নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেমন তা বলতে পারব না, তবে আম্মু বলে আমি নাকি অনেক ভাল পুলা!

রাফাত সাগর

তুমিহীনা আমি ছন্নছাড়া!!

রাফাত সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভৌতিক গল্পঃ অতৃপ্ত প্রেতাত্মা!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩


পূর্ণিমারাত! চারদিকে মায়াবী চাঁদের আলোয় ছেয়ে আছে। চাঁদটাকে আজকে বড় বেমানান লাগছে। একটু ভাল করে তাকালেই বুঝা যায় চাঁদটা অপরিপূর্ণ। কিসের যেন একটা অভাব, কি যেন নেই নেই এর মাঝে। মনে হচ্ছে একবুক অভিমান নিয়ে পৃথিবীর বুকে আলো ছড়িয়ে রেখেছে। ছোটবেলা থেকেই চাঁদের প্রতি আমার অদ্ভুত আকর্ষন ছিল। এর কারণ আমি অনেক খুজেও বের করতে পারিনি। তবে মা আর দাদী বলত আমার জন্ম হয়েছিল কোনএক পূর্ণিমারাতে। যখন ছোট ছিলাম দাদী অনেক রূপকথার গল্প শুনাত এই চাঁদকে নিয়ে, চাঁদের বুড়িকে নিয়ে। তবে আজো চাঁদে কোন বুড়ি আছে কিনা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি। বেশ কিছুক্ষন হল ছাদে উঠেছি। পরিবেশটা কেমন একটা থমথমে ভাব বিরাজমান। আমি চারপাশে ভালকরে একবার চেয়ে নিলাম। বেশকিছু দিন থেকে আমার কেন জানি ঘুম চোখের ধারে কাছেও আসতে চায় না। আবার কোন কোন দিন মাঝরাতে হঠৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর তখনই একটু ভয় হয়, মনে হয় কেউ আমাকে দেখছে বেশ তীক্ষ্ণ চোখ নিয়ে। কারো উপর ক্ষোভ থাকে যেভাবে তাকায় ঠিক সেভাবেই। হঠাৎ কাধে কারো শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। শরীরের প্রতিটা পশম যেন তা আমাকে জানান দিয়ে গেল। ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে পিছনে তাকালাম আমি। আর দেখলাম রোহী কেমন অস্বাভাবিকভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এভাবে ওকে ছাদে দেখে বেশ অবাকই হলাম। কারণ ছাদের দরজাটা আমার ঠিক বাম পাশে কেউ যদি ছাদে আসে তাহলে সেটা নিশ্চই আমার চোখে পড়ার কথা। কিন্তু রোহী আসল কিভাবে?
-এত রাতে ছাদে কি করছো?
রোহী আমাকে ছোট করে প্রশ্নটা করল। আমি কেপে উঠি রোহীর কন্ঠ শুনে। মাঝে মাঝে ওর কন্ঠে অস্বাভাবিক কিছু থাকে যেটা আমাকে হজম করে নিতে কষ্ট হয়। যেমনটা এখনো শুনতে পেলাম। আমি নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে বললাম
-ঘুম আসছিলনা তাই একটু হাওয়া বাতাশ খেতে অাসলাম। ভাবলাম যদি ঘুম আসে তাহলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। কিন্তু তুমি এখানে কখন আসলে? আমি তোমাকে দেখলাম না যে?
