নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যশুরে লতার কথা

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৯

(২০০৬ সালে আমি একটি য়্যাসাইনমেন্ট
দেখে এতই আবেগতাড়িত হই যে,
সেটি নিজের একটি ফাইলে সংরক্ষণ
করি । সেটিই আপনাদের
সামনে তুলে দিলাম আজ ।)

Assigmentএ বলা হয়েছিল
নিজেকে নিয়ে লিখতে । অথচ
আমি যশুরে লতাকে টেনে এনেছি ।
ব্যাপারটা অবান্তর নয় । আমি মূলত আমার
সঙ্গে যশুরে লতার একটি সাদৃশ্য
আমি খুঁজে পাই ।
যশুরে লতা কী সেটা হয়ত দুর্বোধ্য
ঠেকতে পারে ।
যশুরে লতা হচ্ছে একটি লতার আঞ্চলিক
নাম । বৈজ্ঞানিক বা পুস্তক স্বীকৃত নাম
কী তা আমার জানা নেই তবে এর পরিচয়
হল এটি দুর্বল
পরাশ্রয়ী একটি লতা যা অন্যান্য লতার
মতই কোন শক্ত
গাছকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার
চেষ্টা করে ।

আমি যশুরে লতার সগোত্র, কারণ এর মত
আমারও গোড়া পোক্ত নয় । শক্ত
হয়ে দাঁড়াতে হলে গোড়ায় শক্ত
ভিত্তি থাকা চাই- আমার তা নেই ।
ইঙ্গিত সুস্পষ্ট যে, এটা আর
দশটা অভাগা ছাত্রের জীবন কাহিনীর
কার্বন কপি হবে । কিন্তু আদতে তা নয় ।

আমার জানা মতে, অনেক পড়ুয়ার
জীবনযাত্রা কষ্টেসৃষ্টে চলছে যারা দরিদ্র
তবে শেকড়বিহীন নয় । তারা কষ্ট
করে লেখাপড়া করছে বটে কিন্তু তাদের
সুষ্ঠু পারিবারিক বন্ধন রয়েছে । তাদের
পিতাগণ অক্ষম অপারগ হলেও দায়িত্ববোধ
সম্পন্ন। অন্তত ছেলেকে কেরানি- পিওনের
চাকরি পাইয়ে দিতে যে ঘুষটুকু দরকার
হবে তার বন্দোবস্ত
কোনমতে করে রেখেছেন
অথবা করতে পারবেন।
কিংবা বিদেশে পাড়ি জমাবার জন্যে,
চাষাবাদ করে খাওয়ার জন্য
বা মাথা গোঁজার জন্য একখণ্ড জমি হলেও
তাদের আছে । অথচ আমার তাও নেই ।

তাতেও দুঃখ ছিল না, তবে আমার
যে পিতামাতা আছেন, তাঁরা মূর্তিমান
শনিগ্রহ হয়ে আমার ওপর আগ্রাসন
করে আছেন । মাতা অসহায় এক নারী, এক
ভাই এক বোন অসহায় নিষ্পাপ দুটি মুখ ।
আর পিতা বর্বর, পিচাশ, কাণ্ডজ্ঞানহীন,
একরোখা এক মানুষ ।

আমার ভূমিকা বোধহয় চওড়া হয়ে যাচ্ছে ।
সংক্ষেপে বলি, পিতা আমার জন্য কোন
নির্ভরতার খুঁটি নন বরং ঘুণ পোকা ।
পৃথিবীতে আমি যদি কাউকে ঘৃণা করে থাকি তো সে বোধকরি এই
ব্যক্তিটিই হবেন ।

আমার লেখাপড়া এবং পরিবারের
জীবীকা সংস্থান এ দুটোর একমাত্র
নিয়ামক আমার টিউশনি । এই
কচি বয়সে বুকের সাহসে ভর
করে কয়েকবার ঋণ
নিয়ে দিয়েছি পিতাকে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত
হতে,
যাতে আমি সমাজে সাধারণভাবে তার
একটা পরিচয় দিতে পারি । কিন্তু
তিনি প্রতিবারই বিফল হয়েছেন ।

