নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

(অ)শান্ত

(অ)শান্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভার্চুয়াল ‘বই পড়া’ আন্দোলন

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৬

বই পড়া হয় আনন্দের জন্য। আগের যুগে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ছিল না। অবসরে আনন্দের জন্য রুচিশীল মানুষেরা বই পড়তেন। অনেকেই খেলাধুলা করত, গান-বাজনা শুনত। তখন অবশ্য অবসর কম ছিল। যেই কাজ আমরা এখন কয়েক সেকেন্ডেই করি, তাদের সেগুলো কয়েক ঘন্টা লেগে যেত। ফলে তারা অবসর পেত কম। এই অবসরের আনন্দে বই পড়া মানুষও খুব বেশী ছিল না। পারিবারিক আবহ, ব্যক্তিগত রুচিবোধ থেকে মানুষ বই পড়ত। যদিও বই পড়ার আনন্দের সাথে অন্যকোন আনন্দের তুলনা হয়না, তবুও কেন জানি আজকের ইলেকট্রনিক বিনোদন জগৎ মানুষকে বইপাঠের সেই অপার্থিব আনন্দ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু, এর মধ্যেও কিছু আশার কথা আছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে কেন্দ্র করেই আজকের এই সংখ্যালঘু বইপাঠক সম্প্রদায় ভার্চুয়ালি একত্রিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন বই পড়ে নিজেদের মতামত জানাচ্ছে, বিভিন্ন বই নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠছে। পোর্টেবল ডিভাইস ফোল্ডালের মাধ্যমে এখন আমরা পাচ্ছি ভার্চুয়াল বই। এটা মোটামুটি বইপাঠে একটা বড়সড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সুবিধাজনক অনেকগুলো ভার্চুয়াল বই এখন আমাদের অবসরকে সমৃদ্ধ করছে, আমাদের আত্মাকে ‘অক্সিজেন’ যোগাচ্ছে। সবচাইতে চমকপ্রদ ব্যাপারটা হল, ফেসবুকের বিভিন্ন বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে এখন বইপ্রেমীদের গেট্ টুগেদার/মিলনমেলা হচ্ছে। এই জিনিসটা একটা মননশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে কি অসাধারণ কাজটাই না করছে, মাঝে মাঝে চিন্তা করি। আব্দুল্লাহ্ আবু সায়ীদ স্যার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে যে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন, সেটা আমার বিশ্বাস, আজকের ভার্চুয়াল বইপড়া আন্দোলনের মাধ্যমে ভাল একটা অবস্থানে যাবে। ফেসবুকভিত্তিক বইপাঠকদের মিলনমেলা যদিও এখন পর্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক, আশা করা যায় এই অসাধারণ ব্যাপারটা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
এর মধ্যে একটা সমস্যা অবশ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেক পাঠক শুধুমাত্র থ্রিলার/ডিটেকটিভ গল্পগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ চেতনে বা অবচেতনে বাংলা সাহিত্যকে অবহেলা করছেন, ইংরেজি/বিদেশী সাসপেন্স/অ্যাডভেঞ্চার/ডিটেকটিভ জেনারের গল্প ও এর অনুবাদগুলোতে তাঁরা তাদের অবসর পার করছেন। তাঁদের অনেকেই অবশ্য বইপড়ার দর্শন হিসেবে ‘আনন্দ পাওয়া’কে বেশী গুরুত্ব দেন। কিন্তু বইপড়ার মহৎ যে একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে, এই ব্যাপারটাতে তাঁরা উদাসীন থাকেন। আবার বাংলা সাহিত্যের অনেক অসাধারণ সাহিত্যকর্মগুলোকে তাঁরা ‘বোঝা যায় না’ বলে বোঝার চেষ্টায় ক্ষান্তি দিয়ে এড়িয়ে চলেন। এই ধরণের বইপড়াতে হয়তো পাঠক আনন্দ পেয়ে থাকেন। কিন্তু বইপড়াতে সত্যিকারের যে অপার্থিব উপলব্ধির আনন্দ, সেটা পাওয়ার তাঁরা চেষ্টা করেন না। তাছাড়া বইপড়ে মানুষ মননশীল হয়। তাঁরা মহৎ সাহিত্য সৃষ্টিগুলোতে শুধু নিজে আনন্দ নিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না, বরং তাঁরা তাদের কল্যাণচিন্তা এবং কল্যাণকাজ দিয়ে নিজেকে সমাজ ও দেশের জন্য ফুল হিসেবে ফুটিয়ে তোলেন। সাহিত্যের পাঠকেরা আত্মকেন্দ্রিকের মত শুধু নিজেই আনন্দ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না, তাঁরা সেই আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হন। এই ছোট্ট জীবনটা যে শুধুমাত্র নিজেকে স্থুল আনন্দে সীমাবদ্ধ রেখে কাটিয়ে দেয়া যায় না, কিছু অপার্থিব এবং অব্যাখ্যাত আনন্দে উদ্ভাসিত করে নিজের জীবনকে সার্থক করে তুলতে হয়, এই বোধ সাহিত্যের পাঠকেরা রাখেন। বইপড়ার এই প্রযুক্তিনির্ভর আন্দোলন যাতে ফলপ্রসু হয়, এইদিকে সবসময় জ্ঞানী গুণীদের দৃষ্টি কামনা করি। আমি অবশ্য গভীর আনন্দ নিয়ে আনন্দদায়ক পাঠাভ্যাসকে ভার্চুয়ালি ছড়িয়ে যেতে দেখছি! ভালো কিছু তো একটা হচ্ছে!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

বিজন রয় বলেছেন: ভালো কিছু তো একটা হচ্ছে!

তা তো বটেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.