নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসীম সোবাহানের ভাবনা

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী

ওয়াসীম সোবাহান চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরফের মাদকতায় গরিবি অমরতা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৭



মিন্টো রোড থেকে ভুতের গলি বেশি দূরে না। মাঝে পরিবাগের কিছু এ্যাপার্টমেন্ট আর ইস্টার্নপ্লাজা নামের এক জঙ্গল - এই জানা ভৌগলিক অবস্থান গল্পকার সুমন রহমান আমাদের আবার জানিয়ে দেন তার ‘ডেঙ্গুচর্চার দিন’ গল্পে যেখানে স্বামী ফুলের গাছে পানি দেবার নামে এডিস মশা উৎপন্ন করবার ব্যবস্থা করে আর স্ত্রী ভুলে যাবার বাহানায় স্বামীর ঘরের মশারির ছিদ্র সেলাই করে না।

গল্পের নাম পড়ে ধারনা হয় গল্পের ভিলেন এডিস মশা কিন্তু শেষে যেয়ে বোঝা যায় ভিলেন আসলে স্বামী-স্ত্রী দুজনে। এডিস তাদের তুলনায় বরং অনেক নিষ্পাপ।

দাম্পত্য কলহের কোন বর্ননা গল্পে নেই। কিন্তু গল্পকার সুমন রহমান ঠিকই বুঝিয়ে দেন দুটি পিঁপড়া জড়াজড়ি করে পানিতে ডুবছে এইটুকু লিখে যে – সংসারে স্বামী-স্ত্রীর কোন যৌথতা নেই কেবল মাত্র টেলিভিশনের সংবাদ দেখা ছাড়া।

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব এগুতে থাকে,গল্পের সাসপেন্স বাড়তে থাকে। সুমন রহমান শেষটায় স্বামীর বয়ানেই জানিয়ে দেন ঘরে নতুন টব আসবে এবং মশারিতে আরও বড় একটা বড় ছিদ্র হয়েছে যা দিয়ে ঢুকে যেতে পারে আস্ত একটা মুরগি। এর আগে প্লটে টুইস্ট আসে, স্বামী, স্ত্রী, এডিস মশা কেউ জেতে না, যুদ্ধে সফল হয় অন্য এক চরিত্র।

সুমন রহমানের গল্পে কোন চর্বি থাকে না। পাঠক-পাঠিকার জন্য থাকে শুধু মাংশ। তিনি সরাসরি গল্পে আসেন, সরাসরি নির্ধারন করে দেন চরিত্রগুলো কি চাইছে। তার একেকটি লাইন বহন করে কয়েক পাতা মুল্যের বর্ননা। মাঝে মাঝে একেকটি প্যারা বহন করে কয়েকটি উপন্যাসের নির্যাস। যেমন ‘মনোগমির ভুত’ গল্পটির প্রথম লাইন – ‘ভদ্রলোকেরা শুনলে আশ্চর্য হইবেন মাত্র পনের বছর বয়সে আমার অভিষেক হয়’- বলে দেয় অনেক কথা। সুমন রহমান এই গল্পে আর বর্ননা করেন না কি, কেন, কিভাবে বরং সরাসরি চলে যান মুল গল্পে যেখানে পিঠা-পিঠি দুই বোন সুলেখা আর জুলেখার সাথে কলেজ পরুয়া এক ছেলের প্রেম জমে উঠে।

গল্পকার সুমন রহমান ডায়লগের মধ্যে দিয়ে তুলে আনেন গল্পের কনটেক্সট,চরিত্র গুলোর অবস্থান। এই আঙ্গিকে তার ‘গরিবি অমরতা’ বইটি বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমি সংযোজন। ‘গরিবি অমরতা’ গল্পেও একেকটি লাইনের মধ্যে সুমন রহমান ঢুকিয়ে দেন ‘না লেখা’ কয়েকটি উপন্যাসের নির্যাস – ‘আব্বার বিরক্তি বাড়ে। শুইয়া শুইয়া ঝাল ঝাড়েন তিনি কড়ুই গাছটার হতভম্ব শেকড়টার ওপর। শেকড়টা টান দিয়া ছিঁড়া ফালান তিনি,যেমন কৈরা অনেক বছর আগে আমার কবিতার খাতাটা ছিঁড়া ফেলছিলেন ।’

