নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
যখনই ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে কোন দুর্বিত্তায়নের অভিযোগ উত্থাপিত হয় তখনই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাত্রলীগে শিবিরের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং তারাই এ জন্য দায়ী। তাহলে এরপরে কি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও আমাদের একই কথা শুনতে হবে? এ আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম গত ২৯/৪/১৪ তারিখে লেখা “ নীরব ঘাতক জামায়াতের এবারের লক্ষ আওয়ামীলীগ!” শীর্ষক একটি লেখায়।
সে আশংকাকে সঠিক প্রমাণ করেই ইদানীং আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটা একই সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। এটা যে একেবারে কথার কথা তা বলছি না বরং হয়ত অনেকাংশে সত্যও। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের সুযোগটি কে বা কারা করে দিচ্ছে?
আওয়ামীলীগই তো, নাকি? কেন তারা সে সুযোগটি করে দিচ্ছেন?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল-আলম হানিফ ফুলের তোড়া দিয়ে জামায়াতের রোকন সদস্যকে বরন করে নেয়ার যে ধারাটির সূচনা করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতারাও। এতে কি এটাই প্রতীয়মান হয়না যে নিজেদের দোষ ত্রুটি আড়াল করে রাখতেই আওয়ামীলীগের নেতারা এদের দলে ভেড়ানোর কৌশল অবলম্বন করেছেন? সাধারণ মানুষ অবাক চোখে দেখছে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের স্থানীয় নেতারা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে শুরু করেছেন আর আওয়ামী লীগও তাদের সাদরে গ্রহণ করে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় নানা সন্দেহ, নানা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়াবে এটাইতো স্বাভাবিক।
বিপরীত ধারার দুই রাজনৈতিক দলের এমন গলাগলিতে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আওয়ামীলীগের এবারের প্রকল্প জামায়াতের নির্বাসন নয় পুনর্বাসন! তা না হলে গোপালগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, শরীয়তপুর, রাজশাহীর এতদসংখ্যক জামায়াতের নেতাকর্মীর আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাওয়ার কথা নয়। এমনকি শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর হাত ধরে যখন একজন উপজেলা জামায়াতের সাবেক সভাপতিকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে দেখা যায় তখন আওয়ামীলীগের ঘোর সমর্থকও হোঁচট খেতে বাধ্য। আর এমন দু’একটি উদাহরণই আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলামের এ বক্তব্যকে অসার প্রমাণে যথেষ্ট। যেখানে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নেতার হাত ধরে নয়, তৃণমূল নেতারা যদি মনে করেন, তবে তাদের হাত ধরেই যে কেউ দলে যোগ দিতে পারেন”।
একদিকে হঠাত করেই জামায়াত নেতাদের মিডিয়া বিমুখ হওয়া এবং রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন। অন্যদিকে একের পর এক নেতা কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদান এবং তাঁদের উষ্ণ আলিঙ্গনে একীভূত করে নেয়া। এ সব অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলী যখন সব মহলেই প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। ঠিক তখনই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াত ইসলামীর বিচার এখনই সম্ভব নয় বলে জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক! যদিও এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী সহ আওয়ামীলীগের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর মত ভিন্ন। তথাপিও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন হল, বর্তমান আইনটি তো আওয়ামী সরকারেরই করা। তখন কেন আইনে সংগঠনের বিচারিক শাস্তি নির্ধারণ করা হল না? রাজনীতিবিদগণের বাকচাতুর্যে হয়ত এ প্রশ্নও অবান্তর বলে চালিয়ে দেয়া হবে। তবে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাবে। সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর মত যুক্তি ধোপে টিকবে না।
আবদুল কাদের মোল্লার বিচারিক রায়কে কেন্দ্র করে যে গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান। প্রথম থেকেই তাকে আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আর এক্ষণে তাদের পুনরায় একত্রীত হতে না দিতে নেয়া নানা কুট কৌশল। অন্যদিকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া হেফাজতের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সনদ প্রাপ্তিতে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যে আওয়ামীলীগের শিশু সুলভ বালখিল্যতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে বর্তমানে সামান্য সুবিধা পেলেও আওয়ামীলীগ যে চিরস্থায়ী কলঙ্কের দায় নেবে তা বলাই বাহুল্য।
