নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেমন তা বলতে পারব না, তবে আম্মু বলে আমি নাকি অনেক ভাল পুলা!

রাফাত সাগর

তুমিহীনা আমি ছন্নছাড়া!!

রাফাত সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সারপ্রাইজ!!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৪১

ছোঁয়ার আম্মু কোথায় গেলে তুমি? আমার টাইটা বেধে দাও না একটু। অাজ অফিসে মিটিং আছে। তারাতারি যেতে হবে। দেরি হলে ক্লাইনরা আমার জন্য অপেক্ষা করবে।
-একটু দাড়াও, আমি নাস্তা রেডি করে নিয়ে আসছি। (অহীন)
-আচ্ছা। জলদি কর।
-কোথায় তুমি?
-এই যে আমি।
-শুন না, আজ কত তারিখ তোমার মনে আছে?
`
অহীন টাই বাঁধতে বাঁধতে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আজকে ২৮ তারিখ, আমাদের একমাত্র মেয়ে "নুসরাত অরিন ছোঁয়া"র প্রথম জন্মদিন। যদিও আমি জানি তবু না জানার ভান করলাম। কারণ কথাটা অহীনের মুখ থেকে শুনার জন্য। আমি অবাক হয়ে বললাম
`
-না'ত! কেন? আজকে কোন বিশেষ দিন বলে মনে হচ্ছে না। কিছুদিন আগেই আমাদের বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম তাহলে আর কি হতে পারে?
-হুম, জানতাম তুমি ভুলে যাবে। অবশ্য এটা তোমার পুরাতন অভ্যাস। (অভিমানী সুরে)
-তাহলে বল না আজ কি?
-আজ ছোঁয়ার জন্মদিন।
-ও তাই! আজকে আমার ছোঁয়া মামনির জন্মদিন আর সেটা আমিই জানি না। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে আজ অফিসে অনেক কাজ কখন ফিরব বলতে পারি না।
আমার কথায় অহীন মন খারাপ করে ফেলল। আর বলল
-তাহলে?
-তুমি চিন্তা কর না অামি ড্রাইভারকে দিয়ে কেক পাঠিয়ে দেব। তুমি বাসাটা সুন্দর করে সাজিয়ে নাও। আর আব্বু আম্মুকে অামি ফোন করে বলে দেব চলে আসার জন্য।
`
এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। আজ অহীনকে সারপ্রাইজ দিব। যদিও বিষয়টা অহীনকে জানাই নি। তবে আব্বু-আম্মুকে জানিয়ে রেখেছি।
`
অহীনকে বিয়ে করেছি দুই বছর হল। তার আগে আমাদের দুই বছর রিলেশন ছিল। অহীন ছিল আমার থেকে এক বছর জুনিয়র। ভার্সিটিতে ওকে প্রথম দেখেই ভাল লেগে যায়। পরে বান্ধবীদের হাত করে ওকে পটিয়ে ফেলি। সেই থেকেই একসাথে চলা। অহীন ছিল উচ্চ পরিবারের মেয়ে। সম্পর্কের শুরুতে ও তেমন গুরুত্ব না দিলেও একসময় ঠিকই সিরিয়াস হয়ে পরে। দিনগুলো ভালই কাটছিল, সারাদিন ওর সাথে ফোনে কথা বলা বিকেলে পার্কে ঘুরতে যাওয়া এমন করতে করতে কখন দু'বছর পার হল টেরই পাইনি। সবকিছুই ঠিক চলছিল। হঠাৎ একদিন ও জরুরি তলব করল। দেখা হওয়ার পর জানতে পারি ওর জন্য বাসা থেকে ছেলে দেখা শুরু করছে। কিছুদিনের ভিতর বিয়ে দিয়ে দেবে। সেদিন ওর কি কান্না এক পেকেট টিসু শেষ করে ফেলল চোখের পানি নাকের পানি মুছতে মুছতে। আর আমার কথা নাকি বাসায় জানিয়েছিল কিন্তু ওর বাবা এতে রাজি হয় নি। তিনি তার পছন্দ করা ছেলের কাছে বিয়ে দেবেন। সেদিনে মত ওকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠালাম। বাসায় এসে রাতে বাবা-মার, সাথে খোলামেলা কথা বললাম বিষয়টা নিয়ে। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে তারা আমাকে বলল তুই কি করতে চাস? আমি বললাম যদি পালিয়ে যেতাম তাহলে তোমাদের জানাতাম না। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। বাবা শুধু এইটুকুই বলল- তাহলে কালই নিয়ে আয়। রাতে অহীনকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। সকাল বেলাই সে ব্যাগ নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসে। সেদিনই আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়। আর সেদিন থেকে অহীনের জন্য তার বাবার বাড়ির রাস্তা বন্ধ হয়ে। আজ পর্যন্ত যেতে পারে নি।
