নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মানুষের কথা বলি। মানবতার কথা বলি। স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। নিরাপদ একটি ভূখন্ডের।
ছবিঃ প্রথম আলো
আজ বাবা দিবস! আজকের এই বাবা দিবসে খবরের কাগজ বলছে কোথাও বাবার হাতে সন্তান খুন হচ্ছে। কোথাও সন্তানের হাতে বাবা খুন হচ্ছে! একদিকে আমরা বাবা দিবস পালন করছি আর এক দিকে বাবাকে সন্তান-সন্তানকে বাবা খুন করছে। সমাজে চরম বৈপরীত্য লক্ষ করা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন বটে কিন্তু কতটা সচেতন তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ একদিকে একতাবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে অন্যদিকে খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়েছে। পুরো ব্যাপারটিই তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। মানুষ একতাবদ্ধ থেকেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে আর খুনোখুনিতে লিপ্ত হয়েছে স্বার্থ হানী ঘটলে। সৃষ্টির শুরু থেকে এই ধারা আজো বহমান। কিয়ামত অব্ধি এ চলতে থাকবে, এটা নিশ্চিত। তারপরেও পূর্বেকার হত্যাকাণ্ড আর এখনকার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য সুস্পষ্ট। আর সেটাই সব থেকে বেশি চিন্তার বিষয়।
একটা সময় ছিল মানুষ নিজের স্বার্থ বলতে গোষ্ঠী স্বার্থকে বুঝত। তখন একটি গোষ্ঠী আর একজন ব্যক্তির মধ্যে তারা কোন সীমারেখা টানত না। নিজেদের মধ্যে স্বার্থ হানীকে তারা বড় করে দেখত না। একে অন্যকে ছাড় দিয়ে একত্রে মিলে মিশে থেকেছে। প্রতিটি গোষ্ঠীর মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্কটা ছিল সেটা এতটাই মজবুত ছিল যে ব্যক্তি স্বার্থ তাকে ছাপিয়ে যেতে পারত না।
সময় যত গড়াতে থাকে বিভিন্ন কারণে মানুষ তত বেশি পৃথক হতে শুরু করে। গোষ্ঠী প্রীতি স্বজনপ্রীতিতে রূপ নেয়। রক্তের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। ক্রমশ: স্বার্থপরতা মানুষকে আরও বেশি করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে বাচতে শেখায়। এভাবেই এক সময় যৌথ পরিবার, সেখান থেকে একক পরিবারের যাত্রা। আর এখনকার এই সময়ে মানুষ কেবল নিজেকে নিয়েই ভাবতে শুরু করেছে। কেবল নিজের স্বার্থ!
নিজেকে নিয়ে মানুষের এই যে একক চিন্তা ভাবনা। এই যে নিজস্ব বলয় সে গড়ে তুলছে তার মধ্যে তার জন্ম দাতা পিতা-মাতা, তার স্ত্রী-সন্তান, ভাই-ভগিনী কেউ ঠাই পাচ্ছে না। ফলে সে খুব সহজেই দায় সারা হতে পারছে। নিকটাত্নিয়দের স্বার্থ হানী ঘটাতে পারছে। প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় খুনও করে ফেলতে পারছে। আমরা এ সব খুনো খুনি দেখে যতটাই আঁতকে উঠি না কেন যারা এ সব কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা নির্বিকার। এমন কি ধরা পড়লে কি পরিণতি হবে সেটাও ভাবছে না। এদের মানসিকতা এমন যে, আমি ভোগ করতে না পারলে অন্যকেও ভোগ করতে দেব না। নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। অন্যকে খুন করা আর আত্মহত্যা করা দুটোই খুন। দুটোই ঘটে স্বার্থ হানীতে। এরা নিজেকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে ভাবে না। এরা বাঁচে কেবল নিজের জন্য মরেও নিজের জন্যে। এদের চরিত্রই এমন। সমস্যা হল এদের থামানোর কেউ নেই। কেউ কাউকে মানে না কেউ কাউকে মানাতে যায়ও না। ফলে অপরাধ বেড়েই চলেছে।