বিএনপির জামায়াত প্রীতি, দুঃশাসন, নগ্ন দলীয়করণ আর অসম্ভব দুর্নীতি পড়ায়নতা তাদের বিপর্যয়কে ডেকে এনেছিল। তারপরেও তারা বলতে পারবে আমরা অন্তত জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করিনি। আওয়ামী লীগ যদি আজ যে কোন কারণেই হোক সত্যিই জেনে বুঝে শ্বাপদ সমান জামায়াতকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নিয়ে থাকে; তার দায় তাদের বড় করুন ভাবে শোধ করতে হবে।
২০০৭ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে জনগণ সর্বময় ক্ষমতা দিয়েই জয়ী করেছিল। যার পেছনে প্রধান দাবী ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতের শাস্তি নিশ্চিতকরণ। সাধারণ মানুষকে এই দাবী করতে শিখিয়েওছিল আওয়ামীলীগ। আর তাই এই মহান কার্যটি সম্পাদনের দায়িত্বও সরল মনা সাধারন মানুষ অগাধ বিশ্বাসে আওয়ামী লীগকেই দিয়েছিল। তারপরেও তাদের রাস্তায় নামতে হয়েছিল সঠিক রায় পেতে। সেদিনও সাধারণ মানুষ আওয়ামীলীগকে কাঠগড়ায় দার করায় নি। কারণ তারা জানে এর বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল দেশী-বিদেশী নানা মহল। সাধারন মানুষ তখন আওয়ামিলীগকে নৈতিক শক্তি যোগাতেই রাস্তায় নেমেছিল। সাধারণ মানুষের সেই অনুকম্পাকে যদি আওয়ামীলীগ ভুল বোঝে এবং যদি এর যথোচিত সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয় তাহলে তা আওয়ামীলীগের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াবে।
যে সব দায় নিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ তার থেকে যে খুব ভাল কিছু উপহার দিয়েছে তা নয়। বিশেষ করে মানুষ এখনো সুশাসনের জন্য হা পিত্যেস করে মরে। দুর্নীতি ভয়ঙ্কর এক শাপের মত কণ্ঠ পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে। চারিদিকে নিরাপত্তা হীনতা মানুষকে ভয়ার্ত করে তুলেছে। আওয়ামী লীগ এ সব অভিশাপ থেকে সাধারণ মানুষকে এখন পর্যন্ত মুক্তি দিতে পারেনি। এর পরেও এ দেশের মানুষ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেনি। বেগম জিয়ার বারংবারের আবেদনেও যে তারা সারা দেয়নি। তা ঐ প্রাণের দাবীটি আদায়ের লক্ষেই।
আওয়ামী লীগের এটা স্মরণ রাখা দরকার। আজ যদি বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করত তাহলে আওয়ামীলীগের প্রয়োজনীয়তাও হয়ত অনেকটাই হ্রাস পেত। বিএনপির এই ঐতিহাসিক ভুলের দায় তাদের। তবে সে সুযোগে আওয়ামী লীগ যা ইচ্ছা তাই করে পার পেয়ে যাবে এমনটি ভাবারও কোন কারণ নেই। প্রকৃতি তার নিয়মেই শূন্য স্থান পূরণ করে দেয়।
জামায়াতের নেতা কর্মীরা আওয়ামী আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই যে লিগে যোগ দিয়েছে তা ভাবার কোন কারণ নেই। তাদের এই যোগদানকে রাজনৈতিভাবে বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে ধরে নেয়াই অনেক বেশি যৌক্তিক। আর সে ক্ষেত্রে তারা শত ভাগ সফল এটা বলাই যায়। ভুল-সঠিক যাই হোক। কোন ধর্মীয় আদর্শে উজ্জীবিত গোষ্ঠী সামান্য জেল জরিমানার ভয়ে বিপরীতাদর্শের একটি দলে সোৎসাহে যোগদান করবে এটা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন।
তাদের এই যোগদানের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে।
এক, আওয়ামী লীগে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সেইসাথে আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা।
দুই, নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার্থে শত্রুপক্ষের সাথে আপাত সমঝোতার চেষ্টা। যা মূলত প্রতিপক্ষ নিধনে শেষ আঘাত হানার একটি কৌশল মাত্র।
এটা তো ঠিক, বাইরে থেকে করা আঘাতের চেয়ে ঘরের মধ্যে থেকে আঘাত করা অনেক বেশি সহজ এবং নিপুণ। কাজেই এটা আওয়ামীলীগের জামায়াত পুনর্বাসন প্রকল্প নাকি জামায়াতের আওয়ামী বিনাশ প্রকল্প তা আলোচনা করাই যায়।
আওয়ামী লীগ আজ বিএনপিকে খর্ব শক্তি করতে যে পথ বেছে নিয়েছে। তাই হয়ত একদিন তার করুন পড়িনতি ডেকে আনবে। সেই সাথে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনাকে লালন করে এ দেশের সাধারন মানুষ এগিয়ে যেতে চায়, ছেদ পড়বে সেই পথ চলায়ও। আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ কি বিষয়টি একবার ভেবে দেখবেন?
[email protected]
১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রিফাত আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৮
রিফাত ২০১০ বলেছেন: Vhalo likhechen +