নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপোর্ট : অকপট বাস্তবতার ক্ষুদ্র নাটিকা

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০



(জনৈক সম্পাদক এবং রিপোর্টার আনোয়ারের মধ্যে কথোপকথন)



: বাহ! চমৎকার হয়েছে! চমৎকার! এটা খুব ভালো যাবে হ্যাঁ।





: থ্যাংকিয়্যু স্যার।





: কই দেখি ফিচারটা?





: জ্বী স্যার (এগিয়ে দিয়ে)।





: (পড়তে পড়তে হঠাত থেমে) য়্যা! এটা কী করেছ? এটা কী?





: স্যরি স্যার? কোনটা?





: তুমি এখানে ছেলেটির ঠিকানা দিয়েছ কেন? কোথায় গেলে ছেলেটিকে পাওয়া যাবে তা এত ঘটা করে লেখার কারণ কী?





: স্যার, ঠিকানা দেওয়াই কি উচিত নয়?





: উচিত মানে? উচিত কেন?





: স্যার, এই যে অনাহারে থাকা ক্লিষ্ট বিবস্ত্র পথশিশুটির ছবি তুলে আনলাম, তার ঠিকানাটা দিলে অন্তত কেউ একজন তাকে দত্তক নিতে বা সাহায্য করতে হলেও তো এগিয়ে আসবে।





: আশ্চর্য! ছবি দেখে কি চেনা যাবে না ছেলেটিকে? যার দরকার ছবি দিয়ে বা এখানে অফিসে এসে খোঁজ নেবে।

যত্তসব! একজন সাংবাদিক হয়ে তুমি এমন অযথা বাড়তি কথা লেখ কী করে!





: স্যার, ওরকম খুঁজতে কেই আসে না সাধারণত। ঠিকানাটা দিলে অন্তত নিকটবর্তী কেউ এগিয়ে আসবে।





: আমার সাথে ফাজলামি কর তুমি? এই অংশটুকু কয়শো লেটার স্পেইস খেয়েছে হুঁশ আছে তোমার? ফাজলামি কর?





: স্যার স্যরি। বিরক্ত হবেন না প্লিজ। মাত্র একটু স্পেইস বাঁচাতে আমাদের ছেলেটাকে এভাবে সুযোগ হতে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। বিভিন্ন দুর্ভিক্ষে দুর্দশায় আমরা নিপীড়িত বা ভুক্তভোগীদের ছবি তুলে আনি, মন গলানো ফিচার সাজিয়ে ছাপি যেন সহমর্মিতার সবটুকু আমাদের পত্রিকারই প্রাপ্য! তারপর আমরা এভাবে আলোড়ন তুলব, তাক লাগিয়ে দেব, কয়েকদিন বোদ্ধা মহলে খুব হইচই হবে, আমাদের পত্রাকার রেটিং বাড়বে ব্যস! অথচ যাদের ফটোজ বা ভিডিও ক্লিপ্সকে পুঁজি করে আমরা এই বিক্রয় ব্যবসায় করছি তাদের কী লাভটা হচ্ছে? স্যার এটা কি বেনিয়াবৃত্তি হয়ে যায় না?

তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষে আমরা সাংবাদিকেরাই না খেয়ে মরতে থাকা মানুষগুলোকে মডেল বানিয়ে ছবি তুলে বাজার মাতিয়েছিলাম। এটুকুই! আমাদের সামনেই মরেছে অথচ মরার সময় এক আঁজলা পানিও আমরা কেউ তুলে দিইনি ওদের মুখে! আমরা শুধু ছবি তুলেছিলাম। আমরা পত্রিকার সাফল্যই দেখেছিলাম শুধু।

চুয়াত্তরে আমরা অরুণা সেনের মেয়ে, জালকন্যাদের অর্ধনগ্ন ছবি তুলে এনেছিলাম স্যার। যুবতী বোন দুটি অভাবের তাড়নায় কাঁচা শাপলা আর শালুক খেয়ে দিন কাটিয়েছিল! পরার মতো কিছু ছিল না বলে পরিত্যক্ত মাছ ধরা জাল গায়ে পেঁচিয়ে তারা লজ্জা নিবারণ করেছিল। আমরা সেই ছবি তুলেছিলাম, ছবির পোজ দেয়ার জন্য দিয়েছিলাম ছয় টাকা। বড়োজোর একবেলা খাবারের দাম, ওটুকুই শুধু। আমরা ওদের বাঁচানোর জন্য কিছু করিনি স্যার। আমরা চেয়েছি আমাদের পত্রিকার বিক্রয় বাড়ুক, রেটিং বাড়ুক ব্যস!

