![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I love to write. I like to enjoy fact and knowledge.
বর্তমান পৃথিবীর সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পরধন লিপ্সুদের কয়েকশত বছরের শোষনে এদেশ প্রায় নি:স্ব হয়ে গেলেও এদেশের মানুষ আমৃত্যু লড়াকু। জীবনী শক্তির এ প্রাচুর্যতা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বারবার হোচট খাওয়ার পরও। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায় বিপর্যয় অতিক্রমের পরপরই মানুষ নতুন উদ্যমে ভেঙ্গে যাওয়া ঘর বাড়ি, হাঁট-বাজার নতুন করে গড়তে শুরু করে দেয়। তেমনি প্রতিটি রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পরও এদেশের মানুষ নতুন ভাবে দেশ গড়তে আশাবাদি হয়ে উঠে। ঘটনা প্রবাহ দেখে মনে হয় এদেশের মানুষ বুঝি খুব দ্রুত অতীত ভুলে যায় এবং নতুন পরিস্থিতির সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা করে। জনগনের শান্তিপূর্ণ এ অনুভুতি ও গুণকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় থাকে সুবিধাবাধী রাজনীতি। ক্ষমতা কেন্দ্রীক রাজনীতির ওভারটেকিং চরিত্র আর রাজনীতির দুবৃত্তায়ন ঘটছে এ কারনে। তবে রাজনৈতিক বিচক্ষণতা যাদের আছে তারা বিশ্বাস করেন জনগন সব ভুলে যায় না। জনগনের প্রতিক্রিয়া একটু ভিন্ন মাত্রায়, ধীর গতিতে, শক্তিশালী রূপ নিয়ে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। বোধ শক্তিহীন যেসব রাজণীতিবিদ তাদের পক্ষে এর মূল্যায়ন সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতিতে যে অচলায়তন তৈরী হয়েছে তাতে জনগন হতাশ। যে গনতন্ত্রের দোহাই বাস্তবে দেয়া হচ্ছে তার ছিঁটে ফোটাও বাস্তবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। যেখানে সকলেই জনগন কে শেষ শক্তি বলছেন সেখানে জনগনের ইচ্ছার কোন প্রতিফলন নেই।
তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জনগনের মতামত যাচাইয়ের অনেক পদ্ধতি আছে। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যেও তা করা যায়। বেসরকারীভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তা করেছেও। সরকারী দলের লোকজন তা গ্রহন করেন নি। উল্টো নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন।
সরকারতো তা করতে পারেন। গ্রহনযোগ্য পদ্ধতিতে একটি জরিপ করে তা প্রকাশ করুন না কেন? বিরোধী দলের আন্দোলন দেখেও মনে হয় না তারা নির্দলীয় সরকারের দাবী আদায় করতে চায়। সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিল। এখন বিরোধী দল আন্দোলন গড়ে তুলবে মর্মে কথা শোনা যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসছে বারবার। তৃতীয় চোখ, তৃতীয় মাত্রা, তৃতীয় দৃষ্টি, তৃতীয় শক্তি সাধারণভাবে এসব পরিভাষাগুলো পরিবর্তণকামী, সংস্কারমূলক ও ইতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে তৃতীয় শক্তি একটি অশ্লীল ও অনৈতিক পরিভাষার রূপ নিয়েছে। রাজনীতি তার নিজস্ব গতি ও স্বকীয়তা হারিয়ে ফেললে, অরাজনৈতিক যে শক্তি শূণ্যতা পূরণের দাবি নিয়ে আসে তাকেই তৃতীয় শক্তি বলা হচ্ছে। বাস্তবে তা তৃতীয় শক্তি নয় তা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন প্রচুর শক্তি নিয়ে আঘাত করে। রাজনৈতিক দুর্যোগও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আঘাত হানে। দুর্যোগ যখন তাণ্ডব চালায়, ভালো মন্দ বিবেচনার সময় সুযোগ তার হয়না। তবে জনগন প্রসঙ্গটি এখানে এসেই যায়। দুর্যোগের ঝাপটা মোকাবেলা তারাই করে। যাদের ভিত জনগনের যত