![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ৪ মাস পূর্বেই চাকুরী হয়ে যায়। চাকুরীটি ছিল একটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ে চাকুরীর বেতন প্রাপ্তি সম্পর্কে আমার পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। চাকুরী করতে করতে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এর মধ্যে বেতন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাটাই আজ শেয়ার করি।
যেহেতু আমার ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে আমাকে চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়, সে অনুযায়ী আমার চাকুরীর নিয়োগটা কতটুকু যৌক্তিক ছিল তা আমি বলতে পরবো না। তবে আমার ঐ পদে যে যোগ্যতা প্রয়োজন সেই যোগ্যতার লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে নিয়োগ বিধিতে কিছুটা শিথিলতা ছিল বলে পরে জানতে পারি। প্রসঙ্গত বলে রাখা প্রয়োজন আমার চাকুরীটি হয়েছিল যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে। আমার বাড়ি হচ্ছে চাঁদপুর জেলায়। আনেক দূরেই ছিল আমার কর্মস্থল। তা ও আবার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সাধারনত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এলাকার লোকজনই চাকুরী করে থাকে। যাই হোক এত দূরের চাকুরী তবুও আমি যোগদান করি।
বাংলা সিনেমায় দেখা যায় নায়ক চাকুরী পাওয়ার সাথে সাথে অগ্রিম বেতন দেওয়া হয়। খুশিতে নায়ক বাড়ি গিয়ে সবাইকে বিষয়টি অবহিত করে। আমার এই চাকুরীতে তাৎক্ষণিক বেতনের আশা আমি করিনি, কিন্তু মাস শেষ হলেই বেতন পাব তেমনটিই আশা করেছি। কিন্তু আমাকে বেতনহীন ১৬ মাস চাকুরী করতে হয়। বড়ই মানসিক যন্ত্রণাদায়ক ছিল সে দিনগুলো। যে চাকুরীর বেতনের জন্য, পরিবারে হাল ধরার জন্য চাঁদপুর থেকে যশোর এসেছি বিদ্যালয়ে চাকুরী করতে, সে চাকুরীতে নাকি বেতন পেতে এম.পি.ও ভূক্তির প্রয়োজন। তা না হলে বেতন পাব না। এক একটি করে মাস যেতে থাকে কিন্তু বেতনহীন তবুও পড়ে আছি যে, একসাথে বকেয়াসহ সব বেতন পাব। কিন্তু তা আর হল না। ১৬ মাসেরই বেতন নাই। যাই হোক তবুও শেষ পর্যন্ত পেয়েছি এবং এম.পি.ও ভূক্তি কি ও কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
এম.পি.ও ভূক্তির জন্য বিদ্যালয় থেকে সব কাগজ পত্র ঠিকঠাক করে প্রথমে যেতে হয় জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে। সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার ফরওয়াডিং লেটার দিয়ে সেই কাগজ পত্র পাঠান ঢাকায়। তবে এসব কিছু অফিসিয়ালি হওয়ার কথা থাকলেও অফিসিয়ালি জীবন দশায় মনে হয় কারো হয় না। তাই এগুলো নিয়ে যেতে হয় হাতে হাতে। এবং নিজ উদ্যোগে অর্থের বিনিময়ে তা কিরিয়ে নিতে হয়। তা না হলে ঐ কাগজপত্র খুঁজেই পাওয়া যাবে না। নিজে ডাকে প্রেরণ করে আবার ঢাকায় এসে নিজেকেই সেই কাগজ খুঁজে বের করে বলতে হয় এটা আমার। তবেই তা রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ হবে।
হাতে হাতে কাজ করানোর লক্ষ্যে কাগজপত্র নিয়ে প্রথমে গেলাম যশোর জেলা শিক্ষা অফিসে। ঐ জেলার অফিস আদালত সম্পর্কে আমার কোন চেনা জানা নেই বলে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে আমার সাথে দেওয়া হল। দুইজন মিলে অফিসে আসলাম। শিক্ষা অফিসে জেলা শিক্ষা অফিসারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (ঠিক কোন পদবীর তা সঠিক জানা নেই) কাগজপত্র সব যাচাই বাচাই করে দেখছেন। তার ডেস্কের আয়নার নিচে বড় করে লেখা ছিল " ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কথা বলা সম্পূর্ন নিষেধ"। তাই তিনি কোন প্রকার কথা বলছেন না আমাদের সাথে। যা কিছু বলছেন ইশার ইঙ্গিতে। কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সব