নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কা পুরুষতাই পাপ। অপর কে ভালবাসায় ধর্ম, অপর কে ঘৃণা করাই পাপ। স্বামী বিবেকানন্দ

ঊণকৌটী

শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কা পুরুষতাই পাপ। অপর কে ভালবাসায় ধর্ম, অপর কে ঘৃণা করাই পাপ। স্বামী বিবেকানন্দ

ঊণকৌটী › বিস্তারিত পোস্টঃ

*চলুন পিছিয়ে যাই একশো বছর। গল্পটা ষোলো জনের।*

২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২২

*(১)*
*সাল ১৯১৬, দীর্ঘ তেইশ বছর পর বার্মা থেকে কলকাতায় ফিরলেন এক মধ্যবয়সী বেকার লোক। সাথে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, যাঁর নাম মোক্ষদা থেকে পাল্টিয়ে রেখেছেন হিরন্ময়ী। প্রথম স্ত্রী আর প্রথম সন্তানকে বার্মাতেই খুইয়ে এসেছেন তিনি, মরণঘাতী প্লেগে। এই কর্মঠ মানুষটির নাম শরৎচন্দ্র। অল্প ক'বছরেই যিনি হয়ে উঠবেন অমর কথাশিল্পী।*

*(২)*
*একই সময়ে শান্তিনিকেতনের গোড়াপত্তন করেছেন তেরোতে নোবেলজয়ী এক কবি। মাত্র এক বছর আগে পেয়েছেন নাইট উপাধিও। এই কবির নাম রবীন্দ্রনাথ। আমাদের রবিঠাকুর। যদিও সামনেই হতে চলা জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকান্ডে সেই উপাধি ত্যাগ করবেন তিনি।*

*(৩)*
*প্রায় একই সময়ে, ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিয়ামপুর হাই স্কুলে পড়ছে বাবা মাকে ছেড়ে আসা এক ভবঘুরে যুবক। পড়াশোনায় তেমন মন নেই তার। ক্লাস টেনে উঠলেও, ম্যাট্রিক পরীক্ষা না দিয়েই আর এক বছরের মাথায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে সে, ছন্নছাড়া এই কিশোরের নাম নজরুল। বিদ্রোহ অল্প অল্প করে জন্ম নিচ্ছে যার চিন্তাভাবনায়।*


*(৪)*
*ফরিদপুর জিলা স্কুলে তখন পড়াশোনা করছে নজরুলেরই সমবয়সী আরেক ভাবুক কিশোর। লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখা তার শখ, বিশেষ করে পল্লী আর পল্লীর মানুষদের নিয়ে। আর ক'বছরের মাথায় কবর কবিতা লিখে নিজের জাত চেনাতে যাওয়া এই কিশোরের নাম জসীমউদ্দিন, পল্লীকবি নামে খ্যাত হবে যে।*

*(৫)*
*বহরমপুরে কলেজে পড়া অবস্থাতেই অনুশীলন সমিতি নামের এক সংগঠনে বিপ্লবের হাতেখড়ি নেয়া শুরু করেছে আরেক ছাত্র। এই সাধারণ চেহারার ছাত্রটির নাম সূর্য সেন, আমাদের মাস্টারদা। ব্রিটিশদের কাঁপাতে হাতেখড়ি চলছে যাঁর।*

*(৬)*
*কলকাতায় তখন আসন পেতেছেন এক স্বামী হারা নারী। মেয়েদের সুশিক্ষিত করা যার রাত দিনের ব্রত। স্বামীর নামেই একটা স্কুল খুলেছেন তিনি, নাম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাই স্কুল। বাড়ি ঘুরে ঘুরে ছাত্রী সংগ্রহ করেন। এই উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলা মহিয়সীর নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।*