‘শায়লার দিকে যাওয়া’ গল্পে সুমন রহমান এক সাথে দুইটা গল্প বাধেন। দুইটা গল্প প্যারালাল না বরং একটা অন্যটার উপর দিয়ে চলে যার একটাতে তিনি ডিভোর্সী নায়ককে দিয়ে পুরাতন প্রেমিকা শায়লাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন সোয়া কোটি মানুষের এক মেট্রোপলিটন শহরে আর অন্যটিতে এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পোস্ট মরটেম করেন। দুইটাই পাশাপাশি চলে, আর সাথে চলে তার স্ট্যাটিস্টিক্স-এর উপর টিউটরিয়াল ক্লাস।

‘গরিবি অমরতা’ বইটিতে আছে সাতটি গল্প। বইয়ের পৃষ্টা সংখ্যা মাত্র ৫৬। গল্পগুলো এতটাই আচ্ছন্ন করার মাত্রা নিয়ে মলাটের ভিতর বিচরন করে যে গল্পকারের উপর এক সময় প্রচন্ড রাগ হয় এত অল্প লেখেন বলে।

এই বইয়ের সাতটি গল্প সাতটি থিমের উপর নির্মিত যেখানে রাজনীতি, সামাজিক অবক্ষয়, ব্যক্তিদ্বন্দ্ব উঠে আসে অবলীলভাবে, দুঃসাহসিকভাবে। রাজনৈতিক মতামত দিতে সুমন রহমান পিছপা হন না, সোশালিজমকে তিব্র খোচা দিতে তার মন্দ লাগে না, নির্মিত চরিত্রের পক্ষ নিতেও বাধে না কারন তার কাছে ‘কারেক্ট’ বলে কিছু নেই, সবই ইন্টারপ্রিটেসন!

সুমন রহমান গল্প বেশি বড় করেন না আবার গল্প বেশী লেখেনও না। কি এক পদ্ধতিতে যেন জন্ম নিয়ন্ত্রন করেন। সেই ২০০৮ এ বেরিয়েছিল ‘গরিবি অমরতা’; এর পর এত গুলো বছর কোন গ্রন্থ নেই আর। এবার মাত্র ছয়টা গল্প নিয়ে বের হয়েছে তার দ্বিতীয় গল্প গ্রন্থ – নিরপরাধ ঘুম। পাঠক-পাঠিকাকে তাতিয়ে দিয়ে, মৌনতা অবলম্বন করে হয়ত সুখ পান সুমন রহমান। তবে এই মৌনতা ও জন্ম নিয়ন্ত্রনে ক্ষতি হয় বাংলা সাহিত্যের। আর রাগ হয় তার ভক্তদের।

সুমন রহমানের মতে তিনি এমন এক দ্বৈততা যে একই সাথে হাসপাতালের মত নীরব আর দর্শনার্থীর মতন উদ্বিগ্ন। তিনি বেড়ে উঠেছেন পরিত্যাক্ত রেল ষ্টেশনে, তালি বাজিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের দৈনিক উল্লাসে আর শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাতরে পার হয়েছেন কুমির ভরা নদী। তার নির্মিত গল্পে এসব উঠে আসে অবলীলায়।

বইটির নামের মধ্যে একটা গ্রাম্য ঝোঁল আছে কিন্তু গল্পগুলো শহরের পাঠকদের জন্যই বেশি মানান সই। গল্পকার সাচ্ছন্দবোধ করেন চরিত্রের বয়ানে গল্প এগিয়ে নিতে। অন্য গল্পগুলোয় ব্যক্তি সুমন রহমান উপস্থিত নাকি অনুপস্থিত তা বোঝা যায় না তবে ‘গরিবি অমরতা’ গল্পে তিনি নিজের জীবনের কাহিনি বলেছেন তা নিশ্চিত কারন তার বাবার কবরের উপরেও একটি এপিটাফ আছে।

সুমন রহমান ছাপানো হরফে যে মাদকতা বিলান, সে ক্ষমতা খুব কম বাঙ্গালী গল্পকারের আছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: বইটি সংগ্রহ করবো ইনশাল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.