নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
পচে যাওয়া এই সমাজে ভুক্তভোগীই কেবল শাস্তি পায়। যারা এই পচনের জন্য দায়ী, যারা সমাজে ভয়াবহ ক্ষতের সৃষ্টি করছে তারা থাকে অধরা। একজন নেশাগ্রস্ত মানুষ নিজেই তো একজন ভিকটিম। সেই সাথে তার পরিবারও। আমরা কেবল নেশাগ্রস্তের অপরাধকে বিবেচনায় নিচ্ছি। তার মানসিক অসুস্থতাকে কি বিবেচনায় নিচ্ছি?
আজ আমার সন্তানকে আমি বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি কেননা ঘরের বাইরেই নেশা দ্রব্যের অবাধে ছড়াছড়ি। আমি যখন দেখতে পাই রাস্তার পাশের ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিশোর এমনকি কিশোরীরা পর্যন্ত ধূমপান করছে। যখন কলেজের আশ পাশ, পার্কের ঝোপঝাড় থেকে নেশা গ্রস্ত কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণীকে বের হয়ে আসতে দেখি তখন আমার সন্তানকে আমি কোথায় পড়তে পাঠাব তাই নিয়ে ভাবতে বসি। যতক্ষণ সে ঘরে থাকে মা-বাবার চোখে চোখে থাকে। আর যখনই ঘরের বাইরে পা রাখে তখন স্বাধীন। আমি জানি, তার বন্ধু বান্ধব তার আলাদা জগতে মাদক আর নেশার হাতছানি আছে। শুধু জানি না কতটা সময় সে তা থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হবে।
যদি একজন অভিভাবক হিসেবে এই রাষ্ট্র যন্ত্র এই প্রশাসনের কাছ প্রশ্ন করা হয় যে; আজ পর্যন্ত কেন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল না, যা দেখে শিশু কিশোরের কাছে বিড়ি সিগারেট বিক্রিতে দোকানিরা ভয় পাবে। কেন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল না যা দেখে অভিভাবক গন আশ্বস্ত হতে পারবে যে, বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালীন সময়ে তার সন্তান নেশা দ্রব্য ছুঁয়ে দেখারও সাহস পাবে না। রাষ্ট্র কি জবাব দেবে। কি জবাব দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়? একজন মানুষ একদিনে নেশাগ্রস্থ হয় না এটা ধীরে ধীরে তাকে দখল করে নেয়। এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অভিভাবকের ভূমিকা অনেকখানি, কিন্তু এটাও তো ঠিক তাদের সীমাবদ্ধতাও অনেকখানি।
আমরা যখন দেখতে পাই দেশের আইন প্রণেতা নেশা দ্রব্যের ব্যবসার দায়ে অভিযুক্ত! যখন দেখতে পাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য একই অভিযোগে অভিযুক্ত! এমনকি দু একজন বিচারপতির গায়েও একই কলঙ্কের দাগ। “ফেনসিডিল ও অস্ত্রসহ আটক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেল হাজতে” তখন এ সমাজকে পচে যাওয়া নষ্ট সমাজ বলতে আদৌ কি কোন বাঁধা আছে? তাহলে আজকে ঐশী যদি এ সমাজকে, এই প্রশাসনকে এই রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দার করায় তাকে কি জবাব দেবেন?
ঐশী যে অন্যায় করেছে তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রাপ্য। মহামান্য আদালতও একই কথা বলেছেন। আজ যদি ঐশীর হাতে তার মা-বাবা মৃত্যু বরন না করে তার শ্বশুর শাশুড়ি কিংবা অন্য কোন আত্মীয় অনাত্মীয় মারা পরত আমরা প্রথমেই তার মা-বাবাকেই দায়ী করতাম। যেহেতু ঐশী তার মা-বাবাকেই হত্যা করেছে কাজেই তাদের আর কিছু বলার উপায় নেই। আর তাই এখন আমরা সকল দায় ঐশী’র উপরেই চাপালাম। আমরা কি নিজেদের দায় মুক্ত করতে পারলাম?
