নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুঘলদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষমতার গদিতে আরোহণ করে ব্রিটিশরা। এর পরই চলতে থাকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনের স্রোত-ধারা। আর এই শাসন টিকে থাকে প্রায় ১৯০ বছর। একসময় তাদের এই শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতবাসী সোচ্চার হলে তাদের কে ভারত ছাড়তে বাধ্য করা হয় । কিন্তু তারা সমগ্র ভারতবাসীর অন্তরে সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্পকে স্থায়িত্ব দান করতে সক্ষম হয় । এরই ফলশ্রুতিতে দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভব হয় এবং ভারতকে ভাঙ্গার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। ফলে যখন তারা ভারত থেকে চলে যায় তখন ভারতের মাটি-মানুষ ও তাদের আদর্শ হিন্দু-মুসলিম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে এবং এরই স্রোত-ধারায় ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভারত-পাকিস্তান নামক নতুন দুইটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়। পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের সাথে পূর্বপাকিস্তান হিসেবে থাকলেও তা দীর্ঘদিন টেকেনি। পূর্বপাকিস্তান ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আজকের পর্বে এই ১৯৪৭ এর ভারত ভাগ, এর পিছনের প্রেক্ষাপট ও সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ে থাকছে একটি বিশদ বর্ণনা ।
ভারত ভাগের পটভূমি
ভারত ভাগের পটভূমি সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তা হল ব্রিটিশদের উত্থান, শাসনকাল ও তাদের বিদায়। ব্রিটিশরা ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই এখানে তাদের শাসন ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে থাকে। অপরদিকে এ অঞ্চলের মানুষেরাও সর্বদা চাইত ব্রিটিশদের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে। তাই ভারতবাসী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহে নামে। কিন্তু তা সফল হতে পারেনি। ব্রিটিশরা কঠিন হস্তে দমন করে। তার পর বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৮৮৫ সালে ভারতীয়রা তাদের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন “ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস” গঠন করে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষেরা সংগঠিত হবার জন্য একটি প্লাটফর্ম খুঁজে পায়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে মুসলমানরা তাদের আলাদা স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করে। ফলে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের সূত্রপাত হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মুসলিমলীগের একটি সমাবেশ
কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্রিটিশদেরকে বিতাড়িত করার জন্য ১৯১৬ সালে হিন্দু-মুসলিম লক্ষ্ণৌতে একত্র হয় এবং ১৯২০ সালে মুসলমানদের নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন ও হিন্দুদের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এই আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদী ফল পাবার পূর্বেই ১৯২৪ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। এবং ১৯২৮ সালে নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সেখানে দেখা যায় যে মুসলমানদের আলাদা নির্বাচনের দাবিকে অগ্রাহ্য করা হয় যদিও পূর্বে ১৯২২ সালে কংগ্রেস মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে আলাদা নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন করে। তাছাড়া ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস সফলতা লাভ করলে মুসলিম লীগ তাদের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপক গণসংযোগ চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে জিন্নাহ তার দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রদান করে। এর পর থেকেই মুসলমানদের মধ্যে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিসহ হিন্দুদের প্রতি বৈরী মনোভাব গড়ে উঠে।
