নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসীম সোবাহানের ভাবনা

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্মলেন্দু গুণের ‘রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫’

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১৩



কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫’ বইটা হঠাৎ করে হাতে আসে গতবছর এই সময়। ৭ নভেম্বরের আগে পরের ঘটনা নিয়ে যারা বই লিখেছেন তারা সবাই হয় রাজনীতিবিদ,না হয় সামরিক ব্যক্তি এবং সব বইতেই সেনানিবাস ও বঙ্গভবনের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। কবি নির্মলেন্দু গুণের বইটা অভূত্থানের বাইরের অবস্থান থেকে লেখা। ফলে বইটাতে একটা স্বকীয়তা আছে। কবি তার নিজের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি লিখেছেন তার লেখার গুণ দিয়ে ফলে এই বইয়ের বর্ণনা অনেকটা শিল্প নির্ভর।

বইটা পড়ে জানতে পারি, ১৫ই আগষ্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শোনার পর কবি নির্মলেন্দু গুণ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন এবং এক সময় ঢাকা থেকে গ্রামে চলে যান। গ্রামেও যে শান্তি আসে তা না, সেখানে গিয়ে শোনেন তাদের গ্রামের একজন সরকারী কর্মচারী মেজর ডালিমের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু হত্যার সংবাদটি রেডিওতে প্রচার হতেই আনন্দে উত্তেজিত হয়ে পরে এবং ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের বড় সড়ক ধরে খালি গায়ে মাথায় গামছা বেধে দৌড়াতে শুরু করে। দৌড়াতে দৌড়াতে, চিৎকার করে সে বলতে থাকে, ‘ভাইসব আর চিন্তা নাই। হিন্দুর বাপ শেখ মুজিবর শ্যাস। আপনারা সব বাইর হইয়া আসেন।’

নভেম্বরের শুরুতে ঢাকা আবার কবিকে ডাকতে থাকে। শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি তখন তবুও ঢাকার পথে রওনা হন। তার বাবা মা বারন করেন, তিনি শোনেন না। ঢাকায় এসে কবি ওঠেন ১১২ আজিমপুরে বন্ধু মহাদেব শাহার বাসায়।

কাকতালীয়ভাবে তার পরদিনই ঢাকায় ক্ষমতা বদল হয়। খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ক্ষমতা থেকে ছিটকে ফেলে দেন। এই শুনে কবির ভাল লাগে। কিন্তু নভেম্বরের ৫ তারিখ থেকে জাসদের প্রপাগান্ডায় কবির মন খারাপ হয়। জাসদ তখন খালেদ মোশারফকে ভারতীয় দালাল রুপে প্রমাণে কাজ করছে। কবির একটু অস্বস্তি হয়, লজ্জা হয়, কারন তিনি একসময় জাসদের পত্রিকা গণকণ্ঠে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য জাসদের এই মিথ্যাচার কবির মনে বেশ অঘাত দেয়।

প্রপাগান্ডা সফল হয়। ৭ নভেম্বর খালেদকে মরতে হয় ভারতীয় দালালের মিথ্যা অপবাদ ললাটে নিয়ে। কবি বইয়ে লেখেন যে তার সেদিন, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ রেডিওতে কবিতা পড়ার কথা। দ্বিধাদন্ধ কাটিয়ে কবি যান রেডিও ষ্টেশনে কিন্তু ততক্ষণে তা জাসদের কন্ট্রোলে চলে গেছে, তাকে আর ঢুকতে দেওয়া হয় না।

৭ নভেম্বরের অভ্যূত্থান নিয়ে যখন অন্যান্য বইয়ে সেনানিবাস ও বঙ্গভবনের বিবরন পাওয়া যায়, কবি নির্মলেন্দু গুণের বইয়ে তখন উঠে এসেছে ঢাকার অন্যান্য এলাকার কিছু চিত্র। কবি বইয়ে এও লেখেন -‌ ১১ই নভেম্বর বিউটি বোর্ডিংয়ে দুপুরের খাওয়া খেয়ে পিজিতে আসেন তার বন্ধু হাসানকে দেখতে। সেখানে মিলিটারি তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের সময়কার বর্ননা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। আর যে অফিসার তাকে গ্রেফতার করেন তার নামটাও বেশ চমক জাগানিয়া- কর্নেল নওয়াজেস। এই কর্নেল নওয়াজেসের ইউনিটেই খালেদ মোশাররফকে সৈনিকরা ৭ তারিখ ভোর সকালে হত্যা করে। নওয়াজেস বাধা দিয়েছিলেন কিন্তু তখন তার কোন কন্ট্রোল ছিলনা সৈনিকদের উপর। নওয়াজেস এরপর ছয় বছর জিয়ার অধীনে চাকুরী করেছেন। অবশেষে জিয়া হত্যার সংশ্লিষ্টতার মিথ্যা অভিযোগে এরশাদ কর্নেল নওয়াজেসকে ফাসি দেয়।

সেই সময়কার রাজনৈতিক বর্ননা ছাড়াও এই বইতে নির্মলেন্দু গুণ তার নিজের ভেতর কি চলছিল, সকল প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার উপলব্ধি এবং বিপন্নতা লিখেছেন বইটিতে। আর বিশ্লেষণ করেছেন জিয়া এবং খালেদকে। বইটি পড়তে পড়তে অনেক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কিন্তু তবুও যারা দেশকে ধর্ম এবং বর্ণের খোলসের বাইরে যেয়ে ভালবাসতে পারেন তাদের বইটা পড়া উচিত। আর বইটির অনন্য সাহিত্য মূল্য তো আছেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.