নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
র্যাব বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছে কাজেই এ বাহিনীটিকে বিলুপ্ত করা হোক! তাহলে পুলিশও তো বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছে সে ক্ষেত্রে কি পুলিশকেও বিলুপ্ত করতে হবে? আর যখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির নামে, দাবী আদায়ের নামে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালায়? তাঁদের বেলায় কি করতে হবে? নাকি রাজনীতিবিদদের সাত খুন মাফ! এ দেশে অলিখিত নিয়ম তো তাই।
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর নামে যখন শতাধিক মানুষকে জীবন দিতে হল তখন কই কারো মুখে তো এই দাবীটি উচ্চারিত হল না যে, যাদের নির্দেশে, যাদের প্রত্যক্ষ মদদে এভাবে নিরীহ মানুষ খুনের মহোৎসব চালানো হচ্ছে তাঁদের এ দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপি কি তখন কম সন্ত্রাস করেছে? তখন যদি র্যা ব সহ পুলিশ প্রশাসন দায়িত্বে অবহেলা করত তাহলে আজ হয়ত এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোন রাজনৈতিক সরকারই থাকত না। আজকের থাইল্যান্ডের নাটক অনেক আগেই বাংলাদেশে মঞ্চায়িত হত।
রাজনীতিবীদগন সন্ত্রাস লালন করবেন, রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবেন, প্রশাসনকে দলীয় ক্যাডার বানাবেন। তাঁদের দিয়ে প্রতিপক্ষ ঘায়েলের চেষ্টায় রত থাকবেন। আবার এ সব বাহিনীর মধ্যে কেউ কোন অন্যায় করলে তার শাস্তি স্বরূপ বাহিনীকেই বিলুপ্ত করতে চাইবেন। এটা কি ধরনের দায়িত্বশীলতা?
একটি বাহিনীর সকল সফলতা কতিপয় সদস্যের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলেই মুছে যায় না। র্যাশবের যে সব সদস্য অন্যায় কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাঁদের খুঁজে বেড় করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান। প্রয়োজনে র্যা বকে ঢেলে সাজানোর দাবীটিই হতে পারে যৌক্তিক দাবী, র্যা ব বিলুপ্তি নয়। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে র্যা ব বিলুপ্তি কোন সুস্থ মস্তিস্ক প্রসুত দাবী হতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া সাত খুনের ঘটনার পর থেকে র্যা ব বিলুপ্তির দাবীটি বেশ জোড়ে শোরেই উঠেছে। আর তাও আবার দায়িত্বশীল পক্ষ থেকেই। সেইসাথে প্রায় প্রতিদিনই এর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে সভা-সেমিনার, চলছে নানা বাদানুবাদ। দেশের বিশিষ্ট জনেরা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করছেন। মতামত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন বিলুপ্ত নয় দরকার সংস্কার। কেউ বলছেন বিলুপ্তিই একমাত্র সমাধান।
র্যাব বিলুপ্তি তো আলোচনার বিষয়বস্তুই হতে পারে না। আলোচনা তো হবে এ দেশে র্যা বের প্রয়োজন কেন হল তাই নিয়ে। কেন আমাদের পুলিশ প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যথোপযুক্ত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। কেন পিচ্চি হান্নানদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পড়েও আটকে রাখা যায় না? আলোচনা তো হওয়া উচিৎ এ সব নিয়ে। অথচ এ সব আমাদের গুণীজনদের চায়ের টেবিলে ঝড় তুলতে সক্ষম হয় না। কেন? ভাশুরের নাম মুখে আনা যাবে না তাই?
র্যা ব প্রতিষ্ঠার পূর্বেই এ দেশে ক্লিন হার্টের মত অপারেশন কেন চালাতে হয়েছিল? কেন ক্লিন হার্টের ৮৫ দিনের অপারেশনে প্রায় অর্ধশত মানুষের হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল? হঠাৎ করে কেন হার্ট এ্যাটাকের মত সমস্যাটি সংক্রামক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছিল? তাও আবার ক্লিন হার্ট অপারেশনে ধরা পড়াদের মধ্যেই!
র্যাবের হাতে এর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রস ফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা এ নিয়ে শুরু থেকেই অসন্তুষ্ট। কোন সরকারই তাঁদের কথা কানে তোলেনি। বারবার এর সংস্কারের দাবী উঠেছে, রাজনীতিবিদগন প্রয়োজন অনুভব করেননি। আর তাই আমরা নিত্য শুনেছি ক্রস ফায়ারের গল্প গাথা। হারিয়ে যেতে দেখেছি অনেককে। আমরা লিমনকে পঙ্গু হয়ে যেতে দেখেছি। পঙ্গু লিমনকে হেনস্তা হতে দেখেছি। শুধু দেখিনি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। একটি বাহিনীর সদস্যরা বারবারই দেখেছে কিভাবে দায়মুক্তি মেলে। কত সহজেই সাফ সুতরও হওয়া যায়। এত সুযোগ থাকা স্বত্বেও তাদের মধ্যে থেকে কেউ বিপথগামী হবেনা এটা ভাবাও তো অন্যায়!
