নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কা পুরুষতাই পাপ। অপর কে ভালবাসায় ধর্ম, অপর কে ঘৃণা করাই পাপ। স্বামী বিবেকানন্দ

ঊণকৌটী

শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কা পুরুষতাই পাপ। অপর কে ভালবাসায় ধর্ম, অপর কে ঘৃণা করাই পাপ। স্বামী বিবেকানন্দ

ঊণকৌটী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প :- মিঠির মাসিমণি

১৪ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:২০

তুমি টুথব্রাশ নিয়ে এসেছ তো মাসিমণি ? ফ্লাইট সময়মতো ছিল।দিদি-জামাইবাবু এয়ারপোর্টে আনতেও গেছিল। তারপর, মানে গাড়িতে উঠার থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও মুখ থামেনি মোনার । গল্প চলছে তো চলছেই। তার সঙ্গে খানিকক্ষন বাদে বাদেই হা হা করে হেসে গড়িয়ে পড়া। মাসিমণি উরফে মোনা উরফে মোনালিসা থাকেন মুম্বইয়ে। দিব্যি একখানা ঘ্যামচাক চাকরিও করেন । সেই চাকরি, ছেলের পরীক্ষা এবং অবশ্যই সংসার সামলে প্রায় বছর দুয়েক কলকাতায় দিদির বাড়িতে আসা হয়নি। দিদি ততটা না ব্যস্ত হলেও ভারী ঘরকুনো । কিংবা আর একটু পরিস্কার করে বললে শহরকুনো । সারাটাদিন এখান সেখান দাপিয়ে বেড়ালেও কলকাতা ছেড়ে কোথাই যেতে হলেই রাজ্যের আলসেমি জাপটে ধরে। তাই দুবছর দেখা হয়নি দুই বোনে। ফোনে অবশ্য কথা রোজই হয়ছে। নতুন শাড়ি,গয়না কিংবা স্পেশাল রান্নার ডিশ এর ছবি নিয়মিত হোয়টাসআপে চালাচালি হয়। এছাড়াও সকালে বিছানা ছেড়ে উঠা থেকে শুরু রাত্রে শুতে যাওয়া পর্যন্ত আরো নানা মুডের ছবিও অনবরত মোবাইলন্তর হয়। কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটানো যায়? মুখোমুখি বসে কথার পিঠে কথা বলতে না পারলে কি আর মন ভরে ? তাই প্লেন থেকে নেমে ইস্তক গল্প চলছে। বাড়ি এসে জামা কাপড় না বদলেই একপ্রস্ত চা -জলখাবার খাওয়া হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছুইছুই তাই রাত্রির খাবার এবার না খেলেই নয়। দিদির তাগাদায় অবশেষে বোন এবার হাত মুখ ধুতে গাত্রোত্রান করেছেন, এমন সময় ভারী নিরীহ গলায় প্রশ্নটি করল বোনঝি মিঠি। প্রশ্ন শুনেই ভুরুদুটি কুঁচকে গেল মাসিমণির। জলের ঝাপটা দেবেন বলে সবে কলের নিচে হাত পেতে ছিলেন। সরিয়ে এনে কড়া চোখে প্রথমে মিঠির দিকে তারপর মিঠির মা আর বাবার দিকে মুখের তাকালেন। মিঠির বাবা এমনিতেই একটু শান্ত প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু এখন যেন মুখটা একটু বেশি গম্ভীর। শুধু গম্ভীর নয়, মুখের আধখানা আবার সকালের বাসী খবরের কাগজে ডাকা। জামইবাবুর হটাৎ এতবেশি কাগজে মনোযোগী হয়ে পড়াটা সন্দেহ জনক ঠেকল