১৯৪৬ সালে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য মন্ত্রী-মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এতে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে পরে। ফলে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ কর্মপন্থা দিবসে কলকাতায় ইতিহাসের এক জঘন্যতম নারকীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এতে প্রায় ৫০,০০০ লোক হতাহত হয়। এর পরবর্তীতে নোয়াখালীর দাঙ্গা ও ত্রিপুরার দাঙ্গা ভারত বর্ষকে ভাগ করা অবশ্যসম্ভাবী করে তুলে। ফলে ব্রিটিশ সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে পার্লামেন্টে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ করে। এবং ভারত বর্ষকে দুইভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামের আলাদা দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
১৯৪৭ এর ভারত ভাগ
ভারত ভাগের সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার পর থেকেই এরকম বীভৎস লাশের উপর দিয়ে আর হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠবে তা আর কেউ মনে লালন করেনি। তাই ১৯৪৬ সালের পর থেকে ভারত ভাগ হওয়ার সময়টুকু ছিল শুধুমাত্র কাল ক্ষেপণ। এই সময় ব্রিটিশরা প্রকৃত পক্ষে বুজতে সক্ষম হয় যে ভারত কে ভাগ করা ছাড়া এ অঞ্চলের শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারত কে ভাগ করবে -এ সিদ্ধান্তকে প্রথমে কংগ্রেস সহজভাবে না নিলেও পরে তারা তা মানতে বাধ্য হয়।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ভাগ করার দায়িত্ব ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল র্যাডক্লিফের হাতে তুলে দেন। তিনি মাত্র ৫ সপ্তাহ সময়ে ভারত কে ভাগ করে ফেলেন। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, বেলুচিস্তান প্রদেশ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। অন্যদিকে ব্রিটিশ ভারতের বাকি অংশ নিয়ে গঠিত হয় স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র। বাংলা ও পাঞ্জাব কে ভাগ করা হয়েছিল এখানকার হিন্দু-মুসলিম প্রায় সমান সংখ্যক থাকার কারণে। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগস্ট ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর এর মাধ্যমেই ভারত ভাগের ষোলকলা পূর্ণ হয়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্রিটিশদেরকে বিতাড়িত করার জন্য ১৯১৬ সালে হিন্দু-মুসলিম লক্ষ্ণৌতে একত্র হয় এবং ১৯২০ সালে মুসলমানদের নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন ও হিন্দুদের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। কিন্তু এই আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদী ফল পাবার পূর্বেই ১৯২৪ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। এবং ১৯২৮ সালে নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সেখানে দেখা যায় যে মুসলমানদের আলাদা নির্বাচনের দাবিকে অগ্রাহ্য করা হয় যদিও পূর্বে ১৯২২ সালে কংগ্রেস মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে আলাদা নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন করে। তাছাড়া ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস সফলতা লাভ করলে মুসলিম লীগ তাদের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপক গণসংযোগ চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে জিন্নাহ তার দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রদান করে। এর পর থেকেই মুসলমানদের মধ্যে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিসহ হিন্দুদের প্রতি বৈরী মনোভাব গড়ে উঠে।
১৯৪৬ সালে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার জন্য মন্ত্রী-মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। এতে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে পরে। ফলে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ কর্মপন্থা দিবসে কলকাতায় ইতিহাসের এক জঘন্যতম নারকীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এতে প্রায় ৫০,০০০ লোক হতাহত হয়। এর পরবর্তীতে নোয়াখালীর দাঙ্গা ও ত্রিপুরার দাঙ্গা ভারত বর্ষকে ভাগ করা অবশ্যসম্ভাবী করে তুলে। ফলে ব্রিটিশ সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে পার্লামেন্টে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ করে। এবং ভারত বর্ষকে দুইভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামের আলাদা দুইটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ভারত ভাগের পর পাকিস্তান-ভারতের চিত্র,