আমার প্রশ্ন শুনে রোহীকে কিছুটা বিচলিচ দেখাল আর অন্যদিকে তাকিয়ে বলল-
-এইত, মাত্রই আসলাম। ঘুম ভেংগে গেল পাশ ফিরে দেখলাম তুমি নেই পুরো বাসায় খুজে না পেয়ে শেষপর্যন্ত এখানে চলে আসলাম।
আমি রোহীর দিকে অাড় চোখে তাকালাম লক্ষ্য করলাম ওকে কেমন নির্জীব দেখাচ্ছে। ও কেমন চুপচাপ হয়ে থাকে। আগে যতটা চঞ্চল ছিল ততটা নেই। দিন দিন আগের রোহীকে আমি হারিয়ে ফেলছি এখন আমার সাথে আছে অজানা এক রোহী। আমি খুব ভাল করেই বলতে পারি এই বিষয়গুলো ঢাকা আসার পর থেকেই একের পর এক ঘটে যাচ্ছে। রোহীকে বিয়ে করেছি দু'মাস হতে চলল। চাকরি করার সুবাধে আমাকে ঢাকা থাকতে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর রোহীকেও আমার সাথে ঢাকা নিয়ে আসি। আর নতুন বাসায় উঠি ওকে নিয়ে। প্রথমে কিছুদিন ভালই চলছিল। কিন্তু একটা সময় থেকে লক্ষ্য করি রোহী আগের মত নেই। দিন দিন ও কেমন অদ্ভুত সব আচরন করে। সারাদিন চুপচাপ থাকে আমার সাথে কথা বলতে চায় না কিছু একটা বললেই রেগে যায়। বিষয়গুলো প্রথম প্রথম ততটা গুরুত্ব না দিলেও এখন আমি মেনে নিতে পারি না।
সেদিন ছিল ছুটির দিন। আমরা দুজন মুভি দেখে আর গল্প করতে করতে একটু রাত করেই ঘুমিয়েছিলাম। মাঝরাতে আবারও আমার ঘুম ভেংগে যায়। এবং আমি প্রথমেই যেটা দেখতে পাই তা হল রোহী খাটের উপর বসে আছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো অবস্থায় সামনের দিকে পড়ে আছে যার কারণে ওর মুখটা ভালভাবে দেখা যাচ্ছিল না। আর ও খুব আস্তে আস্তে কার সাথে যেন কথা বলছিল। আমি চুপচাপ শুনার চেষ্টা করলাম কিন্তু কি ভাষায় কথা বলছে তা ঠিক ধরতে পারলাম না। আমি উঠে রোহীর পাশে বসে ওর একটা হাত শক্ত করে ধরলাম এবং অনুভব করলাম ওর শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ঠান্ডা আমি এর কারন খুজে পেলাম না। এমনতো না যে এখন শীতের সময়। গরমের মধ্যেও ওর এত ঠান্ডার কারন বের করতে পারলাম না। হঠাৎ রোহী আমার দিকে তাকাল আর আমি দেখলাম ওর মুখে খুব হিংস্র একটা ভাব, চোখ টকটকে লাল রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। আমি এই মুহুর্তে ঠিক কি করব বুঝে উঠতে পারলাম না। তখনই রোহী আমাকে বলে উঠল-
-ওরা আমাকে মারতে আসছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তুমি আমাকে মারতে দিও না। আমাকে বাচাও।
আমি ওর কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কেননা যে ভয়েসটা আমি শুনলাম সেটা রোহীর ছিল না। কন্ঠটা ঠিক পুরুষেরও বলা যাবে না আবার কোন মেয়েরও বলা যাবে না। কেমন যেন বিকৃত একটা কন্ঠ ছিল। আমি খুব ভয় পেলাম। আমার পুরো শরীর দিয়ে ভয়ের চিকন একটা স্রোত বয়ে গেল। আমি ততক্ষনে নিশ্চিত হলাম রোহীর ভেতর অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে। যার জন্য রোহী এমন ভৌতিক আচরন করছে আমি নিজের ভেতর সাহস নিয়ে বললাম
-কি হয়েছে তোমার? কি বল এসব কে তোমাকে মারতে আসবে। আমি আছি তো কিছু হবে না তোমার। অনেক রাত হয়েছে পাগলামী না করে ঘুমাও।
কিন্তু না, রোহী আমার কথা শুনতে নারাজ। ও আবারও বলল
-না না না ওরা আসছে ঐতো আমার দিকে আসছে। ওদের আটকাও।
আমি যেন বিপদে পড়ে গেলাম। এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিত বা কি বলা উচিত ভেবে পেলাম না। আগে কখনো এমন অস্বাভাবিক পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম
-কে কোথায়? আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। এসব মিথ্যা তুমি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পর দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার কথায় ওর কর্নপাত হল বলে মনে হল না। রোহীর পাগলামি বেরেই চলছে। ও খুব জোগে জোড়ে বলছে কারা মারতে আসছে তাদের আটকাতে। আমি ভীষন অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে গেলাম। কি করব ভাবতে থাকলাম। আর ভয়ও হতে লাগল। ঠিক তখনই পাশের মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসল। এবং অদ্ভতভাবে আমি লক্ষ্য করলাম রোহীর উপর থেকে কাল কিছু একটা সরে গেল আর সেই সাথে রোহীর শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে ও আমার উপর ঢলে পড়ল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।
রাফাত ভাই প্রচন্ড রাগী মানুষগুলোর মধ্যে একজন। তিনি যতক্ষন অফিসে থাকেন না ততক্ষণ অফিসের সবাই শান্তিতে থাকে কিন্তু তিনি অফিসে আসলেই পুরু অফিস গরম করে ফেলেন। অবশ্য তিনি গরম করা লাগেও না এমনিতে সকল স্টাফদের চেয়ারের তলা গরম হয়ে যায়। এক কথায় বলতে গেলে তাকে সবাই ভয় পায়। তবে আট দশজনের থেকে তিনি আমার সাথে অন্যরকম। আগের অফিসেও আমরা একসাথে কাজ করতাম এরপর আমি চাকরি পাল্টানোর কিছুদিন পর তিনিও এখানে জয়েন করে। তিনি আমার ডেস্কে আসলেন আর বললেন।
-কি ব্যাপার আফজাল, দুইদিন অফিসে আসলে না যে। বউকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেছিলে নাকি?
