নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন

আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম শান্তির ধর্ম

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১



ইসলামে মানব মর্যাদার ধারণা
ইসলামে মানুষকে 'আশরাফুল মাখলুকাত' বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ' (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, 'আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে। ' (সুরা : আদ্ব-দোহা : ৪) এ ছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করা হয়েছে। এর সাহায্যে যে সমগ্র ঊর্ধ্বজগৎ ও অধঃজগৎকে নিজের কাজে নিয়োজিত করতে পারে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে : 'এবং তিনি তোমাদের জন্য অধীন ও আজ্ঞাবহ করেছেন আসমান ও জমিনের সব কিছু। ' এ শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়ে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের আদম (আ.)-কে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনের ভাষায়, 'এবং যখন আমি হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতীত সকলে সেজদা করল। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। ' (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৪) এমনকি মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বিবেচনা করেই তার জান, মাল, বিবেক-সম্ভ্রম, ধর্ম ও বংশ রক্ষা করার জন্য ইসলাম বহু বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে। মানুষের ধর্ম রক্ষার জন্য জিহাদের নির্দেশনা; তার জান ও রক্তকে হেফাজত করার জন্য কিসাসের বিধান জারি করেছে। মানুষের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য গিবত-শেকায়েত ও পরনিন্দার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মানুষের বংশপরম্পরাকে রক্ষা করার জন্য জিনা-ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করে বৈবাহিক জীবনাচারের নির্দেশ প্রদান করেছে। মানুষের মেধা-মনন, বিবেক-বুদ্ধি সতেজ ও পরিশোধিত রাখতে সব মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের সম্পদকে রক্ষা করার জন্য সব রকমের চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। এভাবেই ইসলাম মানুষকে মানবিক মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করেছে।

নিরপরাধ মানুষ হত্যা ইসলামে মহা-অপরাধ

মানবতা ও নৈতিকতার কোনো স্তরেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ও অহেতুক রক্তপাতকে সমর্থন করা হয় না। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে তারা মানবতাবর্জিত ও সভ্যতার শত্রু। শান্তি, সাম্য ও মানবিক ধর্ম ইসলাম মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য সব ধরনের জুলুম, অন্যায় ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করেছে। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেন, 'আজ এই পবিত্র দিনে (বিদায় হজের দিন) পবিত্র মাসে এবং পবিত্র (মক্কা) শহরে তোমাদের জন্য যেমন (যুদ্ধবিগ্রহ ও অপকর্ম করা) অবৈধ, তেমনিভাবে তোমাদের জান ও মাল বিনষ্ট করাও অবৈধ। ' (বুখারি : ১৭৪১, মুসলিম : ১৬৭৯)
এ জন্য ইসলাম নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে শিরকের পর বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। ' (বুখারি : ৬৮৭১, মুসলিম : ৮৮) অপর হাদিসে এসেছে : 'দুনিয়া ধ্বংস করার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতর কাজ হলো মানুষ হত্যা করা। ' (তিরমিজি শরিফ)
মুসলমান সব সময় আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের পাহারায় বিচরণ করতে থাকে; কিন্তু সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত হলে আল্লাহর রহমত উঠে যায়। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ আজাদ ও প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়। ' (বুখারি : ৬৮৬২) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কেবল বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনাই নয়; ইসলামের দৃষ্টিতে সেটা পুরো মানবজাতির বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজ। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, 'নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে দুনিয়ার সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল। ' (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩২) অন্যকে হত্যাকারী, প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত ব্যভিচারী, ধর্মদ্রোহী ও যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের হত্যা করা ব্যতীত ইসলামে সব রক্তপাত নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, 'আপনি বলুন, এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের প্রতিপালক যা হারাম করে দিয়েছেন, তা তিলাওয়াত করি যে তোমরা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহ করবে আর দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমিই তোমাদের রিজিক দিই এবং তাদেরও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না, যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে তা থেকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সে প্রাণকে হত্যা কোরো না- আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এসব আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। ' (সুরা : আনআম : ১৫১)