সেসব ঋণ আমাকে আজও
বয়ে বেড়াতে হচ্ছে । অবশ্য শ্রদ্ধেয়
পিতা এতেই ক্ষান্ত নন, তিনি আমার
প্রতি নিত্যনতুন চাপ সৃষ্টি করেই চলেছেন,
আমার নামে এমন সব
কুত্সা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন যা বললে আমার
আত্মসম্মান ধূলায় বিলীন হবে ।

তো পরিস্থিতি এখন এই যে,
গ্রামে পরিবারকে খোরাকি যোগাতে হয়,
এখানকার দেনা ও সুদ মাসে মাসে শোধ
করে পাওনাদারদের শান্ত রাখতে হয়,
নিজের শহর যাপন ও ছাত্রজীবনের
যাবতীয় চাহিদারও সামাল দিতে হয় ।
চিন্তা করতে পারেন, বিশ বছর বয়সী এক
কচি ছেলের পক্ষে তার কতটা সমন্বয়
সাধন সম্ভব ?

ফলে জীবনের
ঠেলাগাড়িটাকে কোনমতে হাতেপায়ে ঠেলে গড়িয়ে নিচ্ছি ।
কখনও গ্রাম হতে তাগাদা, কখনও
পাওনাদারদের হামলা, কখনও
শিক্ষাজীবন ও থাকা খাওয়ার
অর্থায়নে টালমাটাল
গতি এবং সর্বোপরি পিতার নিত্যনতুন
মানসিক নিপীড়নের প্রচেষ্টা !
ধারণা করুন, কেমন করে টিকে আছি !

বর্তমানে আমার দিন শুরু হয় সকাল
সাতটায় প্রথমে বাসে এবং পরে শাটল
ট্রেনে ঠেলাঠেলি করে ভার্সিটিতে পৌঁছানোর
মধ্য দিয়ে । প্রায়ই একটার
ট্রেনে ফিরতে হয় ।
না হলে দুইটা টিউশনি মিস দিতে হয় ।

এর মাঝে খাওয়ার
কথা তো বলা হয়নি না ? আসলে আমি এই
প্রায় চার বছর ধরে সকালে কিছু খাই না ।
এতে কিছু টাকা সাশ্রয় হয় । আর দুপুরের
খাওয়াটা না খেয়ে পারিনা বলেই যত কম
খরচে সম্ভব সেরে নিই ।

বেলা তিনটা হতে আমার টিউশনি শুরু ।
শেষ হয় রাত বারোটায় । রাতের
খাবারটা আমি ওখান থেকেই খেতে পাই ।
খাওয়ার বদলে পড়ানো, কোন
টাকা পাইনা । লজিং মাস্টার । এই
সময়ের মধ্যে লজিং বাদে আর
চারটা টিউশনি করতে পারি । প্রয়োজনের
খাতিরে গায়ে কুলালেও সময়ে এর
বেশি টিউশনি কুলোয় না ।

চারটা টিউশনিতে সাত হতে আট হাজার
টাকা কামাই করা নিতান্ত স্বাভাবিক,
কিন্তু আমার এই কাহিল শরীর আর
সাধারণ Get up এর
কারণে টিউশনি প্রতি হাজার বারোশোর
বেশি উঠতে চায় না । আমার
টিউশনিগুলো পাড়া- মহল্লায় ।
আবাসিকে কোন টিউশনি টেকে না ।
আমি দেখেছি, পড়ানো মাত্রই
স্ট্যুডন্টরা আমার ভক্ত হয়ে যায়, কিন্তু
তাদের গার্জিয়ান গলে না ।
কেননা আমার বডি- ফিটনেস, চেহারা-
গেট-আপে টিচারের মত আমাকে লাগেই
না । তো, আবাসিকের টিউশনি বড়জোর
একমাস টেকে । ঐ টিউশনিগুলোর
পেইমেন্ট ভালো ।

