নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক না কেন নির্বাচনটি যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এতে সন্দেহ নেই। এই নির্বাচনের ফলাফল একদিকে যেমন বর্তমান শাসক দলকে সুযোগ করে দিয়েছে তাদের ভুলগুলো শুধরে নেয়ার তেমনি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকেও সুযোগ করে দিয়েছে স্বকীয়তায় ফিরে আসার।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেমন বুঝতে সক্ষম হয়েছেন সব যায়গায় সব এক্সপেরিমেন্ট কল্যাণ বয়ে আনে না তেমনি এটাও বুঝতে পেরেছেন যোগ্য লোককেই উপযুক্ত স্থানে বসাতে হয়। তিনি কি এটা বুঝতে পেরেছেন যে তার দলের সব ফেরেশতা সদৃশ নন? হয়ত পেরেছেন; অন্তত তার বর্তমান মন্ত্রীসভার সাথে পূর্বের মন্ত্রীসভার তুলনামূলক বিচারে তাই মনে হয়। তবে তিনি সন্ত্রাস সহিংসতা নির্মূলের ক্ষেত্রে যতটা কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করেছেন ঠিক ততটাই যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর হতেন তা বোধ করি তার এবং আওয়ামীলীগের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনত।
এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন। যদি সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম হন তাহলেই কেবল তার পক্ষে সম্ভব বর্তমান সরকারের মেয়াদকে দীর্ঘায়িত করা। নয়ত এই নির্বাচনের ত্রুটিই এক সময় জনগণকে চরম বিক্ষুব্ধ করে তুলবে, বিশেষ করে যখন তারা দেখবে আওয়ামী লীগ নিজেদের শোধরায় নি। উল্টো বিএনপিই সাফ সুতরও হওয়ার চেষ্টা করছে। এ পর্যন্ত অবস্থাদৃষ্টে বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও বিবেচনায় রয়েছে বলেই অনুমিত হচ্ছে। যা সার্বিক বিচারে শুধু আওয়ামীলীগেরই নয় দেশেরও মঙ্গল বয়ে আনবে সন্দেহ নেই।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠিক একই ভাবে বিএনপিকেও নতুন করে; নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। বিএনপির মত একটি মোডারেট ইসলামিক দল যখন স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে জঙ্গিবাদের কাছে আত্নসমর্পন করে তখন দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী আশাহত হয় বৈ কি? বিশেষ করে তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
বিএনপি মুখে যতই বলুক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তনই তাদের মুল দাবী কিন্তু তাদের কার্যকলাপে কখনোই তা মনে হয়নি। উপরন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তনের নামে দেশে একটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিই মুল লক্ষ বলে প্রতিভাত হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে ধর্মের নামে ভণ্ডামি থেকে শুরু করে ক্রমাগত মিথ্যাচার এমনকি শেষ পর্যন্ত লাশের রাজনীতি এর কোনটিই তারা বাদ দেয় নি। আপাতত যার বিরতি টানা হয়েছে সংখ্যা লঘুদের উপর অত্যাচারের চালিয়ে। এ সবই তারা করেছে নিজস্ব আদর্শের বাইরে গিয়ে জামাতীদের প্ররোচনায়, জামাতিদেরই সাহায্যে। স্বাভাবিক ভাবে যার দায় ভারও অনেকটাই এসে পড়েছে বিএনপির ঘারে। কারণ এটা সবাই এক কথায় স্বীকার করতে বাধ্য যে, বিএনপির আশকারা না পেলে জামায়াতের এত সহিংসতা চালানোর সাহসই হত না।
প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি কেন এই আত্মহননের পথটি বেছে নিলো? কেনই বা বিএনপি নেত্রী তার পরীক্ষিত নেতা কর্মীদের ছেড়ে তৃনমূলের সাথে সম্পর্ক বিহীন গুটিকয়েক গুলশান নিবাসী নেতা নির্ভর হয়ে পড়লেন? আর কেনই বা নিজ আদর্শকে পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে জামায়াতের আদর্শে পরিচালিত হলেন?
এ প্রশ্নের উত্তরের সাথে জড়িত বিএনপির জন্মসূত্র এবং পূর্বাপর বৈদেশিক যোগাযোগ। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় ৭১এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষ আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে বিএনপির সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ। পক্ষান্তরে স্বাধীনতার পক্ষ আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে বিএনপির সম্পর্ক বরাবরই ঠাণ্ডা। আশ্চর্যের বিষয় হল স্বাধীনতার এতদিন পড়ে এসেও খুব সহজেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে বাংলাদেশ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক শক্তি গুলো এখনও দুটি ভাগে বিভক্ত। যেমনটি এ দেশের দুটি বড় দল পরস্পর বিরোধী মতাদর্শে বিভক্ত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। এই যে বিভক্তি এটা কি দল দুটির সহজাত না বহিঃশক্তি কর্তৃক তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া?
