নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
আলোচনাটা উল্টো হচ্ছে অথবা বলতে পারেন অভিযোগটা। মাননীয় সাংসদ শেখ সেলিম যখন অভিযোগ উত্থাপন করলেন এই বলে যে বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রেক্ষাপট তৈরিতে জাসদের ভূমিকা ছিল। তখন জাসদ সে দায় কিছুটা হলেও মেনে নিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারত। জাসদের সৃষ্টি হতে হল কেন?
জাসদ থেকে উল্টো প্রশ্ন না তুলে বরং নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এই তর্কটিকে বারতে দিতে না চাওয়ার একটা প্রয়াস দেখা যায়। এটা দুটি কারণে হতে পার।
এক, জাসদ সরাসরি সরকারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তারা চলমান এই উষ্ণ সম্পর্কটি শীতল করতে চায়নি।
দুই, বর্তমান সময়টাতে এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করলে লাভটা জাসদ বা আওয়ামিলীগ কারোরই হবে না উপরন্তু কয়েক বছর যাবত উভয় দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনঃ নবায়নের যে প্রচেষ্টা চলছে সেটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে লাভবান হবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী।
শেখ সেলিমের অভিযোগ জাসদকে কাঠগড়ায় দাড় করানোর জন্য যথেষ্ট নয় বড়জোর কিছুটা সতর্কতামুলক বার্তা হতে পারে। এর বেশী কিছু নয়। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যাকালিন সময়ে জাসদের কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয়ে পরেছিল সেটা ঠিক কিন্তু তা কোনমতেই পনের আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটানোর জন্য দায়ী হতে পারে না। সে অস্থিতিশীলতা ছিল ঐ ঘটনার একটি অনুষঙ্গ মাত্র।
কিন্তু যদি এই প্রশ্ন তোলা হয় যে, বঙ্গবন্ধুর মত অত বড় মাপের নেতার অবস্থান স্বত্বেও ঐ সময়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এত এত মেধাবী তরুণদের আওয়ামীলীগের প্রতি আস্থাহীন করে তোলার পেছনে কাদের হাত ছিল?
১৯৭২ সালের ২৩ জুলাই ছাত্রলীগ যে দুটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল তার একটিতে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত হলেন অন্যটি থেকে তখনই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে বসা হল। রেসকোর্সের সম্মেলনে যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে।
আর বঙ্গবন্ধুর এই ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে পল্টনের সমাবেশ থেকে আসম রব বলে উঠলেন, “গণতন্ত্র দিয়ে সমাজতন্ত্র হবে না। মার্কসবাদই মুক্তির মতবাদ।
এই যে একদিকে মুজিব বাদ অন্যদিকে মার্ক্সবাদকে সামনে রেখে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে এক অস্পষ্ট ধারনা দিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন তৈরি করল। তারা কারা?
তাদের সাথে আওয়ামীলীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের কি কোন সম্পর্ক ছিল?
আর কেনইবা তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এই বিভাজন দূর করার চেষ্টা করেননি? যেখানে বঙ্গবন্ধুর ডাককে উপেক্ষা করার মত কেউই ছিলেন না?