অন্যায় হত্যার পরিণতি ভয়াবহ

নিরীহ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চেয়ে ভয়াবহ পাপ আর সমাজে নেই। ইসলামী শরিয়ত মতে পৃথিবীর সব মানুষ মিলে যদি একটি অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তবে কিয়ামতের দিন সবাইকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'যদি আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য একমত হয়, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। ' (মুসনাদে আহমদ) চূড়ান্ত বিচারের দিনে অন্যায় হত্যাকাণ্ডের মোকদ্দমা দিয়েই বিচারকার্য শুরু হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, 'কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত। ' (বুখারি : ৬৩৫৭)
নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারীকে দুনিয়াতেও মৃত্যুদণ্ড বা অর্থদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, 'আর তোমরা সেই জীবনকে হত্যা কোরো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন- সংগত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে (মৃত্যুদণ্ড, অর্থদণ্ড বা ক্ষমার) অধিকার ও ক্ষমতা দান করেছি। সুতরাং এ ব্যাপারে সে যেন সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়ই সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত। ' (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৩) দুনিয়ার শাস্তি ভোগ করার পরও পরকালে অন্যায় হত্যাকারীর জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। ...আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। ' (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ৯২-৯৩)
বরং এমন অত্যাচারী ব্যক্তি কিয়ামতের দ্বিগুণ শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, '(রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। যারা এ কাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। ' (সুরা : আল-ফুরকান : ৬৮-৬৯)
হাদিস শরিফে এসেছে : "হত্যাকৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এমনভাবে নিয়ে আসবে যে হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে হত্যাকারীকে আরশের কাছে নিয়ে আসবে 'হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে। '" (মুসনাদে আহমদ : ২৫৫১, তিরমিজি : ২৯৫৫)
যুদ্ধাবস্থায়ও নিরপরাধ মানুষ হত্যা অবৈধ
মানবতার লালন ও সংরক্ষণের প্রতি ইসলামের এতই সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি যে যুদ্ধাবস্থায়ও সে মানবাধিকারের প্রতি পুরোপুরি লক্ষ রাখার শিক্ষা দেয়। প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) যখন সিরিয়ায় সেনা পাঠান তখন তাদের ১০টি নির্দেশ দিয়ে দেন। সে নির্দেশ ছিল এই :
১. নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কেউ যেন হত্যা না করে।
২. লাশ যেন বিকৃত করা না হয়।
৩. আশ্রম, প্যাগোডা ও কুঠরিতে উপাসনারত সন্ন্যাসী ও তপস্বীদের কষ্ট দেওয়া যাবে না। কোনো উপাসনালয় ভাঙা যাবে না।
৪. ফলবান বৃক্ষ যেন কেউ না কাটে এবং ফসলের ক্ষেত যেন পোড়ানো না হয়।
৫. জনবসতিগুলোকে (সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে) যেন জনশূন্য না করা হয়।
৬. পশুদের যেন হত্যা করা না হয়।
৭. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা চলবে না।
৮. যারা আনুগত্য স্বীকার করবে তাদের জানমালকে মুসলমানদের জানমালের মতো নিরাপত্তা দিতে হবে।
৯. গণিমতের সম্পত্তি যেন আত্মসাৎ করা না হয়।
১০. যুদ্ধে যেন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা না হয় (মুসান্নাকে ইবনে আবি শায়বাহ : ষষ্ঠ খণ্ড, পৃ: ৪৮৭-৪৮৮)
এ নির্দেশাবলি অধ্যয়ন করলে বোঝা যায় যে ইসলাম যুদ্ধকে সব হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে পবিত্র করে দিয়েছিল। অথচ সে সময়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের নামেও নিরীহ মানুষ হত্যা করা ইসলাম সম্মত নয়।

আদর্শিক দ্বন্দ্বে প্রতিশোধ নয়, পরমতসহিষ্ণুতাই কাম্য

পারস্পরিক মতানৈক্য, হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, সংকীর্ণ মানসিকতা- এসবই ইসলামবিরোধী অথচ এগুলোই আজ মুসলিম জাতির নিত্যজীবনসঙ্গী। চিন্তাধারার পার্থক্যকে কেন্দ্র করে সংহতি বিপন্ন হওয়ার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। ইসলামের মৌলিক আদর্শিক কাঠামোর মধ্যে খুঁটিনাটি বিষয়ে চিন্তাধারার পার্থক্য থাকাটাও দূষণীয় নয়, বরং এতে মুসলিম উম্মাহর সৃজনশীল মনীষা ও চিন্তাশীলতাই প্রমাণিত হয়। কিন্তু মতান্তর যখন মনান্তরে পর্যবসিত হয় তখনই তা সামাজিক সংহতির পরিবেশ নষ্ট করে। সাহাবিদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। পরবর্তীকালে ইমামদের চিন্তাধারার প্রচুর পার্থক্য দেখা গেছে। সারা জীবন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ইমাম শাফেয়ী তাঁর মাজার জিয়ারতকালে পরলোকগত ইমামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নামাজে 'রাফে ইয়াদাইন' থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যে অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন, আজকের দিনে তা অকল্পনীয়। আদর্শিক চেতনার কারণে মানুষ হত্যা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে ভিন্নমতাদর্শী যে কেউই।

