাতি একজন সেক্টর কমান্ডারকে বানিয়ে ফেলা হল মহানায়ক। আর তার পরে চলল ইতিহাস বিকৃতির পালা। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রেরই তো শেষ আছে। এক সময় তাকে আরও মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে হল। কিছুটা শ্লথ হল ষড়যন্ত্রের চাকা; তবে তা থেমে থাকেনি। অনেকের মতে বিএনপির জন্মই হয়েছিল জামায়াতকে পুনর্বাসিত করতে। আর যদি দু এক দশক সময় পাওয়া যেত তাহলে হয়ত এক সময় বিএনপিও তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয়ই হয়ে পরত। কিন্তু বিধি বাম। মহান সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন অন্য কিছু। আর তাই এবার ছক উল্টানোর পালা।



মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার হচ্ছে, রায় হচ্ছে এবং তা কার্যকরও করা হচ্ছে। এক্ষনে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে তারা। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত তার অস্তিত্ব সংকট কাটাতেই বিএনিপিকে অক্টপাশের মত আট বাহু দিয়ে শর্বশক্তিতে চেপে ধরেছে। বিএনপি এখন চাইলেও তাকে ছেরে আসার ক্ষমতা রাখে না। এখন তারা অনেকটাই জামায়াতের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বিএনপি পন্থি বুদ্ধিজিবীরাও আজ জামায়াতের করায়ত্ত। বিএনপিকেও আত্মরক্ষা করতে হলে যে করেই হোক জামায়াতের কাছ থেকে মুক্ত হতেই হবে। বর্তমান সময়টিকে তারা সুযোগ হিসেবেও গ্রহন করতে পারে। আর সেটাই হবে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক।



এখন এই অপশক্তিকে রুখতেই হবে। তাদেরকে রুখতে হবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই। আজ আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি সেখান থেকে পেছনে ফেরার কোন সুযোগ নেই।

আজ এই যুদ্ধ তার চূড়ান্ত পরিণতির দিকেই এগিয়ে চলেছে। একে আপনি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ যেমন বলতে পারেন তেমনি পারেন একাত্তরের অসমাপ্ত যুদ্ধ বলতেও। আজও পাকিস্তানে পাক সেনাবাহিনীতে নিয়োগের আগে যে কোনও সেনা জওয়ানকে বাধ্যতামূলক ভাবে শপথ নিতে হয়-'ইকাত্তর কা বদলা হাম লে কর রহেঙ্গে।' তাদের সে বদলা যে শুধু ভারতের বিরুদ্ধেই নয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তা বলার অপেক্ষা রাখে না।



চলবে............।



সঞ্চালক, আপন ভুবন কম

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.