![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
একেতো কুয়াশায় ঢেকে আছে চারদিক,কনকনে শীত,শীতল বাতাস বইছে এরউপর সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে।শীতের কুয়াশা আর
বৃষ্টি একই সাথে।প্রকৃতি আজ সেজেছে তার মায়ায়।সবকিছু থেমে গেছে ক্ষণিকর জন্য।গাছের সবুজ পাতা যেগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল তা ঝরে গেছে ঝড়ো বাতাসে।রাস্তার উপর বিছানো আছে সে পাতা।একেবারে কাটখোট্টা ধরনের কোনও লোকও আজ তার প্রিয়তমার চোখের দিকে তাকিয়ে কবিতা লেখা শুরু করে দিতে পারে।
আলসেমিতে ঘিরে থাকা এমুন সকালে কোন রকমে বিছানা ছেড়ে বারান্দায় এসে এক কাপ কফি হাতে দাড়িয়েছে আয়াত।চেয়ারে বসতে গিয়েও কি মনে করে উঠে আসলো সে।এমন সকালেও বের হতে হবে তাকে।ইচ্ছের বিরুদ্ধেও অনেক কাজ করতে হয়।মনের খেয়ালে গান গাইতে গাইতে রেডী হচ্ছে সে।আজ শাড়ি পরে বের হবে আয়াত।এমনিতেও সে শাড়ি পরে তবে আজ ভিন্ন কারন।
বের হতে হতে সে কয়েকবার ফোন ডায়াল করলো রিয়ানকে।"এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা,কত করে বলছি সকালে উঠতে" নিজে নিজেই বলছে আয়াত।রিয়ান ওর ক্লাসমেট।রিয়ানের সব কিছুই ভালো লাগে ওর শুধু সকালে ঘুমানোটা বাদ দিয়ে।রিক্সায় উঠে কল ডায়াক করতেই কল তুলেছে রিয়ান।
-কিরে রিয়ার বাচ্চা আর কত ঘুমাবি? এরপর ঘুমাইলেতো দুইজনেরই ফেইল করা লাগবে।পাস আর করা লাগবেনা।
-হুম
-হুম কিরে। রাত্রে যে স্লাইড দিছি ওইটা নিয়ে তারাতারি ক্লাসে আয় আজকে ফাইনাল প্রেজেন্টেশন দিতে হবে।
"ভার্সিটি লাইফ শেষ করে ফেলতাছে অথচ কোন সময় জ্ঞান নাই এদের যে কি হবে আল্লাহই জানে" আরো কি কি জানি বলতে বলতে ভার্সিটির সামনে চলে আসছে আয়াত।
ক্লাস শুরুর প্রায় মিনিট বিশেক পরে ঢুকলো রিয়ান।রিয়ানকে খালি হাতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে আয়াতের।ওর কাছে যেতেই ফিসফিস করে বলছে,
-স্লাইডের প্রিন্ট করাটা কি আমার দায়ীত্ব ছিল?
-ওহ নাহ।আমার করার কথা ছিল।কিন্তু.. হ্যা গতকাল মংগলবার ছিল।নীলক্ষেত বন্ধ ছিল।হ্যা নীলক্ষেত বন্ধ।
-দুনিয়ায় কি আর দোকান নাই? আজকে তুই ওইটা জমা দিবি।
সিড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।আর রিয়ান বেচারা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে প্রিন্টটা জমা দিতেই ব্যাস্ত।আজ থেকে আর ওকে কষ্ট দেয়া হবেনা।দেখতে দেখতে চার বছর শেষ হয়ে গেলো।রিয়ানের নাম রিয়া দেয়াটা আয়াতেরই কাজ।সকাল বিকেল রাত দুপুর আর রোদ বৃষ্টির মাঝে যখন যেখানে খুশী ডাকছে রিয়ানকে।আর হয়তো এতো সময় হবেনা কারোরই।নতুন জীবিনের স্বপ্ন এখন।আনমনে এসব ভাবতেই আয়া আয়া বলে রিয়ানের চিৎকার শুনতে পেলো সে।তবুও কোন পাত্তা দিলো না সে।রিয়ান এসে ওর পাসে দাঁড়িয়েছ তবুও কোন কথা বলছেনা সে।
রিয়ান কখোন আজকের আয়াতকে দেখেনি।কাজল কালো চোখ।হাতে লাল কাচের চুড়ি। পরনে খয়েরী রঙা শাড়ি।কি অপূর্ব মায়া।এতো কাছে থেকেও কোনদিন চোখে পরেনি ওর।কতটা দিন একসাথে কাটিয়েছে ওরা।আজ থেকে আর একসাথে থাকা হবেনা।বিদায়ের সুর শুরু হয়ে গেছে।কিন্তু রিয়ানের মনে যেনো অন্য শুর তোলপাড় করে যাচ্ছে।
হঠাৎই আয়াত রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না শুরু করে দিছে।রিয়ান কিছুই বুঝতে পারছে না।তার কি করা উচিৎ।যে আবেগে আয়াত তাকে জড়িয়ে ধরেছে সেই আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও বারবার ব্যার্থ হলো সে।
নিজেকে সামলে নিয়ে আয়াতই বললো,
-আজকের ওয়েদারটা খুব ভালো।আমার সাথে একটু ক্যাম্পাসে হাটবি।প্লিজ।
-হ্যা হাটবো কিন্তু বেশীক্ষণ থাকতে পারবোনারে আজ।বাড়ি যাবো সেই কবে আসছি তুইতো জানিসই।
-ঠিক আছে তুই যখন চাস চলে যাবি।আমি তোকে সি অফ করে আসবো শেষবারের মতো।
এই ক্যাম্পাসের সব গুলো রাস্তাই ওদের পরিচিত।সবাই মিলে কত আড্ডা দিছে কত ঘুরছে।তবুও আজ কেনো জানি সব কিছু নতুন লাগছে আয়াতের কাছে।রিয়ানকে সে মিস করবে।অনেক বেশী মিস করবে।বারেবারে আড়চোখে তাকাচ্ছে সে ওর দিকে।
রিয়ানের মনে যে ঝড় উঠেছে সেটা সে কি করে বলবে আয়াতকে।আজ এতোদিন পরে আয়াতের দিকে তাকাতে সেও লজ্জা পাচ্ছে।লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে সে।বারেবারে হিসাব মিলাচ্ছে সে।জীবন বড় অদ্ভুত কত কিছুই দিয়ে যায় হিসেবের বাইরে।জীবনের হিসেব কষার মতো যোগ্যতা তার হয়নি।
কি অদ্ভুতভাবে সারা ক্যাম্পাসে দুই তিন পাক দিয়ে ফেলেছে ওরা। সকাল, দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল।কেউ কোন কথাই বলেনি।শুধু পাশাপাশি হেটেছে। এই শুকনো পাতার বিছানো পথ যেনো শেষ হবার নয়।সারাজীবন হাটতে পারে ওরা এমন রাস্তায়।এভাবে পাশাপাশি একসাথে দুজনে।
©somewhere in net ltd.