আমি ওনার কথা একটু চিন্তায় পরে গেলাম। ওনার কাছে কি সত্যি কথাটা বলব নাকি বলব না? আমার কেন জানি মনে হল ওনাকে বলি নিজের কাছে বিষয়টা চেপে রেখে কিছু তো আর করা যাবে না। সেই রাতের পর থেকে রোহী দুইদিন অসুস্থ ছিল। বলতে গেলে খুব ভালই অসুস্থ ছিল। যার কারনে দুই দিন অফিসে আসতে পারি নি ওর কাছেই ছিলাম। আজকে কিছুটা ভাল দেখে আমি অফিসে চলে আসলাম।
-আসলে ভাই একটু সমস্যায় পরে গেছিলাম তাই দুই দিন আসতে পারি নি। আমার স্ত্রীর শরীর খারাপ হবার জন্যই।কিছুদিন থেকে ওর কি যে হল বুঝতে পারছি না। কেমন জানি প্যারানরমাল আচরন করে। মাঝে মাঝ আমারও খুব ভয় হয় ওর কথা শুনলে। কদিন থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
-আরে কি বল এসব! বিষয়টা কি পরিষ্কার করে বল তো। দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
আমি সবকিছু রাফাত ভাইয়ের কাছে খোলে বললাম। রোহীর সাথে যা যা হচ্ছে আর ও কি কি ধরনের আচরন করছে সবকিছু। সব শুনে রাফাত ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। কি যেন ভেবে তারপর বলল।
-বিষয়টা আমার কাছে ততটা সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না। তুমি এক কাজ করতে পার মিরপুরের দিকে আমার পরিচিত একজন তান্ত্রিক আছে তার সাথে দেখা করতে পার। তার নাম গনি মিয়া। সে এসব বিষয় খুব ভাল হ্যান্ডেল করতে পারে। আমি এর আগেও তার কাছে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয় এটা নিয়ে তোমাকে বসে থাকা ঠিক হবে না। যত শীগ্রই কিছু করা দরকার।
আমি রাফাত ভাইয়ের কথায় কিছুটা সাহস পেলাম । আমিও এমন কিছু একটা করব ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু উৎস খোজে পাচ্ছিলাম না। যাক ভালই হল তাকে পেয়ে।
পরদিন রাফাত ভাই এর সাথে আমি আর আর রোহী সেই তান্ত্রিকের বাড়িতে রওনা দিলাম। শহর থেকে কাচা রাস্তা দিয়ে ভেতরে দিকে গাড়িটা এগুতে থাকল। চারদিকে কেমন নির্জন আর ঝোপঝাড় এলাকাটা। রাফাত ভাই বলেছিল লোকটা নাকি রাগী টাইপের। কারো সাথে মিশে না একা থাকতেই পছন্দ করে। এর একটু পরই আমাদের গাড়িটা একটা পুরাতন বাড়ির কাছে থামল। দেখে মনে হচ্ছে ঠিক অনেক আগে একটা বাড়ি দেয়ালের আবরনও কিছুটা খসে খসে পড়ছে। রোহী গাড়ী থেকে নেমে আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখল। রাফাত ভাইয়ের সাথে আমরা বাড়িটার ভেতরে ঢুকলাম। রুমগুলো খালি পরে আছে মনে হয় কেউ থাকে না। কয়েকটা রুম পেরিয়ে আমরা শেষমাথায় একটা রুমে ঢুকলাম এবং আমি দেখলাম রুমটা অাবছা অন্ধকারে ঢাকা আর ভাংগা জানালা দিয়ে আসা আলোয় দেখলাম একটা ছোট চৌকি জাতীয় কিছু একটাতে মধ্য বয়সী একজন লোক বসে আছে। হাতে বাকা লাঠির মত একটা কিছু ধরে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সাধু বাবা টাইপের হবে। কিন্তু লোকটার চোখ বন্ধ করা। লোকটা কি কানা নাকি চোখ বন্ধ কেন?
