নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কর্তারা কী করেন?
যা প্রকাশ্য তা নিয়ে তাদের দৌড় ঝাপের অন্ত নাই। আর যা অপ্রকাশ্য তাকে আরও অধিক গোপনে ঠেলে দেন কালের গর্ভে। যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তা যেন আলোর মুখ দেখতে না পায়। অথবা বলা যায় যা দৃশ্যমান তাকে যতটা সম্ভব মানবিক করে তুলতে। রাষ্ট্র সেক্ষেত্রে মহানুভবতার চরম প্রকাশ ঘটায়। আর যা অদৃশ্য তা যতই মর্মান্তিক হোক কিংবা যতই হৃদয়বিদারক হোক না কেন সে দিকে সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ রাষ্ট্রের থাকে না। ভাবখানা এমন যা হচ্ছে হোক কেউ তো আর দেখেনি! এখানে এটা স্পষ্ট যে, আমাদের রাষ্ট্র মূলত তার নাগরিকদের কাছে ওয়াদা বদ্ধ নয়। রাষ্ট্রের কর্তা গন যতটা চোখ মেলে দেখেন তার থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন চোখ বুঝে থাকতে। কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোন অন্যায় চোখে পড়লেও চেষ্টা করেন না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেতে। মোট কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাটাই রাষ্ট্রের প্রাণান্ত।
যেমন শিশু জিহাদের কথাই ধরুন, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে শিশু জিহাদ শাহজাহানপুরের রেলওয়ে মাঠ সংলগ্ন পানির পাম্পের পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে। খবরটি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস রাতভর অভিযান চালিয়ে উদ্ধারকাজে ব্যর্থ হলেও সেদিন রাষ্ট্রের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। যদিও পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক যুবকদের চেষ্টায় শিশু জিহাদের লাশ উদ্ধার হয়। অথচ শিশু জিহাদের মৃত্যুর জন্য রাষ্ট্রের উদাসীনতাই দায়ী। আমরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখি তাঁরের জট। এমন কোন জটে পড়ে যদি কোন শিশু করুন মৃত্যুর স্বীকার হয় আর গণমাধ্যমে আলোড়ন ওঠে, রাষ্ট্র সেদিনও তাকে উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
বুড়িগঙ্গা মরে যাচ্ছে, কারা মারছে রাষ্ট্র জানে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে যারা বুড়িগঙ্গাকে মারছে তাদেরকেই বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের কাজে অর্থ শ্রম প্রদানে বাধ্য করা। রাষ্ট্র তা করছে না। আগামীকাল বাংলাদেশের সবগুলো গণমাধ্যম বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের মিশনে নামুক এক সপ্তাহের মধ্যে দেখবেন বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার সম্পন্ন। ঠিক একই ভাবে গণমাধ্যম যখন যে দিকটাতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সেই বিভাগটি তখনই সচল হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই গণমাধ্যম গন জাগরণ সৃষ্টিতে সক্ষম আর রাজনীতিগণ জনসাধারণকে যতই উপেক্ষা করুন না কেন তাদের ভয়ের জায়গাটাও ঐ একটিই।
আমাদের রাষ্ট্র চলছেই একধরনের প্রতারণার মধ্য দিয়ে। গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা, ভোট গ্রহণের নামে চলে প্রতারণা, আশ্বাসের নামে চলে প্রতারণা। টিকে থাকতে চলে একের পর এক প্রতারণা। এই প্রতারণা যে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনরা করছেন তা নয়। বিরোধীদল গুলোর দিকে তাকান মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষ হয়ে এতদিন চেঁচিয়েছে। আর এখন ফাঁসি কাস্টে ঝোলা মানবতা বিরোধী অপরাধীর পুত্রকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করছে। কতটা নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী হলে এটা সম্ভব? অথচ তারা কথায় কথায় বলছেন তারা নাকি মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের পক্ষে!
শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা দিনের পর দিন পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে মেরেছে। রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সে বিচারটাও করেনি। এখানে রাষ্ট্রের প্রতারণা বলতে মূলত রাজনীতিবিদ গনের প্রতারণার কথাই বলা হচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতি কতটা কলুষিত তার সবথেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে রাজনীতিবিদগণ নিজেদের সুবিধা মত দেশের জন্মের ইতিহাসটা পর্যন্ত পালটে ফেলার চেষ্টা করেন। তাদের এই প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় গন মাধ্যমের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা। তাদের সজাগ দৃষ্টি হতে পারে সবথেকে বড় রক্ষাকবচ। গণমাধ্যম যদি সবগুলো অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আলো ফেলতে সক্ষম হয় তাহলে ঐ দেশে কোথাও কোন অন্যায়ই দানা বাধতে সক্ষম হয় না।
আর সে কারণেই একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে, রাষ্ট্র আর গণমাধ্যম কোন রকম দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলতে পারে। কিন্তু যদি রাষ্ট্র কল্যাণ ধর্মী না হয়ে হয় নিবর্তন মূলক। সেখানে রাষ্ট্র আর গণমাধ্যম পরস্পর শত্রু ভাবাপন্ন হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যেমন সততা, নিষ্ঠা আর দেশপ্রেমের ঘাটতি থাকলে চলে না তেমনি রাষ্ট্রকে হতে হয় কল্যাণধর্মী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? উত্তরটা কিন্তু খুব সহজ নয়। কেননা একদিকে যেমন আমাদের দেশে রাষ্ট্র বিরোধী, সমাজ বিরোধী মিথ্যে সংবাদ প্রচারিত হতে দেখেছি ঠিক তেমনি গণমাধ্যমের উপর অঘোষিত সেন্সর শিপ আরোপিত হতেও দেখেছি। কাজেই এখানে অনেক সময়ই রাষ্ট্রকে প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। আবার কিছু গণমাধ্যমকে সরকারের নির্লজ্জ চাটুকারিতায় লিপ্ত হতেও দেখা গেছে। যার কোনটাই গ্রহণ যোগ্য নয়। এর প্রধান কারণ হল আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়া পনা আর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে নীতি হীন ভোগের সংস্কৃতি।
রাষ্ট্রকে কল্যাণ ধর্মী করে তুলতে হলে গণমাধ্যমকে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতেই হবে। আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের সহিষ্ণু মনোভাব গণমাধ্যমের বিকাশের জন্য জরুরী। আবার হলুদ সাংবাদিকতা রোধের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দের বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ জরুরী। উভয় পক্ষ যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের সচেষ্ট হয় তবেই আমারা অদূর ভবিষ্যতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দেখা পেতে পারি। এখানে উল্লেখ্য যে, গত কিছু কাল আগেও আমাদের দেশে গণমাধ্যম কর্মীদের যেমন বহুধা বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। সেই অশুভ শক্তি নানাবিধ কারণে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়ায় এখনই সময় গণমাধ্যম কর্মীদের নিজেদের স্বাধীন সত্তা অক্ষুণ্ণ রেখে একটি প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ানো। যা তাদের পুনরায় একটি শক্তিশালী অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। যা সরকারকেও সহায়তা করবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক যে রাষ্ট্রটি গঠন করতে চাই এখন তার উপযুক্ত সময়। প্রয়োজন একই মনো ভাবাপন্ন এই লোকগুলোর একতাবদ্ধ হয়ে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয়ের। যাতে পরবর্তীতে আর কোন দিনই এই শক্তি দুর্বল হয়ে না পড়ে।
[email protected]
©somewhere in net ltd.