-স্যার অফিসে চলে এসেছি।
ভাবনায় ছেদ পড়ল ড্রাইভারের ডাকে।
-ও হা তুমি এক কাজ কর। দোকান থেকে একটা ভাল দেখে কেক কিনবে, আর সাথে যা লাগে তা কিনে বাসায় দিয়ে আস।
`
অফিসে গিয়ে স্যারকে বলে দুদিনের ছুটি নিয়ে বের হয়ে আসলাম। ড্রাইভারকে ফোন করে আসতে বললাম। আর বাবা-মাকে সাথে করে নিয়ে আসতে বলালাম। একটু পরই চলে আসল। যথাসময় রওনা দিলাম শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্য।
`
শ্বশুর বাড়িতে পৌছাতে দুপুর হয়ে গেল। কলিংবেল চাপতেই শ্বশুরমশাই দরজা খুললেন। কিন্তু আমাকে দেখে তখন ওনার মুখটা দেখার মত হয়েছিল। কিছুক্ষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। যখন আব্বু আর আম্মুকে দেখলেন তখন আর কিছু বললেন। আমরা ভিতরে গিয়ে বসলাম। বাবা বলতে শুরু করলেন।
-কেমন আছেন বিয়াই সাহেব?
-ভালো। (গম্ভীর কন্ঠ)
-এখন রেগে আছেন মনে হয়?
-রেগে থাকব না কি করব? আপনাদের জন্য আমার একমাত্র মেয়েটা বাড়ি ছাড়া। গত দেড়টা বছর তাকে দেখা দূরের কথা একটিবার কথা পর্যন্ত শুনতে পাই নি।
-দেখুন অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আজকে আমরা এখানে ঝগড়া করতে আসি নি। ওরা বাচ্চা ছেলে মেয়ে ভুল নাহয় করে ফেলেছে। সেটা সমাধান করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আর তারচেয়ে বড় কথা হল আপনার মেয়ে না হয় ভুল করে ফেলেছে। নাতনি কি ভুল করেছে। অন্তত ওর দিকে তাকিয়ে সবকিছু মেনে নেয়া যায় না?
-কি বললেন বেয়াই সাহেব। অহীনের মেয়ে হয়েছে। এই অহীনের আম্মু শুনছ? আরে দেখে যাও কারা এসেছে।
ভেতর থেকে শ্বাশুরী আম্মা বললেন।
-কি হল হঠাৎ এত খুশি কেন? আরে বেয়াই সাহেব আপনারা কখন এলেন? এতদিনে আমাদের কথা মনে হলে?
-আমাদের বাসায় আপনারা কি আর যাবেন। তাই বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই চলে এলাম।
-ভালই করেছেন।
-হুম, এখন কথা না বাড়িয়ে রেডি হন। আমাদের বাড়ি যেতে হবে। আজ আপনাদের নাতনির (ছোঁয়ার) জন্মদিন। সবাই একসাথে আনন্দ করব।
-তাই নাকি! তাহলে ভালই হল।
`
শ্বাশুর বাড়ী থেকে যখন সবাই বের হলাম ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নিজেকে এখন অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে মাথা থেকে কয়েক টন ওজনের টেনশন দূর হইছে। শ্বশুরমশাই যে এত সহজেই রাজি হবেন ভাবতেই পারি নি। তবে ছোঁয়ার কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছেন। আমি অহীনকে সারপ্রাইজ দেবার বিষয়টা সবাইকে খোলে বললাম। আমার প্লান শুনে সবাই আরো হাসাহাসি শুরু করে দিল এবং সবাই একমত হল। ঠিক তখনই আমার ফোনে অহীনের কল আসল। আমি ফোন রিসিভ করলাম।
-হ্যালো সাগর, কোথায় তুমি? কখন আসবে?
-আর বল না, স্যার অফিসের কাজে অামাকে অনেক দূর পাঠাল। ফিরতে অনেক রাত হবে। কত করে বললাম অন্য কাউকে পাঠাতে। তিনি শুনলেনই না।
-ও এখন কি হবে? আব্বু-আম্মু এখনও আসে নি। একটু ফোন করে বলনা তারাতারি যেন চলে আসে। একা একা আমার খুব ভয় করছে।
- তুমি চিন্তা কর না। আমি চলে আসব আর বাবাকে ফোন করে বলছি তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য।
