নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্থিত হোক মনুষ্যত্বের, জাগ্রত হোক মানবতা বোধ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০০



রবীন্দ্রনাথ তার মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের শুরুতেই লিখেছেন “ "উত্তিষ্ঠত! জাগ্রত!" উত্থান করো, জাগ্রত হও--এই বাণী উদ্‌ঘোষিত হইয়া গেছে। আমরা কে শুনিয়াছি, কে শুনি নাই, জানি না--কিন্তু "উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত" এই বাক্য বারবার আমাদের দ্বারে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। ......................... অশ্রু শিশিরধৌত আমাদের নবজাগরণের জন্য নিখিল অনিমেষনেত্রে প্রতীক্ষা করিয়া আছে--কবে সেই প্রভাত আসিবে, কবে সেই রাত্রির অন্ধকার অপগত হইয়া আমাদের অপূর্ব বিকাশকে নির্মল নবোদিত অরুণা লোকে উদ্‌ঘাটিত করিয়া দিবে। কবে আমাদের বহুদিনের বেদনা সফল হইবে, আমাদের অশ্রুধারা সার্থক হইবে”।



পরম আশ্চর্য হল আজো নিখিলের সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়নি, বুঝিবা বেড়েছে বহুগুণ। আজ বিশ্বজুড়ে আকাল যে মানবতার তাও এই মনুষ্যত্বহীন সমাজেরই কারসাজি। মানবতাকে আজ তারা লাভজনক পণ্যে রূপান্তর করে ছেড়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চোখে কখনও বা ছানি পড়া ধুসর দৃষ্টি, কখনো বা স্ফটিক স্বচ্ছ। এখানে ধর্ম বর্ণ বিত্তের শ্রেণী ভেদে নির্ধারিত হয় মানবতার পরিমাণ। তারা নিক্তি হাতে বসে আছেন। বিশ্ব মোড়ল নির্ধারণ করে দেন ফিলিস্তিনদের জন্য এক মানদণ্ড, আর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য আলাদা মানদণ্ড। যেভাবে তারা চান।



যেমন প্রাণীকুলের শ্রেণী বৈষম্যে মানুষের করতলগত করা হয়েছে তাবৎ সৃষ্টি জগত। ঠিক একই ভাবে ধর্ম তুলে দিয়েছে বিবেধের দেয়াল ধার্মিক আর অধার্মিকের মাঝে। বর্ণ টেনেছে ভেদাভেদ মানুষে মানুষের। আর বিত্ত তো সর্বদাই শক্তি প্রদর্শন করে এসেছে। দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে বিত্তহীন-শক্তিহীনদের। পায়ের কাছে এনে ফেলেও তুষ্ট হয়নি সে অভাগাদের। নির্মম পদাঘাতে পিষে মেরে মেতেছে পৈশাচিক উল্লাসে। বিত্ত আর শক্তির এই যে একাট্টা হওয়ার প্রবণতা। এ দুইয়ের রসায়নে জন্ম নেয়া প্রভুই দাসত্বের শিকল পড়ায় বিত্তহীন-শক্তিহীনদের।



সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি এরই ধারাবাহিকতা চলে এসেছে। যদিও মাঝে মাঝে এর নগ্নতা প্রকাশে বাধ সেধেছেন কেউ কেউ। আমরা তাদের মনিষী জ্ঞান করে প্রকারান্তরে প্রভু থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মহাপ্রভুর আসনে বসিয়ে দিয়েছি। কোন মহানুভবই(!) স্থায়ী ভাবে প্রভুর আসন ছেড়ে নেমে দাসের আসন গ্রহণে সক্ষম হননি।



