নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
বছরের বারটি মাস বা তিনশত পঁয়ষট্টি দিন একই রকম একই আল্লাহর সৃষ্টি। তথাপিও এর কিছু কিছু সময় বিশেষ কিছু কারণে বিশেষ গুরুত্ববহন করে। আলাদা মর্যাদা শীল হয়ে ওঠে। যা আমাদের ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রীয় জীবনেও পরিলক্ষিত হয়। ঠিক একই ভাবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে রমজানুল মোবারক বা রমজান মাস সবথেকে মর্যাদা সম্পন্ন মাস আর এই মাসেরই শেষ দশদিনের কোন এক দিবাগত রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম বলে বিবেচিত হয়। যার প্রধান কারণটি হচ্ছে রমজান মাসের এই রাতেই মহান আল্লাহ ইসলামের প্রাণশক্তি মহা পবিত্র কুরআন করীমকে লাওহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করেন। ভিন্নমতে এ রাতেই কুরআন নাযিল শুরু হয় যা পরবর্তী ২৩ বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর অবতীর্ণ হয়। এ রাতের ইবাদতকে তাই হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম বলে পরিগণিত করা হয়েছে।
এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসেন এবং তারা দুনিয়ায় কল্যাণ,বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকে। এ রাতে ইবাদত রত বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বাণী শুনায়। এটি এমনই এক মহিমান্বিত রাত যে রাতের ফযিলত বর্ণনা করে এ রাতেই “সূরা কদর” নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়।
এই মহিমান্বিত রাতটি রমযানের শেষ দশকে হলেও নির্দিষ্ট ভাবে কোন রাত সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। আর এই অস্পষ্টতার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রমজানের শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফ রত থাকতেন। (মুসলিম- ১১৬৭)
এ রাত সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বেশ কয়েকটি হাদিস আছে যা থেকে এ রাতকে কিছুটা নির্দিষ্ট করে চেনার চেষ্টা করা যায়। যেমন-
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রমাযানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।” (বুখারী)
এ রাতটি রমযানের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর।” (বুখারী)
এমনকি এ রাতটি রমযানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমাযানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে।”
তবে ২৭ শে রমযানেই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। যা নিন্মোক্ত দুটি হাদিসে প্রমাণিত হয়-
উবাই ইবনে কাব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল রমাযানের ২৭ তম রাত। (মুসলিম)
এবং আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমাযানের ২৭শে রজনীতে অনুসন্ধান করে। (আহমদ)
কদরের রাত হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক থেকে পরবর্তী দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল ২৫ তারিখ,তৃতীয় ২৯ তারিখ। চতুর্থ ২১ তারিখ। পঞ্চম ২৩ তারিখ রাত। সর্বশেষ মতানুযায়ী- মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তর শীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধুমাত্র ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হিকমত ও তাঁর ইচ্ছায় কোন বছর তা ২৫ তারিখে, কোন বছর ২৩ তারিখে, কোন বছর ২১ তারিখে, আবার কোন বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।
সম্ভবত এ রাতের পুরস্কার লাভের আশায় কে কত বেশী সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং কত বেশী সচেষ্ট হয়,এটা পরখ করতেই মহান আল্লাহ তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও অস্পষ্ট করে রেখেছেন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের প্রথম বিশ রাত পূর্ণ রাত জাগরণ করতেন না। কিছু সময় ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমিয়ে কাটাতেন। কিন্তু রমাযানের শেষ দশ রাতে তিনি বিছানায় একেবারেই যেতেন না। রাতের পুরো অংশটাই ইবাদত করে কাটাতেন। সে সময় তিনি কুরআন তিলাওয়াত, সলাত আদায়, সদকা প্রদান, যিকর, দু‘আ,আত্ম সমালোচনা ও তওবাহ করে কাটাতেন। আল্লাহর রহমতের আশা ও তার গজবের ভয়ভীতি নিয়ে সম্পূর্ণ খুশুখুজু ও বিনম্র চিত্তে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি নিজে যেমন অনিদ্রায় কাটাতেন তাঁর স্ত্রীদেরকেও তখন জাগিয়ে দিতেন ইবাদত করার জন্য। মূলত কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফ রত থাকতেন। (মুসলিম- ১১৬৭)
সঙ্গত কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে আমরা যেভাবে ইবাদত করতে পারি:
১। নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্থ ও অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
২। লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া। এসব সালাতে কিরাত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা।
৩। সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দু‘আ করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দু‘আ কবুলের সম্ভাবনা থাকে সবথেকে বেশী।
৪। বেশী বেশী তওবা করা আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া। ছাগীরা -কবিরা গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া। বেশী করে শিরকই গোনাহ থেকে খালেস ভাবে তওবা করা। কারণ আমরা অজান্তেই অনেক সময় অনেক শিরকই গুনাহ করে ফেলি আর কোন শিরক করে থাকলে নেক আমল তো কবুল হবেই না বরং অর্জিত অন্য ভাল আমলও বরবাদ হয়ে যায়। ফল হয়ে যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। কাজেই এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৫। কুরআন তিলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়ন। তাসবীহ তাহলীল ও যিকর-আজকার করা। তবে যিকর এর ক্ষেত্রে এটা খেয়াল করা অনেক বেশী জরুরী যাতে যিকর করা হয় চুপিসারে,নীরবে এবং একাকী। যিকর সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে বলেছেন : “সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার রবের যিকর কর মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি সহকারে এবং জোরে আওয়াজ না করে। এবং কখনো তোমরা আল্লাহর যিকর ও স্মরণ থেকে উদাসীন হয়োনা।” (আরাফ : ২০৫) অতএব, দলবেঁধে সমস্বরে জোরে জোরে উচ্চ স্বরে যিকর করা অবৈধ। যিকরের করা যেতে পারে: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আঁকবার ইত্যাদি।
৬। একাগ্রচিত্তে দু‘আ করা। বেশী বেশী ও বার বার দু‘আ করা। আর এসব দু‘আ হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে। দু‘আ করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য, জীবিত ও মৃতদের জন্য। দু’আ করবেন পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে নিন্মোক্ত দু‘আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন : “ হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)
মহান আল্লাহ আমাদের এ রাতের ফজিলত লাভের সুযোগ করে দিন এবং এ রাতের ইবাদত কবুল করে নিন।
[email protected]
কৃতজ্ঞতায়: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম,
ড. আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া আল মাদানি
সভাপতি, আল-ফিকাহ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
©somewhere in net ltd.