-আচ্ছা তুমিও জলদি আসবে কিন্তু।
-ওকে বাই।
`
ফোনটা কেটে সবাই একসাথে হেসে উঠলাম। আরো একঘন্টা পর বাসায় পৌছলাম। প্লান অনুযায়ী শ্বশুর-শ্বাশরী আগে ঢুকবে তারপর আব্বু আম্ম, শেষে আমি। সবাই মুড অফ থাকবে। আর অহীনেরর সাথে কেউ কথা বলবে না।
`
কলিংবেল চাপতেই অহীন এসে দরজা খুলল। কিন্তু দরজা খোলে ওর বাবা মাকে দেখে ভুত দেখার মত তাকিয়ে রইল। ওনারও দেখলাম কিছু না বলে সোজা রুমে ঢুকে গেল, তারপর আব্বু-আম্মু, এরপর আমিও মন খারাপ করে রুমে ঢুকে পরলাম। আমাদের সবার গোমরা মুখ দেখে অহীন কিনা কি বলবে বুজতে পারছে না। সাথে ওর বাবা মাকে দেখে আরো ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে ওর মাকে জিজ্ঞেস করল-
-আম্মু কেমন আছ?
তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন
-ভাল নেই।
তারপর বাবার কাছ থেকেও একই জবাব পেয়ে মন খারাপ করে পাশে দাড়িয়ে রইল। এই মুহুর্তে অহীনের মুখটা যে কেউ দেখলে না হেসে পারবে না। ওকে একদম বাচ্চাদের মতই দেখাচ্ছিল। একপর্যায়ে না থাকতে পেরে বাবা মা দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিল। আর কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল।
-আম্মু তোমরা কি এখন আমার উপর রাগ করে আছ? আমাকে ক্ষমা করে দাও না। আমি নাহয় একটা ভুল করেই ফেলেছি। তারজন্য আর কতদিন এভাবে দূরে থাকবে।
`
অহীনের এভাবে কাদতে দেখে আমরা আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। সবাই হেসে ফেললাম। আমাদের সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে অহীন একেবারে বোকার বনে গেল। ও কি হাসবে না কাদবে কিছু বুঝতে পারছে না। পরে আব্বু আম্মু অহীনকে সবখুলে বলল। এগুলো সব আমার প্লান ছিল। এই কথা জানার পর অহীন অামার দিকে যেভাবে তাকাল! সেই তাকানোতে আমি বুঝতে পারলাম আজ রাতে আমার খাটে জায়গা নেই।
তারপর সবাই মিলে কেক কাটলাম। অনেক আনন্দ করলাম। আব্বু-আম্মকে দেখলাম সব ভুলে গিয়ে শ্বশুর-শ্বাশরির সাথে ভালই গল্প করছে। যেন তার কত কালের চেনা। যাক এক দিক দিয়ে ভালই হল, অহীনকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সকল বিবাদ মিটে গেল।
`
রাতে ছাদে দাড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম। পাশে কারো অস্থিত্ব অনুভব করলাম। আমি খুব ভাল করেই জানি যে এটা অহীন। আমার হাত ধরে কাধে মাথা রেখে বলতে লাগল
-সাগর, তুমি অামাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে ভাবি নি। আজকে আমি অনেক খুশি, অনেক।
আমি অহীনের দিকে তাকিয়ে আলতো করে ওর কপালে চুমু একে বললাম
- কি করব তোমার সবসময় মন খারাপ দেখলে ভাল লাগত না তাই বাধ্য হয়ে এই পরিকল্পনা করলাম।
.
রাত বাড়ছে। হাজার বছরের সেই পুরোনো রাত। এক জোড়া দম্পতী ছাদে দাড়িয়ে চাঁদের জোৎস্না দেখছে। আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছে। এই রাত যেন শেষ না হয়। এই কামনাই রইল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪০

মোঃ হৃদয় শেখ বলেছেন: এই রাত যেন শেষ না হয়। আমাদেরও এই কামনাই রইল। সুখে থাকুন যুগ যুগ ধরে একি ভাবে।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

রাফাত সাগর বলেছেন: মোঃ হৃদয় শেখ বলেছেন: এই রাত
যেন শেষ না হয়। আমাদেরও এই
কামনাই রইল। সুখে থাকুন যুগ যুগ ধরে
একি ভাবে।
.
ধন্যবাদ..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.