নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেউ

০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩


একটা বিষয় আমি এখনও মেলাতে পারি না, গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি যখন প্রথম, সে সময় শহরেও কেমন গ্রামীণ সবুজতার একটা ছাপ ছিল! আমরা একটা জংলা খালের পাড় ঘেঁষে নতুন ওঠা এক টিনশেড ঘর ভাড়া নিই! পরে অবশ্য জানতে পারি, ওই জংলা খালপাড়টা ভালো না, ওটা একপ্রকারের বধ্যভূমি, ওখানে নাকি মানুষ ধরে এনে জবাই করা হত (শোনা কথা, ভিত্তিহীন)! তার অপর পাড়েই ছিল শ্মশানঘাট!

বয়স তখন খুব বেশি না, দুই বছর বিরতি দেবার পর আবার তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই! ঘুম কম হবার দোষ সেই ছেলেবেলাতেও ছিল| চোখ বুজে পড়ে থাকতাম, রাত বাড়তে থাকত, মাথার মধ্যে আকাশকুসুম ফুটতে থাকত, কখন কোন গভীর রাতে ঘুম আসত জানাও হত না!

এমনই রাতগুলোতে কোনো কোনো দিন টের পেতাম দূর হতে দল বেঁধে যেন কিছু লোক আর্তনাদ করছে, হাউমাউ করে সাহায্য চাইছে! শব্দগুলো আবছা শোনা যেত, অনেকটা আহাজারির মত, এমন শব্দ আগেও শুনেছি গ্রামে যখন এমন ফাল্গুন চৈত্রে দূরের কোন বাড়িতে মাঝ রাতে আগুন লাগত, মানুষ হাউমাউ করে আর্তনাদ করে সাহায্য চাইত!

এই শহরে অমন গ্রামের মত আর্তনাদ, যার উৎসও জানি না, মাঝরাতে খুব ভয়ানক শোনাত, ওখানে শেয়াল ডাকবারও যো নেই!

ভয় পেতাম, পাশে দাদী ঘুমাত, কিন্তু চাপা স্বভাবের ছিলাম বলে দাদীকেও ডাকা হত না, ভেবে নিতাম মনের ভুল এটা! সব দিন এটা ঘটত না, মাঝে মাঝে, মাসে দু তিন বার! আমি মনের ভুল ভেবে পাত্তা দিতাম না, কিন্তু একদিন টের পেলাম, দাদী সজাগ, এবং কেন জানি মনে হল, দাদী ভয় পাচ্ছে!

আমি ফিসফিস করে বললাম, তুমিও কি শুনতেছ, বু?
দাদী ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, কে এত চিল্লায় কিজানি, তুই ঘুমা, ওসব কিছু না, শয়তান ঘরের ভিতর ঢুকতে পারে না, ভয় নাই!

আমি এখনও মেলাতে পারি না, শব্দগুলো কিসের ছিল! শেয়াল যদি হত, দাদীর সেটা অবশ্যই বোঝার কথা, ভয় পাবার কথা নয়!


এই ঘটনা লিখতে গিয়ে আরেকটি ঘটনা মনে পড়ল। ছেলেবেলায় দৌড় ঝাঁপের খুব অভ্যাস ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বাজি ধরে উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে নামা! একবার এমন এক বিল্ডিং থেকে লাফানোর সময় পড়ে গিয়ে পা মচকাই। শুক্কুরের বাপ নামে এক কবিরাজ ছিলেন এলাকায়, উনি এসে পা মালিশ করে দিতেন রোজ! সরিষার তেল এনে পায়ে মাখতেন, আর মন্ত্র পড়তে পড়তে মালিশ করতেন! বিড়বিড় করে কী পড়তেন জানতে খুব ইচ্ছে করত। আবছা আবছা শুনতাম, "যা রে ব্যথা সরে যা, যারে পাবি তারে খা!" এরকম কিছু ছড়ার মত বাক্য। সবটা বোঝা যেত না। সাহস করে একদিন বললাম একটু জোরে পড়েন না, কাকা!
উনি এমন চোখ রাঙিয়ে তাকালেন যে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না!

আমার এসব মন্ত্রে তন্ত্রে কখনও বিশ্বাস ছিল না। বয়স কম হলেও যুক্তি চিন্তার ক্ষমতা বয়স অপেক্ষা বেশিই ছিল একটু! যখন মালিশ করতেন, আমি খেয়াল করতাম মন দিয়ে যে আসলে ঘটনাটা কী, ঝাড়ফুঁকে উপর দিয়ে ফুঁ দিলে কিভাবে ভেতরের ব্যথা ভালো হবে!
ভাবলাম, ফুঁ-তে কোন কাজ হয় না, এটা হতে পারে তেলের গুণে কিংবা মালিশের কৌশলে! আমি মালিশের কৌশলটা খেয়াল করার চেষ্টা করলাম, অসাধারণ কিছুও মনে হল না। এসব ঝাড়ফুঁক দেখেছি অনেক। যাইহোক, ঝাড়ফুঁকে আমার ব্যথা সারল না। দিন যেতে লাগল, একপর্যায়ে আর ধৈর্যে না কুলালে, ওভাবেই নেমে হাঁটা শুরু করলাম। বলাই বাহুল্য, খুঁড়িয়ে হাঁটতাম!