বিশ্বের ক্ষমতালোভী শাসকদের জন্য উসমান (রা.)-এর বার্তা
এ বিশ্বের কোনো কিছুই অমর ও অবিনশ্বর নয়। ক্ষমতাও এর ব্যতিক্রম কোনো বস্তু নয়। সব পরাশক্তি ও ক্ষমতারই লয় আছে, ক্ষয় আছে। ইসলামের ত্রাণকর্তা ও তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-কে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যখন শত্রুদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেল, তিনি ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য হত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম ও গণহত্যার পথ বেছে না নিয়ে অত্যন্ত সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে এ বিপৎসংকুল কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। তিনি একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে বিভিন্ন প্রদেশের প্রকৃত অবস্থার রিপোর্ট তলব করেন। কিন্তু কমিশনের রিপোর্ট হজরত উসমান (রা.)-এর অনুকূলে ছিল। প্রকৃতপক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া গেল না। রিপোর্ট পেয়ে তিনি মদিনায় প্রাদেশিক গভর্নরদের জরুরি সম্মেলন ডাকেন। সম্মেলনে বসরার গভর্নর সাঈদ ইবনুল আমের (রা.) প্রস্তাব দিলেন, তাদের উপস্থিত করে একসঙ্গে হত্যা করে ফেলুন। এতে ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন হয়ে যাবে। কুফার গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) প্রস্তাব দিলেন, কোনো অমুসলিম এলাকায় তাদের পাঠিয়ে দিন, যাতে যুদ্ধে তারা নিহত হয়। সিরিয়ার গভর্নর হজরত মুআবিয়া (রা.) প্রস্তাব দিলেন, প্রতিটি এলাকার গভর্নরকে নিজ এলাকার সন্ত্রাসীদের দমন করার দায়িত্ব দিয়ে দিন। মিসরের গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে সা'দ (রা.) প্রস্তাব দিলেন, 'তাদের প্রচুর পরিমাণে অর্থকড়ি দিয়ে দিলে তারা ষড়যন্ত্র বন্ধ করবে বলে আমার ধারণা। ' হজরত উসমান (রা.) বললেন, 'আমার পক্ষ থেকে কোনো আক্রমণ করা হবে না। কাউকে কতল করা হবে না। প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। ' সব গভর্নরকে তিনি ন্যায়নীতি ও ইনসাফের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়ে পরামর্শ সভা মুলতবি করেন। ধীরে ধীরে এ সংকট আরো ঘনীভূত হলো। ষড়যন্ত্রকারীরা হজরত উসমান (রা.)-কে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তাঁর বাসায় পানি সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে হজরত আলী (রা.)সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম হজরত উসমান (রা.)-কে বারবার অনুরোধ করে বলেন, 'আপনি অনুমতি দিন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ' হজরত উসমান (রা.) সবাইকে কোনো আক্রমণ না করার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ করে দিলেন। বিপত্তি যা ঘটার তা-ই ঘটল। হজরত উসমান (রা.) শহীদ হয়ে গেলেন। হত্যা ও গণহত্যার আদেশ দিলে হয়তো তিনি প্রাণে রক্ষা পেতেন, কিন্তু তিনি রক্তপাত ও নিরীহ মানুষের প্রাণহানির শঙ্কায় নিজের জীবনেরই ঝুঁকি নিয়ে নেন। আজকের সিরিয়া ও মিসরে ক্ষমতার লড়াই নিয়ে যে অন্যায় হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা কেবল ধর্মবিরোধীই নয়, সভ্যতা ও মানবতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাকিস্তানে ও অন্যান্য দেশে বোমা মেরে নিরীহ মানুষ হত্যা করাকে জিহাদ বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ইরাকের বিরোধী শক্তিগুলো যদি নিজ হাতে ক্ষমতা তুলে নেয় আর নিরপরাধ মানুষকে হত্যার হোলিখেলায় মেতে ওঠে, ইসলামের চোখে তা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বিশ্বের ক্ষমতালোভী শাসক শ্রেণি কি হজরত উসমান (রা.)-এর জীবন ও আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না?

