![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিসমি্ল্লাহ সকল কল্যাণের মূল। আমরাও প্রথমে তা দিয়েই শুরু করি। এই আমার নাফস্! জেনে রেখ, এই মুবারক বাক্যটি যেমন ইসলামের নিদর্শন, তেমনি মহাবিশ্বে বিদ্যমান সমস্থ কিছুর লিসান-ই হাল দ্বারা বিরামহীনভাবে উ্চ্চারিত যিকির। বিসমি্ল্লাহ কত বিশাল, অফুরন্ত এক শক্তি আর যে কী অশেষ রহমতের ভান্ডার তা বুঝতে চাইলে নিমনোক্ত গল্পটি, শোন:
বেদুইন, অর্থাৎ আরব মরূভুমিতে ভ্রমণরত কোন লোকের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হল সেখানকার কোন এক গোত্রপ্রধানের কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তার আশ্রয় গ্রহণ করা, যাতে করে দস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে নিজ প্রয়োজন সমূহ পূরণ করতে পারে। অন্যথায় একাকী অসংখ্য দুশমন এবং অশেষ প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়ে পর্যুদস্ত হবে।
এমনই এক ভ্রমনের উদ্দেশ্যে দুই ব্যক্তি মরূভুমিতে যাত্রা শুরু করল। তাদের একজন নম্র, বিনয়ী ও সংযমী; আর অন্যজন দাম্ভিক ও অহংকারী। বিনয়ী ব্যক্তি একজন গোত্রপ্রধানের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ায় সব জায়গায় নিরাপদে ভ্রমন করে। কোন দস্যূর মুখোমুখী হলে সে বলে, “আমি অমুক গোত্রপ্রধানের লোক হিসাবে ভ্রমন করছি” তখন দস্যু তাকে আক্রমন না করেই চলে যায়। আবার কোন তাবুতে প্রবেশ করলে গোত্রপ্রধানের নামের খাাতিরে সম্মানও পায়। কিন্তু দাম্ভিক ব্যক্তি কারও কর্তৃত্ব মেনে না নেয়ায় সমস্ত যাত্রাপথে অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হয়। সর্বদাই ভয়ে তটস্থ আর সাহায্যের জন্য উদগ্রীব থাকে। এতে করে সকলের কাছে হেয় এবং উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়।
হে আমার দাম্ভিক নাফস্! তুমি মরূভুমি সদৃশ এই দুনিয়ার একজন পথিক। তোমার দুর্বলতা, অসহায়ত্ব আর দরিদ্রতা সীমাহীন। অগণিত তোমার দুশমন আর অফুরন্ত তোমার চাহিদা । এই যেহেতু বাস্তবতা, অতএব কায়নাতের সবকিছুর কাছে করুনা ভিক্ষা করা আর যে কোন দূর্ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই বিশ্ব মরূভুমির চিরস্থায়ী মালিক ও পরম ক্ষমতাশীলের কর্তৃত্ব স্বীকার করে নাও।
এই বাক্যটি এমনই এক বরকতময় ভান্ডার যা তোমাকে আল্লাহর অসীম কুদরত আর রহমতের সাথে যুক্ত করে ঐ দরিদ্রতা আর অসহায়ত্বকে কাদির-ই-রাহীমের (দয়াময় ক্ষমতাশীল) দরবারে সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য এক শাফায়াতকারীতে পরিণত করে। এই বাক্যের উপর নির্ভরকরে কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তি সেই লোকের মত যে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করে রাষ্ট্রের নামে সকল কর্ম সম্পাদন করে, কাউকে পরোয়া করে না। আইন ও রাষ্ট্রের নামে সকল কাজ সম্পন্ন করে, সমস্থ বাধাকে অতিক্রম করে।
শুরুতেই বলেছি, “সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই লিসান-ই হাল দ্বারা বিসমিলাহ বলে,” তাই নয় কি? হ্যা, অবশ্যই তাই। যেমন, যদি দেখ মাত্র একজন ব্যক্তি সমস্থ শহরবাসীকে একত্রিত করে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে বাধ্য করছে তবে অবশ্যই বুঝতে হবে, সে নিজের নামে বা নিজ ক্ষমতাবলে তা করছে না বরং সে একজন সামরিক ব্যক্তি হওয়ায় শাসকের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে আইন ও রাষ্ট্রের পরিচয়ে কাজ করছে।
