নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
বিএনপি নেত্রী ১৭ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, তারা যুদ্ধ ঘোষণা করছেন না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চান। খুবই ভাল কথা। একটি রাজনৈতিক দল যুক্তিগ্রাহ্য দাবী আদায়ে আন্দোলন করতেই পারেন, এটাই স্বাভাবিক। সমস্যা হয়ে যায় তখনই যখন আন্দোলনের নামে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়। আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের যে বিভীষিকাময় চেহারা নিকট অতীতে মানুষ দেখেছে তাতে জনগণের কাছে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে এ ধরনের একটি স্বস্তিকর বার্তা পৌঁছানোও যে অনেকটা জরুরী হয়ে পড়েছিল তা বেগম জিয়ার কথায়ই স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠেছে।
বিএনপির এই ঈদ পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে কতটা আগ্রহ রয়েছে তা তাদের আন্দোলন শুরু হলেই বোঝা যাবে। তবে তাদের প্রধান রাজনৈতিক মিত্র খোদ জামায়াতেরই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয় (banglanews24.com জুলাই ২৩, ২০১৪) বিএনপির অভ্যন্তরেও যে সংশয় নেই তাও বলার উপায় নেই। যার প্রধান কারণ হচ্ছে আন্দোলনটা মূলত লক্ষ্যহীন।
বিএনপি বলছে তারা আন্দোলন করবে; কিন্তু স্পষ্ট করে বলছে না আন্দোলনের আসল লক্ষ্যটা কি? তারা কখনো বলছেন সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করবেন। কখনও বলছেন দ্রুতই আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দাবী আদায় করবেন। যদি প্রথমটিকে লক্ষ হিসেবে ধরা হয় তাহলে তা দিয়ে তারা কি হাসিল করবেন? কি নিয়ে আলোচনা হবে? আলোচনায় বসার পূর্বেই তো একটি এজেন্ডা ঠিক করে নিতে হবে। তা কি তারা নির্ধারণ করেছেন? যদি নির্ধারণ করে থাকেন তাহলে সেটা কি?
ধরে নিলাম বিএনপি সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করল। আলোচনা একটি হল বটে কিন্তু তা নিষ্ফল হল। তখন তারা কি করবেন? পুনরায় আলোচনার টেবিলে বসাতে আন্দোলনে নামবেন? এভাবে তো কালক্ষেপণ সম্ভব, অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছান সম্ভব নয়। এই চাওয়াটা হতে পারে সরকারের। যাতে তারা নির্ঝঞ্ঝাট পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিতে পারে। তাতে বিএনপির কি লাভ?
আর যদি তাদের লক্ষ্য হয় দ্রুতই আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দাবী আদায়। সেক্ষেত্রেও একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায়। আর সেটি হল, বিএনপি নেত্রী সহ তাদের জোট বদ্ধ নেতারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু তারা এটা স্পষ্ট করছেন না যে, সরকার যদি পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। তাহলে তারা এ সরকারের অধীনে আদৌ নির্বাচনে যাবেন কিনা। যদি যান, তাহলে যেমন প্রশ্ন উঠবে পূর্বে কেন নির্বাচনে অংশ নিলেন না। তেমনি যদি না যান তাহলেও প্রশ্ন উঠবে। যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চাইছেন তার গ্রহণযোগ্য রূপরেখা না দিয়ে এবং সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় উপনীত না হয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবী নিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার অর্থটা কি? কাজেই বিএনপির এই আন্দোলন যে একটি লক্ষ হীন কর্মসূচী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর লক্ষ হীন কোন আন্দোলন যে সফলতার মুখ দেখে না তা বলাই বাহুল্য।
বিএনপি যেমনটি বলছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই সবাইটা বলতে তারা কাদেরকে বোঝায়? তার মধ্যে কি আওয়ামীলীগ আছে? সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন মানে তো এই নয় যে, বিশ দলীয় জোটের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই হল। আওয়ামীলীগের কাছেও তো তা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। বর্তমান সরকার তো আর নব্বই এর জাতীয় পার্টী বা ২০০৭ এর অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। আওয়ামীলীগের তো একটি জন ভিত্তি আছে।
এটা কেন বিএনপি এবং তার মিত্ররা ভুলে যাচ্ছেন যে, সরকারের বাইরেও আওয়ামীলীগের লীগের একটি বড় পরিচয় আছে। আর সে পরিচয়ের শেকড়টাও অনেক গভীরে প্রথিত। সরকারের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা আওয়ামীলীগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং গৌরাবান্বিতও বটে। এটা ভুলে গেলে চলবে কেন?
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চাইছে ‘জন সম্পৃক্ততামূলক’ ও ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচী পালন করতে। হতে পারে তাদের বোধোদয় হয়েছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ভীত সন্ত্রস্ত করে যে আন্দোলনে সফলতা লাভ করা যায় না এটা তারা বুঝতে পেরেছে ফলে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে এমন কর্মসূচি এড়িয়ে যাওয়ার চিন্তা করছে।এটা নিশ্চয়ই শুভ লক্ষণ। কিন্তু তারা যে জন সম্পৃক্ততা চাইছেন, সেটি কেন তারা আশা করছেন?