*(৭)*
*ঠিক একই সময়ে হরিহর বন্দোপাধ্যায় ও নীরদাদেবীর সংসারে ফুলের মতো বেড়ে উঠছে এক বালক। বয়স তার ক'দিন আগেই আট পেরুলো। গায়ের রঙ কালো বলে সবাই আদর করে ডাকে কালো মানিক। এই কালো মানিকটিই ভবিষ্যতে লেখক মহলে পরিচিত হবে মানিক বন্দোপাধ্যায় নামে। সরল গরিব মানুষগুলোর গল্প উঠে আসবে যাঁর কলম বেয়ে।*

*(৮)*
*এদিকে হরিদাস তাঁর ছেলের অল্পবয়সেই বিয়ের তোড়জোড় চালাচ্ছেন। ছেলে যদিও ম্যাট্রিক পাস করেছে, তবুও তার লেখাপড়ায় বা গেরস্থালী কোনোটাতেই মন নেই, কেবল উড়ুউড়ু ভাব। তাই সুযোগ বুঝে উমাশশী দেবী নামে এক বালিকার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন ছেলের! এই সদ্য জামাই সাজা ছেলেটির নাম তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়।*

*(৯)*
*ঠিক একই সময়ে একজন যখন বউকে ঘরে তুলছেন, আরেক স্কুলমাস্টার তখন স্ত্রীকে কলেরায় হারিয়ে শোকে কাতর। স্ত্রী তারাদেবীকে হারিয়ে কাতর হুগলির জাঙ্গীপাড়া স্কুলের এই শিক্ষকটির নাম বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। সামনেই পথের পাঁচালী খুলতে ভারতের পথে প্রান্তরে নামছেন যিনি।*

*(১০)*
*এদিকে বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকার হাল ধরেছেন সুকুমার রায়। একের পর এক গল্প আঁকিবুকি ছড়া দিয়ে প্রাণ মাতাচ্ছেন শিশু থেকে বুড়ো সবার। আর ক'বছর পরেই স্ত্রী সুপ্রভা রায়ের কোলে আসতে চলেছে এক ক্ষণজন্মা ছেলে, তাঁর নাম সত্যজিত রায়।*

*(১১)*
*সত্যজিতের জন্মের বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃতের প্রফেসর হিসাবে জয়েন করবেন এক প্রৌঢ় ব্যক্তি। বয়স বাড়লেও তাঁর জ্ঞানের ধার কমেনি। এখনো নিয়মিত লেকচার দিয়ে বেড়ান ভাষা আর সাহিত্য বিষয়ে। এই জ্ঞানী ব্যক্তিটি ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।*

*(১২)*
*তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়ার ঠিক এক বছর আগেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুতফর রহমান আর সায়রা খাতুনের ঘর আলো করে জন্মাতে চলেছেন এক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের শিশু। সামনে হতে চলা রক্তক্ষয়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবে, হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।*

*(১৩)*
*কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তখন অবসর নিতে চলেছেন আজীবন বিজ্ঞানের সাথে বন্ধুত্ব রেখে চলা এক সহজ সরল অহংকারহীন মানুষ। জীবনযুদ্ধের অনেকটুকু পাড়ি দিয়েই আজ এই সম্মানের জায়গায় দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর নাম আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু। বাংলার বিজ্ঞানী মহলের গর্ব।*

*(১৪)*
*এদিকে ঘটেছে আরেক কান্ড। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রফেসর নাকউঁচুু ইংরেজ ওটেনকে উত্তম মধ্যম দেওয়ার দায়ে কলেজ থেকে রাসটিকেট করা হয়েছে এক বাঙালি ছাত্রকে। অ্যান্টি ভারতীয় কথা বলায় প্রফেসরকে পেটানোর মত সাহসী সেই ছাত্রটির নাম সুভাষ বসু। ভবিষ্যতে নেতাজী নামে সমগ্র ভারতবর্ষের ব্রিটিশত্রাস হতে চলেছে যে।*