স্যার, ওরা আমাদের ঘৃণা করেছে। ওদের জন্য রিলিফ আনার যে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছিলাম আমরা, সে কারণে এখনও ও অঞ্চলের মানুষ সাংবাদিক দেখলে ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেয়!





: (চোখ সরু করে ঠাণ্ডা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে) লেকচার দিচ্ছ? একজন প্রফেশনাল তুমি! আমি অবাক হচ্ছি, তোমার মতো অকৃতজ্ঞ অযোগ্যকে সাংবাদিকতায় নিয়োগ দিলোটা কে!





:হ্যাঁ স্যার, প্রফেশান। বিজনেস মাইন্ডিড! স্যার, মাঝে মধ্যে বিবেকটার ঘুম ভেঙে যায়। মনুষ্যত্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে স্যার! বিশ্বজিৎকে যখন কুপিয়ে মারে তখন আমরা রিপোর্টারেরাই পরম উৎসাহে ভিডিও করেছিলাম মাত্র তিন গজ দূরত্বে দাঁড়িয়ে, ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম কখন পরের কোপটি পড়বে! স্যার, বিজনেস, সব বিজনেস, স্যার।





: য়্যাই তুমি বের হও! কোন ছাগলের বাচ্চায় তোমারে চাকরি দিছে! নির্বোধ ব্রেইনলেস একটা! ওই ভিডিও ফুটেজ রিপোর্টারের ছিল বলেই আজ অপরাধীদের বিচার হয়েছে। গবেট কোথাকার! বের হও! ইয়্যু আর ফায়ার্ড!





: এক মিনিট স্যার! বিচার হয়নি। রায় হয়েছে মাত্র! নবাব সিরাজ উদ্দৌলা যখন পলাশীর মাঠে পরাজিত হয় তখন নবাবের যে পরিমাণ বাঙালি প্রজা ময়দান ঘিরে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছিল, তারা যদি এক দলা করে থুতুও ফেলত তাতেও ব্রিটিশ বাহিনী সে থুতুর স্রোতে ভেসে যেত! স্যার, আমরা তামাশা করি, আমরা তামাশা দেখি এভাবেই। বিশ্বজিৎকে মারার সময় যে পরিমাণ রিপোর্টার আর পাবলিক দর্শক হয়ে তামাশা দেখছিল তারা যদি একটু ফিসফিসও করেও শব্দ করত তাতেও ওরা ভয়ে পালাত। বিশ্বজিৎ ছেলেটা প্রাণে বেঁচে যেত!

সাংবাদিক সমস্যা তুলে ধরবে শুধু, প্রতিকার করার দায়িত্ব সাংবাদিকের না এই নীতি স্রেফ একটা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।





: য়্যাই তুমি বেরোও তো বাপু! তুমি বরং মঞ্চে মঞ্চে বক্তৃতা দাও গে, তাতে হাত তালি বা সালামি পেয়ে ভাত পাবে হয়ত। সাংবাদিকতা করে আর তোমার কপালে ভাত হবে না।





: সেটাই স্যার। সেটাই। সাংবাদিকতা করে আমার মুখে ভাত আসলেই রুচবে না। আমার বিবেক এখনও মরে যায়নি স্যার! হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দিলেই আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিই হান্ড্রেড পার্সেন্ট খাটি সরিষার তেল!

আর এক মাস ওই উতকোচের প্যাকেটটা না দিলেই আমরা ছাপি তদন্ত ফাঁস করা রিপোর্ট! তখন সেই কোম্পানির তেলেই আমরা ভেজাল আবিষ্কার করি! আমরাও কি কম চাঁদাবাজ? চাঁদা আমরা তুলি না? বড়ো বড়ো সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব আর প্রতিষ্ঠানকে কি আমরা এই স্ক্যান্ডালের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিই না? নইলে একটা রিপোর্টারের ক'টাকাই বা বেতন? এই মানুষ জিম্মি করা অসাধু ব্যবসায়ের হারাম ইনকাম আমাকে দিয়ে হবে না স্যার!





