নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলা এবং আমাঞ্জার ফেইসবুকীয় গ্যাঁজানি

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২১


ইমেলা লইয়া চুড়ান্ত আলোচনা আজ হইতে বছর পাঁচেক আগেই লিখিয়া ছুড়িয়াছি ফেইসবুকের নিউজফিডারে! পরিস্থিতি তখনও যাহা ছিল, এখনও তাহাই! অতএব, একই কথা বারংবার বলা বাতুলতা বলিয়া বোধপূর্বক আর কিছুই বলিতেছি না৷
কিন্তু ইহাতেও বিপত্তির উদ্রেক হইতেছে, যেহেতু লিখিতেছি না, সেহেতু নিউজফিডেও দর্শিত হইতেছি না, মানুষের স্মরণ হইতেও বাষ্পায়িত হইতেছি! বেশিরভাগই মরিবার পরেই অমর হয়, তবে আমি আমার কোন পোস্টের কারণে কস্মিনকালেও কোথাও স্মৃত হইবো কি না তাহায় বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহ আছে!

যাউজ্ঞা, বইমেলা লইয়া আমি প্রতি বৎসর একখানি ক্যাসেট বাজাইতে থাকি, তাহা আপনারা জানেন, "এবারের বইমেলায় একটা বইয়ের নাম বলুন, যা আগামী পাঁচবছর পরও মানুষ মনে রাখবে!"
তেমন বই কোন বছরই কেহ দেখাইতে পারে নাই৷ আমি বুঝিতে পারি, অনেক লেখকই আমাকে আমার এই বক্তব্যের কারণে জব্বরীয় ভাষায় অবন্ধু করিয়া গোল্লায় গমন করিয়াছে, কারণ লেখকমাত্রেই তাহার লেখার সমালোচনা সহ্য করিতে পারে না— সে বাজারি লেখকই হউক, আর টিকটিক লেখকই হউক!

অতিরিক্ত ক্যাচালে যাইবো না, কথা অল্পতেই শেষ করিতেছি৷ বর্তমান নবম দশম শ্রেণীর বইতে পালামৌ নামক একটি ভ্রমণকাহিনী দেখিতে পাইবেন! পালামৌ লিখিয়াছেন সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! তাঁহার নাম খুব অল্প লোকেই শুনিয়া থাকিবেন, আর তাঁহার কোন লেখা পড়িয়া থাকিবেন এমন লোকের সংখ্যা আঙুলেই গণনা করা যাইবে, কড়ায় গুণিতে হইবে না! সঞ্জীবচন্দ্রের পরিচয় দিতে গেলে তিনি যে মহান ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বড় ভাই তাহা বলিতে হয়, নইলে কেহ চিনিতে চাহে না!

আপনারা সঞ্জীবকে না চিনিলেও "বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে!" —এই লাইন পাঠ করেন নাই এমন শিক্ষিত মানুষ পাওয়া অসম্ভব! জ্বি, এই প্রবাদ বাক্যটির সৃষ্টিকর্তা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! পালামৌ ভ্রমণকাহিনীটি যদি পাঠ করেন, তাহা হইলে ওই পাঠের সারমর্ম তেমন কিছুই পাইবেন না৷ একজন লোক কোল সাঁওতালদের এলাকায় ঘুরিতে গিয়াছে, সুঠামদেহী আদিবাসী যুবাদের নাচ দেখিয়াছে— এই পর্যন্তই! অন্তত নবম দশম শ্রেণীর পাঠ্যতে এইটুকুই আছে! খুবই সাদামাটা কাহিনী! তাহলে কেন এই সাদামাটা কাহিনীটাকেই পাঠ্য হিসেবে গৃহীত হইল??

