নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদকে দাড় করাতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা প্রথম আশ্রয় নিয়েছিল ধর্মীয় মৌলবাদের। সেটা যে কেবল ইসলামী মৌলবাদ তা নয়। বলা যায় অঞ্চল ভেদে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় মৌলবাদ। কোথাও ইহুদী মৌলবাদ, কোথাও খৃষ্টান, কোথাও ইসলাম, কোথাও হিন্দু এমনকি বুদ্ধিষ্ট। আর তা করতে গিয়েই তারা টের পেল পুঁজিবাদ আর মৌলবাদকে বাহ্যিক ভাবে সম্পর্কহীন মনে হলেও আসলে এরা আত্মার আত্মীয় যমজ ভাই। উভয়ের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে কিছু অদ্ভুত মিল। যেমন- উভয়েই চরম ভাবাপন্ন, মাত্রাতিরিক্ত স্বার্থপর আর লোভী। সর্বোপরি এদের কেউই ভিন্ন মতের অধিকারে বিশ্বাস করেনা। দেখা গেল এই একই চরিত্রকে যখন এক জায়গায় নিয়ে আশা গেল তখন এরা হয়ে গেল হরিহর আত্মা। একজন ছাড়া অন্যজন চলতেই পারেনা। একজন জান দিয়ে হলেও অন্যজনকে রক্ষা করে থাকে। কারণ তারা এটা বেশ ভালই জানে উভয়ের শক্তি এক না থাকলে তাদের বিস্তার লাভ করা সম্ভব নয়। এমনকি অস্তিত্বও বিলীন হতে পারে। ফলে তারা আর কখনোই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইল না। বরং উভয় শক্তি একত্রিত হয়ে তারা সমাজের শুভ শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো।
সম্রাজ্যবাদিরাও বেশ বুঝতে পারলেন সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদকে দার করিয়ে দিতে হলে মৌলবাদের সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণ খুবই জরুরী। তারা সেটাই করলেন। রাতারাতি ফলও পেয়ে গেলেন। ব্যাস আর যায় কোথা চল এবার মৌলবাদের চাষাবাদ করি। বিশ্বব্যাপী শুরু হয়ে গেল মৌলবাদের চাষ। এরপরেই শুধু বিশ্ব অর্থনীতি বলুন আর সার্বিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বলুন সবটাই আমূল বদলে যেতে থাকল। পুঁজিবাদের সাথে মৌলবাদের সখ্যতা আর তাদের জন্মদাতা এবং পালন কর্তা যে সাম্রাজ্যবাদ তা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন।
লক্ষ করে দেখুন ধর্মীয় মৌলবাদের সখ্যতা কাদের সাথে। আরও একটি বিষয় খেয়াল করে দেখুন। যে দেশে ধর্মীয় মৌলবাদ যত দুর্বল সে দেশে পুঁজিবাদের আগ্রাসন তত কম প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। আবার সে সব দেশে সামাজিক সমতাও তত বেশি। কাজেই যতই চেঁচামেচি করুন না কেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাড়াতে হলে প্রথমেই আপনাকে পুঁজিবাদী আগ্রাসন থেকে বেরুতে হবে। বেরুতে হবে সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বলয় থেকে।
একটি মজার বিষয় লক্ষণীয়; আমরা যাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বলে চিহ্নিত করছি তারা কিন্তু নিজ দেশে কখনোই মৌলবাদকে বেড়ে উঠতে দেয় না। অথচ বিশ্বজুড়ে যত মৌলবাদী সংগঠন রয়েছে তাদের গোপনে সহযোগিতা করে থাকে ঐ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই। এমনকি কোন কোন সংগঠনের জন্মই তারা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ হল তাদের অন্দরের রূপ। আর বাহিরে নিপাট ভদ্রলোকের সাজে এরা খোলস পরে থাকে।
ভিন্ন সেই খোলসটিকে আবার বিশ্বব্যাপী তারা ফেরী করেও বেড়ায়। যার নাম হচ্ছে গণতন্ত্র মূলত যা অন্তঃসার শূন্য এক ধোঁকাবাজির নাম।