এ দেশের একটি সন্ত্রাসীও যেমন রাজনৈতিক প্রশ্রয় ব্যতিরেকে বেড়ে উঠতে সক্ষম হয় না। তেমনি রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ব্যতিরেকে এরা কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করারও ক্ষমতা রাখে না। একই ভাবে প্রশাসনকে দলীয়করণ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে ব্যবহারই প্রশাসনে দুষ্ট ক্ষত তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ। যে ক্ষত আজ পুরো প্রশাসন যন্ত্রকেই দুর্বল করে ফেলেছে। তথাপিও আমাদের এই প্রশাসনকেই যদি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয় তাহলে আমরা হয়ত একটি ভিন্ন চিত্র দেখতে পাব। এ দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানাবিধ দুর্বলতা স্বত্বেও অনেক অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল ক্ষমতাসীনদের সমর্থন। সেটা জঙ্গি নিধন বলুন, আর পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ব সহিংসতা দমনের কথাই বলুন। এমনকি মতিঝিল শাপলা চত্বরকে রাহুমুক্ত করার ক্ষেত্রেও তারা ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে। কাজেই তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হল তারা কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে তা নিয়ে।
এ দেশে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে যিনি যেখানেই নেতৃত্ব দেন না কেন, প্রত্যেককেই কেন সন্ত্রাসী লালন করতে হয়? প্রশ্নটির উত্তর পাওয়াটা র্যা বের অস্তিত্ব থাকা না থাকার থেকে অনেক বেশি জরুরী। নুর হোসেনের মাদকের আস্তানা, অবৈধ বালু মহাল এতদিন কেন উচ্ছেদ করা হল না? নুর হোসেনের লোকেরা কি করে এগারটি অস্ত্রের লাইসেন্স পায়? সেটাও কি র্যা ব দিয়েছিল?
আজ তো এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, কে বা কারা নুর হোসেনদের তৈরি করে। নুর হোসেন কাকে তার ত্রাণকর্তা বলে মনে করে। এই ত্রাণকর্তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা রাজনীতিবিদ। যারা নিজেদের প্রয়োজনে নুর হোসেনদের তৈরি করে। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা এবং টাকার বিনিময়ে নুর হোসেনদের আশ্রয়দানে বাধ্য করেন। আবার তারাই যখন স্বার্থে আঘাত লাগে তখন এদের ছেঁটে ফেলতেও দ্বিধা করেননা।
পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে র্যা বকে ব্যবহার করবেন। রাজনৈতিক দাবী আদায়ের নামে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবেন। পেট্রোল ঢেলে সাধারণ মানুষকে জ্বালিয়ে মারবেন। আপনাদের থেকে বড় সন্ত্রাসী আর কে আছে বলুন তো? আজ যখন বলা হচ্ছে র্যা ব বিলুপ্তির কথা। ঠিক সেই সময়েই রাজনৈতিক হত্যার স্বীকার ফুল-গাজির চেয়ারম্যান একরামুলের হত্যার ষড়যন্ত্রকারী সহ আট খুনিকে র্যা বের সদস্যরা ধরে এনে হাজির করতে সমর্থ হয়! এ ধরনের সাফল্য তারা এই প্রথম নয় বহুবার দেখিয়েছে। এর পরেও যারা আজ র্যা বের বিলুপ্তি চায় তারা যে প্রকারান্তরে বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসের জনপদ বানাতে চায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ কথা; র্যা বের বিলুপ্তি নয়, প্রয়োজন সংস্কার। আর সে সংস্কার শুধু র্যা ব নয় প্রশাসনের সব ক্ষেত্রেই করা প্রয়োজন। প্রয়োজন ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার সুস্থ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। র্যা বসহ প্রশাসনের সদস্যরা বিশ্বাসই করেনা এ দেশে ক্ষমতাবানদের বিচার হতে পারে। তারাও আইনের আওতাভুক্ত! তাঁদের এই বিশ্বাসের মুলে আঘাত হানা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। সেইসাথে মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন আমাদের নেত্রীবৃন্দের। যাতে অন্তত তারা সুস্থ চিন্তাশক্তি ফিরে পান। শুধু ক্ষমতা নয় দেশকেও ভালবাসতে শেখেন।
[email protected]
©somewhere in net ltd.