নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাপুরুষ

এম. জাকারিয়া

একজন সাধারণ নাগরিক

এম. জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগরের নির্যাস থেকে তৈরী হয় আতর

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৯


আমাদের দেশে জনপ্রিয় সুগন্ধির মধ্যে অন্যতম আতর। আতর শুধু সাধারণ সুগন্ধি হিসেবে কাজ করে না, এর সঙ্গে ধর্মের অনুভূতিও জড়িত। অনেকেই হয়তো জানেন না কিভাবে আতর তৈরি হয়? এর কাঁচামাল কি? কারা, কোথায় তৈরি করে এই আতর? শুনে অবাক হবেন, আগরের নির্যাস থেকে আতর সংগ্রহ করা হয়। আগর মূলত একটি গাছের নাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Aquilaria agalloa’। এটি একটি চিরসবুজ বৃক্ষ। এ গাছের উচ্চতা ৫০ ফুট থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত হয়। পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে হলে ২০ বছর লাগতে পারে। পরিপূর্ণ আগর গাছ ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে আগর গাছ শিকরসহ উপড়ে নেয়া হয়। দুই উপায়ে আগর থেকে সুগন্ধি জাতীয় আতর বা পারফিউম উৎপাদন করা সম্ভব। প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উপায়ে আতর তৈরী করা যায়। আগর গাছের ডালপালা হঠাৎ মোটা হয়ে গেলে সে গাছ থেকে আতর উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। আবার কৃত্রিম উপায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সুগন্ধি বা আতর উৎপাদন করা সম্ভব।
মোগল আমলে আগর শিল্পের ঐতিহ্য ছিল বিশ্বজুড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আতরের কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও আতরের চাহিদা কম নয়। জানা যায়, আগর থেকে অতি মূল্যবান সুগন্ধি তেল উৎপন্ন হয়। বিদেশে যার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ১ লিটার আগর তেল (আতর) বিদেশে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগর তেল ও কাঠের টুকরো দুবাই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে উচ্চ মূল্যে বিক্রির সুযোগ রয়েছে।
এককালে এখানকার ব্যবসায়ীরা আগর থেকে তৈরি করত বহু মূল্যবান খুশবুদার আতর। কিন্তু কালচক্রে বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ায় আগরগাছও বিলীন হতে থাকে এবং অপূর্ব সুভাস ছড়ানো আতরের উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে আগর চাষের প্রায় বিলুপ্তি ঘটে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের পর থেকে আগর থেকে আতর তৈরি পুনরায় শুরু হয়। সিলেটের বড়লেখার প্রায় শতাধিক পরিবার আতর উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রায় ১ হাজার পরিবার এই ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আগর চাষ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সিলেট বন বিভাগ মূল্যবান বৃক্ষ প্রজাতি আগরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, নতুন বাগান সৃজন করে পরীক্ষামূলক আগর উৎপাদনের মধ্যে এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের অধীনে বৃহত্তর সিলেটে আগর চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে গত কয়েক বছর যাবৎ ব্যক্তিগত সহ বন বিভাগের উদ্যোগে সৃজন করা হচ্ছে আগর গাছের ছোট-বড় অনেক বাগান। আগর বাগান সৃজনের পাশাপাশি আগর-আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার অন্তর্গত মারিশ্যাতে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে আতর প্রক্রিয়াজাতকরণের দুইটি কারখানা।
জানা গেছে, বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় সুজানগর ইউনিয়ন ছিল এ দেশে আগর আতরের মূল কেন্দ্র। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি উপজেলায় আগর চাষ শুরু হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার রেমা, কালেঙ্গা, ছনবাড়ি, সাতছড়ি, তেলমাছড়া, শাহপুর, মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া এবং সিলেটের ছাতক ও খাদিমপাড়ায় আগর চাষ হচ্ছে। বনবিভাগের তত্তাবধানে সৃজিত এসব বাগান বর্তমানে পরিপূর্ণ আগর বাগানে রূপ নিয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আগর বাগান তৈরির জন্যে বন বিভাগের পক্ষ থেকে স্বল্প মূল্যে আগর চারা বিক্রি করা হচ্ছে।
সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে হবিগঞ্জের রেমা ও সাতছড়ি বনবিটে বনবিভাগ আগর চাষের প্রকল্প হাতে নেয়। কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, রেমা বিটের ৫হেক্টর জমিতে মোট ৬ হাজার ৬৩১ টি গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১ হাজার ৩২৬টি গাছ লাগানো হয়। ১৯৯৯-২০০০সালে সাতছড়ি বিটে প্রায় ১০ হেক্টর জায়গায় আগর বাগান করা হয়। এখান থেকে প্রায় ১শ’ ভাগ ফলন সম্ভব। যদি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করেও গাছ বিক্রি করা যায়, তাহলে এখান থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। পরিচর্যা বাবদ ২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে । তিনি মনে করেন বেসরকারিভাবে ও আগর চাষ করা সম্ভব এবং প্রতিটি বাড়িতে ১০টি গাছ লাগানো যেতে পারে। যেখানে স্থায়ী ভাবে পানি জমে থাকে না , অপেক্ষাকৃত উচ্্ু জায়গায় আগর গাছ করা যেতে পারে। সব জায়গায়ই আগর গাছ রোপন করা যায়। যা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব এবং সরকারও এ ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করছে। বাংলাদেশের বন বিভাগের আগর প্রকল্প অধীনে বন বিভাগে থেকে ২.৫০ টাকায় চারা বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে শুধুমাত্র সিলেটের বড়লেখা এলাকায় ১ কোটিরও বেশি আগর গাছ রয়েছে। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে আগর বনায়ন হচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে আগর বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় উদ্যোক্তারা বন বিভাগ, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার জবাবদিহির সম্মুখীন হচ্ছেন। আতর তৈরির প্রণালীসাধারণত বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হতে আগর গাছের প্রায় ৭ বছর সময় লাগে।
গাছের বয়স যত বেশি হয়, গাছ তত বেশি মূল্যবান হয়। তাই অনেকে গাছগুলোকে বছরের পর বছর লালন পালন করে থাকেন। আগরের গাছ রোপণের কমপক্ষে ৪ বছর পর সারা গাছে পেরেক ঢুকিয়ে আরও ৩ বছর রেখে দেয়া হয়। তারপর গাছ কেটে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। ওই টুকরাগুলো কিছুদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর বিশেষভাবে নির্মিত চুল্লিতে রেখে গ্যাস দিয়ে তাপ দেয়া হয়। তাপ দেয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় আগর থেকে আতর প্রস্তুত করা হয়। আতর উৎপাদনের বেশ কয়েকটি প্লান্ট বড়লেখায় কার্যরত আছে।
জানাগেছে আগর গাছের টুকরা সুগন্ধি জ্বালানি হিসেবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। যার প্রতি কেজির মূল্য ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.