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দুর্বলতাই আন্তর্জাতিক শক্তি গুলোকে এদেশের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায় নি। এমনকি তারা এখনো এ দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে পরিমাণ হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে তার দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বেই বিরল। আর এর একমাত্র কারণ আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নৈতিক দুর্বলতা। আমাদের দুর্ভাগ্য, শুধুমাত্র নেতৃবৃন্দের ক্ষমতা লিপ্সা এবং দুর্নীতি পরায়নতার কারণে স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর পেড়িয়েও এ দেশ কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সক্ষম হয়নি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে অর্থনৈতিক ভাবে এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতার মধ্য হতে।
অনেকেই বলেন পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। এটা হয়ত বিএনপির আপাত ক্ষতিকে সামনে রেখেই বলা হচ্ছে। তবে একই সাথে এটাও বলা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতি বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে এবং নতুন পথে চলতে শিখিয়েছে। এমনকি বিএনপিকে রাহু মুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। যদি তারা এটা অনুধাবনে সক্ষম হন এবং নতুন ভাবে চলতে শেখেন তাহলে এই নির্বাচনই বিএনপির জন্য, সেইসাথে দেশের জন্যও একদিন আশীর্বাদ হয়ে প্রতিভাত হবে।
বিএনপি এমন একটি অবস্থায় পতিত হয়েছিল যে, জন্মের শোধ দিতে গিয়ে অনুকূল জনসমর্থন থাকা স্বত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ পর্যন্ত করতে পারেনি। সেই সাথে মোডারেট এই দলটি সবৈব জঙ্গিবাদের রূপ পরিগ্রহ করে ফেলে। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগটি পর্যন্ত গ্রহণ না করে দেশে একটি সংকট সৃষ্টি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। যা তাদের কর্মী সমর্থকদের পর্যন্ত হতবাক করে দেয়।
বিএনপি নেত্রী এতদিনে এটা নিশ্চয়ই অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন যে, তিনি কয়েকবার উদাত্ত আহ্বান জানানো স্বত্বেও তার আহবানে সারা দিয়ে ঢাকার মানুষ, দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নি। এমনকি তার দলের নেতা কর্মীরা পর্যন্ত তার আহবানকে উপেক্ষা করেছে বারংবার। এটা এজন্য নয় যে, তারা তাকে পরিত্যাগ করেছে বরং এটা এজন্য যে তারা বিএনপি নেত্রীর জামায়াত নির্ভরতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্ভরতাকেই উপেক্ষা করেছে মাত্র। বিএনপি বা নেত্রীকে নয়।
আজ যখন বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত ছাড়াই সমাবেশ করে তখন যদি আওয়ামী লীগ ধরে নেয় এটা তাদের শর্তারোপের ফল তাহলে তারা ভুল করবে। বিএনপি তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। সেই সাথে সাধারণের মানুষের মনের ভাষাটিও তারা পড়তে পেরেছে বলেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া। এখন দেখার বিষয় হল ইসলামিক দলগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে থাকার নীতিতে তারা কতদিন অটল থাকতে পারবেন বা আদৌ আক্ষরিক অর্থেই তারা দূরে থাকবেন কিনা।
বিএনপির যে জন ভিত্তি রয়েছে তার উপরে নির্ভর করে তারা খুব সহজেই নির্ভার থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে যে তারা সত্যিই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এখন আর প্রশ্রয় দিচ্ছেন না। আর তা যদি তারা করতে পারেন তবে সেটাই হবে এ দেশ বাসীর জন্য স্বস্তির সবচেয়ে বড় কারণ।
একই সাথে বিএনপি নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ যদি আমাদের পেইড সুশীল ব্যক্তিবর্গকে এড়িয়ে চলতে সক্ষম হন তাহলে আরও ভাল করবেন। কেননা বিএনপিকে ভুল পথে পরিচালিত করতে এই সুযোগ সন্ধানী জ্ঞান পাপীরাও কম দায়ী নন। যারা সামান্য স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে জেনে বুঝেও এমন সব বন্দনা শুরু করে যা নেত্রীকে আরও বেশি অনমনীয় করে তোলে। এরা কখনোই কোন দলের স্বার্থকে এমনকি দেশের স্বার্থকেও বিবেচনায় নেন না। তারা যা বলেন তা শুধু নিজেদের স্বার্থকে বিবেচনায় রেখেই বলেন। এদেশে প্রকৃত সুশীলের আজ বড় আঁকাল। এই আঁকালের মধ্য থেকে তাদেরই প্রকৃত সুশীল বেছে নিতে হবে। যারা শুধু নেত্রী বন্দনাতেই মশগুল থাকেন না দেশকে নিয়েও ভাবেন। যারা প্রয়োজনে নেত্রীর ভুল ধরিয়ে দেয়ার মত সৎ সাহসও রাখেন। আমরা কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়াতে তাদের দেখতে পাই। দুর্ভাগ্য, আমাদের নেতৃবৃন্দ হয় তাদের দেখতে পান না অথবা আমলে নেন না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া বেগম জিয়ার ভাষণ থেকে সাতক্ষীরা প্রসঙ্গটি বাদ দিয়ে নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম এবং আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকব গোছের অতিকথন বাদ দিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ড আমাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আশ্বস্ত করে বৈ কি? আর সে বিবেচনায় আমরা বলতেই পারি পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন এ দেশের রাজনীতির গতি প্রকৃতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে আর তা আমাদের দেশের রাজনীতিকে ভবিষ্যতে ইতিবাচক ধারায়ই পরিচালিত করবে।
সঞ্চালক; আপন ভুবন.কম
[email protected]
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: এরশাদকে চাপ দিতে নাকি কলংকমুক্ত করতে মেজর মন্জুর হত্যা মামলার রায় হচ্ছে তা সময়ই বলে দিবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
কলাবাগান১ বলেছেন: এরশাদকে চাপ দেওয়ার জন্যই কি এখন মেজর মন্জুর হত্যা মামলার রায় হচ্ছে?