আমার মাসিক আয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ
হাজার টাকা । এখনও আমার
দেনা রয়েছে প্রায় ৫৫,০০০ টাকা ।
দেনা ও সুদ পরিশোধ, এবং অন্য সবকিছু এ
অল্প আয় দিয়ে কিছু কিছু
করে চালিয়ে নিতে হয়,
পুরোপুরি চলে না ।

আয়-ব্যয়ের তফাত্টা মাথা খারাপ
করে দেয়ার মত হলেও আমার
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের সুবিধাটার
কারণে কিছুটা খরচ আসান হচ্ছে । আমার
মাথা গোঁজার ঠাঁই অর্থাত্ রাত্রিযাপনের
প্রক্রিয়াটা আরো খানিকটা চমকপ্রদ ।

আমি ঘুমাই একটা দোকানে । দোকানের
মালিককে এ বাবদ কোন টাকা দিতে হয়
না তাই রক্ষা । দোকানের পেছনে গোসল
এবং শৌচকার্যের ভীরবহুল
ব্যবস্থা আছে । টিউশনি হতে রাত
বারোটায় ফিরি আর দোকান গোছগাছ
এবং শুতে শুতে দুইটা বাজে । এর
মধ্যে সকাল সোয়া সাতটায় উঠে ট্রেনের
জন্য ছোটা । তাই অপূর্ণ থাকে ঘুম ।
প্রতিদিন গোসল করার সৌভাগ্য হয় না ।
কাপড় চোপড় ধোয়া চলে কেবল শুক্রবার ।
অতএব পরনের কাপড় ময়লা হলেও কিছু
করার থাকে না ।

নিত্যকার এই সময়সংকটে পাঠ্যবই চোখের
সামনে মেলে ধরার ফুরসত্ কোথায় পাব ?
তো, ভাল রেজাল্ট
কি দৈবযোগে মিলবে ? দিনের
একটানা পরিশ্রমের পর মন ছুটতে চায়
বিনোদনের দিকে, বইয়ের দিকে নয় ।

সুতরাং অলৌকিক সাহায্য ছাড়া ভাল
রেজাল্ট অর্জন সম্ভব নয় । আর ভাল
রেজাল্ট হলেও তো চাকরি নামক সোনার
হরিণের নিশ্চয়তা নেই । তাহলে আমার
ভবিষ্যত কী ? *** (এই অংশটুকুর
পাঠোদ্ধার করা যায়নি, লেখা নষ্ট
হয়ে গেছে )***
চিন্তা করতে গেলে তো এখনই
আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয় । কিন্তু তাও
পারি না । কারণ আমার মুখের দিকেই
তো তাকিয়ে আছে আরো কয়েকটি মুখ ।
আমি প্রায়ই
ভাবি এভাবে ধুকে ধুকে জীবনকে টেনে চলার
অর্থটা কী ?

জীবন আমার কাছে কোন অমৃত বস্তু নয় ।
কোন আশা- বাসনা, সুখ আর প্রাপ্তির
ক্ষেত্র নয় । জীবন কেবলই
বয়ে বেড়ানো এক বোঝা আমার কাছে । এ
বোঝা গা থেকে ঝেড়ে ফেলার উপায়
নেই । আমি তো বেঁচে আছি কেবল আমার
দায়িত্ববোধের কারণে । বোধহয় আর সব
মানুষও এই একই কারণে বেঁচে থাকতে চায়