ঠিক একইভাবে সকল কিছুই আল্লাহ তা’য়ালার নাম নিয়ে চলে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিচিগুলো নিজের মাঝে বিশাল আকৃতির গাছকে ধারণ করছে, পাহাড় সমতুল্য ভার বহন করছে। এর অর্থ হল, প্রতিটি বৃক্ষ বিসমি্ল্লাহ বলে রহমতের ভান্ডারের ফলমূল দ্বারা নিজেকে পরিপূর্ণ করে আমাদের পরিবেশন করছে। প্রতিটি শষক্ষেত বিসমি্ল্লাহ বলে কুদরতী রন্ধনশালার বিশাল এক কড়াইয়ে পরিণত হয়, যে কড়াইয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের হরেক রকমের খাবার একই সময়ে পৃথক পৃথকভাবে রান্না করা হচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি গাভী, উষ্ঠ্রী, ভেড়ী ও ছাগী বিসমি্ল্লাহ বলে রহমতের প্রাচুর্যতার এক একটি সুপেয় দুধের ঝর্ণাধারায় পরিণত হয়। তাঁর রাজ্জাক নামের কল্যাণে আব-ই হায়াত সদৃশ সর্বোত্তম ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে। সমস্থ বৃক্ষ ও তৃণলতার রেশমি সূতার মত নরম শিকড় ও শিরা-উপশিরাগুলো বিসমি্ল্লাহ বলে শক্ত পাথর আর মাটি ভেদ করে বাড়তে থাকে। আল্লাহর নাম নেয়, রাহমানের নাম নেয় তাই সবকিছুই তার অনুগত হয়।
বাতাসে ডাল-পালার ভেসে থাকা, ফল প্রদান, শক্ত পাথর আর মাটিতে শিকড়গুলোর অতি সহজ প্রসারণ এবং মাটির নিচের সবজি প্রদান, প্রখর তাপের মাঝেও মাসের পর মাস সতেজ ও সবুজ পাতাগুলোর জীবন্ত থাকা নাস্তিক্যবাদীদের মুখে কালিমা লেপন করে দেয়। আর উপরোক্ত নিদর্শন সমূহ চোখ থাকতেও অন্ধ ঐ সকল লোকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দেয় এবং বলে: “তোমাদের আস্থাভাজন (পাথর ও মাটির) কাঠিন্য এবং উত্তাপও আল্লাহর নির্দেশের অনুগত। এজন্যই রেশমী সূতার মত বৃক্ষের নরম শিকড়গুলোও মুসা (আ) এর লাঠির মত فَقُلْناَ اضِرِبِ بِعَصَاكَ الحَْجَرَ এই ইলাহী আদেশের অনুগত হয়ে পাথর ভেদ করতে পারছে, সিগারেটের পাতলা কাগজের মত নরম লতা-পাতাগুলো ইব্রাহীম (আ) এর শরীরের মত আগুনের প্রখর তাপের মাঝেও يَا نَارُ كُونىِ بَرِداً وَسَلاَماً বলে সজীব থাকছে।
যেহেতু সবকিছুই প্রকৃত অর্থে বিসমি্ল্লাহ বলে; আল্লাহর নামে তাঁরই নিয়ামত সমূহ আমাদেরকে প্রদান করে, তাই আমাদেরও উচিত বিসমি্ল্লাহ বলা, আলাহর নামে দেয়া এবং নেয়ার সময়ও তাঁর নাম স্মরণ করা, একইসাথে যেসকল গাফিল ইনসান দেয়ার সময় আল্লাহর নাম স্মরন করে না তাদের নিকট থেকে কোন কিছু গ্রহণ না করা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কিছুর পরিবেশনকারী মানুষদেরকে আমরা মূল্য প্রদান করি কিন্তু সকল কিছুর প্রকৃত পরিবেশক আল্লাহ এগুলোর মূল্য হিসেবে কী চাচ্ছেন?
উত্তরঃ হ্যা, ঐ প্রকৃত নিয়ামতদাতা এই মূল্যবান নিয়ামত ও সম্পদের বিনিময়ে আমাদের থেকে তিনটি জিনিস চাচ্ছেন। সেগুলো হল ১. যিকির, ২. শুকুর এবং ৩. ফিকির। শুরুতে “বিসমি্ল্লাহ” যিকির, শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” শুকুর আর মাঝে চমৎকার শৈল্পিকতায় পরিপূর্ণ মহামূল্যবান নিয়ামত সমূহকে একক, অমুখাপেক্ষী আল্লাহর কুদরতী মুযিজা ও রহমতের উপটৌকন হিসেবে চিন্তা ও অনুধাবন করা হচ্ছে ফিকির। কোন বাদশাহর পাঠানো মূল্যবান উপটৌকন তোমার নিকট বহনকারী এক সামান্য কর্মচারীর পায়ে চুম্বনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সম্মান প্রদর্শন করে প্রকৃত দাতাকে না চেনা যেমন নিরেট মুর্খতার পরিচয় ঠিক তেমনই দৃশ্যমান পরিবেশকদের প্রশংসা করে ও ভালবেসে প্রকৃত নিয়ামতদাতা ও পরিবেশককে ভুলে যাওয়া এর চেয়েও হাজার গুণ বেশী বোকামীর পরিচয়। হে আমার নাফস্! এরূপ আহাম্মক না হতে চাইলে আল্লাহর নামে দান কর, আল্লাহর নামে গ্রহণ কর, আলাহর নামে শুর“ কর, সকল কাজ তাঁর নামে সম্পন্ন কর। ওয়াসসালাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪৯
সুমন কর বলেছেন: শুভ ব্লগিং....