কারণ, ওই কাহিনীর একেকটি লাইন, বলার ভঙ্গিতে লেখকের জ্ঞানের যে রশ্মিবিচ্ছুরণ, লেখকের যে প্রজ্ঞা! বরাকর নদীর তীরে গাড়ি থামিলে কুলিদের কতগুলো বালক বালিকা আসিয়া দুইটা পয়সা ভিক্ষার জন্য ঘিরিয়া ধরিল, সেখানে দুই বৎসর বয়সী একটি শিশুও আসিয়া হাত পাতিয়াছে, যে পয়সার মর্মও বোঝে না, ভিক্ষার উদ্দেশ্যও বোঝে না, সে শুধু অনুকরণে হাত পাতিতে শিখিয়াছে! অর্থাৎ একটি শিশু তাহার জন্মলব্ধ পরিবেশ হইতে তাহার শ্রেণীবোধে দীক্ষিত হইয়া গিয়াছে, সে অধম, সে গোলাম, সে নীচুজাত ভিক্ষুক— এই অন্তঃকরণ তাহার তৈরি হইয়া গিয়াছে! এই অংশটুকু হইতেই বুঝিতে পারা যায়, লেখকের দর্শন কতটা গভীর, দেখিবার চক্ষু কতটা অন্তর্ভেদী! লেখক ইহার পরে কথায় কথায় বলিলেন, সাহসের সংজ্ঞা! তিনি বলিলেন, "যে বিপদ বুঝে না, সেই সাহসী৷" অর্থাৎ আমরা কোন কাজ সাময়িক ক্রোধ বা ঝোঁকবশত করিয়া ফেলিলে তখন আমাদের সাহসী বলা যায়, কিন্তু আমরা যদি কাজটি করিবার আগে ইহার প্রতিফল কী কী হইতে পারে, তাহা ভাবিতে যাই, তখন আমাদের আচরণ আর উদ্ধত ক্ষিপ্র থাকিবে না, বরংচ আমাদের প্রতিক্রিয়া শান্ত হইবে! এই যে মানব মননের এরূপ আন্ত-রসায়ন কজনে এভাবে ভাবিয়া দেখে?? উনি কোল সম্প্রদায়ের লোকদের দেখিয়া বলিয়াছেন, ইহাদের কলিকাতায় বা অন্য শহরে দেখিলে খুবই বেমানান বিদঘুটে চেহারার ঠেকে, অথচ এই জঙ্গলে ইহাদের এতটুকুও বেমানান লাগিতেছে না, বরং অপূর্ব সুন্দর লাগিতেছে! এই প্রসঙ্গেই তিনি প্রবাদটি সৃষ্টি করিলেন— বন্যেরা বনে সুন্দর; শিশুরা মাতৃক্রোড়ে!

তাই বলিতেছি, বক্তা ভালো হইলে গল্প পানসে হইলেও তাহা শ্রুতিমধুর হয়! পালামৌ কোন চমৎকার গল্প নহে, অথচ লেখকের বলিবার ঢং এবং লেখকের বক্তব্য পাঠ করিতে গেলে আপনি যে কথায় কথায় চমৎকার দর্শনবোধ বা জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হইবার সুযোগ লাভ করিবেন, তাহাই আপনাকে ওই লেখকের অনুরক্ত করিয়া তুলিবে! একেকটি লেখা সার্থক হয় যখন তাহা হৃদয় স্পর্শ করে, কিংবা প্রবাদপ্রতিম হইয়া উঠে!

অতএব, ওহে বর্তমান মূর্তিমান লেখক, পালামৌ পাঠ করিয়া কিংবা পইড়া আসেন! আপনার সময় অপেক্ষা দেড়শো দুইশো বছর আগে একেকজন ব্যক্তি যাহা লিখিয়াছেন, আপনি এত বছর পরে আরো বেশি জ্ঞান ও বোধের জগতে ভূমিষ্ট হইয়াও তাঁহাদেরকে অতিক্রম করা তো দূর, তাঁহাদের পদধূলিযোগ্যও হইয়া উঠিতে পারেন নাই! আপনার লেখায় কোন বোধটা আছে, যাহা পাঠককে নাড়া দিবে??? কোন দাগ কাটার মত দৃষ্টান্ত আছে যাহা পাঠককে উঠিতে বসিতে জীবনের বিভিন্ন সময়ে ইয়াদ দিলাইবে?? পাঠকের আকূলতার কোন কোণাটা ধরে আপনি টান দেবার ক্ষমতা রাখেন বা চেষ্টা করিয়াছেন আপনার লেখায়?? ফেইসবুক মারাকোটিং আর খাতিরের লোক ধরিয়া আনিয়া চক্ষুলজ্জাবশত বই কিনাইয়া ফটো খিচাইয়া নিজেকে সার্থক লেখক হিসেবে কল্পনা করিয়া চরমপুলক বোধটা দরজা বন্ধ করিয়া লোটার সম্মুখে কিংবা কম্বলের অভ্যন্তরে সারিতে থাকুন, যাঁহারা অল্প বিস্তর সাহিত্য বোঝেন, আপনারা রোজ রোজ তাহাদের বমনাগতির কারণ হইতেছেন! আইছে আমার কল্লাজয়ী লেখক!!

আর টিকুটক ফাঠক বা সেলফি পাঠকের কথা নিয়া কিছুই বলিব না, কারণ আমারও দুই চাইরটা লাইক পাইবার দরকার আছে, নচেৎ এহজীবনে কী করিয়া দুইটা ভাত খাইবো??

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫১

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: কি সুন্দর করেই না বললেন...
আহা...

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: বইমেলা আর বইমেলা নেই।
হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র। যারা বই পড়ে না, তারা বইমেলা যাচ্ছে ছবি তুলতে, টিকটক করতে। ঢাকার মানুষের বিনোদনের বড় অভাব। তারা ডিম নিয়ে মেলা হলেও সেখানে ভিড় করে।
এদিকে বইমেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির হাতে। বাংলা একাডেমি যারা পরিচালনা করছেন তারা যোগ্য ও দক্ষ নয়।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:১৫

ঢাবিয়ান বলেছেন: পোস্টে ++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.