বিঃ দ্রঃ- মূল লেখা "নিরপরাধ মানুষ হত্যার পরিণতি ভয়াবহ" লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিধায় হুবুহু তুলে দেয়া হল। এটি লিখেছেনঃ কাসেম শরীফ। যিনি একজন ইসলামী গবেষক। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪ সালে কালের কন্ঠ পত্রিকায়।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম এটা সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হবে!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৭

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: মোটেই না, তবে তা আমার আপনার জন্য। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটা নিশ্চয়ই একটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬

চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন: অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটা নিশ্চয়ই একটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। বেমানান।

মনে হয় না গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য সার্টিফিকেটের প্রয়োজন

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: যার যার ধর্ম তার তার কাছে শতভাগ সঠিক। যখন এক ধর্মাবলম্বী অন্য ধর্ম সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে তখন সেটার গুরুত্ব অন্যন্যদের কাছে বারে বৈ কি?

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯

চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন: তবে লিখাটা অনেক ভাল হয়েছে!

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২২

ভাবুক কবি বলেছেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম এটা প্রমাণের কিছু আছে কি!!!

৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭

অগ্নিবেশ বলেছেন: ইসলাম শান্তির ধর্ম, কোন দেশে সেই শান্তি পাওয়া যাবে?

৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২০

প্রািন্ত বলেছেন: একজন বাংলাদেশী কুটনীতিক থাকতেন ইংল্যান্ডে। তিনি একদিন একজন খ্রিষ্টান ইংরেজ মহিলাকে একটি ইংরেজী ভার্সনের কোরআন শরীফ পড়েতে দিয়েছিলেন। মহিলা দীর্ঘ দিন মনোযোগ সহকারে ইংরেজী ভার্সনের কোরআন পড়ে খুব খুশি হলেন। তিনি একদিন কোরআনটি ফেরত দিতে আসলেন এবং যার পর নাই প্রশংসা করলেন। এবার বাংলাদেশী ভ্দ্রলোক ভাবলেন- খ্রিষ্টান মহিলা যেভাবে আকৃষ্ট হলেন তিনি নিশ্চয়ই ইসলাম গ্রহণ করবেন। একদিন খ্রিষ্টান ইংরেজ মহিলা আবার তার কাছে এলেন। বাংলাদেশী ভ্দ্রলোক ভাবছেন মহিলা নিশ্চই ইসলাম গ্রহণ করতে চাইবেন। খ্রিষ্টান ইংরেজ মহিলা বলেন, ‘ভাই, একদিন আপনি আপনাদের ধর্মের একটি সুন্দর গ্রন্থ আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। এবার আর একটি কোরআন আমাকে দিন’। ভদ্রলোক তো অবাক। তিনি বলেলেন, আমাদের আর কোন কোরআন শরীফ নেই। কোরআন শরীফ একটাই। গোটা পৃথিবীতে প্রতিটি কোরআন শরীফে এই কথা লেখা রয়েছে। তখন ইংরেজ মহিলা বললেন- ‘আমি যে কোরআন শরীফ পড়েছি, তার সাথে আপনাদের চরিত্রের মিল কোথায়’? আপনারা যে কোরআন শরীফ ফলো করে চলেন আমি সেটা চাইছি।
সুপ্রিয় লেখক। ভাবুন একবার। কথাটি একবার পর্যালোচনা করুন। সবধর্মে ভাল কথাই লেখা থাকে শুধু আমরাই তার অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যা করে থাকি। আপনার লেখাটি খুব ভাল হয়েছে।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৪

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: খুব ভাল লাগল ভাই আপনার কথাগুলো। এটাই চরম সত্য। ধর্মের সবথেকে বেশী অবমাননা করতে পারে মোনাফেকরা। তারা ধর্মের অপব্যখ্যাটা সবথেকে বেশী করে। আর মোনাফেক তো তারাই যারা মুখে বলে একটা, জীবন যাপন করেন একভাবে আর ধর্মের বিধান থাকে আরেকটা। অথচ তারা ধর্মের দোহাই দিয়েই সব করে। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.