-আমি কানা না, আমার চোখ ভাল আছে।
হঠাৎ লোকটা চোখ খোলল আর আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কথাটা বলল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি এটা ভেবেছি লোকটা জানল কিভাবে? নিজেকে সামলে নিলাম আমি। রাফাত ভাইকে দেখলাম আমাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বলল।
রুমটা তেমন বড় না মাঝারি সাইজের একটা রুম। পুরো রুমটা খালি কোন আসবাব নেই। দুই সাইডের দেয়ালে অনেক আগের শিং সহ দুইটা হরিণের মাথার খুলি ঝুলানো আছে। এছাড়া আর কিছু চোখে পড়ল না। রুমের ঠিক মাঝখানে একটা গোল সার্কেল করে রোহীকে বাসানো হয়েছে এবং খুব করা করে বলে দিয়েছে এই সার্কেলের বাহিরে না যেতে। এটা শুনার পর আমি ওর চোখে মুখে স্পস্টই ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। গনি তান্ত্রিক আমাদের সমস্যার কথা শুনার পর রোহীর দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে ছিলেন। একদম ওর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। যাদের শরীরে অশ্বরিরী কোন আত্মা ভর করে তাদের চোখ দেখেই নাকি বুঝা যায়। হয়ত তান্ত্রিক এরকম কিছু বুঝার চেষ্টা করছিল। তিনি আমাদের ঐ রুমে বসিয়ে কোথায় যেন গেলেন। ফিরেও আসলেন অাধঘন্টার মাথায়। তারপর এই রুমে নিয়ে আসেন। রোহীর থেকে কিছুটা দূরেই তান্ত্রিক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তার হাতে সেই বাকা লাঠিটা ধরা আছে এবং খুব শক্তভাবেই ধরে রেখেছেন। দুইজনের মাঝখানে আগুনের একটা মশাল জ্বালানো আছে একটু পর পর তান্ত্রিক আগুনের দিকে কি যেন ছুরে মারছে আর আগুনটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। এবার তান্ত্রিক তার মন্ত্র পাঠ করতে লাগল। এভাবে আরো কিছুক্ষণ কেটে গেল আমি আর রাফাত ভাই রুমের এক কোনায় দাড়িয়ে সব দেখছিলাম। একটা সময় দেখলাম রোহী একটু নড়ে উঠল এবং ওর শরীরটা কেপে উঠল। আর সাথে সাথে তান্ত্রিক চোখ খোলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলে। খুব রাগী চোখে তাকালে যেমন তেমন করেই। আর বলল
-কে তুই?
-আমি সাদিয়া।
-তুই কেন ওর উপর ভর করেছিস?
-আমি ওর স্বামিকে মেরে ফেলতে চাই।
-কেন মারবি তাকে? সে তোর কি ক্ষতি করেছে?
-ওরা আমাকে বাঁচতে দিলো না। তাই আমিও তাকে মেরে ফেলবো।
-ওরা কারা?
