![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন যা মাথায় আসে লিখে ফেলি।
সারটা দিন ধরেই বৃষ্টি! আষাঢ়ের গোমড়ামুখো আকাশ। গাছপালা প্রকৃতিটা কেমন জানি নিঃতব্ধ
জাম গাছটাতে প্রচুর পরিমানে জাম পেকেছে। পাখ-পাখালীরা কুলু-কুলু শব্দে পাকা জামে ঠোকর
দিচ্ছে কিছু অংশ পাখির পেটে যাচ্ছে আর বাকীটা জাম পেকে যাওয়ায় বোটা নরম হওয়ায় টুপ
করে আঙিনায় ঝরে পড়ছে। সুরুজ উদ্দিন বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে গড় গড় শব্দে হুকো
টানছেন আর এদিক সেদিক তাকিয়ে স্ত্রী সফুরা বেগম কে হাক ডাক দিচ্ছেন। ওগো সফুরা! রান্না পাতির কদ্দুর!.
এইতো হয়ে এসেছে প্রায়!
তা কি রাধছো গো?..
বায়গন ভাত্তা আর পালানের কুমড়ো গাছের ফুল দিয়ে বড়া!.
কেন মাছ গোশ্ত কিছু নাই?..
মাছ গোস্ততো শেষ হইয়া গেছে!. আপনি হাটে ঘাটেও যাচ্ছেননা!. কিভাবো আইবো!..
আইচ্ছা আইজ বাদামতলীর হাটে যামু মাছ গোস্ত যা যা লাগে মরিওম কে বলে লিখা দিও।
গ্রামের জুম্মা থেকে সুরুজ উদ্দিন ও তার ছেলে সাদেক বাড়ির পথ ধরেছেন।
ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। আশে পাশে কোন সুবিধামত আশ্রয় না পেয়ে বাপ বেটায় বৃষ্টিতে নিজেকে
সপে দিয়ে পথ চলছে। বাজান আইজগ্যা বাদামতলী হাটে যাইবা?.
হ বাবা যামু! ক্যন কি ওইছে! আমারে লগে নিবা?..
বাদামতলীতো মেলা পথরে বাপ! হাইট্যা এদ্দুর যাইতে পারবি বাপ?..
হ পারুম! নিশ্চিৎ পারুম! তুমি পারলে মুই পারুমনা ক্যন!. বাজান আইজ কিন্তু হাট থিকা
ছুড়ে মারা জাল কিনা দিবা! বৃষ্টিতে গাঙে পানি ওইছে খয়বার মিয়া মেলা কৈরা মাছ ধরতাছে দৈনিক!
সাদেক? জি বাজান!. জাল না হয় কিনলাম! তুইকি পারবি জাল নিয়া মাছ ধরতে..
হ বাজান পারি! খয়বর চায়ায় আমারে জাল ছোড়া শিখাইছে!..
আইচ্ছা দুপুরের খানা খাইয়া বাপ বেটায় মিল্যা বাদামতলী হাটে যামুনে যাহ! তোর জালও কিনা দিমু।
মাটির মেঝেতে পাটি বিছিয়ে লাল কাপড়ের দস্তখান বিছিয়ে ভাত তরকারী সাজিয়ে বসে আছে সুরুজউদ্দিনের
একমাত্র কন্যা মরিওম। সফুরা বেগম রান্না শেষ করে মেয়েকে খানা সাজানোর কথা বলে কুয়োতলায় গোসল করে নামাজ আদায় করে ফিরলো।মরিওম আগেই নামাজ আদায় করে সেলোয়ার কামিজ পড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে পিড়িতে বসে অপেক্ষা করছে জুম্মা থেকে বাজান আর ভায়ের ফেরার জন্য। সফুরা বেগম গাছের পাকা আম ছিলিয়ে থালিতে সাজায়ে রাখছেন। গাভীর দুধ গরম করে নিয়ে এইমাত্র এসে জিজ্ঞাসা করলেন। কিরে সফুরা তোর বাজান আহে নাই!. অহনো তো আসলোনা… আল্লায় জানে! যেইহারে বৃষ্টি পড়তাছে বাজান আর ভাইয়ে মনে হয় কুনহানে আটকা পইড়া গেছে!.
তাই ওইবো মুনে ওয়!.
হঠাৎ বাড়ির উঠোনে ভিজে একাকার সুরুজ উদ্দিন ও ছেলে সাদেককে দেখে সফুরা বেগম হায় হায় করে উঠলো। তোমাগো হুস হইবোনা কুনুদিন! আষাইঢ়্যা বৃষ্টিতে ভিজা বাপ বেটা বেড়ামে পড়বা!