ঠিক আছে এমনই ইঙ্গিত করলেন। এবং সাথে সাথে মুখ ফুটে স্পষ্ট ভাষায় বললেন পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। আমিতো শুনেই অবাক। টাকার কথা শুনে যতটা অবাক হয়েছি, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এই জন্যই যে লোকটির কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ, অথচ টাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মুখ ফুটে বলে ফেললেন ৫০০০ টাকা লাগবে। বড়ই আজব ব্যাপার। টাকায় কথা বলে। যাই হোক আমার সাথে থাকা শিক্ষক দরদাম করে ১২০০ টাকার বিনিময়ে সেই কাজটি করিয়ে নিলেন। এটাই হয়ত ওদের নীতি, যাকে আমারা গলা চেচিয়ে বলি দূর্নীতি।
এরপর ঐ কাগজপত্র আসবে ঢাকায়। ঢাকায় এসে আমাকে খবর নিতে হবে ঐ কাগজপত্র পৌছেছে কিনা। পৌছানোর পর কিছু বকশিশ (ওদের নীতি) দিয়ে তা রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে নম্বর নিতে হবে। লিপিবদ্ধকৃত কাগজপত্রের নম্বর নিয়ে গেলাম এক কর্মকর্তার কাছে, যার মাধ্যমেই এই কাজ গুলো হয়। উনি সব কিছু দেখে বললেন ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে। তা না হলে কাজ হবে না, কাগজ কাগজের জায়গায় পড়ে থাকবে। আমি তো যথারীতি শুনে অবাক। বললাম স্যার গরীব পরিবারের সন্তান। জীবিকার তাগিদে চাঁদপুর থেকে যশোর গিয়েছি চাকুরী করতে, এত টাকা দিতে পারবো না। উনি আমার কথা শুনেই রেগে মেগে আগুন। বললেন যাও যাও, বেরিয়ে যাও, আমার অনেক কাজ আছে। উনি আমাকে বের করে দিলেন। বোকা ছেলের মত বাসার ফিরে আসলাম। বাসায় সবাইকে বিষয়টি অবহিত করলাম। সবাই আমাকে বললো যে, তুমি দর কষাকষি করে একটা টাকার অংক ঠিক করে রেখে আসা উচিত ছিল। কারণ টাকা ছাড়াতো আর কাজ হবে না। এটাই যে এদেশের নিয়ম।
পরের দিন আমার কাকা ও আমি গেলাম ঐ স্যারে কাছে। তিনি কিছুতেই আমার কাজ করবেন না। আমাদের সাথে কথা ই বলতে চান না। মহাবিপদ। বুঝলাম গতকাল আমারই ভুলটা হয়েছে। আজতো উনি আর আমার কাজই করবেন না। পরে আমাদের এলাকার এক পিয়ন এর সাথে পরিচয় হলো। তাকে বিষয়টি সম্পর্কে বলে অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে ঐ স্যারের কাছে তাকে পাঠিয়ে দশ হাজার টাকায় বিনিময়ে এম.পি.ও ভুক্তির জন্য কাগজপত্র জমা রেখে আসি। পরবর্তী এম.পি. ও তে নাম যাবে এবং বেতন পাব। এর পর শুধু অপেক্ষা কবে পাব সেই বেতন। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে ১৬ মাস পর পেলাম সেই বেতন। প্রথম বেতন প্রাপ্তিতে আনন্দ কতটুকু পেয়েছি তা জানা নেই। তবে আনন্দ তেমন পাইনি। কারন বেতন হিসেবে এক সাথে মনে হয় ১৪০০০ টাকা পেয়েছি। যার তুলনায় ১৬ মাসের ধার দেনা ছিল অনেক অনেক বেশি। এর মাঝে সেই যে এম.পি.ও ভূক্তির জন্য ১০০০০ টাকা তো আছেই। এই ছিল বেতন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা।
নতুন কোন অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে আবার শেয়ার করবো। আজ আর নয়।
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৫
বইয়ের পোকা বলেছেন: আমরা যে কবে আমাদের শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখব? দরীদ্র শিক্ষকদের কাছ থেকেও কয়টা টাকার লোভ আমরা সামলাতে পারি না!!!!
৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৯
তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: +++++++
৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪১
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাল লিখেছেন
৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪১
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাল লিখেছেন
৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৩
ধানের চাষী বলেছেন: ১৬ মাস বেতন ছাড়া !!!
৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৮
মর্গের লাশ বলেছেন: "এটাই হয়ত ওদের নীতি, যাকে আমারা গলা চেচিয়ে বলি দূর্নীতি।"
ভালো লিখেছেন।
৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৬
শ্রাবণধারা বলেছেন: ভালো লাগলো। অনিয়ম গুলোই এখন এদেশে নিয়ম হয়ে গেছে। হায়রে দেশ !!!
৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৪১
জাহাঁপনা। বলেছেন: BETON chara 16 mash ! OH my god ! KIVABE somvob ? APNAR dhoirjo ache ... TEACHERDER financial dikta govt er aro valo kore vebe dekha dorkar ..
১০| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১২
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: আর কত হাহাকার এর কথা যে শুনতে হবে?
শুনছি লিখছি পড়ছি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস আমাদের নেই। এই সাহস টা করা দরকার
১১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩৯
দানবিক রাক্ষস বলেছেন: নতুন অভিজ্ঞতা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
১২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৭
ভিটামিন সি বলেছেন: আমার বড় আপার চাকুরির জন্য (সহকারী শিক্ষক, কম্পিউটার) ২০১১ সালের নভেম্বর এ এক লক্ষ আশি হাজার টাকা দিই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে। ঘুরতে ঘুরতে এই নভেম্বর এ এমপিও ভুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রধানশিক্ষক কৃষি শিক্ষার এক শিক্ষকের এমপিও করিয়ে এনেছেন গত নভেম্বর মাসে। আপারটা করেনি। দুলাভাইকে বললাম প্রধান শিক্ষক বেটাকে দিই একটা ধোলাই। দুলাভাই বলে না থাক তাহলে টাকা চাকুরি সবই যাবে। গত কয়েকদিন আগে দুলাভাই ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে এসেছেন ৫০০০ টাকা আর কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় দিয়েছেন ১০০০০। আশা করি আগামী এমপিওতে আপার নাম আসবে।
আমাকে আমার থানার এক পাইলট হাই স্কুলে ইন্সট্রাক্টর কম্পিউটার হিসেবে নিয়োগ দান করার জন্য প্রধান শিক্ষক চেয়েছিলো ৩ লাখ। আমি বলেছি টাকা ছাড়া যদি হয় তাহলে ডাকবেন। যেহেতু এই স্কুলে আমি পড়েছি আর আপনার ছাত্র, আসবো।
১৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৪
কালোপরী বলেছেন: শিক্ষকদের আলাদা ভাবে এমপিওভুক্তি হতে হয়, তারপরে বেতন পাবে
আজব দেশ
১৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫২
বাংলার হাসান বলেছেন: নতুন অভিজ্ঞতা নতুন অভিজ্ঞতাই শুধু অর্জন হচ্ছে মাঝখানে চলে যাচ্ছে দীর্ঘ সময় হাজার হাজার টাকা।
১৫| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৩
তাইলেকি বলেছেন: কিভাবে মেনে নিলেন ভাই?
১৬| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৭
অচিন.... বলেছেন: দুর্নীতি আর দুর্নীতি
১৭| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৩
নিম গাছ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে অবাক হলাম না, আমি আমার এক আত্নীয়ের জন্য বেসারকারী কলেজের প্রভাষক পদের জন্য চেষ্টা করেছি, চাকুরী হয়েছে যোগদানও করেছে মাত্র ৬ লক্ষ টাকা লেগেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মাত্র ৩০ হাজার টাকা এমপিওর জন্য দিয়েও তার এমপিও হয়নি। চাকুরী করছেন মাত্র এক বছর ৩ মাস যাবত (বিনা বেতনে)।
অবাক হলাম আপনি নিয়ম জানতেন না! কারও কাছে শোনেননি?
১৮| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
খন্দ.লিমন বলেছেন: এই জন্যইত বাংলাদেশের এই অবস্থা ...উন্নতি কোনো দিন হবে না যতদিন না এই অনিয়ম বন্ধ হয় ...।
১৯| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫১
জরিণা বলেছেন: দেখার কেউ নাই, বড়ই বিচিত্র?
২০| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
সমকালের গান বলেছেন: যাক শেষ পর্যন্ত পেলেন। আশা করছি এমন পরিস্থিতি আর কাউকে মোকাবেলা করতে হয়নি, হবে না।
২১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯
আন্ধার রাত বলেছেন:
ঘুষখোরদের উপর গজব পড়ুক।
২২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০
সুখী চোর বলেছেন: লাইকাইলাম
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২২
মাক্স বলেছেন: নতুন অভিজ্ঞতা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।