![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন প্রকৃতি প্রেমিক। পছন্দ করি নতুনকে খুঁজতে এবং পুরাতনকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে। পছন্দ করি বস্তুনিষ্ঠভাবে মানুষকে দেখতে এবং ব্যক্তিনিষ্ঠভাবে বাকি প্রকৃতিকে দেখতে।
হ্যালো! আমি করোনা। আমি জানি আমার নামটা খুবই সুন্দর। তবে আমার ভাল নাম কোভিড-১৯। আমি অতি ক্ষুদ্র, গোলাটে আর কিউট একটা ভাইরাস। জন্ম থেকেই আমি অনেক দুষ্ট। কোন কোন ডাক্তার/বিশেষজ্ঞ আঙ্কেল আমাকে বেয়াদব/ভয়ঙ্কর/সুপার ভিলেন/দুষ্ট প্রকৃতির ভাইরাস বলে থাকেন। আমার কাছে কিন্তু প্রশংসা শুনতে ভালই লাগে।
আমি বয়সে আপনাদের চেয়ে অনেক বেশি ছোট। আমার জন্ম এইতো মাত্র সেদিন - ২০১৯ সালের শেষের দিকে - চীন দেশের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে। পৃথিবীতে এসে আমার কিন্তু ভালই লাগছে। আমি দেখতে অনেকটা ছোট ছোট ফুলওয়ালা উলের বলের মত। এটা আমার নিজের সম্বন্ধে নিজের ধারণা। আপনাদের মানুষদের শরীর যেমন ত্বক দ্বারা আবৃত, আমার শরীর ফ্যাটের প্রলেপ দ্বারা আবৃত।
এবার একটু নিজের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা বলি। আপনাদের মানুষদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি তাদেরকে যারা ‘মাস্ক’ নামক একটা বিরক্তিকর বস্তু দিয়ে অযথা নাক-মুখ ঢেকে না রেখে আরাম করে ফ্রি বাতাস খেয়ে থাকেন। আপনারা যারা মাস্ক পরেন না তাদের প্রতি আমার অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। কারণ আমি খুব একটা কষ্ট না করে সহজেই আপনাদের ভিতর ঢুকে আমার পরিভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারি। যারা ‘সাবান’ নামক বস্তু দিয়ে কম হাত ধোন, অ্যালকোহলিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন না তাদেরকেও আমার খুব পছন্দ। আর আপনারা অবশ্যই বেশি বেশি অন্যমনস্ক থাকবেন। কারণ অন্যমনস্ক থাকলে আপনারা নাক-মুখ-চোখ-কান এগুলোতে ঘন ঘন হাত দেন। এতে আমার জন্য খুব সুবিধা হয় আপনাদের ভিতর ঢুকতে। আপনারা বাইরে না গিয়েও ঘরে বসেই আমার অস্তিত্ব টের পেয়ে যান আপনাদের শরীরের ভিতর।
আমি বয়সে অনেক ছোট হতে পারি, কিন্তু আমি খুবই ভ্রমণপ্রিয়। এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে বেড়ানো আমার জন্য অনেক রোমাঞ্চকর। তাই আপনাদের মানুষদের ভিড় যেখানে যত বেশি, আমার ভালোলাগাও তত বেশি। আপনাদের একজন থেকে অন্যজনের দূরত্ব ছয় ফিটের কম হলে আমার জন্য অনেক ভাল, আর তিন ফিটের কম হলে তো কথাই নেই! আমার খুব ভাল লাগে মানুষের এই বন্ধন আর ভ্রাতৃত্ববোধ দেখতে।
আবহাওয়ার বিষয়টা নিয়ে বলতে গেলে ঠান্ডা আর শুকনো জায়গা আমার পছন্দ। কারণ এ ধরনের জায়গায় আমি বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকতে পারি। আমি গরম খুবই অপছন্দ করি। গরমে যেমন গরু-খাসির চর্বি গলে, তেমনি আমার ফ্যাটও দুর্বল হয়ে পড়ে। সরাসরি সূর্যের আলোতে আমি একটু কম সক্রিয় হয়ে যাই।