: বসো আনোয়ার! মাথা ঠাণ্ডা করো! এসব কথা আর কোথাও ভুলেও বলো না খবরদার! সব সাংবাদিক তো আর একরকম নয়। সাগর রুনির কথা ভুলে যাওনি তো? ওরকম পরিণতি হয়ে যাবে দেখবে!





: ভয় দেখান স্যার? আমি ওসবে ভয় পাই না।





: আহা, আমি ভয় দেখাব কেন! আমি তোমাকে বোঝাবার চেষ্টা করছি। এইসব বিদ্রোহ করে যে লাভ নেই তুমি নিজেও জানো। সাংবাদিকতা কোর্স করার সময় নিশ্চয়ই পড়েছিলে যে দুর্নীতিও রাষ্ট্র চক্রের একটা অপরিহার্য অংশ? এই সাইকেল হতে দুর্নীতি বাদ পরে গেলেও তো রাষ্ট্র বিপর্যস্ত হবে। তুমি তো এসবই জানো, কেন পাগলামি করো?

কোন সমাজই দুর্নীতিমুক্ত নয়। এই দুর্নীতির মধ্যে থেকেও দেশ বা সমাজগুলো ঠিকই জনকল্যাণ করছে, উন্নতিও করছে!

মাথা গরম করো না। তোমার জীবন তো কেবল শুরু! অনেকটা পথ এখনও সামনে পড়ে আছে তোমার! দুয়েকদিন ছুটি নাও। আর কৌশলে কাজ করো।





: স্যার, আপনার যুক্তি কি আপনারই মানতে ইচ্ছে হয়?



: (নিরুত্তর)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১১

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: এই লেখাটা কি আপনার মৌলিক লেখা? যদি না হয় তাহলে উৎস কোথায়?

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪০

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ঠিক কেন অমৌলিক হবে একটু ব্যাখ্যা করবেন কি ?

ব্লগে হয়ত আমাকে নতুন দেখা যাচ্ছে, তবে আমার কলম বা কী বোর্ড কিন্তু নতুন নয় । :-)
আমার প্রত্যেকটি বক্তব্যই মৌলিক ।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০০

নাহিদ ইসলাম ৩৫০ বলেছেন: হুম................. :-P :-P :-P



প্রযুক্তি বিষয়ক বাংলা ব্লগঃ আইডিয়া বাজ

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:২৪

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: কারণ: Click This Link আপনি নিজেই লিখে থাকতে পারেন।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:২৯

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: :-)

আগে পোস্ট করেছি ফেইসবুকে । :-)
আর আপনার দেওয়া গুগল লিংকটাতে তো কিছুই পাওয়া গেল না !

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩৪

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: এই লিংকাটা গুগলের কি ওয়ার্ড সার্চে মিডিয়া ওয়াচ, তিন গোয়েন্দা, জীবনের গল্প ইত্যাদি ফেইসবুক গ্রুপে এই লেখাই পাওয়া গেল। এজন্যই জিজ্ঞেস করলাম।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ফেইসবুকে Zeon Amanza লিখে সার্চ দিন । মূল পোস্ট ওখানে পাবেন । তিন গোয়েন্দা পেইজ যে আমার লেখাটা কার্টেসিসহ কপি করেছে এটা আমি জানতাম । অন্য পেইজগুলোর ব্যাপারটা চোখে পড়েনি এখনও । আশা করি তাঁরাও কার্টেসিসহই পোস্ট করে থাকবেন । আমিও একটু ঢুঁ মেরে দেখি । ধন্যবাদ ।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১২

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: মূল পোস্টটি দেখুন এখানে Click This Link

ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছি । ফেইসবুকে প্রকাশ না করে আগে ব্লগে প্রকাশ করাটাই বেশি নিরাপদ এবং প্রমাণযোগ্য ।
আগামিতে এটা মাথায় রাখব । ধন্যবাদ সচেতন করে দেওয়ার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.