ঐশী কেন নেশাগ্রস্ত হল? কি তার অভাব ছিল। সে অভাব পূরণে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কতটুকু নৈতিকতার শিক্ষা তাকে দেয়া হয়েছিল? কারা তাকে নেশার জগতে টেনে আনল? কারা তাকে নেশার যোগান দিল? এ প্রশ্নগুলো কি একেবারেই অবান্তর?
একটি শিশু যে অধিকার নিয়ে জন্মায় আমরা তার কতটুকু পূরণ করতে পারছি। শুধুমাত্র খেয়ে পরে বাঁচাটাই মানুষের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। তাহলে পশুতে আর মানুষে পার্থক্যটা কি থাকে? একটি শিশুকে খাওয়া পরার পাশাপাশি তাকে খেলাধুলার সুযোগ করে দেয়া। তাকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। মানুষের জীবনের মুল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেয়া। এ সব আমাদের তথা এ সমাজের দায়িত্ব। আমরা সে দায়িত্ব পালন করছি না।
আমরা শিশুদের মানুষরূপে গড়ে তোলার মত করে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করছি না। বর্তমান পাঠ্যসূচী শিশুদের লাভ লোকসান আর উন্নত জীবনের নামে আলো ঝলমল এক অলিক পৃথিবীর স্বপ্ন বিলায়। যা তাকে ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর করে গড়ে তুলছে। সেদিকে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজর নেই তাদের নজর শিশুদের পাশের হার বাড়ানোর উপায় নিয়ে। না শিখে পাশ করে লাভটা কাঁর শুনি?
মানুষ গড়ার কারিগর বলে যাদের জানতাম আজ তারা টাকার কাছে সম্পূর্ণরূপে বিক্রি হয়ে গেছেন, তারা কি শেখাবেন? এরপরেও আমরা ঐশীদের পরিণতি দেখে কেন চমকে উঠছি। এমন ঘটনা এত কম কেন ঘটছে সেটা নিয়েই বরং আমাদের চমকে ওঠার কথা! মহান সৃষ্টি কর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর কথা। তাই নয় কি?
আজ একটি শিশু একক পরিবারে স্নেহ –মায়া –মমতাহীন হয়ে বেড়ে উঠছে। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে বৃদ্ধ মা-বাবাকে সাথে রাখছি না। হয় তারা গ্রামে বা মফঃস্বলের জীর্ণ কুটীরে পরে থাকেন নয়ত বৃদ্ধাশ্রমে। আমাদের শিশুরা বয়োজ্যেষ্ঠদের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা শিখছে কিভাবে মা-বাবাকে অশ্রদ্ধা করতে হয়। যে চাচা-চাচী নিকটাত্মীয়দের সাথে তার ভালবাসায় মাখামাখি শৈশব কাটানোর কথা তার স্বাদই সে কোনদিন পায়নি। সে বেড়ে উঠছে একা, তার খেলার সাথী নেই। পরিবারের সম বয়সী শিশুদের সাথে তার দেখা হয় কালে ভদ্রে। ফলে গড়ে উঠছে না মমতার বন্ধন। রক্তের বন্ধন দূরত্বের টানাটানিতে আলগা হতে হতে এক সময় ছিরেই যাচ্ছে।
আমাদের শিশুদের হাতে খেলার সামগ্রী নেই। তাদের জন্য খেলার মাঠ নেই। তাই আমরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছি যন্ত্র। যা তাকেই যান্ত্রিক করে তুলছে। এই শিশুদের করা ভুলে আমরাই আবার তাদের মানবিক বিচারে সাজা দিচ্ছি! বিষয়টা কি ঠিক হচ্ছে? আমরা কি ভেবে দেখেছি যা করছি তার ফলাফলটা কি হতে পারে? কাজটা ঠিক হচ্ছে তো?
যারা নেশাগ্রস্থ মানুষ দেখেছেন, তারা জানবেন। একটা পর্যায়ে নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিটির মধ্যে আর মানবিক গুণাবলি বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। তারা অবলীলায় নিজের হাত পা কেটে ফেলছে, মা-বাবা নিকটাত্মীয়দের খুন করে ফেলছে। মোট কথা তাদের নেশার চাহিদার সামনে আর সব কিছু তুচ্ছ। সেখানে একজন নেশাগ্রস্তকে ফাঁসি দিয়ে কাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এটা একটা প্রশ্ন বৈকি!
