![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেহেরুন ময়না : দেশজুড়ে আলোচনার শীর্ষে এখন সিটি নির্বাচন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি প্রার্থীদের মুখে মুখে। সময়ের ¯্রােতে গা ভাসিয়ে বাহারী ¯েøাগান নিয়ে চলছে নির্বাচনী বৈতরণী উতরে যাবার চেষ্টা। বারবার ঠকেও প্রতিশ্রæতিতেই সান্তনা খুঁজছেন প্রায় ৬০ লাখ ভোটার। কিন্তু আলোচিত এই নির্বাচনে উপেক্ষিত যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। শুরুতেই নির্বাচন কমিশনের ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ এ হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার যৌন সংখ্যালঘু ভোটার। তাই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ‘নির্বাচনী ইশতেহার’ এ স্থান হয়নি হিজড়াসহ অন্য জনগোষ্ঠীর। শত প্রতিশ্রæতির ভিড়েও নির্বাচনী ইশতেহারে যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কোনো কিছু নেই।
‘দেখতে পুরুষ মনটা নারী বিধির অবিচার, এ কোন লীলাখেলা? এ কোন লীলাখেলা-অবহেলা সারা জীবন ধরে’- হিজড়াদের জীবনের গল্প নিয়ে লেখা ‘গীতি আলেখ্য’র খÐিত অংশ। প্রচার না পাওয়া ‘কথা গাঁথা মালা’ শিরোনামের এই পল্লী সাহিত্যটির শ্রষ্টা ইভান আহমেদ কথা। নিজেকে পুরুষ বা নারী নয় ‘হিজড়া’ বলে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছদ্য বোধ করেন তিনি। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ স্বীকৃতি নিয়ে নিজেদের মতো করেই থাকতে চান তিনি। নাগরিক অধিকার থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই ‘হিজড়া’ পরিচয়েই স্থান করে নিতে চান।
ইভান আহমেদের ভাষায়, ‘আমি পুরুষ নই, কিন্তু নারীও নই। গঠনে পুরুষ আর আচরণে নারী বলে মনে হলেও আমি আসলে নারী ও পুরুষের মধ্যবর্তী একটি চরিত্র। আমার পরিচয় হিজড়া, আর আমি হিজড়া হয়েই থাকতে চাই। ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর আমাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এখনো রাষ্ট্রীয় দলিলপত্রে পৃথক স্থান পাইনি। অনেক ক্ষেত্রেই নারী বা পুরুষের কাতারে দাঁড়িয়ে আমাদের সেবা নিতে হয়’।
সিটি নির্বাচনের দিকে নজর দিলে কথার বক্তব্যের সত্যতা মেলে। ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত প্রায় ১০ হাজার যৌন সংখ্যালঘু ভোটার।
‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’র প্রায় দেড় বছর পরও ‘নারী’ বা ‘পুরুষে’ বিলীন হয়েছে ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠী। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪২ লাখ ভোটারের মধ্যে ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠী পৃথক কোনো স্থান পায়নি। এমনকি হিজড়া পরিচয়ে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যাও হাতেগোনা। তাই রাজধানীতে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার হিজড়াকে বাধ্য হয়ে ‘নারী বা ‘পুরুষ’ পরিচয়ে নিবন্ধন করাতে হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৮ লাখ ভোটারের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে প্রায় দুই হাজার যৌন সংখ্যালঘুকে। দেশের যৌন সংখ্যালঘুদের পৃথক সত্ত¡ার দাবি যখন আলোচিত হচ্ছে- তখনো এই জনগোষ্ঠীকে নারী ও পুরুষের মধ্যে গুলিয়ে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে নারী ও পুরুষের মধ্যে না রেখে হিজড়াদের পৃথক সত্ত¡া হিসেবে স্থান দেওয়া উচিত। হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এখন প্রত্যেকটি সেবার ক্ষেত্রে তাদের জন্য পৃথক জায়গাও রাখতে হবে’।
এ বিষয়ে আলাপকালে যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সাদাকালো নামক একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অনন্যা বণিক বলছিলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নারী কিংবা পুরুষ হিসেবেই নিবন্ধন করে। সেখানে হিজড়াদের জন্য আলাদা কোনো ঘর নেই, বাধ্য হয়ে তাদের নারী-পুরুষে মিশে যেতে হচ্ছে। তিন সিটি করপোরেশনের ভোটারদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি হিজড়া রয়েছেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগের ভোটার আইডি কার্ডে লৈঙ্গিক পরিচয়ে ‘নারী বা পুরুষ’ উল্লেখ করা হয়েছে। হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্রে নামের শেষে হিজড়া শব্দটি যোগ করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, তাদের নারী-পুরুষে বিলীন না করে হিজড়া হিসেবে স্থান দেওয়া উচিত’।
যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা বন্ধু স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট জাহিদ আল আমীন বলছিলেন, ‘যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করার জন্য তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগে হিজড়াদের ভোটাধিকার ছিল না, এখন তারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারছে। কিন্তু ভোটার হবার জন্য তাদের নারী বা পুরুষের কাতারে দাঁড়াতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের নারী-পুরুষের মধ্যে না রেখে পৃথক একটি স্থান দেওয়া উচিত’। সিটি নির্বাচনের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে হিজড়াদের বঞ্চনা এবং তাদের সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধানের কথা উল্লেখ থাকা এখন সময়ের দাবি।
বন্ধুর নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ বলছিলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি এখনো আইনি ভিত্তি পায়নি। আমি মনে করি, জাতীয় সংসদে বিল আকারে স্বীকৃতির অনুমোদন দেওয়ার পরই সরকারি সেবার ক্ষেত্রে তাদের জন্য পৃথক স্থান রাখা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া জরুরি’।
©somewhere in net ltd.