মোনার। দিদি একখানা মোটা চিরুনি দিয়ে চুলের জট ছাড়ানোর জন্য বাস্ত্য। দেখে মনে হচ্চে যেন নিজের লম্বাচুলগুলো জটমুক্ত করা ছাড়া এই মুহূর্তে ওর বেঁচে থাকার অন্য কোনও উদ্দেশ্যই নেই। মেয়ে কাকে কী বলছে সেসব তার কানেই ঢুকছে না। অথচ নরম কোল্ড ক্রিমের মতো পাতলা একটা প্রায় অদৃশ্য হাসি কিন্ত ঠোঁটের উপর লেগে রয়েছে । কেনরে মিঠি, আমি টুথব্রাশ এনেছি কিনা সে খোজে তোর দরকার কি? না,মানে আজ সকালবেলা তোমার জন্য ঘর গোছানোর সময় মা অনেক খূঁজে , ড্রয়ার হাঁটকে একখানা নূতন টুথব্রাশ বার করলো কিনা। মা-ই তো বলছিল যে মোনা তো নির্ঘাত টুথব্রাশ আনতে ভুলে যাবে তারপর যদি বাবা....না মানে আমিই তো তখন বোললাম যে, দেখো মাসি ঠিক মনে করে নিজের ব্রাশ নিয়ে আসবে। আজকাল মাসিমণি আর অত ভুলোমনা নেই। বড় অফিসে চাকরি খুব স্মার্ট হয়ে গিয়েছে। হাড়ে বিচ্ছু মিঠিটা সত্যিই প্রশংসা করছে না নাকি আসলে পিছনে লাগছে ঠিক মাথায় ঢুকল না মোনার। আর নুতন টুথব্রাশ বার করার সময় দিদি কেন আশংকা প্রকাশ করছিল সেকথাটাও বলতে গিয়ে। মাঝখান থেকে কেমন যেন সট করে চেপে গেল। কথাটা আসলে কি? সেই যে একবার মোনা ব্রাশ আনতে ভুলে গেছিল , তারপর ভুলে যে গেছে সেটাও বেমালুম ভুলে দিব্যি দিদির ব্রাশে দাঁত মাজতে শুরু বাড়িতে হুলুস্থুলু ফেলে দেয়েছিলো, সেই কথাটাই কি আসলে বলতে চাইল মিঠি ? সেবারও এই বিচ্চু মিঠিটার জন্য ব্যপারটা ওরকম ভাবে লোক জানাজানি হয়ে গিছেল। রাতে শোয়ার আগে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছে মোনা এমন সময় ঢুলুঢুলু চোখে মিঠি এসে হাজির। আসলে এসেছিল ঘুমানোর আগে গল্প শোনার আবদার নিয়ে। দ্যাখ না দ্যাখ ছিল চিৎকার শুরু করে দিল, ও মা দেখো, মাসিমণি তোমার ব্রাশে দাঁত মাজ্চে.............
এমন শানানো গলা যে ব্রাশ যে চট করে ধুয়ে রেখে দেবে তার সময়ও পাওয়া গেলনা । দিদি চলে এল ঘরে। তারপর একতা কাপুরের সিরিয়ালের মতো জমজমাট ইভেন্ট । বাড়িতে আর নুতন ব্রাশ খূঁজে পাওয়া গেল না। ফলে রাতে দিদির দাঁত মাজা হল না। দাঁত মাজতে না পেরে দিদির রাতে ঘুম এল না। ঘুম না আসায় পরদিন সকাল থেকে মাথার যন্ত্রণা শুরু - সব এই হতচ্ছাড়া মিঠির জন্য । এইটুকু একটা মানুষের সবদিগে এত নজর দেওয়ার দরকার টা কী মোনা বোঝে না । বিশেষ করে মোনার কাজকর্মের দিকে সবসময় ওর তীক্ষ্ম নজর। আসলে দোষ টা পুরোপুরি মিঠির নয়। বাড়ির সবারই , মানে এই দিদি-জামাইবাবু, মা-বাবা, কিংবা মোনার নিজের বর বা ছেলে সকলেরই ধারনা জগতের সবরকম কেলেঙ্কারি মোনার পক্ষে করে ফেলেসম্ভব। চলবে.......
দীপা রায়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.