গণতন্ত্রকে আমি অন্তঃসার শূন্য বলছি এই জন্যই যে এটি এমন একটি খোলস যাকে পুঁজিবাদ বা সমাজতন্ত্র কোন না কোন একটি কাঠামোর উপরেই নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। ফলে প্রকাশ্যে গণতন্ত্র জপলেও ভিতরে থাকে ভিন্ন তন্ত্র। গণতন্ত্র যেখানে যতটাই ভিত গাড়তে সক্ষম হোক না কেন মূলত তাকে পুঁজিবাদ কিংবা সমাজতন্ত্র এর যে কোন একটাকে আশ্রয় করেই বেড়ে উঠতে হয়। এতে করে যেটা হয়, তা হল: গণতন্ত্র একটি আবরণ দিয়ে মুল শক্তিটাকে ঢেকে রাখে। ফলে সমাজতন্ত্র বা পুঁজিবাদ মুল কাঠামো যাই থাক না কেন, সেটাকে বেমালুম অস্বীকার করে নিজেদের তারা গণতান্ত্রিক বলে পরিচয় দিতে সক্ষম হয়।
গণতন্ত্রকে আমরা যখন বলি সংখ্যাগরিষ্ঠের মত তখন প্রকারান্তরে আমরা নিজেরাই স্বীকার করে নেই যে এখানে উনপঞ্চাশ শতাংশ জনগণের মতামত উপেক্ষিত হচ্ছে । আর এটা যে কোনভাবেই ন্যায়সঙ্গত নয় সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রশ্ন হল তাহলে পরে কেন এই গণতন্ত্রের জন্য এত কান্না? আসলে কান্নাটা গণতন্ত্রের জন্য নয়। কান্নাটা পাওয়া না পাওয়ার। গণতন্ত্রের আড়ালে যে মুল কাঠামোটি রয়েছে সেই প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করে থাকে। মজার বিষয় হল গণতন্ত্রের ছদ্মাবরনটি হাতে পাওয়ার পর থেকে সমাজতন্ত্র এবং পুঁজিবাদও সাম্রাজ্যবাদের মতই প্রতারণার আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তারাও এখন আত্ম পরিচয় ঢেকে রেখে নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে পরিচয় দিতে শুরু করেছে। এখন আর তারা নিজেদের স্বনামে পরিচয় প্রদান করে না ফলে এখন সমাজতন্ত্র ধনতন্ত্র গণতন্ত্র সব মিলে মিশে একাকার।
এর ফায়দাটা মূলত সাম্রাজ্যবাদীরাই তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে। কেননা তারা যে অন্তঃসার শূন্য গণতন্ত্রকে ফেরি করে বেড়ায় এর ফলে সেই ধোঁকাবাজিটাই সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। এখন এই গণতন্ত্র ছাড়া আপনার চলেই না। এই গণতন্ত্রের জন্য হাভাতেরাও এমন কান্না জুড়ে দিয়েছে যেন তথাকথিত এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পরেই গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর আকাশে বাতাসে মুঠো মুঠো সুখ উড়ে বেড়াবে। এখন তারা উঠতে-বসতে, খেতে-ঘুমাতে সর্বদাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।
ব্যক্তি সাদ্দাম হোসেন কিংবা গাদ্দাফি যেমনই থাকুন না কেন তারা যে উভয়ই তাদের দেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন সেটা তোঁ ঠিক। যে ইরাকীদের তেল বেনিয়ারা নিয়ে যেত সেই তেলকেই জাতীয় সম্পদে পরিণত করে ইরাক কতটা উচ্চতায় উঠে গেল। অথবা চোখ ফেরান লিবিয়ার দিকে। মরুকে যেখানে উদ্যান বানানো হল। ফিরে তাকান মিশরের মোবারকের দিকে। এদের প্রত্যেককে উৎখাত করা হল। ইরাক, লিবিয়াকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হল। মিশর তো মরতে মরতেও বেঁচে গেল। কিন্তু সেখানে যে গণতন্ত্র পাওয়া গেল তা বিশ্ববাসী দেখেছে। এরপরে সাম্রাজ্যবাদের চোখ গিয়ে পড়ল সিরিয়ায়। রাশিয়া হস্তক্ষেপ না করলে এতদিনে যে গল্পটি শেষও হয়ে যেত। সব জায়গায়ই গণতন্ত্র ফেরী করা হল। ইরাক-লিবিয়ার জনগণ সোনার দেশকে ছাই করে সেই দামে গণতন্ত্রের নামে আসলে কি কিনল? সেটাই প্রশ্ন।
বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের এই চক্রান্ত খোলা বইয়ের মত। আমরা নিত্যই এর বিভীষিকা দেখছি অথচ সচেতন কি হচ্ছি? প্রতিনিধিত্ব শিল গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা একটি দেশকে সমৃদ্ধির শেখরে নিয়ে যেতে সক্ষম। সেটা প্রতিনিধিত্ব শীল গণতন্ত্র। ফাঁকিবাজির গণতন্ত্র নয়। একটি দেশে যারা গণতান্ত্রিক চর্চা করবে তাদের প্রথমেই শতভাগ সট দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশের সম্পদ দেশের স্বার্থকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। দেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বিনা শর্তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই না তাদের দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা করা সম্ভব। গণতন্ত্রের নামে নিশ্চয়ই আমি দেশ বিরোধী শক্তি আর দেশপ্রেমিক শক্তিকে যুদ্ধের জন্য রাজনীতির মাঠে ঠেলে দেব না। গণতন্ত্রের চর্চার আগেই কিছু বিষয় নির্ধারিত হয়ে যাওয়া উচিৎ।
যেমন; দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কি রাজনীতি করার অধিকার পাবে? দেশে মৌলবাদী শক্তির বিকাশ ঘটতে দেয়া হবে কিনা ইত্যাদি। আর এসব নির্ধারিত হওয়ার পরেই কেবল একটি দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করা সম্ভব। নয়ত গণতন্ত্রের নামে সাম্রাজ্যবাদী লেজুড় বৃত্তিই চলবে। যা একটি দেশকে ক্রমশ অস্থিতিশীল আর অনগ্রসরতার দিকেই নিয়ে যাবে। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ পাকিস্তান।
[email protected]
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কজন যে এই বিষয়ে সচেতন সেটাও একটি বড় প্রশ্ন।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
অেসন বলেছেন: "একটি দেশে যারা গণতান্ত্রিক চর্চা করবে তাদের প্রথমেই শতভাগ সট দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশের সম্পদ দেশের স্বার্থকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। দেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বিনা শর্তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই না তাদের দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা করা সম্ভব। গণতন্ত্রের নামে নিশ্চয়ই আমি দেশ বিরোধী শক্তি আর দেশপ্রেমিক শক্তিকে যুদ্ধের জন্য রাজনীতির মাঠে ঠেলে দেব না। গণতন্ত্রের চর্চার আগেই কিছু বিষয় নির্ধারিত হয়ে যাওয়া উচিৎ। " - একমত এবং ধন্যবাদ।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অেসন আপনাকে। ভাল থাকুন।
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১২
শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: লিখাটা ভালো হয়েছে ।
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ @ শান্তনু চৌধুরী শান্তু
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪১
ইকবাল দিগন্ত বলেছেন: আমাদের দেশটায় মনে হয় এইবার সম্রাজ্যবাদের চোখে পড়ছে। যার সবচেয়ে বড় কারণ মৌলবাদের এইদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করিয়ে দেয়া।
অসম্ভব ভালো লেখেছেন। অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৪
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: আমাদের দেশটায় মনে হয় এইবার সম্রাজ্যবাদের চোখে পড়ছে। সন্দেহ নেই। আপনার জন্যও শুভ কামনা @ ইকবাল দিগন্ত
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন ব্যাপারটাই বুঝা যায় না। আর ফাঁকিবাজির গণতন্ত্র দিয়ে প্রকৃত শিক্ষা লাভও সম্ভব হয় না। তবুও দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।