-আজ থেকে দুই বছর আগে আমার আর সেলিমের বিয়ে হয়। আমাদের বিবাহিত জীবন খুব সুখে কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। কথায় কথায় সেলিম আমার গায়ে হাত তুলতো, মারধর করতো। দিন দিন ওর আচরন একটা হিংস্র প্রাণীর মত হতে লাগলো। এভাবে চলতে থাকায় একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং ডাক্তার দেখানোর জন্য হসপিটালে যাই। ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম আর বাসায় তখন যা দেখলাম, তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সেলিম আর অন্য একটি মেয়ে একই বিছানায় শুয়ে আছে। আমি বলে উঠলাম, ছিঃ সেলিম ছিঃ তুমি এমন হবে ভাবতেও পারি নি। আর মেয়েটিই বা কে?? সেলিম তখন বলে।
সেলিম:- দেখো আমাকে বাবা তোমাকে বিয়ে করার জন্য বাধ্য করেছিল কিন্তু আমি এই মেয়েটিকে ভালবাসতাম আর তাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।
সাদিয়া:- এতে আমার দোষ কোথায়? আমি কি অন্যায় করেছি? যার শাস্তি তুমি আমায় দিচ্ছো? এত কিছুর থেকে আমার মরণই ভাল ছিল।
সেলিম:- তুমি আমার জীবনে আসছো এটাই তোমার বড় অন্যায়। আর তাই শাস্তি তোমাকে পেতে হবেই।
সাদিয়া:- ঠিক আছে থাকো তুমি তাকে নিয়ে, আমি বাবার বাড়ি চললাম।
সেলিম:- কি বললি তুই বাবার বাড়ি যাবি? ওখানে গিযে সব ফাঁস করে দিবি তুই। তোর কোথাও যাওয়া হবে না। আজ থেকে তুই এখানেই থাকবি। বাসায় বাহিরেও বের হতে পারবি না।
সাদিয়া:- না, আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না। যে ঘরে বউ রেখে পরকীয়া করে তার সাথে আর যাই করা যাক, ঘর করা যায় না।
এতটুকু বলে রোহী কিছুক্ষন চুপ থাকলো আর তার মাথাটা এদিক সেদিক হালকা হালকা দুলাতে লাগলো। তখন তান্ত্রিক বলে উঠলো, তারপর কি হয়েছে বল?
রোহী আবার বলা শুরু করলো,
-এভাবে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় সেলিম খুব উত্তেজিত হয়ে যায় এবং রান্না ঘর থেকে চাকু এনে আঘাতের পর আঘাত করে আমাকে খুন করে। তারপর আমার লাশ তারা জঙ্গলের ঐ পুরাবাড়ির পিছনে জামরুল গাছের নিচে পুঁতে রাখে। আর এসব কিছু করতে সাহায্য করেছিল সেলিমের প্রেমিকা। আমি ওদের বাচতে দেই নি। আমাকে যারা অন্যায়ভাবে মেরেছিল তাদের সব কয়টাকে আমি মেরে ফেলেছি। তারপর থেকে আমি ঐ রুমে কোন স্বামি স্ত্রী কে দেখলেই সহ্য করতে পারি না। তাদেরও মেরে ফেলি।
-জানি তোর সাথে অন্যায় হয়েছে। কিন্তু তার জন্য এই নিরীহ মানুষ গুলোকে কেন মারবি?? যা তুই চলে যা।
-না আমি কখনই যাবো না। এই রুমে যারা আসবে তাদেরকেই আমি মেরে ফেলবো।
রোহীর শরীরে থাকা প্রেতাত্মার কথায় তান্ত্রিক রেগে গেল আর তার উপর পবিত্র পানি ছুড়ে মারল। তখন রোহী ভয়ানক এক চিৎকার দিলো আর বলতে লাগলো
-আমি আসবো আবার ফিরে আসবো। আমাকে তুই তাড়াতে পারবি না তান্ত্রিক। আগামি আমবশ্যাতেই আমি ওর মাঝে ফিরে আসবো। তখন কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। এইটুক বলেই রোহী নিস্তেজ হয়ে যায় এবং মাটিতে ঢলে পড়ে।
