নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংজ্ঞায়িত অসংজ্ঞায়িত (প্রথম পর্ব)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪



¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯­¯¯¯¯¯¯¯¯¯

অনেক চেষ্টা করেও ঘুমানো গেল না । অবশেষে অপারগ হয়ে এখানে আসা । ভাবছি ভুতুরে ব্যাপারগুলো নিয়ে আজ লিখে ফেলি । চোখ বুজে লিখছি, বানান ভুল হলে নিজ গুণে সংশোধন করে নেবেন ।



১.

আমি ছেলেবেলা হতেই অতি মাত্রায় ভাবুক । নিজে নিজে বোঝার চেষ্টা করতাম । নিজের মতো করে ভাবতাম । কেউ যদি বলত দুয়ে দুয়ে চার হয়, আমি ঘাড় নেড়ে বলতাম, আচ্ছা । চারের বদলে তিন বললেও আচ্ছা বলতাম । কিন্তু নিজের বুঝ রাখতাম নিজের মনে । গুণে নিতাম সঠিক হিসেবটা কত ।

যাইহোক, এটা আমার মনস্তত্বের আঙ্গিক বর্ণনা মাত্র । অসংজ্ঞায়িত আলোচনায় আমার মনস্তত্বটা বিশ্লেষণ করে রাখা জরুরী ।



প্রথম এই ঘটনাটি যখনকার, তখন আমার বয়স সাড়ে চারের বেশী নয় । আমার বাপ চাচারা মোট ছয় ভাই । এদের পর্যায়ক্রমিক হিসেব হল, বড়, মেজো, সেজো, নওয়া, সর্যা, ছোট । তো যিনি পঞ্চম অর্থাৎ আমার সর্যা চাচা, তিনি একবার ধরলেন গাছের ব্যাবসায় । বড় বড় গাছ বহন করতে লাগে বিরাট নৌকা । চাচাও আনলেন ইয়া বড় এক নৌকা । আমরা খুব উৎফুল্ল । কিন্তু সমস্যা হল নৌকার নিরাপত্তা নিয়ে । কেবল কাছি দিয়ে বেঁধে রাখলে রাতে এই নৌকা চুরি হয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে । পরে ঠিক করা হল আগা খালে মেজো চাচার বাড়ি নিয়ে নৌকা রেখে আসা হবে । কয়েকটি কারণে সে বাড়ি যথেষ্ট নিরাপদ । কারণগুলো আর আলোচনা করতে গেলাম না । তাতে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হয়ে যাবে ।



রাত আটটার দিকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল নৌকা আগা খালে রেখে আসা হবে । আমি আর সেজ চাচার তিন বছরের নেওটা ছেলে রাজীব নৌকায় চড়ে বসলাম । আমরাও যাব । শত বলেও আমাদের নামানো গেল না ।



অবশ্য গেলেই বা কী ক্ষতি ?

তাই চাচা আমাদের নিয়েই রওয়ানা হলেন । পৌঁছতে অনেক সময় লাগল । ঘুটঘুটে আধাঁরি রাত । চাচার বাড়িতেই খেলাম । তাঁরা এদিক সেদিক অনেক প্রসঙ্গে কথা বলে বলে রাত আরো বাড়ালেন । ছোট ছিলাম । রাত তখন কয়টা জানি না । এটুকু মনে আছে যে আমরা বেশ রাত করেই বড় নৌকাটি শেকলে বেঁধে রেখে মেজো চাচার ডিঙি নৌকা নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম । গলুইয়ে রাজীব বসা । আমি বসা মাঝদেশটায় । চাচা বৈঠা বাইছেন । আমরা পাড় হচ্ছি নাপিতবাড়ি ছেড়ে দর্গীবাড়ির খাল । এই জায়গাটা ভয়ানক বলে সবার কাছেই স্বীকৃত । অনেকেরই বিপদ হয়েছে এখানটায় । আমাদেরও হল ।



একেবারে আচমকা খালপাড়ের বাগান হতে ঢিল আসতে লাগল আমাদের দিকে । এটাই দর্গীবাড়ির বাগান । বুঝতে পারছিলাম, ওগুলো ছোটখাটো ঢিল নয় । ইয়া বড় বড় এক খোন্তা আকৃতির মাটির চাকা । ধপাস ধপাস করে পড়ছে নৌকা ঘেঁষে পানিতে । আশ্চর্য যে, একটি ঢিলও আমাদের নৌকায় কিংবা গায়ে পড়ছে না । সব পড়ছে পানিতে, নায়ের কান্দা ঘঁষে । সে পানি ছিটেও আমাদের গায়ে লাগল না !



