নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন প্রকৃতি প্রেমিক। পছন্দ করি নতুনকে খুঁজতে এবং পুরাতনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে। পছন্দ করি বস্তুনিষ্ঠভাবে মানুষকে দেখতে এবং ব্যক্তিনিষ্ঠভাবে বাকি প্রকৃতিকে দেখতে।~ তাহসিনা নাজ খান (Tahsina Naz Khan)

ভেনাস

আমি একজন প্রকৃতি প্রেমিক। পছন্দ করি নতুনকে খুঁজতে এবং পুরাতনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে। পছন্দ করি বস্তুনিষ্ঠভাবে মানুষকে দেখতে এবং ব্যক্তিনিষ্ঠভাবে বাকি প্রকৃতিকে দেখতে।

ভেনাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শীতের রাতের অভিযান

০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২

একদিন আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সাদিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। অনেকদিন ধরে আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হয় না। তাই একটা নির্দিষ্ট দিন ঠিক করলাম যেদিন আমরা যার যার অফিস শেষে সন্ধ্যার পর দেখা করব।

তখন ডিসেম্বর মাস। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ চলছে। নির্ধারিত সময়ে আমরা ধানমন্ডির “সীমান্ত স্কয়ার”-এ একত্রিত হলাম। বহুদিন পর দেখা হয়ে আমরা ভীষণ খুশি। ওখানকার একটা দোকান থেকে আমরা সুইট কর্ণ কিনে খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে রাস্তা পার হয়ে সামনের লেকে গেলাম। আগে কখনো এই সময়ে এখানটায় আসা হয়নি। লাল ইটের বাঁধানো পাকা জায়গায় বসে সুইট কর্ণ খেতে খেতে আমাদের আরেকজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আসমার সাথে আমাদের ফোনে কথা হল। আসমা একটা ব্যক্তিগত কারণে ব্যস্ত থাকায় আমাদের সাথে দেখা করতে আসতে পারেনি। আমি আর সাদিয়া ওকে অনেক মিস করছিলাম। আসমাও খুব আফসোস করছিল আমাদের সাথে থাকতে না পারায়।

রাত তখন ৮টা পেরিয়ে গেছে। লেক সংলগ্ন এলাকায় শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। আমরা ঠিক করলাম লেকের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ গল্প করি। লেকের উত্তর দিক দিয়ে প্রথমে যাওয়া শুরু করতে গিয়েও করলাম না। গা ছমছম করার মত অন্ধকার। এই তীব্র শীতের রাতে এরকম একটা জায়গায় কোন মানুষ দেখা তো দূরের কথা, মানুষ বা কোন প্রাণীর আওয়াজও শোনা যাচ্ছে না। তবে অন্ধকারে লেক এলাকায় ছিনতাইকারী থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। তাই উত্তর দিক দিয়ে ঢুকতে আমি বা সাদিয়া- কেউই সাহস পেলাম না। ওখান থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে দক্ষিণ দিকে গেলাম। ওপাশে একটা চিকন রাস্তা দেখে মনে হল এইদিক দিয়ে লেকে ঢুকতে পারি। যদিও একটু অন্ধকার ছিল, কিন্তু সীমান্ত স্কয়ারের আলো পড়ে হালকা আলো-আঁধারি পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আর কিছু চিন্তা না করে আমরা ওই রাস্তা ধরে লেক এলাকায় ঢুকে গেলাম।

তীব্র শীতে লেকের পাশ ধরে হাঁটছি, গল্প করছি আর তার সাথে একটু একটু কাঁপছি। লেকের পানি কুচকুচে কালো – চারদিকে অন্ধকার পরিবেশ। হ্যারি পটারের ৭ম পর্বের লেকের কথা তখন মনে পড়ছিল। রোমাঞ্চকর অনুভূতি আমাদের দুজনের মধ্যে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একসাথে ‘শূন্য’ আর ‘রিকল’ ব্যান্ডের গান গেলাম। অসম্ভব ভালো লাগছিলো সেই মুহূর্তটা। আমাদের যাত্রাপথে দুই জায়গায় কিছু মানুষকে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখলাম। আমাদেরও অনেক ইচ্ছা করছিল খেলতে। যাত্রাপথে আরও দেখলাম কয়েকটা আনসার ও পুলিশ ক্যাম্প, পার হলাম একটা ছোট ব্রিজ। ব্রিজ পার হওয়ার মুহূর্তটাও অসাধারণ লাগছিলো।