*(১৫)*
*এই প্রেসিডেন্সি কলেজেই আর দু'বছর পর ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তি হতে চলেছে আরেক ছাত্র। এখন ব্রজমোহন কলেজে ইন্টারের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সর্বদা চুপচাপ থাকা লাজুক ইন্ট্রোভার্ট থাকা এই ছেলেটির নাম জীবনানন্দ। রূপসী বাংলা ধরা দিতে চলেছে যার কলমে অদূর ভবিষ্যতে।*

*(১৬)*
*ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কিশোরগঞ্জে তমিজউদ্দীন দারোগার ঘরে তখন সবে জন্ম নিয়েছে এক পুত্রশিশু। বয়স এই ষোলো সালের শেষে এসে দুইয়ে পড়লো তার। এই শিশুটিই বড় হয়ে হাতে তুলে নিবে তুলি। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কৈশোর কাটানো শিশুটি বড় হয়ে তাই তুলি চালিয়ে যাবে ঠিক নদীর ঢেউয়ের মতই। এই শিশুটির নাম জয়নুল আবেদিন। শিল্পের আচার্য শিল্পাচার্য উপাধিতে খ্যাত হবে যে।*
******************************
*আজ, আজকের এই দিনে, এই মাসে, এই বছরে, ঠিক ক'জন ক্ষণজন্মা মানুষ আমাদের বাংলায় চলাফেরা করছেন? বড়জোর পাঁচ? দশ? কুড়ি? অথচ ঠিক একশো বছর আগে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, এই বাংলা গমগম করেছে সব বাঘা বাঘা সাহিত্যিক, রাজনৈতিক শিল্পী আর বিজ্ঞানীর পায়ের আওয়াজে। এত এত রথী মহারথীর ভীড়ে কুরুক্ষেত্রের ময়দানও কম পড়ে যায়! আমাদের বাংলা মা যে কতটা রত্নগর্ভা, এই লেখাটা সেটা চেনানোর এক ক্ষুদ্র প্রয়াস ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৮

পলাতক মুর্গ বলেছেন: লেখাটা অসাধারন এবং লেখকের নাম আরও অসাধারন, "ঊণকৌটী" - আমার মাথায় যেই দৃশ্যটা আসতেছে "একটা কৌটার মধ্যে কিছু উকুন" ...হা হা হা.......

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৫

ঊণকৌটী বলেছেন: প্রথমে ভূল স্বীকার করছি ভাই, আজ 9/4/2020 আমার প্রোফাইল গিয়ে আপনার মন্তব্য দেকতে পাই। আসলে আমার লেখা পরে কেউ মন্তব্য করবে ভাবতে পারেনি।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার মাথায় যেই দৃশ্যটা আসতেছে "একটা কৌটার মধ্যে কিছু উকুন" ...হা হা হা....... আসলে ঊণকৌটী নামটা একটি আমদের ছোট্ট ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনবিরল পর্যটন কেন্দ্র। আপনি গুগল গিয়ে ঊণকৌটী টাইপ করলেই বিস্তারিত জানতে পারবেন। ধন্যবাদ

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৪

পলাতক মুর্গ বলেছেন: সরি, ত্রিপুরা সম্পর্কে ধারণা খুব কম, সেজন্য বুঝতে পারি নাই। এনি ওয়েজ, আপনার লেখা এবং চিন্তার কারুকাজ আমার খুবই পছন্দ, আশাকরি অতি শিঘ্র প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ পাবেন।

৪| ১২ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫০

কল্পদ্রুম বলেছেন: ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে জানতাম।একসাথে যেভাবে নিজের মত করে লিখেছেন সেটা পড়তে ভালো লাগলো।আমাদের অতীত রত্নময়।

৫| ২৬ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার দেয়া তথ্যের কিছু জানতাম আর বাকিটা জানলাম। খুব ভালো লিখেছেন। বাংলা তো এককালে অনেক এগিয়ে ছিল। একারনেই কংগ্রেস নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখালে বলেছিলেন ' What Bengal Thinks Today, India Thinks Tomorrow'.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.