অনেকে বলছেন এটা করোনা কালিন অস্থিরতা থেকে হচ্ছে। আসলেই কি তাই? ঘটনাপ্রবাহ তা বলে না। তবে হ্যাঁ করোনা কালীন সময়ের কর্মহীনতা মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা হীনতা সৃষ্টি করেছে যা মানুষের এই পৈশাচিক রূপটিকে সামনে টেনে এনেছে এটা সত্য। তবে সমস্যাটা নতুন নয়। এর পেছনে রয়েছে মানুষের ক্ষয়ে যাওয়া মনুষত্যবোধ আর ভোগবাদীতা ও ভন্ডামী্র লম্বা তালিকা। আর সব থেকে দায়ী দায়মুক্তির মানসিকতা। একটি সমাজকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে এর প্রতিটি সদস্যের দায় রয়েছে। সমাজের যারা নেতৃত্বে থাকেন তাদের দায় বেশি ঠিক, কিন্তু দায়মুক্ত নন কেউই। কাজেই আজকে সমাজে যে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে তার দায় আমাদেরই। এই যে বিভিন্ন দিবস আমরা পালন করি। এটা স্রেফ একটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। নয়ত মা-বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করছি না অথচ তাদের উপলক্ষ করে দিবস পালন করছি। এটাকে প্রতারনা বৈ আর কি বলা যায়?
পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের উপর ভিত্তি করে একদা যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল আজ সেখানে স্থান করে নিয়েছে স্বার্থপরতা, ঘৃণা, লোভ আর জিঘাংসা। যা সমাজের শৃঙ্খলাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলেছে। ঘৃণা, লোভ, জিঘাংসা এ সব সমাজ সৃষ্টির সময়েও ছিল কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখতে ছিল কিছু অলিখিত নিয়ম কানুন। যাকে আমরা এক কথায় বলি ট্যাবু। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার লঙ্ঘন ছিল চরম অসম্মানজনক, এবং সমাজের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য। আজকের এই সময়ে এসে দেখতে পাই সমাজে এর কোন চর্চা নেই। আমরা সামাজিকভাবে সমাধানযোগ্য বিষয় থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরোপুরি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। ফলে এখানে দেখা দিয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা।
সামাজিক অবক্ষয় বলছি সত্য কিন্তু সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছি না। অথচ বর্তমান সময়ের এই অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে আমাদের সবার আগে শিকরে হাত দিতে হবে। শিকর যদি মজবুত না হয় বৃক্ষ নড়বড়ে হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
পরিবার থেকে শিক্ষা শুরু হোক, সমাজ দেখভাল করা শুরু করুক অনেক অপরাধ সমাজ থেকে মুছে যাবে। এক সময় যে সব অপরাধের অস্তিত্বই ছিল না, সে সব অপরাধ দূর করতে প্রয়োজন শক্তিশালী সামাজিক বলয় তৈরি করা। যার মধ্যে প্রথমেই বলতে পারি কিশোর অপরাধ, নারী ও শিশু নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা। এই অপরাধগুলো রাষ্ট্র যত কঠোর আইনই প্রয়োগ করুক না কেন। দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু শক্তিশালী সামাজিক বলয় তৈরি করা গেলে এই অপরাধ গুলো নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
শক্তিশালী সামাজিক বলয় সৃষ্টি করতে হলে সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্র এখানে কেবল সাহায্য করতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ নিজেদের স্থান থেকে পরিবার তথা সমাজ বিনির্মাণে উদ্যোগী হওয়া।
২১ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:০৭
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: শক্তিশালী সামাজিক বলয় তৈরি করা গেলে এই অপরাধ গুলো নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ধন্যবাদ কামাল ভাই।
২| ২০ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১
স্বপ্নাশিস বলেছেন: ঠিক বলেছেন । সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে।
২১ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:০৯
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: শক্তিশালী সামাজিক বলয় তৈরি করা গেলে এই অপরাধ গুলো নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ধন্যবাদ স্বপ্নাশিস।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৫
কামাল১৮ বলেছেন: অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সামাজিক পরিবর্তন জড়িত।এখন লুটেরা অর্থনিতি তার সাথ তাল মিলিয়ে অস্থির সমাজ।