চাচা থামলেন । আমাদের অভয় দেওয়ার জন্য খালপাড়ে কেউ লুকিয়ে থেকে এইরকম ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে এই উদ্দেশ করে লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য লোকগুলোকে গালাগালি করতে লাগলেন চেঁচিয়ে । এতে সুবিধা দুইটি । এক. আমরা অন্তত ভুতের ভয় পাব না । দুই. তাঁর উচ্চ কণ্ঠের চেঁচামেচি শুনে যেন লোকজন সাহায্যে এগিয়ে আসে ।

কিন্তু জাতগুষ্ঠি নিয়ে এত অশ্রাব্য গালিতেও অদৃশ্য ঢিল নিক্ষেপকারীদের লজ্জা হয় না । বরং তারা দ্বিগুণ উত্সাহে ঢিল ছুড়তে থাকে । চাচা এবার টর্চ লাইট মারলেন খালপাড়ের জঙ্গলে, ঠিক যেদিক থেকে ঢিলগুলো আসছে সেই দিক নিরীখ করে । আমরা দেখলাম শান্ত জঙ্গল । টর্চের আলো গাছের ডাল পাতা ভেদ করে টুকরো টুকরো হয়ে জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়ছে । কোথাও কেউ নেই । ঢিলও বন্ধ । লাইট নিভিয়ে আমরা যাত্রা আবার শুরু করব, এমন সময় আবার সেই ঢিল ! এবার যেন বেজায় আক্রোশে এসে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে একেকটি । এবং আগের চেয়ে অনেক কাছ থেকে । আমি দেখলাম খালপাড়ে বেঁকিয়ে থাকা বাঁশ ঝাড়টা তিড়িং তিড়িং করে নেচে নেচে আমাদেরকে কুর্নিশ করছে আর সবগুলো ঢিল নিক্ষিপ্ত হচ্ছে যেন বাঁশ ঝাড়ের ঐ ডগা হতে ! যেন গোটা বাঁশঝাড়টাই ঝুঁকে ঝুঁকে ঢিল ছুড়ছে আমাদের । সে আন্দোলনে প্রচণ্ড রাগ স্পষ্ট । অমাবশ্যার আঁধার আকাশ জুড়ে সে এক বিভীষীকাময় দৃশ্য !



রাজীব আমার চেয়েও ছোট আর অবুঝ পাথরের মত জমে আছে । ভয় পেয়েছে কি না বুঝতে পারছি না, তবে কাঁদছে না মোটেও । আমি ভয় পাব কী, আমি অবাক হয়ে ভাইবোনদের মুখে শুনে আসা এতদিনকার ব্রহ্মদত্যি আর স্কন্ধকাটার গল্পগুলোর বাস্তব দৃশ্য উপভোগ করছিলাম । যেন আরো ভয়ানক কিছুর দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম । বিশ্বাস করতে চাইছিলাম যে ভুত বলে আসলেই কিছু আছে । আমার ভাবুক মন পরখ করে দেখছিল ওগুলো আসলেই ভুত তো ? ছদ্মবেশী মানুষ নয়তো আবার ? তাহলে যে আমার ভুত দেখার এই চমৎকার অভিজ্ঞতাটাই মাটি হয়ে যাবে !



আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম ওটা আসলেই ভুতের কাজ কিনা । দেখলাম যে হ্যাঁ, ঢিলগুলো যেন সত্যিই বাঁশ ঝাড়ের ডগা থেকে নেমে আসছে ! খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে কোন ছেলে ছোকরা ঢিল মারলে তা সরাসরি আমাদের দিকে আসত । অমন উপর হতে ঢিপ ঢিপ করে খাড়া হয়ে পড়ত না । আর অত বড় বাঁশ ঝাড়টাও অমন প্রবল বেগে ঝাঁকানো দুয়েকজন মানুষের কর্ম নয় । সর্বোপরি চাচা যেমন তৎক্ষণাৎ টর্চ মারছিলেন তাতে কারো পক্ষে নিমিষেই আত্মগোপন করে ফেলা সম্ভব ছিল না । আমি বুঝমানের মতই চাচাকে উৎসাহ দিয়ে বলছিলাম, কাকু, লাইট মারেন দেখি ।



অবশেষে চাচার এমন চিৎকার শুনে কয়েকজন বাড়ি থেকে লাঠি সড়কি নিয়ে বেরিয়ে এলেন । এবং তাঁরা অভয় দিয়ে খালের পাড় ধরে হেঁটে হেঁটে আমাদের বিপজ্জনক অঞ্চলটি পার করে দিলেন ।



বাড়ি ফেরার পর সব শুনে দাদী পানিতে জ্বলন্ত অঙ্গার ভিজিয়ে সেই পানি আমাদের জোর করে পান করালেন । এই পানি পান করলে নাকি আছড় কেটে যায় !

তবুও রক্ষা কই ?

পরদিনই রাজীবের ভয়ানক জ্বর আরম্ভ হয় । অনেক ভুগিয়েছিল ওকে সে জ্বর ।



ঘুমুতে যাচ্ছি । বাকিটা কাল লিখব ।

শুভ সকাল ।





ভোর পাঁচটা,

২৩শে জুন, ২০১২



(Repost, লিংকটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না :-( )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.