আরো কিছু এক্সক্লুসিভ ইনফর্মেশন
দেয়া যাক- আমার পছন্দের খাবার, রঙ,
পোশাক ইত্যাদির কোন অনুভূতিই নেই ।
তবে বই পড়া ও গান শোনার প্রতি তীব্র
ঝোঁক আছে । সব দিন প্রায় একই রকম ।
তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হল ঈদের দিন । এ
দিনে সুখানুভূতি নয়, আমার জৈবিক
অনুভূতি আমাকে খুবলে খুবলে খায় । এ দিন
যাবতীয় হোটেল বন্ধ থাকে । তাই খাবার
পাওয়া যায় না । না খেয়ে থাকতে হয় ।

বছরের এই দুইটা দিনকে আমি যমের মত ভয়
পাই । মানুষ আনন্দ
নিয়ে অপেক্ষা করে ঈদের আগমনের, আর
আমি সারা বছর দিন গুণে গুণে আতঙ্কিত
হই কখন আসবে এই ভয়াল দিন !

নিজের পয়সায় ঠিক কতদিন আগে রিকশায়
চড়েছি তা স্মরণ করতে পারব না । ঈদের
দিনে কোথাও যাই না । আগাম কিছু
শুকনো খাবার কিনে রাখি । কিন্তু ভাতের
ক্ষুধা অন্য কিছুতে মেটে না ।

যাইহোক, আমাকে দেখে বোধহয় এসব
আন্দাজ করা যাবে না । আমিও এসব
ঢেকে রাখতে চাই । এটুকু সম্মান
নিয়ে বাঁচতে চাই । আর যেটাকে ভয় পাই
এবং ঘৃণা করি তা হচ্ছে আশ্বাস ও করুণা ।
কারণ এ দুটো আসলে এক ধরণের
ফাজলামি, এক ধরণের পরিহাস ।

সবাই একে অন্যের
ঘাড়ে পা রেখে ওপরে উঠতে চায় । সবাই
আছে নিজেকে নিয়ে । নিজের এসব
কথা এদের কাছে প্রকাশ করার দরকার
কী ? একটু আহা উহু আর করুণাবাক্য
শুনে শুনে দেখে দেখে ঘেন্না ধরে গেছে ।
এরচেয়ে পাওনাদারদের ভর্ত্সনাই বেহতর,
আন্তরিক আর সত্য মনে হয় ।

*** (এই অংশটুকুরও আর পাঠোদ্ধার
করা যাচ্ছে না )***
নিজেকে যশুরে লতা বলেছি কারণ সব
সময় আমি যে অভাবটাতে ভুগেছি,
তা টাকা পয়সার নয়, অভাব একটা নিরেট
আশ্রয়ের, একটা ভরসাদার ব্যক্তির,
মাথার ওপর একটা ভরসার ছায়ার । কেউ
শুধু আমাকে বললেই হত, তুমি এগিয়ে যাও,
তোমার অবিভাবক আমি আছি, আমি দেখব


শেষকথা, নিজের সমস্ত
কথা চেপে রেখে টিকে থাকার
চেষ্টা করে চলেছি অবিরত । কতক্ষণ পারব
জানি না, এর ফল কী তাও জানি না । শুধু
জানি ঐ মুখগুলোর জন্য খাটতে হবে ।
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ ।

পুনশ্চ : →

¯¯¯¯¯¯
১. বিবরণ হুবহু তুলে দিয়েছি । দুয়েক
জায়গায় কিছু সংশোধন করতে হয়েছে ।

২. কয়েকজায়গার লেখা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়
পড়া সম্ভব হয়নি ।
আমি সেগুলো বন্ধনী চিহ্ন
দিয়ে ঘোষণা করেছি ।

৩. কালকের পোস্ট পড়ে দেখলাম অনেকেই
আমাকে সান্ত্বনা সহানুভূতি দিলেন ।
তাঁরা কী পড়লেন আর কী বুঝলেন আমিও
বুঝলাম না ।

৪. সবশেষে আমি ঘোষণা করি এই জীবন
গঞ্জনার উপাখ্যানটি গর্বের ও
অনুপ্রেরণার ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.