নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রহসনের নাটক না সাজিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২


একটি শিশু মোবাইলে বারবার ফোন করে তাঁর বাবাকে অস্থির করে তুলেছে সে বুঝতে চাচ্ছে তাঁর বাবা সত্যিই আসছে কিনা। অনেক দিন ধরে বাবাকে দেখতে না পেয়ে বাচ্চাটি ব্যকুল হয়ে উঠেছে। হয়ত বাবা এর পূর্বে আসব আসব করেও সন্তানের কাছে ফিরতে পারেনি তাই তাঁর এই অবিশ্বাস মিশ্রিত আকুল প্রতীক্ষা।
একজন স্বামী তাঁর তরুণী বধূটিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে গাড়ী থেকে নেমে গিয়েও বার বার উঠে বসছে। প্রতিটি ষ্টেশনে নেমেও আবার উঠে পরছে। সামান্য পথ প্রানেশ্বরীকে একা ছারতে চাইছে না তাঁর মন। একজন প্রেমিক তাঁর প্রিয়ার খোঁজে ছুটে চলেছে অযুত ভালবাসা বুকে চেপে।

একটি ছেলে তাঁর ভাবি বৌকে নিয়ে যাচ্ছে মা-বাবার কাছে দেখাবে বলে। এমন অজস্র খণ্ড গল্প বুকে করে নিয়ে বাসটি চলছিল দুর্বার গতিতে। হটাতই আরেকটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে মুহূর্তেই গল্পগুলির অপমৃত্যু ঘটল।
সেই শিশুটির প্রতীক্ষা আর এক জীবনে শেষ হল না। প্রেমিক স্বামীটি তাঁর প্রানেশ্বরীকে অকুল পাথারে ভাসিয়ে চলে গেল, যে কিনা তাকে একা সামান্য পথটুকুও যেতে দিতে চাইছিল না। উদ্ভ্রান্ত সেই প্রেমিকের আর ফেরা হল না প্রেমিকার কাছে। ভাবী বধূটিকে বরন করা হয়ে ওঠে না প্রতীক্ষারত মা-বাবার বরং কোলে তুলে নিতে হয় সন্তানের লাশ।
উল্লেখিত চিত্রনাট্যটি একটি সিনেমার গল্প যে গল্প প্রতিদিন চিত্রিত হয় আমাদের দেশে। কত আহাজারি; কত কান্না কত শত স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনার গল্প যে এই ছোট্ট দেশটির আকাশ বাতাস নিত্য ভারী করে তুলছে। সে খবর কে রাখে?
নাটোরের বরাইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চৌত্রিশটি তাজা প্রাণের অপচয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, বিএনপি নেত্রী শোক বার্তা প্রদান করেছেন। আমি জানি না এই শোক বার্তা স্বজন হারানো পরিবারগুলোকে কি দেবে। আর কেনই বা এই শোক বার্তা জ্ঞাপন। প্রতিদিনই যেখানে দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে অর্ধশত লোক মৃত্যু বরন করেন। সেখানে একসাথে চৌত্রিশ জন কি আলাদা গুরুত্ব বহন করে?

এই শোক বার্তা দিয়ে আমরা কি করব? রাষ্ট্র যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিবে না বলে সংকল্পবদ্ধ! সেখানে এই শোক বার্তা, এই সব তদন্ত কমিটি গঠন এ সবই উপহাস মাত্র। কারণ আমরা জানি তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রদান কৃত সুপারিশ সমূহের একটিও বাস্তবায়িত হবে না। তাহলে আর কেনই বা এই অসহায় মানুষগুলোকে নিয়ে প্রহসনের নাটক সাজানো? মৃত দুই চালকের নামের হত্যা মামলা দায়ের না করে সত্যিকার অর্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

আমরা দেখেছি ২০১২ সালে মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদ মারা যাওয়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১১টি ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা বাঁক সোজা করা হয়। গবেষকদের হিসেব অনুযায়ী এসব ‘ব্ল্যাক স্পট’ ঠিক করার ফলে ওই সড়কে এক চতুর্থাংশ দুর্ঘটনা কমে গেছে। হ্যাঁ এটাই আসল কথা সরকার বড়জোর এবারও চিহ্নিত ১৪৪ টি ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা বাঁক সোজা করার কাজে হাত দেবে। হয়ত তাঁতে এক চতুর্থাংশ সড়ক দুর্ঘটনাও কমবে। অর্থাৎ এর পর থেকে পঞ্চাশের স্থানে চল্লিশ জন লোকের মৃত্যুর খবর আমরা পাব। তাঁতে কি আমরা সন্তুষ্ট? যদি সন্তুষ্ট হই তাহলে আর কোন কথা নয়। কিন্তু যদি সত্যিকার অর্থেই আমরা সড়ক দুর্ঘটনা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চাই। তাহলে শুধুমাত্র ১৪৪টি ব্লাকস্পট সোজা করনের মধ্যে আটকে না থাকলে হবে না নজর দিতে হবে আরও কিছু বিষয়ের প্রতি।

সড়ক দুর্ঘটনা কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব নয় যদি না গাড়ী চালকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে পারা যায়। গাড়ী চালানোর সময় তাঁর মাথায় অর্থ–সময়–টাকা নয় থাকতে হবে দায়িত্ববোধ। কতগুলি প্রাণ তাঁর সামান্য অসাবধানতায় ঝরে যেতে পারে। এই বোধটুকু তাঁর মধ্যে জাগ্রত হতে হবে। গাড়ি চালকদের হতে হবে প্রশিক্ষিত। সেই সাথে একজন চালক একটানা কত ঘণ্টা গাড়ী চালাতে পারবেন তারও একটা বাধ্যবাধকতা থাকা উচিৎ।

নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,
ঈদের একদিন আগে দিনের বেলা গ্রামের বাড়ী যাচ্ছে বাসে চড়ে। হটাতই দেখলাম গাড়ীটা একটু যেন এলোমেলো ভাবে চলছে। লক্ষ করতেই দেখি চালকের চোখে ঘুম। একটু আশ্চর্য হয়েই জানতে চাইলাম দিনের বেলা ঘুমচ্ছেন কেন? উত্তরে সে বলল ঈদের চাপ থাকাতে টানা তিন দিন তিন রাত সামান্য বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে সে গাড়ী চালাচ্ছে।

ঈদ পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের মাওনা থেকে ঢাকা আসছিলাম একটি দূরপাল্লার গাড়িতে চড়ে। চালক একের পর এক মোবাইলে কল দিচ্ছেন, রিসিভ করছেন একই সাথে গাড়ী চালাচ্ছেন। যেখানে চার লেনের কাজ চলায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকটা সময় সহ্য করে শেষে বললাম ভাই আপনি গাড়ীটা থামিয়ে আপনার যত কল করতে হয় করুন। আমরা বসে থাকব তবু তোঁ জানটা বাঁচবে। এ কথা শুনে সে মোবাইলটা ছুড়ে মারল এবং ঐ রাস্তায় এমনভাবে গাড়ী চালিয়ে ঢাকা অবধি পৌঁছুল যে গাড়ীর প্রতিটি যাত্রী দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলেন। দেখুন আমরা কিন্তু কোন প্রতিকারও করতে পারলাম না। উত্তরায় নেমে দ্বায়িত্ব রত ট্রাফিককে ঘটনাটা বললাম। তিনি যৌক্তিক কারণ দেখিয়েই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অক্ষম বলে জানালেন।

এ তো গেল দায়িত্ববোধের ব্যাপার। এবারে আসুন অর্থ লিপ্সা। যেখানে চালকদের থেকেও বেশী দায়ী গাড়ীর মালিক এবং বিআরটিএ'র কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। যারা সরাসরি এই সেক্টরের সাথে জড়িত। কেয়া পরিবহনের গাড়িটি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার পরে এখন শোনা যাচ্ছে গত দের বছর যাবতই এই পরিবহনের গাড়িগুলি চলছে অবৈধ ভাবে। অর্থাৎ মেয়াদ উত্তির্ন। তাহলে এর দায়টা কার? এতদিন প্রশাসন কি করল?আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি এ জন্য দায়ী কোন কর্মকর্তাই শাস্তির আওতায় আসবেন না, এমন কি কেয়া পরিবহনের মালিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে না। কারণ একটাই-বলা হয় অনিয়মকে জিইয়ে রাখে দুর্নীতি আর দুর্নীতিকে আঁকড়ে ধরে রাখে অনিয়ম। সব সমস্যার মূলেই এই এক অনৈতিক রসায়ন।

যতক্ষণ পর্যন্ত না গাড়ী মালিকদের লোভের লাগামটা টেনে ধরা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা যায় আমরা ধরেই নিতে পারি এর সমাধান হবে না। সর্বোপরি মৃত্যুর এই মিছিল বন্ধ করতে হলে সচেতন হতে হবে যাত্রী সাধারণকেও। তাদের তো আর জোর করে গাড়ির সাদে তোলা হয়নি!
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা আমাদের আছে সেটা না হয় মেনে নেয়া যায় কিন্তু বোধের যে ভয়াবহ অভাব তাকে মেনে নেয়া সত্যিই অনেক কষ্টের। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্যে। আর আমাদের দেশের মোটরসাইকেল আরোহীদের শতভাগ শিক্ষিত বললেও বোধ হয় কারো আপত্তি থাকবে না। তাহলে এদের শেখাবেটা কে? খোদ ঢাকায় যখন দুই বাসের মাঝে পড়ে মটর সাইকেল আরোহী মারা পরে তখন কারো বুঝতে বাকি থাকে না ঐ মটর সাইকেল আরোহী তখন কতটা অসহিস্নু এবং অসচেতন ছিলেন।
পিছনের সিটে থাকা মা পরে গিয়ে বাস চাপায় মারা গেলেন মটর সাইকেল চালক ছেলে টেরও পায় না। এ রকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে। সেই সাথে হেলমেট বিহীন দুই সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রীর একত্রে মোটরসাইকেল ভ্রমণের দৃশ্য তো মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে।

আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া যেখানে কিছুই হওয়া সম্ভব নয় সেখানে আমরাও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মালয়েশিয়ার মতো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সেল গঠনের দাবী করছি যারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে পর্যালোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিবেন। সেই সাথে ভুক্তভোগীরাও যাতে এই সেলে সহজেই তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করন, চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, ত্রুটিপূর্ণ এবং অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা সহ মহাসড়কের সংযোগ সড়কগুলোর সঙ্গমস্থল প্রশস্ত করন হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ।

সেই সাথে পথচারীদের সাবধানতা অবলম্বন নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাফেরা এবং গাড়িতে ওঠা নামা সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমাতে পারে। তবে সে জন্য প্রয়োজন সচেতনতা দায়িত্ববোধ এবং সহিষ্ণু মনোভাব।

[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আমাদের নাগরিক জীবনে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে
একাত্মতা চাই , সড়ক দুর্ঘটনা রোধ চাই , স্থায়ী শান্তির নিরাপদ যাত্রা হোক সকলের বোধউদয় ।।

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: পরিবেশ বন্ধু সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.