নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের পথে নিরন্তর ছুটে চলা

টার্বো মেডিসিন

সত্যের সন্ধানী।

টার্বো মেডিসিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা কবিতার ছন্দ

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৮

আসুন ছন্দ শিখি(৩য় কিস্তি)
★★★★★★★★★★★★★★

আমরা আগে স্বর ও পর্ব নিয়ে আলোচনা করেছি।
আজ ছন্দ জানার আগে আর যে দুটি জিনিস ক্লিয়ার হওয়া দরকার,তা নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
অন্ত্যমিলঃ নবীনদের মধ্যে অনেকেই অন্ত্যমিলকেই ছন্দ মনে করেন।যা একবারেই ভুল।ছন্দ হলো কবিতার শরীর গঠনের কাঠামো আর অন্ত্যমিল সেই শরীলের ত্বক।যা কবিতায় মোলায়েম ও চিকচিক ভাব আনে।
প্রতিচরণের শেষে জোড় মিলিয়ে যে মিলনাত্মক শব্দের প্রয়োগ ঘটে,তাই অন্ত্যমিল।
যেমনঃ
তুমি যদি নাহি বোঝ তবে,
কি করে যে ভালোবাসা হবে!
এখানে,চরণের শেষে,দুটি মিলনাত্মক শব্দ আছে,"তবে" আর "হবে"
এটাই কবিতার অন্ত্যমিল।

মধ্যমিলঃ কবিতার চরণে পর্বের সাথে পর্বের মিলনাত্মক যে ভাব থাকে,তাই মধ্যমিল
যেমনঃ
মনে খটখট বুকে ছটপট মাথা ঝটপট খোলে,
কি দারুণ ফল আঁখিপাতে জল আঁখি ঘর যেন ফোলে।
এখানে,খটখট,ছটপট,ঝটপট
আবার,ফল,জল এসবি হলো মধ্যমিল।

মাত্রা :
শব্দের এক‌টি স্বর(অক্ষর) উচ্চারণে যে সময় প্র‌য়োজন হয়,তা‌কে মাত্রা ব‌লে।
বাংলায় এই মাত্রা সংখ্যা নি‌র্দিষ্ট নয়। এ‌কেক ছ‌ন্দে একেক অক্ষ‌রের মাত্রাসংখ্যা এ‌কেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগু‌লোর‌ ভি‌ত্তি। বি‌ভিন্ন ছ‌ন্দের মাত্রা গণনার রী‌তি ও আলাদা।
একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি।
যেমনঃ কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।
এখান থেকে"কাননে" শব্দটি নিলাম।মাত্রা বোঝার জন্যে।
কা+ন+নে(এটির স্বর আলাদা করলাম।)
উপরে,'কা' বা 'ন' বা 'নে' উচ্চারণ করতে যতটুকু সময় লাগে,তাই মাত্রা।
আবার,আরেকটি শব্দ নিলাম।"কুসুম"
এটার স্বর আলাদা করি, কু+সুম।
এখানে,'কু' বা 'সুম' উচ্চারণ করতে যে সময় লাগল,তাই মাত্রা।
এই মাত্রা গণনার নিয়ম একেক ছন্দে একেক রকম।তা ছন্দ আলোচনায় দেখানো হবে।
এছাড়া ও কবিতার আরো অনেক অলংকার আছে,যা ছন্দ শেখার পর আমরা আলোচনা করব।
কারণ,নারীকে তার বস্ত্র পরিধান করতে হবে।যাতে বোঝা যায়,সে নারী।তারপর,অলংকার পরানোর পালা।নারী দেহের বস্ত্রের সাথে মিলিয়ে যত নিখুঁত অলংকার পরালে যেমনি নারীর সৌন্দর্য বেড়ে যায়,তেমনি,কবিতায় ছন্দ প্রয়োগের সাথে যত অলংকারে সাজানো যায়,ততই মধুর হয়ে উঠে।
আসুন,আমরা সরাসরি ছন্দের আলোচনায় চলে যাই।
বাংলা সাহিত্যে প্রায় একশত ত্রিশটি ছন্দের আবির্ভাব হয়েছে।কিন্তু,এসবি প্রধান তিনটি ছন্দকে ঘিরেই।
ছন্দ প্রধানত তিন প্রকারঃ
১)স্বরবৃত্ত ছন্দ(বা,স্বরপ্রধান ছন্দ)
২)মাত্রাবৃত্ত ছন্দ(বা,মাত্রাপ্রধান ছন্দ)
৩)অক্ষরবৃত্ত ছন্দ(বা,অক্ষরপ্রধান ছন্দ)।