আমরা প্রভুদের আসন টলাতে কখনো যাইনা। যেতে যে শুধু ভয় পাই তাই নয় একে অনুচিত বলেই মনে করি। প্রভুর কাছে থাকে আমাদের যত অনুরোধ-উপরোধ। জোর গলায় কিচ্ছুটি বলার ক্ষমতা আমাদের নেই। সময়ের পরিক্রমায় ঘটনাচক্রে যখন আমাদের এই প্রভুর সংখ্যা বেশী হয়ে যায় তখন তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ মেটাতে এবং রক্তপাতহীন ভাগ বাটোয়ারার নিমিত্তে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি নানা গোছের তন্ত্রের অবতারণা করেন। যেখানে কখনো কখনো দাস তার প্রভু নির্বাচনের সুযোগটি পর্যন্ত পেয়ে যায়! আর এই সুযোগ পেয়ে দাসেরা তো মহা খুসি। তারা তখন বাঁদর নাচ শুরু করে দেয়। ভাবখানা এই যেন, বিশ্ব জয় করে ফেলেছে আর কি!



আমাদের সমাজের বিত্তবানেরা বা প্রভুরা আবার দলে দলে বিভক্ত হয়ে তাদের এক একজন আলাদা প্রভু নির্বাচন করে নেন যাদেরকে আমরা বলতে পারি মহাপ্রভু। এই মহাপ্রভুদের হাতেই আসল রাজদণ্ডটি শোভা পায়। তবে তাদের দৃষ্টি সীমাটি আটকে থাকে আমাদের প্রভু পর্যন্ত। অর্থাৎ দাসানুদাসদের খবরটি সে রাজদণ্ড শোভিত মহাপ্রভু কখনোই রাখেন না।

যেমন ঈদুল ফিতরের দিন সকাল থেকেই তোবা গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা যে, গলায় নিজেদের প্রাপ্য মজুরীর দাবী সম্বলিত পোষ্টার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তা কি মানিনীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন জানতে পেরেছিলেন? পারেন নি। কারণ প্রভুরা খবরটিকে ঐ পর্যন্ত যেতে দেননি।



ঠিক তেমনি প্রভুর তর্জন গর্জনে আমাদের মতই হয়ত মহাপ্রভুও নিশ্চিত ছিলেন সব ঠিক ঠাক আছে। এই ঈদ মৌসুমে নৌপথ বা অন্য কোন পথেই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাই নেই। অথচ আমাদের প্রভু মন্ত্রী মহোদয় নিজেই পিনাক-৬ লঞ্চটি চলাচলের উপযুক্ত নয় বলার পরেও সেটি দিব্যি চলেছে। এপ্রিলে যার মেয়াদ শেষ, সে চলেছে আগস্টেও। ৮৫ জন লোক যার ধারণ ক্ষমতা সে চলেছে তিন শত এর উপরে যাত্রী নিয়ে।



আমাদের মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়েছেন লঞ্চটি উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে। উদ্ধার তো চালাতেই হবে, তবে তা লঞ্চটিকে স্ক্রাব বানাতে নয়, তালি জোড়া দিয়ে আরেকটি মৃত্যু ফাঁদ তৈরি করতে।

মহাপ্রভু চাইলেও পারবেন না প্রভুটির আসন টলিয়ে দিতে কারণ প্রভুদের হারালে তিনি মহাপ্রভু থাকেন কি করে? তা ছাড়া প্রভুর গায়ে লাগা আগুনের আঁচ তাকেও তো কিছুটা ঝলসে দেবে। ঠিক তেমনি যে সব কর্মকর্তারা এর জন্য দায়ী। প্রভু তাদের কেশাগ্রটিও ছুতে পারবেন না বা ছোঁবেন না। কারণ ঐ একই। মহাপ্রভু সাজতে গেলে যেমন প্রভু থাকতে হবে তেমনি প্রভুর প্রয়োজন বশংবদ। যাদের শত দোষ হলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করা যাবে না।