source: https://commons.wikimedia.org
৪৭ এর ভারত ভাগ
ভারত ভাগের সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার পর থেকেই এরকম বীভৎস লাশের উপর দিয়ে আর হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠবে তা আর কেউ মনে লালন করেনি। তাই ১৯৪৬ সালের পর থেকে ভারত ভাগ হওয়ার সময়টুকু ছিল শুধুমাত্র কাল ক্ষেপণ। এই সময় ব্রিটিশরা প্রকৃত পক্ষে বুজতে সক্ষম হয় যে ভারত কে ভাগ করা ছাড়া এ অঞ্চলের শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারত কে ভাগ করবে -এ সিদ্ধান্তকে প্রথমে কংগ্রেস সহজভাবে না নিলেও পরে তারা তা মানতে বাধ্য হয়।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত ভাগ করার দায়িত্ব ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল র্যাডক্লিফের হাতে তুলে দেন। তিনি মাত্র ৫ সপ্তাহ সময়ে ভারত কে ভাগ করে ফেলেন। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, বেলুচিস্তান প্রদেশ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। অন্যদিকে ব্রিটিশ ভারতের বাকি অংশ নিয়ে গঠিত হয় স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র। বাংলা ও পাঞ্জাব কে ভাগ করা হয়েছিল এখানকার হিন্দু-মুসলিম প্রায় সমান সংখ্যক থাকার কারণে। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগস্ট ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর এর মাধ্যমেই ভারত ভাগের ষোলকলা পূর্ণ হয়।
ভারত ভাগের কারণ
ভারত বিভাগের পেছনে কি কারণ ছিল তা বলতে গেলে বলতে হবে এর পিছনে একক কোন কারণ ছিল না। সেখানে বেশ কয়েকটি সামাজিক, রাজনৈতিক কারণকে টেনে আনতে হবে। আমরা যদি ব্রিটিশ ভারতের গোঁড়ার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব হিন্দু-মুসলিম কেউই তাদের শাসন ক্ষমতা কে ভালভাবে গ্রহণ করে নি। কিন্তু কিছুকাল অতিবাহিত হবার পর ব্রিটিশরা হিন্দুদের মধ্যে একটি শ্রেণীকে তাদের তোষামোদি দল হিসেবে গড়ে তোলে। ফলে ধীরে ধীরে হিন্দুরা ব্রিটিশদের প্রীতিভাজন হয়ে পরে। অপরদিকে মুসলমানরা গোঁড়ামির কারণে ব্রিটিশদের থেকে দূরে থাকে। এতে মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের অবিশ্বাস ও পরস্পর বিরোধী মনোভাব তৈরি হয় যা ভারত ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত উভয়ের মনের মধ্যে গোপন আস্তানা গাড়ে। এর ফল হিসেবেই হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে কলকাতা, নোয়াখালী ও ত্রিপুরার দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভাজনকে ত্বরান্বিত করে।
হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা,
source: https://www.outlookindia.com
ভারত ভাগের পিছনে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতীয় হিন্দুরা কখনোই ভারত ভাগ কে সহজ ভাবে নেয় নি এবং তারা এর বিরোধিতাও করতে থাকে। ফলে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসও তাদের অবস্থান থেকে বিরোধিতা করতে থাকে। কিন্তু অবশেষে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতির জন্য মুসলমানদের সাথে যাতে শাসনকার্য ভাগ করতে না হয় সে জন্য তারা ভারত ভাগ কে সমর্থন করে। অপরদিকে মুসলিম নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজে ব্যক্তিগত জীবনে খাটি মুসলিম না হলেও রাজনৈতিক মাঠে মুসলিমদের ঐক্য ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বড় বড় বুলি ফোটাত। যার ফলে মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে পরে এবং তারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে যায়। এর পিছনে জিন্নাহর রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার মানসিকতাকে অনেকে দায়ী করেন। তবে এর পিছনে নিহিত কারণ যাই থাকুক না কেন মুসলমানদের তীব্র দাবীর ফলেই যে ভারত ভাগ হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ভারত ভাগে ব্রিটিশদের ভূমিকা
ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তাদের উপর ভারতীয়দের বিদ্রোহ চলতে থাকে। কিন্তু বিংশ শতকে এসে তা নতুন মাত্রা লাভ করে ফলে ব্রিটিশরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পরে। বিংশ শতকের শুরু থেকেই ব্রিটিশদের উপর হিন্দু-মুসলমানদের অসহযোগিতা, অন্তর্বর্তী সরকারে অচলাবস্থা ও হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে সঙ্কটাপন্ন করে তোলে। তার উপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাদেরকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করে। তাছাড়া তখন সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রকে ছড়ানোর অন্যতম এজেন্ট হিসেবে ভারত কে স্বাধীনতা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এবং সমাজতন্ত্রের জোয়ার কে রুখে দেয়ার জন্য ভারতে একটি ভিত হিসেবে তাদের স্বাধীনতা দান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করে। এবং পরবর্তীতে যেন মুসলমানদের হতাশা/বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে সমাজতন্ত্রের গোড়াপত্তন না করতে পারে সে জন্য মুসলমানদের দাবির পক্ষে তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের মতকে সমর্থন করে ভারত কে ভাগ করার জন্য উদ্যোগী হয় এবং ১৯৪৭ সালে মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে ভারত কে ভাগ করে দুইটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে যায়।
ভারত ভাগের পূর্বে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস নেতাদের সাথে ব্রিটিশদের বৈঠক
ভারত ভাগের প্রতিক্রিয়াকে এক পাক্ষিক-ভাবে বিচার করা যায় না। কারণ ভারত ভাগকে মুসলমানরা দাবি করেছিল তাদের বিজয় হিসেবে এবং তারা বহুদিনের আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে আনন্দের জোয়ারে ভাসছিল। অন্যদিকে ভারতীয় হিন্দু এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতে বিশ্বাসী মুসলিমদের মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। যদিও ব্রিটিশরা মনে করেছিল যে ভারতকে বিভাজনের ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসন হবে। কিন্তু ভারত ভাগের পর পরই দেখা যায় পাঞ্জাব ও বঙ্গ প্রদেশের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও নাজুক করে দেয় যা দীর্ঘমেয়াদী অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।
ব্রিটিশরা ভারতকে ভাগ করার সময় কিছু বিষয় অমীমাংসিত অবস্থায় রেখে যায় যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার উদ্ভব হয়। যেমন কাশ্মীর- ভারত ভাগের সময় কাশ্মীরের মত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অবস্থান কি হবে তা না বলে দেয়ার জন্য কাশ্মীরকে নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিবাধ শুরু হয় যা আজো বর্তমান। তাছাড়া ভারত ভাগের সময় কেন্দ্রীয় সম্পদ ও যুদ্ধাস্ত্রের মত বিষয়গুলো কিভাবে বণ্টন হবে তা পরিষ্কার ছিল না ফলে উভয়ের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশকে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার কারণে এসব অঞ্চলের মানুষের মনে নিজ জাতিসত্তা ভেঙ্গে যাবার ক্ষোভ দানা বাধে। যার ফলে এ-অঞ্চলের মানুষ অন্য জাতিসত্তার শাসনকে সহজে মেনে নিতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশের মত স্বাধীন দেশের উত্থান হয়। এর পিছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল পাকিস্তানিদের শোষণ বঞ্চনা।
ব্রিটিশরা অতি সাধারণ বাণিজ্যিক বেশে এদেশে আসলেও তাদের চলে যাওয়াটা ছিল অত্যন্ত নাটকীয়। তারা আসার সময় একটি অখণ্ড ভারতে আসলেও চলে যাওয়ার সময় তা খণ্ড বিখণ্ড করে রেখে যায়। আর ভারত খণ্ডিত হবার সকল রসদ যুগিয়েছিল তারাই। কারণ তারাই পরোক্ষভাবে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি করে। তারা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিকে ভয় পেত, যদি সম্মেলিত আন্দোলন তাদের পতন ঘটায়। যা ভারত ভাগ করার কালেও জিয়ে রাখে।
পরবর্তী সময়ে ভারত ভাগের পর এই সম্প্রীতি আর গড়ে উঠেনি বরং তা চরাই উতরাই পেরিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে আজো টিকে আছে। যা বর্তমানের ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত সমস্যা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, খেলাধুলা সব জায়গায় আছে। কবে এই আক্রমণাত্মক প্রতিযোগিতা শেষ হবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে সকল শান্তি-প্রিয় মানুষ চায় এই উত্তেজনার সমাধান। তা অদূর ভবিষ্যতে কতটা হবে তা কেবল ইউটোপিয়া।
©somewhere in net ltd.