যেতে যেতে একটা প্রশস্ত জায়গায় এসে পড়লাম। সেখানে খাবারের দোকান আছে, বসে খাওয়ার জন্য চেয়ার-টেবিলও রয়েছে। কিন্তু জায়গাটা লেকের কোনদিকে আর সেটা ধানমন্ডির কত নাম্বারে – আমি বা সাদিয়া কেউই বুঝতে পারছিলাম না! এমন অসময়ে সাদিয়ার বাসা থেকে ফোন আসল- সাদিয়া কোথায় আছে জানার জন্য। ওর মিথ্যা বলা ছাড়া উপায় ছিল না- ধানমন্ডির ৮ নাম্বারে আছি বলে পার পেল। আমাকেও কিছুক্ষণ পর একই কাজ করতে হল। যদি আমরা সত্যি কথা বলতাম যে ঠিক কোন জায়গায় আছি তা জানিনা, তাহলে দুজনের বাসায় তোলপাড় হয়ে যেত- রীতিমত সিডর বয়ে যেত। যাই হোক, সেই অজানা জায়গায় বসে আমরা মজা করে ফুচকা খেলাম। হারিয়ে যাওয়ার মাঝেও যে একটা অদ্ভূত আনন্দ আছে, তা সেদিন খুব ভালোভাবে আবিষ্কার করলাম।

ফুচকাগ্রহণ শেষে আবার আমাদের হাঁটা শুরু হল। জানিনা এর শেষ কোথায়। দুধরনের ইচ্ছাই হচ্ছিল- একবার মনে হচ্ছিলো এই রোমাঞ্চকর অভিযান যেন শেষ না হয়। আবার মনে হচ্ছিলো এই পথের শেষ কোথায় তা আজ বের করব। আরেকটা ছোট ব্রিজ পার হলাম- পার হওয়ার মুহূর্তটা অসাধারণ লাগছিলো। যেতে যেতে এক জায়গায় দেখি একটা কাঁচা সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সিঁড়ির শেষ মাথায় লেকের পানির সাথে প্রায় ঘেঁষানো রেলিংসহ লোহার তৈরি একটা প্রশস্ত জায়গা। কিছু মানুষ সেখানে হাঁটছে, গল্প করছে। আমরা সেখানে নেমে দাঁড়ালাম। অন্ধকারে মনে হচ্ছিলো পানির উপর দাঁড়িয়ে আছি- নিচে পানি, সামনে পানি। পানি আর পানি - ঠান্ডা কালো পানি। অনেক দূরে বড় বড় গাছ। দূরে একটা বিশাল গাছের পেছন থেকে আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। পুরো পরিবেশটা অনেক স্বপ্নময় মনে হচ্ছিলো। হ্যারি পটার সিরিজের কথা আবার মনে পড়লো। ওখান থেকে ফেরত আসার সময় সেই সিঁড়িটাতে একটা ইঁদুর দেখলাম। আমরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় আমাদের সামনে সামনে যাচ্ছিল - পরে সিঁড়ির এক কোনায় বসে রইল।

আবার আমাদের হাঁটা শুরু হল। হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে দেখি লেক থেকে বের হওয়ার পথ পেয়ে গেছি। আর তখনি আবিষ্কার করলাম যে আমরা প্রথমে এই দিকটা দিয়েই ঢুকতে গিয়েও ঢুকিনি - ছিনতাইকারীর ভয়ে!

লেক এলাকা থেকে বের হলাম। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। দুইজন অতিমাত্রায় অভিভূত মানুষ এরপর বিদায় পর্ব সেরে যার যার বাসার দিকে রওনা হলাম। কনকনে সেই শীতের রাতে কোন পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়াই এরকম অভিযানের কথা যখনই মনে পড়ে, তখনই অনেক রোমাঞ্চিত হই। আমরা দুজনই খুব মিস করি ওই অভিযানটা - মনে হয় যেন সেটা খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন ছিল। :)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯

পাজল্‌ড ডক বলেছেন: :)

০৩ রা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

ভেনাস বলেছেন: :)

২| ০৩ রা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


অদ্ভুত

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

ভেনাস বলেছেন: :)

৩| ০৩ রা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
লেখক সুন্দর করে তার মনের ভাব স্মৃতি তুলে ধরেছেন । আমি পড়তে পড়তে রমাঞ্চ ও তন্ময়তা অনুভব করেছিলাম।
এই লেখকের কাছ থেকে আরো লিখা আশা করি ।

০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৩৭

ভেনাস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আরও লেখার জন্য উৎসাহিত বোধ করছি।

৪| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: লেখাটা সুন্দর হয়েছে। এভাবে আমারও ঘুরতে ইচ্ছা করে। কিন্তু কল্পনা আর বাস্তবতা ভিন্ন। পৃথিবী খুবই কঠিন একটা জায়গা। নির্মম। বড়ই নির্মম।

০৪ ঠা মে, ২০১৫ সকাল ৯:০৬

ভেনাস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। জানি পৃথিবী খুবই কঠিন একটা জায়গা। এই নির্মমতার মাঝে থেকেই ছোট ছোট বিষয়গুলো থেকে আনন্দ খুঁজে বের করি। আমাদের আশেপাশে প্রকৃতির মাঝেই আনন্দ লুকিয়ে থাকে, সেটা শুধু খুঁজে নিতে হয়। তাহলে নির্মমতার মাঝেও কিছুটা শান্তিতে থাকা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.