নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব পাচার এবং আমাদের দায়বদ্ধতা

১৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭


এ দেশে স্থানীয় জন প্রতিনিধি আছে, কিন্তু তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। কেউ তাদেরকে কাঠগড়ায় দারও করান না। দেশে যত কিসিমের চোর বাটপার দালাল আছে তারা কোন না কোন জনপ্রতিনিধির দায়িত্বপূর্ণ এলাকারই বাসিন্দা। প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি জানেন তার এলাকার কাঁর কি চরিত্র। কে কি করে। তাদের জানতে হয়। কারণ যে যা করে সে সেই অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিকে খুশি করে চলে।নয়ত তার পক্ষে ঐ কম্মখানি করা অসম্ভব।

এই জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র তোষামোদ করেনা এলাকার ছাপোষা সৎ মানুষগুলো। তারা নিজে এনে নিজে খান। একান্ত না ঠেকলে তারা জনপ্রতিনিধির কাছে যান না। আর জনপ্রতিনিধিরাও স্বভাবজাত কারণেই তাদের খবরও রাখেন না। এর বাইরে ঐ এলাকার প্রতিটি ধাঁন্দাবাজের খবর থাকে জনপ্রতিনিধিদের কাছে।
আজ অবধি কোন সরকার কি তাদের এলাকার আইন শৃঙ্খলা অবনতির জন্য তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় এনেছে? আনেননি, কেন আনেননি?
হয় তাদের নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয়ে নয়ত তারা নিজেরাই দায়িত্ববান নয়।

যে মানুষগুলো পাচারকারীদের হাতে গিয়ে পরল তাদেরকে রক্ষায় জনপ্রতিনিধিরা কি ভূমিকা পালন করেছেন? এই পাচারকারীদের সদস্যরা ঐ এলাকারই বাসিন্দা। এলাকার বেশীরভাগ লোকই তাদেরকে চিনেন। এদের ঠায় ঠিকানা, আদ্যোপান্ত স্থানীয় প্রশাসনের নখদর্পণে। এরপরেও তাদেরকে ধরা হচ্ছে না, কেন?

এ সব ক্ষেত্রে আমরা সব সময়ই শুনে এসেছি। অভিযুক্তদের পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবখানা এমন যে তারা সব হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
যদি তাই হয়, একান্তই যদি তাদেরকে পাওয়া না যায় তাহলে থাই সরকারের মত বাংলাদেশ সরকারও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিক। পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে সরকারে সদিচ্ছা আর দায়িত্ববোধ এর উপর। আর তারও আগে যেটা প্রয়োজন তা হল দায় স্বীকার করে নেয়া। আমাদের সরকার যন্ত্র তো স্বীকার করতেই চাচ্ছেন না। অথচ এ দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে রেমিট্যান্স এর টাকায়। আমাদের নুন্যতম কৃতজ্ঞতা বোধ থাকা উচিৎ।

এক মুহূর্ত দেরী না করে আমাদের মেরিন জাহাজ পাঠিয়ে এই লোকগুলোকে দেশে ফেরত আনুন। একই সাথে দেশ ব্যাপী কম্বিং অপারেশন চালান দোষীদের ধরতে। সহযোগিতা নিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের।
এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
দেশের মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে জনসচেতনতা তৈরি করুন। বিদেশ গমনেচ্ছুদের সঠিক পথ বাতলে দিন। অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ফলাফল প্রতিটি মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করুন। সর্বোপরি দেশেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিন।

দেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনে মিডিয়া বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা যে কাজটা দেশে থেকে করিনা তার থেকেও অনেক ছোট ছোট কাজ বিদেশে গিয়ে অবলীলায় করছি। আর এসব তো এখন আর গোপন নয়। সবাই জানে এ দেশ থেকে যারা বিদেশে গিয়ে কাজ করেন তারা মূলত কোথায় কি কাজে শ্রম দেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এই মুহূর্তে মফস্বল শহরে একজন নির্মাণ শ্রমিকের শ্রমের মূল্য ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা। সারা মাস কাজ করলে যা দাঁড়ায় ১৩৫০০ টাকা থেকে ১৯৫০০ টাকা। নিজের বাড়িতে থেকেই যারা একই কাজ করে এই পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারেন তারা কেন অবৈধ পথে বিদেশে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন।