নেশাগ্রস্ত কিছু মানুষকে আমি দেখেছি বিশ্বের তাবৎ ভাল ভাল কথা তাদের ঠোটস্ত। তাদের আপনি কি ভাল কথা শোনাবেন; উল্টো আপনাকেই শুনিয়ে দেবে। এদের বিবেচনা শক্তি বলে আসলে কিছুই থাকে না। কাজেই এদের বিচার চাই না পুনর্বাসন চাই সে প্রশ্নটার সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি আইনের চোখ অন্ধ। আইন তার নিজের গতিতে চলে, সেটাই স্বাভাবিক। কোনরকম হিংসা বিদ্বেষের উপরে উঠে, কারো পক্ষ অবলম্বন না করে, সকল আবেগের ঊর্ধ্বে উঠেই মহামান্য আদালত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তু উদ্দেশ্য তো সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা। ভুক্তভোগীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। সর্বোপরি দৃষ্টান্ত স্থাপন যাতে পরবর্তীতে আর কেউ ঐ ধরনের অন্যায় না করেন। আমার যদি বোঝার ভুল না থাকে আর উল্লেখিত কাড়নগুলোই যদি হয় বিচার ব্যবস্থার মুলে তাহলে এ প্রশ্নটা তো করতেই পারি যে, ঐশীর এই বিচারিক রায়ে কি, বিচার ব্যবস্থার উদ্দেশ্য সফল হবে?
আমরা সবাই জানি সমস্যাটার মুল কোথায়। অথচ সেখানে না গিয়ে। সমস্যার মুলে আঘাত না করে আমরা কেবল উপরিভাগের মাথাটাই ছাঁটলাম। এতে কি ডালপালা ছড়ানোর ব্যবস্থাটাই আরও পাকাপোক্ত করলাম না?
অপরাধ এর মূল উৎসকে ধ্বংস না করে আক্রান্ত ব্যক্তিটির উপর খড়গহস্ত হয়ে অপরাধ ধ্বংস অসম্ভব।
পরিশেষে বলব, আজকের শিশুকে আগামীর ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করুন। তাদের নির্মল শৈশব দিন। হাসিখুশিতে ভরপুর নির্মল আনন্দময় কৈশোর দিন তাদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ব্যবস্থা করুন। নেশা দ্রব্যের আমদানি কারক, পরিবেশন কারী সহ ছোট বড় সকল মাদক ব্যবসায়ীর সমূলে বিনাশ করুন। তবেই সুন্দর নির্ভাবনাময় আগামী পাবেন নয়ত ঐশীর মতন বিকৃতমস্তিষ্কের ভয়ংকর কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকুন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্য আমরা সে পথেই হাঁটছি।
[email protected]
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৮
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: আহমেদ জী এস ঠিক বলেছেন আরো আরো অনেক কিছুই দরকার। সমস্যাটা হল আমরা শুরুটাই করছি না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন নিরন্তর।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫
ইকবাল দিগন্ত বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন ,
বলেছেন , আমরা সবাই জানি সমস্যাটার মুল কোথায়।
খুব সরলীবরন হয়ে গেল মনে হয় ব্যাপারটি । একটি সমাজ বিবর্তিত হয়, হাযারো ফ্যাক্টর থাকে পেছনে । এই যে পঁচে যাওয়া সমাজের যে প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরলেন তাও হাযারো ফ্যাক্টরের ফল । তাই খুব সহজেই আপনার আশঙ্কার ব্যপারটির সমাধান সম্ভব নয় বোধহয় ।
আজকের শিশুকে আগামীর ভবিষ্যৎ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারটিও তেমনি সহজ নয় । এর জন্যে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সকল ফ্যাক্টরগুলোর ব্যাপক পরিবর্তন , পরিশীলন, পরিশোধন দরকার । শুধু ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা আর মাদক সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের লোপসাধনই যথেস্ট নয় । আরো আরো অনেক কিছুই দরকার ্
ভালো পোষ্ট ।