আজ যদি এ প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ কি উত্তর দিবেন সেটা তারাই ভাল জানেন। তবে আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে যেটা অনুমিত হয় তা হল কতিপয় মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থেই একটি বৃহৎ গোষ্ঠীকে দূরে ঠেলে রাখতে চাইছিল আর তার ফলশ্রুতিতেই ছাত্রলীগের ঐ সম্মেলনের মাত্র চার মাসের মাথায় জাসদ সৃষ্টি হল।
সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী না হয়েও যার সভাপতি হলেন মেজর জলীল। আর নেপথ্যে নেতা হয়ে রইলেন বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খান। যার নিজের রহস্যময়তার মতই তার বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রও কোনদিনই রহস্যের জাল ছিরে বেরুতে পারেনি।
যে তরুণ তুর্কি দল বিপুল উৎসাহে সামাজিক সাম্যতা তৈরির মহান ব্রত নিয়ে জাসদে যোগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন জাসদ নেতৃত্বের রহস্যময় আচরণ, বিভ্রান্তিকর লক্ষ নির্ধারণ আর হঠকারী কর্মসূচি গ্রহণের ফলে তাদের মধ্য থেকে আদর্শবানরা হয় রাজনীতিই ছেরে দিয়েছেন নয়ত নীরব হয়ে থেকেছেন। পরবর্তীতে তাদের অনেকেই আবার আওয়ামীলীগের পতাকা তলে গিয়ে শামিল হয়েছেন। আর জাসদের যে গোষ্ঠীটি প্রথম থেকেই ব্যাক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে তারাই বিপ্লবের নামে লুটপাট করেছে, মানুষ হত্যা করেছে এবং রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্য শিবিরে যোগ দিয়েছে।
একটা আশ্চর্যজনক বিষয় হল জাসদ জন্মের পরে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে যতবার ভেঙ্গেছে আর তার যে অংশকেই সিরাজুল আলম খান আশীর্বাদ করেছেন ঐ অংশটিই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রসঙ্গত, আজকের জাসদ বলতে আমরা যাকে চিনি হাসানুল হক ইনুর সেই জাসদ কিন্তু ঐ আশির্বাদপুষ্ট নয়। আর সে কারণেই হয়ত আজো দলটি মাথা উঁচিয়ে দাড়াতে পারছে বা দাঁড়িয়ে আছে।
যাই হোক, জাসদের আলোচনা আমার মুল প্রতিপাদ্য নয়, শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী আলোকপাত করা মাত্র। আমার মুল আলোচ্য বিষয় হল আজকের আওয়ামীলীগ।
আজকের আওয়ামীলীগেও যারা ক্রমশ বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামীলীগ কি সময়মত তাদের উপর খড়গহস্ত হতে পারছে?
বাইরের শত্রু নয়, ঘরের শত্রুই সবথেকে বেশী ডোবায়। বাঙ্গালির সেটাই যেন ললাট লিখন। এ ধারাকে প্রতিহত করতে হলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার বিকল্প নেই।
আওয়ামীলীগকে এখন এটা বুঝতে হবে যে, এইমুহুর্তে বিএনপি তাদের প্রতিপক্ষ নয়। সে সক্ষমতা তারা হারিয়েছে। আর জামায়াত যতটা না আওয়ামীলীগের তার থেকে বেশী দেশের প্রতিপক্ষ। কাজেই ওখানেও সাধারণ মানুষকে তারা কাছেই পাবে। আওয়ামীলীগের সবথেকে বড় শত্রু দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা। যারা ঠিক বুকের উপরে বসে থেকেই ছুড়ি চালায়।
বর্তমান আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা হয়ত পনের আগস্ট থেকে শিখেছেন বলেই নেত্রীকে রক্ষা করার সব চেষ্টাই তারা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তারা সে চেষ্টাটা চালিয়েও যাবেন সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সাথে দলকেও তো রক্ষা করতে হবে। সেটাও মাথায় রাখুন।
আওয়ামিলীগের এবার পেছন ফিরে তাকাবার সময় হয়েছে । জাসদ এর জন্ম কিভাবে হয়েছিল। কারা তাদের জন্ম দিয়েছিল কোন প্রয়োজনেই বা জন্ম হয়েছিল এবং সর্বোপরি তখনকার সময়ের সবচেয়ে মেধাবীরাই বা কেন সেখানে ভিড় জমিয়েছিল। সেটা তাদের জানা আছে ঠিকই কিন্তু ধর্তব্যে নেই।
জাসদের কর্মকান্ড ভুল ছিল কিংবা নেতৃত্বের দুর্বলতা যাই হোক না কেন তাদের চ্যালেঞ্জটা কিন্তু আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেই ছিল অথচ তারা মনে প্রানে আওয়ামী চেতনারই ধারক ছিল।
সেদিনের ছাত্রলিগ এবং আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগিদের সাথে আজকের সুবিধাভোগিদের কর্মকান্ডে খুব বেশী পার্থক্য কি খুঁজে পাওয়া যায়?
আওয়ামীলীগ মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন। আওয়ামীলীগ মানেই দেশের এগিয়ে যাওয়া। আওয়ামীলীগ মানেই ধর্মীয় উগ্রবাদী মুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা। এ সব এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য।
কিন্তু এই স্বপ্ন যাত্রাকে সহসাই থামিয়ে দিতে পারে ঔদ্ধত্য আর অরাজকতার মত বীভৎস রূপ। সে রূপটি কিন্তু ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে কাজেই আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে এখন আর শুধু সজাগ নয় শুদ্ধি অভিযানও চালাতে হবে। আর তা শুধু দলের স্বার্থে নয় দেশের স্বার্থেও।
তথ্য সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন।
[email protected]
©somewhere in net ltd.