নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেন জন্মেছিলাম, তার কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর নেই। কিন্তু এখন বেঁচে আছি বেঁচে থাকার আবেদনে। হয়তো একদিন এই আবেদন তার স্থান পরিবর্তন করবে আর আমি পদার্পণ করবো অনন্ত সময়ের অনন্ত জীবনে। - উন্মাদ উদ্বাস্তু

উন্মাদ উদ্বাস্তু

উন্মাদ উদ্বাস্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুজিব হত্যা প্রসঙ্গে: ফারুক-রশিদের স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকার | প্রথম পর্ব

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৯

শোকের দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে প্রাণ হারান বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে সামরিক বাহিনীর কিছু জুনিয়র অফিসার। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ।



১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে লন্ডন টেলিভিশনে মেজর ফারুক এবং মেজর রশিদ সাক্ষাৎকার দেন। সাংবাদিক এ্যান্থনী ম্যাসকার্নহাস যে সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন তারই অংশবিশে :

এ্যান্থনীঃ ঐ সময় সেনাবাহিনী কি কোনো বিশেষ ধরনের অপারেশনে লিপ্ত ছিল?
ফারুকঃ হ্যা, আমরা ঐ সময় চোরাচালান বিরোধী এবং খাদ্যশস্য স্থানান্তর অভিযানে লিপ্ত ছিলাম।
এ্যান্থনীঃ মুজিবের অফিস থেকে এ মর্মে কি নির্দেশ ছিল এ ধরনের কার্যকলাপের অভিযোগে কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করা যাবে না?
রশিদঃ হ্যা।
ফারুকঃ অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসেছিল যে মনে হচ্ছিল আমরা একটা ক্রিমিন্যাল সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ছিলাম।
রশিদঃ তিনি সবাইকে দুর্নীতিপরায়ণ হবার সুযোগ দিয়ে ছিলেন। তিনি অমানবিক ও নীতিবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগের জন্য নিজের দলীয় সদস্য এবং অন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহন করেননি।
এ্যান্থনীঃ এটা কি সত্য যে, যখনই নিজের রাজনৈতিক দলের কেউ দুর্নীতির অভিযোগে আইনকে অগ্রাহ্য করার অপরাধে আটক হয়েছে, তখনই মুজিব তাদের রক্ষা করেছেন?
রশিদঃ হ্যা।
এ্যান্থনীঃ আপনার কি মুজিবকে এ কথাটা জানাবার চেষ্টা করেছিলেন যে, এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার?
রশিদঃ না, তা করা দরকার হয়নি। কেননা, সামরিক বাহিনীর আমরা ছিলাম জুনিয়র অফিসার।
এ্যান্থনীঃ এ ধরনের প্রেক্ষাপটে আপনারা কি তাঁকে জোড় করে পদত্যাগের কথা বলতে পারতেন? নাকি হত্যা করাটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল?
রশিদঃ তাকে যদি বাঁচিয়ে রাখা হতো, তা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
এ্যান্থনীঃ তাহলে আপনাদের বক্তব্য হচ্ছে, মুজিব বেঁচে থাকলে পরিস্থিতি আপনাদের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে ঘুরে যেতো?
রশিদঃ হ্যা।
এ্যান্থনীঃ এ জন্যই কী তাঁকে হত্যা করতে হয়েছে?
রশিদঃ হ্যা, তাই করতে হয়েছে।
ফারুকঃ আমি সিদ্ধান্ত নেই যে, তাঁকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় দিতে হবে, কিন্তু এ সময় ১৯৭৪ সালের মার্চে আমি ছিলাম পুরোপুরিভাবে একজন পেশাদার সৈনিক। আমার কোনো রাজনৈতিক বোঝাপড়া ছিলো না কিন্তু একটা বিষয় বুঝতাম না যে, তাকে সরানোর পর কি ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এবং প্রতিক্রিয়া কি হবে। তাই আমি বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলাপ আরম্ভ করলাম। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। কেমন, তখন পর্যন্ত অনেকের মতে অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারে না।
এ্যান্থনীঃ মুজিবকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে, তার স্থলাভিষিক্ত কাকে করা হবে সেই ব্যক্তিত্বকেও খুঁজে বের করতে হয়, তা কিভাবে করা হয়?
রশিদঃ আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল জেনারেল জিয়া। এ জন্য অনেক চেষ্টার পর ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হই। জেনারেল জিয়া বলেন, "আমি একজন সিনিয়র অফিসার। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত হতে পারি না। কিন্তু তোমরা, জুনিয়র অফিসাররা আগ্রহী হলে, এগিয়ে যেতে পারো। "
এ্যান্থনীঃ আপনি কি এ কথা জেনারেল জিয়াকে পরিষ্কারভাবে বকেছিলেন যে, আপনারা শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছেন?
রশিদঃ হ্যা। এরপর আমরা লন-এ গেলাম। আমি তাকে বললাম আমরা হলাম পেশাদার সৈনিক। আমরা দেশকে সেবা করি, কোনো ব্যক্তি বিশেষকে নয়। সশস্ত্র বাহিনী, সিভিল সার্ভিস, সরকার সবকিছুই রসাতলে যাচ্ছে। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা জুনিয়র অফিসাররা এর মধ্যেই এ ব্যাপারে পরিকল্পনা করেছি। আমরা আপনার সমর্থন ও নেতৃত্ব কামনা করেছি। তিনি বললেন, আমি দুঃখিত এ ধরনের কিছুর মধ্যে জড়াতে চাই না। যদি তোমরা কিছু করতে চাও, সেক্ষেত্রে জুনিয়র অফিসারদের নিজেদের তা করা উচিৎ।
এ্যান্থনীঃ তাহলে আপনার এ ধরনের একটা পরামর্শের কথা তিনি প্রেসিডেন্টকে জানাননি?
রশিদঃ না, তিনি নিজের এডিসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে আর কোনো সাক্ষাৎকার দেয়া হবে না।

......চলবে


উৎসঃ বাংলা বাজার পত্রিকা, ১৫ আগস্ট ১৯৯৯

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.