নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

The only person u should try to be better than, is the person u were yesterday.

ত্রিভকাল

আমি গ্রামের একজন সহজ সরল প্রথমশ্রেণীর আবুল, যে কিনা ছিঁড়া লেপের তলায় শুয়ে কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখতে ভীষণ ভালোবাসে। কৃপণ, কাইষ্টা মানুষের নাকি অনেক টাকা পয়সা হয়, সে হিসাব অনুযায়ী আমি অক্সফোর্ড কোটিপতি হবো। নিজের টাকা নিজেই খাইয়ম .... ফেইসবুক লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/Sabbirahmed069 ওয়েবসাইট লিন্ক : http://bkadda.blogspot.com http://www.trivokal.com http://www.votku.com htttp://www.likilose.com http://trivokal.wordpress.com/ http://www.vokalab.com

ত্রিভকাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের জামা অথবা অস্ফুট আওয়াজ...  

২৬ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

অনেকেই ঈদের সময় দেখি ছোট ছোট গরীব ছেলে মেয়েদেরকে নতুন জামা কিনে দেন। যারা এসব উদ্যোগ নেয় তাদের অনেকেই হয়তো নিজেদের সমস্যার জন্য কখনোই কারো কাছে হাত পাতে না, কিন্তু এই ছোট ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করে নিজের পরিচিত সকলের কাছে নির্দ্ধিধায় সাহায্য চায়। আমরা এদেরকে বলি সাদা মনের মানুষ। আমারও একসময় এই ধরণের মানুষদের খুবই ভালো লাগতো। এখন যে খারাপ লাগে তা না, এখনো ভালো লাগে। তবে আগের মতো না। কারণ তাঁদের উদ্যোগ এখন আমার কাছে ভ্যালুলেস বলে মনে হয়। কেন ভ্যালুলেস বলে মনে হয় সেটার পিছনে আমার বেশ কিছু নিজেস্ব যুক্তি রয়েছে।





যুক্তি দেখানোর আগে পুরো প্রসিডিউরটা নিয়ে একটু চিন্তা করি।





১ম ধাপঃউদ্যোগতারা নিজেদের সব কিছু উজার করে নিজের এবং পরিচিত মানুষদের মাঝে থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।





২য় ধাপঃঈদের দিন বা ঈদের আগের দিন সেমাই, নতুন জামা, খাওয়া-দাওয়া আর সাথে একবুক জমানো কষ্ট নিয়ে উপস্থিত হয় গরীবদের মাঝে। অনেকে এই সময় নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। কেঁদে দেয় হাউ মাউ করে। কেঁদে ফেলার পিছনে কারণ হচ্ছে, তাঁরা যখন দেখে কমদামী গায়ের তুলনায় ঢোলা বা টাইট অথবা ছোট জামা যখন চকচকে চোখে বাচ্চারা পরে তখন সেই অনুভূতি স্বাভাবিক অবস্থায় দেখার ক্ষমতা অনেকেরই থাকে না। এই ক্ষমতা মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দেয় নাই।





৩য় ধাপঃজামা কাপড় দেওয়া শেষে সারাদিন হয়তো অনেকেই তাঁদের সাথে কাটায় (ধরে নিলাম)। তারপর বাসায় চলে আসে। অপরদিকে বাচ্চারাও নিজেদের জামা সর্তকতার সাথে পরে খুশীর ঈদের দিনটি কাটায়, এরপর স্বযত্নে রেখে দেয় পলিথিন পেঁচিয়ে। অন্যদিকে উদ্যোগতারাও পরবর্তী ঈদের জন্য ছক কেটে নেয় কিভাবে আরো কিছু শিশুর মুখে হাসি ফোটানো যায় সেই কথা চিন্তা করে।





তারপর চক্রকারে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে...





খুবই ভালো উদ্যোগ, তাই না ?খুবই ভালো ?সত্যিই ভালো ?





তাহলে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন।





১। ঈদের পরদিন থেকে ঐ সকল বাচ্চার কি হবে? আবার সেই পুরোনো জীবনে কি তাঁরা ফিরে যাবে না? আবার কি তাঁরা তাঁদের সেই পুরোনো জামা পরবে না? আবার কি তাঁরা ঈদের অপেক্ষায় থাকবে না? আবার কি তাঁরা ভালো ভালো খাবারের আশায় ১ টা বছর পার করবে না?