যে আন্দোলনটি হচ্ছে সহজ কথায় ক্ষমতায় যাওয়ার সে আন্দোলনে তো তারাই সম্পৃক্ত হবেন যারা এর সুফল লাভ করবেন। বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে সাধারণের কি লাভ?
একটি ভোট দিতে পারা ছাড়া তারা জনগণকে আর কি কি দেবেন আর কোন কোন পাওনা থকে বঞ্চিত করবেন। সে হিসেবও তো এখনকার জনগণ করতে শিখেছে। বিএনপি কি এটা এখনো টের পায়নি?
বিএনপি কি ৭০ এর নির্বাচনের আগে মাওলানা ভাসানীর 'ভোটের আগে ভাত চাই'। শ্লোগানটির পরিণতির কথা ভেবে এখনো আপ্লুত? তখন এই শ্লোগানটি মার খেয়েছিল বলে এবার কি তারা ভাতের আগে ভোট চাই জাতীয় শ্লোগান তুলতে চাইছেন?
মাওলানা ভাষানীর শ্লোগানটি যদি তখন এটাই হত(ভাতের আগে ভোট চাই) তাহলে হয়ত তখন তা দারুণ জনপ্রিয়ও হত। কারণ তখন ভোটের সাথে ছিল অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন জড়িত। অস্তিত্বই যদি না থাকে তাহলে ভাতটা খাবে কে আর সে ভাত থাকলেই কি, আর না থাকলেই কি?
এখনকার প্রেক্ষাপটটি কিন্তু ভিন্ন। এখন প্রশ্নটি ভাতের অস্তিত্ব রক্ষার নয়। আমরা গাজায় বাস করছি না বাংলাদেশে বাস করি। আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে নয় আমরা টিকে গেছি। এবার আমাদের খাবার চাই।
স্বল্পমূল্যে খাবার চাই, ভাল বাসস্থান চাই, উন্নত চিকিৎসা-স্বাস্থ্য সেবা চাই সর্বোপরি নিরাপদে বাচতে চাই। এখন আমরা স্বাবলম্বী হওয়ার লড়াইয়ে লিপ্ত। যেখানে একটি সেকেন্ড নষ্ট করারও সময় নেই। আন্দোলনের নামে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নামে। দেশকে অচল করে দেয়াকে মেনে নেয়ার মত মানসিকতা থেকে এ দেশের মানুষ বেড়িয়ে এসেছে। এখন তারা বুঝতে চান, কে বা কারা এ দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম। কারা বিশ্ব পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টিকে থাকার সাহস রাখে।
কারা তল্পিবাহক আর কারা এ জাতীকে স্বাবলম্বিতার স্বপ্ন দেখায় এটুকু পার্থক্য করার মত বোধ অন্তত এ জাতীর রয়েছে। আর তাই মাওলানার ভাষানীর সেই শ্লোগানটি উচ্চকিত না হলেও সবাই কমবেশি ধারণ করেন। আর প্রয়োজনানুযায়ী তা যেমন বর্জন করেন তেমনি যথাসময়ে তা প্রয়োগও করেন।
আর এ কারণেই যথেষ্ট কারণ থাকা স্বত্বেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যেমন বিএনপি নেত্রীর বারংবার আহ্বান স্বত্বেও সাধারণ মানুষ সারা দেয়নি ঠিক তেমনি নির্বাচন পরবর্তী সময়েও বিএনপি সাধারণ মানুষকে কাছে টানতে পারেনি। যার কারণ মূলত দুইটি।
এক, বিএনপির শাসনামলের উন্নয়নের বিপরীতে আওয়ামীলীগের শাসনামলে কিছু কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন এবং চোখে পদ্মা সেতু, সমুদ্র সম্পদ সহ বেশ কিছু প্রাপ্তির স্বপ্ন।
দুই, বিএনপির জামায়াত তোষণ, বিশ্ব পরাশক্তির কাছে ধর্না ধরা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন।
তাছাড়া বিএনপি প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সহ জন গুরুত্বপূর্ন বিষয়কে ইস্যু না করে সর্বদাই তারা নিজেরা কতটা ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। কি পেল না পেল এটাকেই ইস্যু হিসেবে নিয়ে বরং সাধারণের অনুকম্পা নয় বিরক্তিরই উদ্রেক করেছেন।
এতদসত্বেও বলব বিএনপির আন্দোলনে যাওয়ার পূর্বে তাদের মুল দাবীটা নির্ধারণ করে নেয়া উচিৎ। সেই সাথে তা বাস্তবায়নের রূপরেখাটিও নিরূপণ করে দিতে হবে। আর নয়ত আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ছাড়া আর কোন লাভই হবে না। যা বিএনপিকে জন সম্পৃক্ত করার থেকে বরং আরও বেশী জন বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।
[email protected]
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪২
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েসন বলেছেন: হাম্বা