![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবির একদিন মনে হলো, নারী হলো ধর্ম। নারী ধারণ করে তাই ধর্ম।
শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে ভালবাসায় এবং ব্যথায় ধারণ করে তাঁরা, পুরুষ নারী উভয়কেই। ধর্মকে ধারণ করতে হয়, তাই তাকে সহনশীল অার শক্তিশালী হতে হয়।
নারী প্রাচীনকাল থেকেই সহনশীল। অার শক্তিশালী, পুরুষের চাইতেও। শক্তির অাশ্রয় পেশীতে, এমনটা কবি মনে করেন না। তার ধারণা, শক্তির উৎস হৃদয়। এই
হৃদয় হতে ভালোবাসা শক্তিরুপে গ্রহব্যাপী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বলয় তৈরি করে। ব্যক্তিগত এই বলয়ের মধ্যে মানুষ রাতে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায়। ঘুম নিশ্চয়তা অার নিরাপত্তাবোধের প্রতীক। প্রাচীন পুরুষসিংহ সারাদিনব্যাপী বন্য জন্তুদের খুব মোকাবিলা করে নিজের গুহার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতো। কিন্তু অন্ধকার রাতে তাকে ঘুমাতে হতো নারীসঙ্গীর গভীর ভালোবাসামাখা সিথানে। বনের বাঘ সে দূর করতো, মনের বাঘ দূর করতো তার নারী। কোন বাঘ বেশি ভয়ঙ্কর, কোন বাঘ অধিক প্রবল ঘাতক, মানুষ জানে। মার্কেজের একটা উক্তি কবির খুব পছন্দ। অাশেপাশে প্রিয় নারীবেষ্টিত থাকলে মার্কেজ নিজেকে নিরাপদ বোধ করেন। এমন নয় যে, চোর-ডাকাতের মোকাবিলা করবে প্রিয়ারা, কিংবা মার্কেজ সাহেব কাপুরুষ। এর মানসিক অর্থ, নারীর ভালোবাসার শক্তিশালী বলয় তাকে
প্রশান্ত করে, সাহস যোগায়।
কবি তার মায়ের মহাজাগতিক উদরে পরম নিশ্চিন্তে সময় কাটিয়েছেন। বহু জৈবিক অাকুলতায় অাচ্ছন্ন রাতের পরম অাশ্রয়দাত্রী প্রেয়সী ছিলেন তার স্ত্রী। উভয় নারীর মিলিত এমন গোপন উষ্ণ ভালোবাসার নিরাপদ ঘেরাটোপ তৈরি হয়েছিল-অাছে তাকে জুড়ে, একদিন ব্যাপারটা তার কাছে স্ফুট হলে অাপ্লুত হয়ে যান তিনি। পৃথিবীব্যাপী এই অবহেলিত ভালোবাসার জোয়ার তার স্পর্শকাতর মানসাবরণে ধাক্কা দেয়। তিনি সচকিত হয়ে ভাবেন, পৃথিবীর মহত্তম পুরুষ যে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত নন, নিকৃষ্টতম কোনো এক নারী অবলিলায় সে প্রাণধারণ করতে পারেন, প্রাণলালন করতে পারেন। শুধুমাত্র এই ভালোবাসার জন্যই পুরুষদের সম্মিলিতভাবে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, নারীদের প্রতি। নারী ধারণ করে পুরুষদের এবং নারীদেরও। এরজন্যে পুরুষ শারীরিকভাবে রক্ষা করবে নারীদের, কৃতজ্ঞ থাকবে। নারীর শর্তহীন ভালোবাসার ঘরে ব্যক্তিপুুরুষ ভালো থাকবে, ভালো রাখবে নারীদের। নারীর ধারণকার্যের বিস্তৃতি অনেক। সমাজের বিষও যথারীতি ধারণ করে তাঁরা। যুগ যুগ ধরে তাঁরা বিভিন্ন উপলক্ষে ধর্ষিত হয়ে অাসছে। যুদ্ধের ময়দানে একটা প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র হলো প্রতিপক্ষের নারী ধর্ষণ। শান্তির শহরেও সেই নারী ধর্ষিত হয়ে থাকে এক জীবের দ্বারা যার জন্মও হয়েছিল প্রচন্ড ব্যাথাজর্জরিত কোনো এক নারীর ভালোবাসাপূর্ণ উদর হতে। শুঁড়িবাড়ির লজ্জাহীন নারী ধারণ করে প্রচুর কামার্ত সামাজিক জীবের জৈবিক চাহিদার পূর্তি। যুগে যুগে এইভাবে একাংশ নারী নরের শারীরবৃত্তিক অাকাঙ্খা, বিষ ধারণ করে সমাজকে পরিচ্ছন্ন রাখে, দেশবাসীকে এর বদলে কখনো স্বাধীনতা এনে দেয়।
পৌরুষ অন্ধকারও ধারণ করে তাঁরা। অবিরাম নিশ্চুপ অার্তচিৎকারের গোরস্থান
হয়ে অাছে অনেক নারীর অন্দর। পশুর জবরদস্তি বীর্যের অন্ধকার ধারণ করে এক জনপদের স্বাধীনতা এনে দেয়া নারীকে নিয়োজিত হতে হয়েছে স্বাধীন দেশের
ঘনায়মান অন্ধকার অমানবিক কুঠুরীতে, পেটের দায়ে, এমন ইতিহাস অাপ্লুত কবিকে নির্ঘুম ব্যথিত লজ্জাজর্জর রাত উপহার দেয়।
অথচ যুগ যুগ ধরে এই ধর্ম উপেক্ষিত, অবমূল্যায়িত হয়ে অাসছে। পুঁজিবাদের
বর্তমান পণ্যসভ্যতা এখন এই ধর্মাধার দূষিত করছে। করুণ এই ধর্মাধারকে পণ্য-পুঁজি বানিয়ে ব্যবসার নোঙরামি করছে। নারীর মানবিক সারল্যের সুযোগে, শৃগালের বুদ্ধির জোরে পুঁজিবাদ ভোগবাদের বিকাশ ঘটিয়ে মননে-মস্তিষ্কে নারীধর্মের সদর্থকতা বিনাশের অায়োজন করেছে। পুরো মানবেতিহাসের এই বিশাল
সংকট থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে অাসা এই সঙ্গোপন ধর্মকে রক্ষা এবং মানুষের হৃৎচক্ষুর প্রতি এর কারুণ্য নির্দেশ করার ইচ্ছায় কবি রাতের গভীরে হামদ্ রচনা করতে বসেন। হামদে্ একহাজার এক পংক্তি রচনার খায়েশ করেন তিনি, নারীশক্তির নাতে। এরপর পংক্তি রচিত হবে ধর্মের মুক্তি তথা নারীমুক্তির নাতে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ তার একার পক্ষে শেষ করা সম্ভব নয়। তিনি গভীর অাগ্রহে তার উত্তরসূরীর পদপাতের অপেক্ষায় অাছেন।
©somewhere in net ltd.