আমরা যখন দেখতে পাই ক্ষমতার বাইরে থাকা আরেক মহাপ্রভু যিনি নিত্য হুংকার ছাড়েন আন্দোলনের। ক্ষমতার পালাবদলে দিবা স্বপ্নে বিভোর। এত বড় একটা অঘটন ঘটা স্বত্বেও তিনি এ ব্যপারে একেবারেই চুপ চাপ। কারণটি আর কিছুই নয় লঞ্চটির মালিক যে তারই আরেক পাণ্ডা। আমাদের আরেক প্রভু। আর এই একটি জায়গাতেই আমাদের এই প্রভুদের মাঝে চরম বৈরিতার মাঝেও থাকে অভাবনীয় বোঝাপড়া। যা দেখে আমরা আল্পুত না হয়ে যাই কোথা।



প্রভু- মহাপ্রভুদের এই রাজত্বে আমরা কার কাছে জানতে চাইব? মাওয়া কাওরাকান্দীতে লোক পারাপারের জন্য কেন বাঙ্গালকে নিয়োজিত করা হল না। কেন এই দুর্ঘটনার মৌসুমেও উদ্ধারকারী জাহাজ নারায়ণগঞ্জে থাকে। কেন তা দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় রাখা হল না। ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চকে কি করে ৪৫ দিনের চলাচলের অনুমতি দেয়া হল। কি করে ৮৫ জন লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন লঞ্চটি তিনশত লোক নিয়ে ডুবো ডুবো হয়ে বৈরি পরিবেশে পল্টুন ছাড়ার সুযোগ পায়।



জানি এ সব অবান্তর প্রশ্ন। নিরেট দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলে এ আমাকেই বারংবার ব্যাঙ্গ করবে। তবে আজ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছি যে, এটা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব যখন প্রভু-মহাপ্রভুরা তাদের অবস্থান থেকে দাসানুদাসদের ছোট ছোট পিপীলিকা সদৃশ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেখতে পান। যার সামান্য একটা কামড়ের যন্ত্রণার প্রতিশোধ নিতে বা কোন কারণ ছারাই লক্ষ লক্ষ প্রাণ মেরে ফেলতেও আমরা কোন রকম দ্বিধা করিনা। তাদের আর্তনাদে আমাদের মনে সামান্যতম করুণারও উদ্রেক হয় না।

দেশ থেকে দেশে প্রভু মহাপ্রভুদের ইচ্ছা আর লোভের বলি হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দাসানুদাসরা। তাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। তাদের আমোদ প্রমোদের জোগানে নিত্য বলি হয় এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্ররা। প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য, এশিয়া থেকে ইউরোপ সর্বত্রই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। সর্বত্রই প্রভু-মহাপ্রভুর রাজত্বে দাসানুদাসদের একই অসহায়ত্ব।



যেন আকুতি জানাতেই এই দাসদের জন্ম, দাবী জানাতে নয়। শোকাহত হতেই তারা বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ক্ষুব্ধ হতে নয়। নিষ্পেষিত হওয়ার মাঝে নিত্য সুখ খুঁজতে ব্যস্ত যে মেরুদণ্ডহীনের দল, তাদের জন্য আবার মানবতা! মানবের জন্যই তো মানবতা, আসলে কি তারা মানব? এ প্রশ্নই আজ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে দাস এবং প্রভু উভয়ের মাঝেই।

তবে এর উত্তরটি পাওয়া অত সহজ নয়। উভয়ের মাঝে যে দুর্লঙ্ঘনীয় ব্যবধান তা অতিক্রম করাও নয় সহজসাধ্য। আর তাই আজ দাসানুদাসদের একজন হয়ে স্রষ্টার কাছে এই মিনতি করি। হে পরম ত্রাতা, আমাদের এই প্রভু-মহাপ্রভুদের মনুষ্যত্বের উত্থান করো, জাগ্রত কর মানবতা বোধ। ওদেরে মানুষ করে গড়ে তোল। তোমার সর্ব শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মাঝে যে তারও চেয়ে বড় দানব তৈরি করে রেখেছ, তার থেকে দাও আমাদের পরিত্রাণ।



[email protected]







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.