২। কি হবে যদি পরের বছর অপেক্ষায় থাকার পর দেখে যে আপনারা আসেন নাই তাঁকে ঈদের জামা দিতে। কারণ আপনারা তখন ব্যস্ত অন্য এলাকায় অন্য কিছু শিশুদের ১ দিনের স্বপ্ন দেখাতে।





৩। কি হবে যখন সে ব্যাথাতুর ঈদের দিন হেটে হেটে বাসায় আসার সময় দেখবে বড়লোকের ছেলে মেয়েরা ঈদের জামা পড়ে ঘুড়ছে?





সে হয়তো কখনোই অপেক্ষা করতো না। সে হয়তো আজীবনই ধরে নিতো যে ঈদের দিন বলে আলাদা কোনো দিন নেই। সে হয়তো মাথাতেই আনতো না যে ঈদের দিন তাদেরও সুযোগ আছে নতুন জামা পরার। যদিনা আপনারা একটা দিন ওদেরকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাতেন। সেটাই কি ভালো হতো না? তাঁরা কি অনূভতির মধ্য দিয়ে যায় সেটা আপনিও হয়তো কখনো না কখনো বুঝতে পেরেছেন আপনার জীবনে, যখন কিনা প্রেম করার পর দেখছেন আপনার সঙ্গী আপনার পাশে নেই, যখন কিনা দেখেছেন একটা জিনিস পাওয়ার পর সেটা আপনার নয়। অনেকটা সেই সুখী মানুষের গল্পের মতো, যে কিনা সুখেই ছিলো ততোদিন যতদিন তার কিছুই ছিলো না। একদিন এক বিত্তবান এসে তাঁকে কিছু দিয়ে গেল এবং সে নতুন স্বপ্ন দেখতে লাগলো, এবং একসময় আবিষ্কার করলো তার পুরো স্বপ্নটাই মিথ্যা।





আপনারা হয়তো বলবেন 'নাই মামার চাইতে কি কানা মামা ভালো না?'। আমি বলবো 'হ্যাঁ, অবশ্যই ভালো, তবে কানা মামাই দেন আজীবনের জন্য...১ দিনের জন্য নয়'। আমরা যদি চাই তাহলে প্রত্যেকটা গরীব শিশুর দায়ভার আমরা সারাজীবনের জন্য নিতে পারি। সেইক্ষেত্রে সেটা কোনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো হবে না। ৩৬৫ জনকে ১ দিনের মিথ্যা স্বপ্ন না দেখিয়ে ১ জনকে ৩৬৫ দিনের স্বপ্ন দেখান। ১ জনের জীবন অন্তত আলোর মুখ দেখবে। আমার মনে হয়না আমার আর কিছু বলার আছে। আমার লেখাটা শেষ করছি ২ বছর আগের একটা ঘটনা দিয়ে। লেখাটাও ছিলো ২ বছর আগেরই...





...................................................................................................