সেদিন বিকেলে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে সিলেটের এক মহিলা, যাঁকে আমরা মোশারফের মা বলে চিনতাম, তিনি মাকে জিজ্ঞেস করলেন ছেলের কী হয়েছে!
মা বলল, পা মচকেছে।
মহিলা কেমন মায়া নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। তারপর মাকে বললেন আমাকে যেন মাগরিবের আযানের পর তাঁর ঘরে নিয়ে যায়।

অতপর মাগরিবের পর তাঁর ঘরে গেলাম। আধো আলো আধো ছায়ায় অনেকদিনের চেনা মোশাররফের মাকে কেমন অচেনা মনে হল সেদিন, তাঁর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে, খুব মায়া নিয়ে আমার দিকে তাকালেন, যেন আমার ভেতর বাহির সব পড়ে ফেললেন। তাঁর মুখে মুচকি হাসি। হয়ত আমার ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস নেই বুঝেই হাসছিলেন তিনি! তারপর আমার ব্যথার অংশে হাত বোলালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ব্যথা আছে?
আমার তখন ব্যথা আগের চেয়ে কম মনে হল। আমি বললাম, আছে এখনও!
উনি বললেন, বলো, ব্যথা নাই!
আমি বিরক্ত হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। ব্যথা আছে তো আমি নাই কেন বলব?
মা-ও সায় দিয়ে বলল, বল, ব্যথা নাই!
উনি এবার ব্যথার অংশে বেশ চাপ দিয়ে বললেন, ব্যথা আছে?
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ব্যথা নেই!
তখন আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম ব্যথা আসলে নেই। আমি দাঁত কিড়মিড় করেছি চাপ দেবার কারণে ব্যথা পাব এই ভয়ে!
তারপর ঘরে চলে এলাম, এবং পরদিন থেকে পা সম্পূর্ণ ভালো!

মোশাররফের মা দরিদ্র মহিলা, ইট ভাঙার কাজ করতেন, ছাপড়া ঘরে তিরিশ টাকা দিয়ে ভাড়া থাকতেন। আমার জানামতে তিনি কোন টাকা নেননি ঝাড়ফুঁক বাবদ, বা নিজের কেরামতি প্রচারের কোন চেষ্টাও করেননি। মাকে বলে দিয়েছিলেন, যেন তাঁর এই গুণ কাউকে না বলা হয়! কোন যে ধান্ধাবাজি ছিল এমনও মনে হয় না, শুধু আমি ভেবে পাই না, ব্যথা নেই বলতে বলাতেই কিভাবে একটা মচকানো পায়ের ব্যথা পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়, ব্যথার কোন রেশ থাকা ছাড়াই!
এই হিসেব আমার এখনও মেলে না!


পরপর তিন না হলে কেমন যুত হয় না, তাই এই তৃতীয় ঘটনাটিও জুড়তে চাইছি। ঘটনা বিরাট কিছু না। এক সন্ধ্যায় সব গবাদিপশু যখন ঘরে ফেরা শেষ, বাইরের আকাশ কালচে আড়শির মত যখন গভীর আঁধারী হয়ে গেছে, তখন হঠাৎ আকাশ বাতাশ কাঁপিয়ে গম্ভীর একটা আওয়াজ এল। কোন একটা প্রাণীর চিৎকার! নানী রান্না ফেলে ঘরে দৌড়ে এলেন! ঘরের সবাইও মোটামুটি নড়েচড়ে উঠল, কীসের আওয়াজ ওটা!
নানার চোখে দেখলাম, গভীর পরখের হুঁশিয়ারি! কিছু একটা প্রাণী গম্ভীর শব্দে "ফেউ" করে লম্বা চিৎকার করছে!
মামারা বলে উঠল, ও কী!

নানা আঙুলের ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। আওয়াজটা আবার এল, প্রথমে মনে হয়েছিল বেশ দূরে, তৃতীয়বার মনে হল যেন ঘরের একদম কাছেই! তার ডাকের গাম্ভীর্য থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এটা কোন বড়সড় প্রাণীই হবে, কম হলেও একটা ষাঁড়ের কাছাকাছি সাইজ!

সবাই দরজা জানালা দিয়ে আমরা ঘরে বসে রইলাম, ওই রাতে কেউ আর বের হলই না ঘর থেকে। আওয়াজটা ঘুরে ফিরে অনেকবারই আসলো, অনেক রাত পর্যন্ত!
পরদিন সকালে নানাকে জিজ্ঞেস করলাম, নানো, কাল ওটা কী ছিল?
নানা বললেন, ফেউ!

সেই ফেউ সম্পর্কে আর কিছু জানা হয়নি আমার, আর কখনও কাউকে কিছু বলতেও শুনিনি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আপনি আসলে ঝানু লেখক। আপনার লেখা থেকে নতুন বাক্য শিখেছি 'আকাশকুসুম ফুটতে'


বিশ্বাসের জোরে অসম্ভব সম্ভব হয়।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১২

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: কুসুম বলে কথা !! ;)

২| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার ছেলেবেলার গল্প।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ;)

৩| ০২ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৩০

করুণাধারা বলেছেন: কত কিছুই অজানা আকাশ আর পৃথিবীর মাঝে...

০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: কত অজানা রে!

৪| ০২ রা মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পরিপাটি লেখা ।

০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই!

৫| ১১ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:৩৯

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: সোম ভাইয়ের মন্তব্যে কী ছিল আমার জানা হল না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.