বলা হচ্ছে শিক্ষিত বেকারের কথা। প্রথম কথা হল যে শিক্ষা দাপ্তরিক কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের জন্য মানুষকে তৈরি করছে না সেটা কোন শিক্ষার মধ্যে পড়ে কিনা সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আর দ্বিতীয় কথা হল যারা এই শিক্ষায় শিক্ষিত তারা আর একটু কষ্ট করে গাড়ী চালানোটা শিখুক। এ দেশে এই মুহূর্তে শিক্ষিত গাড়িচালকের সঙ্কট সবথেকে বেশি অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রই যার বড় প্রমাণ।

সমস্যা হল এ দেশের মেয়ের বাবারা তার মেয়েকে বিদেশে থাকা দিন মজুর ছেলের কাছে বিয়ে দিতে যতটা আগ্রহী ঠিক ততটাই অনাগ্রহী দেশীয় একজন শিক্ষিত গাড়িচালকের কাছে। এই হীনমন্যতা থেকে বের করে আনতে এ দেশের মিডিয়া একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা মুখে বলি কোন কাজই ছোট নয় মনে প্রাণে বিশ্বাস করি না। আমরা সবাই একটি মিথ্যে ফানুস উড়িয়ে চলতে পছন্দ করি যা এই সময়ের সাথে একেবারেই বেমানান।

এ দেশের মানুষ কর্মোদ্যমই এরা অলস নয়। মানুষ নিজে কষ্ট করে খেয়ে পরে বাচতে চায়। পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে চায় এর থেকে বড় আশীর্বাদ আর কি হতে পারে? মানুষের সেই সৎ ইচ্ছাকে অবলম্বন করে এ দেশ এগিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। তবে সে জন্যে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। আমাদের দেশে যে সব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তার বেশিরভাগই উচ্চবিত্তের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আর সে জন্যেই শিল্প মালিকরা দাবী করেন বিদেশি বিনিয়োগ কারীরা দেশিয় বিনিয়োগকারীদের দেয়া বেতন স্কেলের বেশি দিতে পারবেন না। যতদূর জানি সরকার সে দাবি মেনেও নিয়েছে। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসা প্রয়োজন।

আমরা চাই এ দেশের মানুষ বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করুক। তবে সেটা হোক বৈধ পথে। কারণ এর সাথে এ দেশের সম্মান জড়িত। আমরা চাই আগামীতে যারা বিদেশে কাজের জন্য যাবেন তারা যেন দক্ষ হয়ে যান। তারা যেন ন্যায্য মজুরী পান। তারা যেন সম্মানের সাথে সেখানে কাজ করতে পারেন।

এ দেশের সরকার যখন বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যেয়ে কম শ্রম মূল্যকে হাইলাইট করেন সেখানেই সমস্যাটাকে স্থায়ী রূপ দেয়ার আয়োজন দেখি। কেন আমরা বলতে পারি না আমাদের এখানে তোমরা বিনিয়োগ কর আমি তোমাদের দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করব। যা আমরা ইতিমধ্যে গার্মেন্টস খাতে অর্জন করেছি। অথচ তা না বলে আমাদের উদ্যোক্তারা বলছেন তোমরা আমাদের থেকে বেশি বেতন দিতে পারবে না! তার মানে শ্রমিকরা এখানেও দাস। দেশীয় প্রভুদের দাস। এই চিত্রটি শুধুমাত্র পোশাক শিল্পেই নয় অন্যান্য সকল বেসরকারি ক্ষেত্রে একই চিত্র। এটা হতে পারে না।

শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিল্প মালিকদের যেমন অবদান রয়েছে তেমনি এই শ্রমিকরাও কিন্তু সামান্য অর্থের বিনিময়ে শ্রম দিয়ে তবেই দক্ষ হয়ে উঠেছে। কাজেই তার কাজের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত করে রাখার কোন অধিকার মালিকদের নেই।

উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এটাই কাম্য। সেই সাথে মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। আমরা গ্রামে গঞ্জে হাটে মাঠে ঘাটে মানব পাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। যা এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি প্রয়োজন। আমাদের সকলেরই মনে রাখা দরকার সবার উপরে মানুষ তার পরে আর সব।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.