গতবছর রোজার ঈদের কিছুদিন পর প্রথমআলোর কোড়পত্র ছুটির দিনে একটি নিবন্ধন ছাপা হয়েছিল, আমার আপনার বয়সের একদল ছেলেমেয়ে কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সহোযোগীতা ছাড়াই নিজেদের জমানো সামান্য অর্থ দিয়ে একটি বৃহৎ উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রত্যেকেই নিজেদের ঈদ উপলক্ষে পোশাক কেনার জন্য বরাদ্দ টাকা জমিয়ে কিছুসংখ্যক পথশিশুদের একটি অন্যরকম ঈদ আনন্দ দেওয়ার প্রয়াস নিয়ে একত্রিত হয়েছিল। আমার যতটুকু মনে পরে, ওরা বেছেনিয়েছিল কমলাপুর রেলস্টেশনে বেড়ে উঠা পথশিশুদের। কাপড় থেকে শুরু করে সেমাই, পায়েস, পোলাও ... মোটামুটি সবকিছুরই আয়োজন করেছিল তারা। পথশিশুদের সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৫০ জন আর উদ্যোগতারা ছিল "আমার আপনার" বয়সের হাতেগোনা কয়েকজন ...এই নিবন্ধটির যেদিন প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন সকালে আমার খুব কাছের একজন ফোন করে বলেছিল 'ছুটির দিনটি ' দেখে তাকে যেন আবার ফোন করি। যথারীতি নিবন্ধনটি পড়ার পর তাকে কল করলাম। অপরপ্রান্ত থেকে কোন সাড়াশব্দ পেলাম না,বুঝলাম মেয়েটি নিরবে কাঁদছে। আমি আর কিছু বললাম না তবে মনে মনে ভাবলাম কাঁদুক, এই কান্না বেশীক্ষণ স্থায়ী হবে না। বড়োজোর ২৪ মিনিট আর যেই নিবন্ধটা পড়ে তার মন এখন বিষণ্ণ, সেই বিষয়টিই তার মাথায় থাকবে বড়জোর ২৪ ঘন্টা।এই ঘটনার একমাস পর কথা প্রসঙ্গে সে আমাকে বলল সে আর তার বন্ধুরা মিলে একটি গ্রুপ করেছে। আমি বললাম গ্রুপের নাম কি "বুক্কু কোং এন্ড গোং" ? সে আমার ফাইজলামির গা না ঘেঁষে বলল, সে আর তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছে আসছে কোরবাণী ঈদে তারা কুমিল্লা রেলস্টেশনের ১০-১২ জন পথশিশুদের জন্য কিছু করবে। আমার তখন ছুটির দিনের নিবন্ধটির কথা মনে পড়ল, তাই সবিনয়ে নিজ উদ্যোগেই বললাম দেখি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি কিনা। সেদিন তাকে অন্যান্য দিনের চাইতে অনেক বেশী আনন্দিত মনে হচ্ছিল। ভাবলাম মেয়েরা কত অল্পতেই না খুশী হয়ে যায়।সুনীলের 'কেউ কথা রাখেনি ' কবিতাটা সে পড়েছিল কিনা জানি না, তবে এটা জানি যে আমি কিন্তু কথা রাখিনি তার অন্যান্য গ্রুপ মেম্বারদের মত। পরে শুনেছিলাম কুমিল্লার পথশিশুরাও নাকি তার কথা রাখেনি!!! সে সেমাই, খিচুড়ি, কিছু পোশাক আর তার এক বন্ধুকে নিয়ে ঠিকই গিয়েছিল কুমিল্লা রেল স্টেশনে, কিন্তু কোরবানী ঈদ হওয়ায় দেওয়ার মত তিন চার জন ছাড়া আর কাউকেই পায় নাই সে। ও হয়তো সেদিন বুঝতে পারে নাই যে তার আনা খাবার থেকেও ভালো ভালো খাবার তারা মানুষের দরজায় গিয়ে পাবে.... সে সত্যিই বুজতে পারে নাই, কারণ সে হিন্দু ছিল....অন্যদের কথা জানি না তবে আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম তবে এ র্পযন্ত এসেই থেমে যেতাম, আর ভাবতাম যা করেছি মেলা করেছি "ফকিরনির পোলাদের জন্য আর কত? " তবে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে মেয়েটা কিন্তু ওখানেই থেমে থাকেনি। গত মাসে জানতে পারলাম, সে তার গ্রুপ মেম্বারদেরকে (নতুন) নিয়ে গ্রামের একটি স্কুলের ৫ শ্রেণীর সকল ছাত্র -ছাত্রীদের (প্রায় ৫০ এর অধিক) একটি করে খাতা, পেন্সিল, কলম, পেন্সিল বক্স দেয়ার আয়োজন করেছিল। সাথে প্রত্যেক কেই একটি করে কলিজা সিঙ্গারা,সমুচা আর একটি করে মজো দেওয়া হয়েছিল।রাতে ফোনে যখন সে সেই ছেলেমেয়েদের তখনকার অনূভুতির কথা আমাকে বলছিল তখনো সে কাঁদছিল। তবে এ কান্না আগেরবারের মত নিঃশব্দে নয় বরং স্বশব্দে ... যেটা কিনা আমার শোনা সবথেকে পবিত্রতম কান্না, যার আওয়াজ হয়তোবা কখনোই আমাদের মনের দরজায় কড়া নাড়বে না....।



মূল লেখা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.