এবার আসুন,ধারাবাহিক ভাবে আমরা আলোচনায় আসি।প্রথমেই,স্বরবৃত্ত ছন্দ নিয়ে।
১)স্বরবৃত্ত ছন্দঃযে ছন্দ স্বর প্রধান বা মুক্তস্বর ও বদ্ধস্বর সমতায় কাজ করে তাই স্বরবৃত্ত ছন্দ।
এই ছন্দকে যুগেযুগে পণ্ডিতগণ বিভিন্ন নাম দিয়েছেন।তার মাঝে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
ক)খনার ছন্দঃলংকান সুন্দরী রাজকুমারীর মুখের কিছু নীতিকথা শুনতে এমন শোনাত,তাই অনেকেই এ ছন্দকে খনার বাচন (ছন্দ)বলতেন।
খ)বৃষ্টির ছন্দঃএক সময় গ্রামবাংলায় ছেলে মেয়েরা পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বৃষ্টির জন্যে এক ধরনের পালা (জল মাথায় ঢেলে)গান করতো,এটি সুর,তাল, লয় স্বরবৃত্তের মত শোনাত,তাই একে বৃষ্টির ছন্দ ও বলা হয়।
গ)ছড়ার ছন্দঃএই ছন্দে মায়েরা বিভিন্ন ছড়া কেটে কেটে বাচ্ছাদের ঘুম পারাতেন।আবার,গাঁয়ের ছোট ছোট ছেলেরা ছড়া কেটে খেলতে থাকে,যেমনঃ"সুলতানা ভেবিয়ানা,সাহেব বাবুর বৈঠক খানা"এমন আরো অনেক।
এসব ছড়ার সাথে স্বরবৃত্ত ছন্দের অনেক মিল।
আবার ছড়া লিখতে গেলে স্বরবৃত্ত ছন্দই ছড়ার জন্যে বেশ উপযোগী, তাই এসব কারণে একে ছড়ার ছন্দ বলা হয়।
এ ছন্দের বৈশিষ্ট্যঃ
ক)প্রধান পর্ব ৪ মাত্রা বিশিষ্ট।
খ)মুক্তস্বর বা বদ্ধস্বর এক মাত্রা গণনা হবে।তা শব্দের যেখানেই অবস্থান করুক।
গ)পূর্ণপর্ব বা পর্বগুলোর শেষে একটি অপূর্ণ পর্ব রাখা যায়।যার মাত্রা সংখ্যা পূর্ণপর্বের মাত্রার থেকে কম হবে।অর্থাৎ, ৪এর কম,১/২/৩ হতে পারে।
ঘ)এর লয় দ্রুত।
ঙ)শব্দের প্রয়োগে প্রাঞ্জলতা থাকতে হবে।
চ)দৈনন্দিন ব্যবহৃত শব্দই ব্যবহার করা উচিৎ।
আসুন,আমরা কয়েকটি স্বরবৃত্ত ছন্দে লিখা কবিতা নিয়ে আলোচনা করি।
উদাহারণঃ১
যাবার দিনে/এই কথাটি/
বলে যেন /যাই–
যা দেখেছি /যা পেয়েছি /
তুলনা তার /নাই(রবি ঠাকুর-যাবার দিনে)

এটির মাত্রা নির্ণয় করি,
যা+বার দি+নে=৪/এই ক+থা+টি=৪/
ব+লে,যে+ন=৪/যাই=১(৪+৪+৪+১)
যা,দে+খে+ছি=৪/যা,পে+য়ে+ছি=৪/
তু+ল+না,তার=৪/নাই=১(৪+৪+৪+১)

এ কবিতা বিশ্লেষণে দেখা যায়,কবি প্রতি চরণে চার মাত্রার তিনটি পূর্ণ পর্ব রেখেছেন,আবার এক মাত্রা একটি অপূর্ণ পর্ব রেখেছেন চরণের শেষে।

উদাহারণঃ২
সকাল বেলা /শীতরে বাবা/
সুয্যি মামা /কই,(৪+৪+৪+১)
কুয়াশারা /ভীড় করেছে
সারা উঠান/লই।(৪+৪+৪+১)

খেজুর গাছের /রসের হাড়ি/
আনে মানিক /মামা,(৪+৪+৪+২)
তার কি মাগো/ শীত লাগে না/
একটাই গায়ে /জামা।(৪+৪+৪+২)

সাত সকালে /হাসের ছানা/
পুকুরে দেয়/ ডুব,(৪+৪+৪+১)
দাদু ভাইয়া/ কাঁপছে দেখো/
শীতের মাঝে/ খুব।(৪+৪+৪+১)

চুলোর মাঝে /আগুন দাও মা/
একটু খানি /পোহাই,(৪+৪+৪+২)
খেজুর রস আর /খোলা পিঠা/
দাওনা খোদার /দোহাই।(৪+৪+৪+২)
(শীতের সকাল-আনিয়ন বিন হায়দার)
এখানে,দেখা যাচ্ছে,প্রতিটি চরণে তিনটি করে পূর্ণপর্ব রয়েছে ৪ মাত্রার আর চরণের শেষে একটি করে অপূর্ণ পর্ব রয়েছে কোথাও ১মাত্রার আবার কখনো দুই মাত্রার।

এবার আসুন।অনুশীলনের জন্যে একটি কবিতা দেয়া হলো।আপনারা মাত্রা নির্ণয় করে নিচে কমেন্ট করবেন।বিষয়ভিত্তিক যে কোন প্রশ্ন করুন।দয়াকরে কেউ বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করবেন না।গদ্য পদ্য যাই লিখিনা কেন,ছন্দ জানা সকলের প্রয়োজন।আমরা কেউই সবজান্তা নই।আসুন,সকলে মিলে আমরা ছন্দ শিখি।
আপনাদের উৎসাহ পেলে ৪র্থ কিস্তি নিয়ে আসব।আর,সাড়া না পেলে বন্ধ করে দিব।
আজ এ পর্যান্তই।ভালো থাকুন সকলে,ছন্দ কবিতার জয় হোক।

আলোচক,
আনিয়ন বিন হায়দার(মাসঊদ)।
মাস্কাট, ওমান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.