নিজের একটা মজার অনুভূতি আর পর্যবেক্ষণের কথা বলি। ব্যাপারটা একটু গোপনীয়। সেটা হল- ভ্যাকসিন আসার পর আমি নতুন উৎসাহে আমার রাজত্বকে শক্তিশালী করতে পেরেছি। এর কারণ আপনারা ভ্যাকসিন নিয়ে সবকিছু ১০০% নিরাপদ মনে করে খেয়াল-খুশি মত চলাফেরা করছেন। আর যারা ভ্যাকসিন নেন নাই তারা ভাবছেন যে অন্য অনেকেই তো নিয়েছেন, তাই তাদের না নিলেও সমস্যা নাই আর মাস্ক না পড়লেও সমস্যা নাই। এই সুযোগগুলোকে আমি খুব ভালভাবে কাজে লাগিয়েছি, হি হি! আমার প্রায় হারাতে যাওয়া রাজত্ব পুনরুদ্ধার করে আমি এখন রাজকীয় হালে আছি।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আপনাদের মানুষদের মধ্যে আমি তাদেরকে খুব পছন্দ করি যারা আমার ব্যাপার নিয়ে কোন ঘাটাঘাটি করে না বা করলেও অনেক কম করে। আমার সম্পর্কে যে যত কম জানে, তাকে আমার তত বেশি পছন্দ। বেশি জানলে আমি অস্বস্তিবোধ করি আর আতঙ্কে থাকি – যদি তারা আমার সবকিছু জেনে নিয়ে সচেতন হয়ে যায়! আপনারা তো অনেকে একটু অসুস্থ বোধ করলেই বাসার ভিতর একটা রুমে নিজেকে বন্দী করে ফেলেন। কী দরকার শুধু শুধু নিজের উপর এমন অত্যাচার করার?
আমি মাঝে মাঝেই ডিপ্রেশনে ভুগি। এটা মন খুলে বলতে পারি না কারণ এই আধুনিক যুগেও অনেকে মনোবিজ্ঞানকে ‘পাগলের বিজ্ঞান’ বলে মনে করে! ডিপ্রেশনে ভুগার কারণ হল – কিছু মানুষ আমার হাড়ির খবর জানার জন্য সদা ব্যস্ত। আমার শরীরের ডিএনএ-র মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা তা জানার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকেই তো বাকিরা জানতে পারল যে আমার শরীরের ফ্যাট সাবান, স্যানিটাইজার, ডেটল দিয়ে কেটে দিলে আমি দুর্বল হয়ে দ্রুত মারা যাব।
আপনারা অনেকে বাইরে থেকে জিনিস কিনে আনলে বা হোম ডেলিভারি নিলে পানিতে কয়েক ফোঁটা ডেটল মিশিয়ে টিস্যু, তুলা বা কাপড় ব্যবহার করে জিনিসগুলো মুছে তারপর জায়গামতো গুছিয়ে রাখে। কী দরকার এত কষ্ট করে আমাকে আপনাদের বাসার ভিতর অপমান করার? আমি কি আপনাদের অতিথি হতে পারি না?
আপনারা কিছু মানুষ আছেন, যাদের সহজে শরীর-মন খারাপই হতে চায় না। আপনারা অনেকে সিগারেটও খান না, অনেকে আবার আমি পৃথিবীতে আসার পর সিগারেট ছেড়েও দিয়েছেন - কী করবেন আপনারা এত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে? আমি শুনেছি অনেকেই আপনারা রীতিমত যুদ্ধ করে রুটিন করে পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন, সিগারেট ইত্যাদি ছেড়ে দিচ্ছেন, ব্যায়াম-মেডিটেশন করছেন, মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকছেন আর অন্যকেও প্রফুল্ল রাখছেন! আমি যদি কোনদিন চিরতরে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই, তবে এই ‘বেশি-জানা-ও-বাস্তবায়ন-করা’ আঁতেল মানুষগুলোই এর জন্য দায়ী থাকবে – এই আমি লিখে গেলাম।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:০৫
ভেনাস বলেছেন: কেন ভাই?!!
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: খুব আনন্দে আছেন মনে হয়?
১০ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১৬
ভেনাস বলেছেন: আনন্দ, নিরানন্দ মিলিয়েই তো জীবন ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০১
চাঁদগাজী বলেছেন:
সামনে পরীক্ষা আছে?