মরিওম গামছা আর লুঙি নিয়ে এসে বাজান ও ভাইকে দিল।
জামাকাপড় বদল করা হইলে সুরুজ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুপুরের খাবার খেলেন।
তিনটে বাজতেই সুরুজউদ্দিন একমাত্র পুত্র সাদেককে সাথে নিয়ে বাদামতলীর হাটের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লেন।
টুপটুপ বৃষ্টি পড়ছিল তখন অবধি। সুরুজ উদ্দিন একটি ছাতার নিচে অরেকটিতে সাদেক। সুরুজ উদ্দিন বললেন বাবা সাদেক পা টিপে টিপে হাটিস নইলে কিন্তু পিছলে পড়ে যাবি মাটি বড্ড পিছলে!.
হাটে গিয়ে বাপ বেটা জিলাপী খেল পেটপুরে বাড়ির জন্যও একসের জিলাপি নিয়ে নিল। গরুর গোস্ত কেনা
হলে মাছবাজারে গেলে সাদেক বাজানকে মাছ কিনতে বারন করলো। জালতো কিনছিই মাছ ধরুম প্রতিদিন
মাছ কিনা টাকা নষ্ট কইরোনা বাজান! সুরুজ উদ্দিন পোলাডারে বহুৎ ভালোবাসে কি সুন্দর ফুটফুটে পোলা
মাথায় বুদ্ধিও বেশ ভালা! অগত্যা ছেলের কথামত মাছ কেনা থেকে বিরত রইলেন সুরুজ উদ্দিন।
মাইয়াডার জন্যও চুড়ি ফিতা কিনলেন আর স্ত্রী সফুরার জন্য আলতা কিনলেন তবে ছেলের সামনে আলতা কিনতে কিছুটা ইতস্ততই হলেন সুরুজ উদ্দিন। হাটের কেনা কাটা শেষ হলে বাড়ির পথে হাটা ধরলেন বাপ বেটা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কখন জানি বৃষ্টি এসে যায়! অনেকটা পথ পেরোলেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি!.. মূষলধারে… ছাতাও কুলুচ্ছেনা… অনেকটা কাকভেজা হয়েই বাড়ি ফিরলেন বাপ বেটা।
বারান্দায় বেতের চেয়ারটাতে বসে আছেন সুরুজ উদ্দিন। সফুরা বেগম হুকো সাজিয়ে দিলেন। সুরুজ উদ্দিন
মনের সুখে হুকো টানছেন আর ভাবছেন মাইয়াডাও প্রায় সেয়ানা হইয়া গেল!. সেইদিনকার মেয়ে…দেখতে দেখতে কতবড় হইয়া গেল!. আর কিছুদিন পর মাইয়ার জন্য পাত্র খুজতে হবে!. পোলাডাও কেমুন বড়
হইয়া গেল!. সেইদিন কাজী বাড়িতে বিয়া করলাম সফুরাকে তার পরের বছর মাইয়াডা মরিওম হইলো। বছর তিনেকের মধ্যই পোলা দিল আল্লায়… আল্লাহর রহমতে সংসারে অভাব নেই বেশ ভালোই চলছে।
হুকো টানতে টানতে মনের অজান্তেই গান ধরলেন সুরুজ উদ্দিন ‘আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লেজালালুহু…
শেষ করাযে যায়না গেয়ে তোমার গুণগান…’
রাত বেশ ভালই হয়েছে সুরুজউদ্দিন সবেমাত্র ঘুমিয়েছেন। সফুরা বেগম ঘুম ভাঙালেন!.
এই যে!. উডেন!. কি ওইলো উডেন না ক্যন!.. পোলাডা জ্বরে কাপতাছে..
তড়িঘরি করে উঠে সাদেকের মাথায় হাত দিয়ে দেখে প্রচন্ড জ্বর উঠেছে… মরিওম সাদেকের কপালে জলপট্টি করে দিচ্ছে.. সুরুজ উদ্দিন একটা হারিকেন নিয়ে ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার দেখে সিটামল ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ডাক্তার বলে গেছেন কোন সমস্যা নাই সিটামল খাইলেই জ্বর ছেড়ে যাবে।
জ্বরের ঘোরে সাদেক আবোল তাবোল বকছে.. দেখ বাজান এই খ্যপে কত্ত মাছ উঠছে জালে দেখ দেখ!.