গভীরে তারা তত শক্তিশালীভাবে এর মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারেন। আর কেউ আপোষ করে নিশ্চিহ্ন হন, কেউ মোকাবেলা করে ক্ষয় প্রাপ্ত হন। সরকারী দলের দু এক জন ইতোমধ্যে বলেই ফেলেছেন রাজনৈতিক সংকট ও শূণ্যতার ফলে যদি অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসে তার দায় বিরোধী দলের উপর বর্তাবে। তারা হয়তো ভাবতে পারেন তৃতীয় শক্তির কেন্দ্রে যদি তাদের পচন্দের লোকজন থাকে তবে তাদের কম সমস্যা হবে। সুতরং ক্ষমতা যদি ছাড়তেই হয় তবে বিরোধী দলের হাতে না দিয়ে তৃতীয় শক্তির হাতে দিলেই মনে হয় উত্তম হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ ও ক্ষতিকর। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি না মানলে জনগনের অধিকাংশই ক্ষমতাসীণ দলকে সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার জরিপে প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরীর চিঠিতে সে উদ্বেগই স্থান পেয়েছে। এসব বিষয়ে বিদেশীরা কথা বলা আমাদের জন্য অপমানজনক। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি ইস্যুতে দেশে সংকট তৈরী হলে এবং অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করলে তার দায় সরকারী দলের উপরই বেশী বর্তাবে। ১৯৯০ ও ১৯৯৬ এ যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা হয়েছিল এবং তৎপরবর্তী যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল তা প্রধান রাজনৈতিক দল গুলোর সমঝোতার ফসল। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, দর কষাকষি ও সাধারন স্বার্থের ভিত্তিতে ঐকমত্যের কারনে তা সম্ভব হয়েছিল। এর উদ্যোক্তা ছিল আওয়ামীলীগ। বি এন পি ছিল বাস্তবায়নকারী। পরবর্তিতে এসে পরিস্থিতি বা রাজনৈতিক বাস্তবতা অথবা আদালতের নির্দেশনার দোহাই দিয়ে সে অঙ্গীকার থেকে সরে আসাটা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরাজয় ডেকে আনবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত সাংবিধানিকভাবে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে কথাটি আম জনতার মনে এমনকি খোদ আওয়ামীলীগের সমর্থকদের মনেও সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আর অন্যদিকে ক্ষমতার নিজস্ব কিছু উত্তাপ ও মাদকতা আছে। এই উত্তাপ ও মাদকতা আপন মানুষকে পর করতে খুব বেশী সময় নেয়না। এই নেশায় পিতা পুত্রকে পুত্র পিতাকে খুন করেছে এমন নজির পৃথিবীতে প্রায় হাজারের কাছাকাছি। বর্তমান সরকারী দলের অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে সুখকর নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতা আছেন যারা পূর্বে আওয়ামী লীগ অথবা ছাত্র লীগ করতেন। আদর্শিক কারনে কয়জন দল বদল করেছেন? আর যারা সরাসরি রাজণীতি করেননা সমর্থন করেন মাত্র তাদের ক্ষেত্রে কতটুকু নিশ্চয়তা দেয়া যায়? অতএব এ আশা করাটা একান্ত বোকামী হবে যে তৃতীয় শক্তি আসলে তারা বর্তমান সরকারী দলকে ওয়েবার দিবে। তৃতীয় শক্তি যদি আসে তারা পূর্বেকার ভুল সংশোধন করে আসবে। পুরোপুরি অসাংবিধানিক বলার হয়তো সুযোগ থাকবেনা। এক এগারর সরকারকে মুখে যাই বলুন অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করা যায়নি। তেমনি পরবর্তীতেও কেউ এলে তার চেয়েও নিখুত ঘটনা ঘটবে। এর কারিগররা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইবেন এবং দুইবছর নয় বরং সাংবিধানিক সুযোগ সর্বোচ্চভাবে গ্রহন করার চেষ্টা করবে। সেটা বিরোধী দলের জন্যও অমঙ্গলজনক ও হতাশাজনক হবে।
©somewhere in net ltd.