জায়গাটাতে একটা অশুভ ভাব বিরাজ করছে। নিকুষ কালো অন্ধকার আর চারদিকে পিনপতন নিরবতা, মাঝে মাঝে দু' একটা পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজে জঙ্গলের পরিবেশটাকে আরো ভৌতিক করে তুলেছে। জঙ্গলটা আশেপাশের গ্রামের থেকে অনেক দুরে। বিস্তির্ন মাঠ পেরিয়ে এসে ঘন সবুজ গাছগাছালিতে যেন গহীন অরণ্যের মত মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। আমরা চারজন পুরাবাড়িটার দিকে এগুচ্ছিলাম। তান্ত্রিকের কথা মত ম্যাপ ধরে এগুচ্ছি আমরা। বাড়িটা খুঁজেপেতে বেশি বেগ পেতে হল না। প্রাচীন আমলের পুরোনো একটা বাড়ি। বেশকিছু দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে আছে। গনি তান্ত্রিকের বলেছিল এখানে অনেক বছর আগে একটা পরিবারের বসতি ছিল। কি একটা কারণে গ্রামবাসী পরিবারটাকে ঐ গ্রাম থেকে বের করে দেয়। পরে তারা লুকিয়ে এসে এখানে বসতি গড়ে। বাড়ির কর্তারা মারা যাবার পর এটাতে আর কেউ থাকে নি সবাই যার যার মত ছেড়ে চলেগেছে। এখন নাকি বাড়িটা বেশ ভৌতিক। রাত দূরের কথা দিনের বেলাই কেউ এখানে ছায়া মারাতে ভয় পায়।
আমরা বাড়িটার ডিঙ্গিয়ে পিছনে গেলাম ঝোপঝাড় আর ছোট ছোট গাছের জন্য এগুতে একটু সমস্যাই হচ্ছিল। একটু সামনেই সেই জারুলগাছটা দেখতে পেলাম আমরা। গাছটার নিচেই একটা কবর দেখলাম আগাছা আর ছোট গাছের জন্য মাটি দেখা যাচ্ছিল না। আমি তান্ত্রিকের পাঠানো লোকটার দিকে তাকতেই সে বুঝে ফেলল কি করা লাগবে। বিলম্ব না করে সে তার সাথে আনা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটিগুলো সরাতে লাগল।
সেদিন তান্ত্রিকের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার পর গনি তান্ত্রিক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঐ প্রেতাত্মাকে আবারও হাজির করে। তখন তিনি ঐ আত্মাটার সাথে অনেক কথা বলে। আত্মাটা তাকে বলেছিল তার মৃত দেহটা কেউ যদি সেখান থেকে তুলো নতুন করে অন্য কোথাও দাফন করে তাহলে সে আর কাউকে কোন প্রকার ক্ষতি করবে না।
তারপর তান্ত্রিক আমাদের ডেকে নিয়ে বলে আগামী অমাবস্যা আসার আগেই সাদিয়ার লাশটা সেখান থেকে তুলে অন্যকোথাও মাটি দিলেই তার কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এছাড়া আর কোন পথ নেই। তিনি কি কি করা লাগবে আমাদের বুঝিয়ে বলেদিলেন। এবং প্রফেশনালি কবর খুড়ে এমন একজন লোকও ঠিক করে দিয়েছিলেন। লোকটার নাম আব্দুল রহিম। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবরস্থানের কবর খুড়ে মানুষের লাশ দাফন করে আসছেন। খানিকটা মাটি সরানোর পরই তার কোদালে সাথে কিছু হার উঠে আসে। তারপর তিনি হাতদিয়ে মাটি সরিয়ে পুরো কংকালসার বডিটা বের করে আনে। আমরা আসার সময় একজন হুজুর নিয়ে এসেছিলাম এবং তিনি তার সাথে করে সাদা কাপড় নিয়ে আসেন। বডিটা কাপড়ের উপর বিছিয়ে রহিম মিয়া নতুন একটা কবর খুড়তে শুরু করে দিল।
পরিশিষ্টঃ
আজকে আকাশে অনেক তারা উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ নিয়ে চাদটা তার জোৎস্না ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাদের উপর মাদুর পেতে শুয়ে আছি আমরা। রোহী আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর সাথে ফ্রিতে বকবক করা তো আছেই। আমি শুধু কথার মাঝে হু হ্যা উত্তর দিয়েই যাচ্ছি। সমস্যা কেটে যাবার পর রোহী দিন দিন আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও মনে হয় কেউ আমাদের সাথে আছে কিন্তু কোনদিন কোনপ্রকার ক্ষতি করে নি। তবে আমরা তার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:১৩

নজরুল ইসলাম খান (জয়) বলেছেন: অসাধারণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.