ট্যংরা, পুটি, কৈ! দেখ বাজান দেখ দেখ! ম্যলা মাছ! দুইদিন আমগো অনায়াসে চইল্যা যাইবো…
সুরুজ উদ্দিনের চোখের কোনটা চিকচিক করে গড়ালো দুফোটা অশ্রু!...
পোলাডা মোরে বড্ড ভালবাসে!.. জ্বরের ঘোরেও আমারে লইয়া মাছ ধরার স্বপন দেখিতেছে…
০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩৬
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ ঢেকি ভাই।
পাঠে কৃতজ্ঞতা
ভালো থাকবেন শুভকামনা।
২| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৬
একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
পিতার প্রতি পুত্রে আর পুত্রের প্রতি পিতার মমত্ব নিয়ে দারুন একটা গল্প। সেই সাথে একটি আদর্শ মুসলিম পবিবারের ছবি।
দারুন বর্ণনা করেছে সব কিছু, প্রকৃতি পরিবেশ আর সাধারণ মানুষের ছুটির দিনের দুপুরের খাবারের মেন্যু। বাদ পড়েনি পাকা জামের সুন্দর বর্ণনা।
দারুন, গুড জব যুবায়ের ভাই।
৩য় ভালোলাগা
০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪০
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ ‘একজন ঘূণপোকা’
গল্পের মৌলিকত্ব ধরতে পেরেছেন।
আসলে আমিও এমনটি ভেবেই লিখেছি।
পাঠ কৃতজ্ঞতা
ভালো থাকবেন রইলো শুভকামনা...
৩| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:০০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: সময় করে আসবো ।
০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪৬
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ অভি ভাই।
৪| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৮
বটের ফল বলেছেন: একজন ঘূণপোকা র সাথে পুরোপুরি একমত পোষন করছি। ৪র্থ ভালোলাগা থাকলো। +++++++++++++
০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০৮
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ ‘বটের ফল’
ভালো থাকবেন
শুভকামনা...
৫| ২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:০৪
মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন । গ্রামীন পরিবেশের বর্ণনা আর বাপ-ছেলের নির্মল সম্পর্ক ভালো লেগেছে ।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন রশিদ ভাই।
গ্রামীন পরিবেশের বর্ণনা আর বাপ-ছেলের নির্মল সম্পর্ক ভালো লেগেছে ।
৬| ২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:১২
ফাল্গুনী আলম বলেছেন: খুব ভালো লাগলো!
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ ফাল্গুনী আলম।
পাঠে কৃতজ্ঞতা।
৭| ২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সুন্দর লিখনীর প্রশংসা না করে পারছিনা...
পুরোটা পড়া গেল না, যদিও সময় স্বল্পতায় ...
সময় করে পুরোটাই পড়বো ...
শুভকামনা রইলো ...
২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৪৪
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ মুনতাসির নাসিফ
গল্প বলতে অনেককাল আগে গ্রাম বাংলার অজোপাড়া গায়ের পরিবার ব্যবস্থা ধর্মীয় মুল্যবোধ পিতা পুত্র সহ মা ও বোনের নিখাদ ভালবাসার একটি কল্পিত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
৮| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটা +, ছবিটাও
২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৪৭
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ রেজওয়ানা আলী তনিমা
ধৈর্যসহ পড়ার জন্য কৃতগ্গতা।
৯| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটা +, ছবিটাও
২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫০
যুবায়ের বলেছেন: ছবিটা কিছুদিন আগেই মোবাইল ক্যমেরায় তুলেছিলাম।
১০| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৫২
পুতুল আলতাব বলেছেন: খুব ভালো লাগল। আশা করি আরো নতুন কিছু লিখবেন।
১১| ৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৩৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। ফিনিশিংটা বেশ টাচি।
১২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৬
যুবায়ের বলেছেন: ওয়াও পোষ্টখানা র্নিবাচিত পাতায় স্হান পেয়েছে..
০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৯
যুবায়ের বলেছেন: এটা নিয়ে সর্বমোট ২৪ টা পোষ্ট নির্বাচিত পাতায় স্হান পেয়েছে।
১৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩২
চড়ুই বলেছেন: ভালো লাগলো।
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫২
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ চড়ুই।
ভালো থাকবেন
শুভকামনা রইলো...
১৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২৬
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: সংকলনে যাচ্ছে ...
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৪
যুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৪৬
আমড়া কাঠের ঢেকি বলেছেন: পোষ্টে প্লাস+
গল্পটা বেশ ভালই হয়েছে...