নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! \nফেসবুকঃ \nhttps://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট

মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan

শুন্য বাইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদের পাহারায়

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২১

সকাল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে।পাহাড়ের এই রুপ বুঝা বড় কষ্টের। হঠাৎই শুরু হয়ে যায় ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টিতেই ফুটে উঠে পাহাড়ের সৌন্দর্য।চারিদিক গাঢ় সবুজের সমারহ।বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ি গাছ,লতাপাতা গুলো স্নান করে ধুয়ে মুছে আরো সবুজ হয়ে উঠে।পাহাড়ি ঝর্নাগুলো ফিরে পায় প্রান।চোখ মিলে তাকালেই মনে হয় একরাশ ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুলো।
বৃষ্টিতে কেবল পাহাড়ি পথে হাটাচলা করাটাই মুশকিল হয়ে যায়।কাচা মাটির পথ অতিরিক্ত বর্ষণে কর্দমাক্ত হয়ে যায়।একবার পা পিচলে পড়লেই একেবারে পাহাড়ের খাদে গিয়ে পরতে হবে।পাহাড়ি লতাপাতা আকড়ে ধরে কিছুটা হাটাচলা করা যায় তবে তাহা করিতে ট্রেনিং আবশ্যক।

সমতল থেকে পাহাড়ের পরিবেশ, সংস্কৃতি, আর মানুষের আচার-ব্যাবহারে রয়েছে বিস্তর ফারাক।পাহাড়ি মানুষ পাহাড়ের এই বৈরি আবহাওয়ার সাথে খুব পরচিত।তাদের নিত্যদিনের সংগী এই পাহাড় আর পাহাড়ই তাদের প্রান।সারাদিনের বর্ষণ শেষেও তারা রাত্রিতে একত্রিত হবে।মশাল জ্বালিয়ে গান আর নাচে মেতে উঠবে।পাহাড় তাদের আস্থা, পাহাড় তাদের অনেক দিয়েছে তাই পাহাড়ের সাথেই তাদের ভালোবাসা।

এ পাড়ার সবাই রাত্রে মিলিত হয় লামা পাহাড়ের নীচে।লামা আর দাম পাহাড় দুইটি পাশাপাশি।আশেপাশের প্রায় দুইশত পাহাড় থেকে বড় এই দুইটি পাহাড়।লামা আর দাম পাহাড় নিয়ে লোকমুখে একটি গল্প প্রচলিত আছে, দাম হলো লামা পাহাড়ের কন্যা।আগে দাম পাহাড় ছিলনা।একবার পাহাড়ি ঝড়ের সময় সবাই এই পাড়া ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছিল।সেখান থেকে ফিরেই তারা এই নতুন পাহাড়টি দেখতে পায়।আর সেদিনই লামা পাহাড়ের যে মালিক ছিল তার একটি কন্যা সন্তান হয় তাই তার নামের সাথ মিল করেই এই পাহাড়টির নাম রাখা হয় দাম পাহাড়।দাম পাহাড়কে অনেকেই ভাগ্যদেবী মানে, দামের পূজাও করে।

আজকেও লামা পাহাড়ের নীচে এই পাড়ার সবাই একত্রিত হয়েছে।মেয়েদের একটি দল পাহাড়ি নৃত্যে মাতিয়ে রেখেছে সবাইকে।আর ছেলেদের একটি দল হাতের তৈরী কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাইছে।পাহাড়ি গান।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই গানের মানে বুঝা অসাধ্য।বয়স্ক ছেলেরা একপাশে জট বেধে আছে।পাহাড়ের বিভিন্ন লতাপাতার মিশ্রনে তৈরী এক প্রকার নেশা জাতীয় পানীয় সেবন করছে তারা।বয়স্কা মহিলারা বাশ বা কাঠের তৈরী এক বিশেষ হুক্কা জাতীয় যন্ত্রের মধ্যে তামাক ভরে তাতে আগুন লাগিয়ে টানছে।এই আনন্দ ক্ষণিকের। রাতের আধার কেটে গেলেই আবার দুনিয়ার কর্মব্যস্ততায় ছড়িয়ে যাবে সবাই।সারাদিনের আহার গুছানোর কাজ।পেট বাচানোর কাজ।

এতো কিছুর ভীরেও চোখ এড়িয়ে যায়নি আরুর নিস্তব্ধতার।দাম পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই আরুদের ঘর।দাম এর বংশধর দের কোন এক প্রজন্মের মেয়ে সে।লম্বা ছিপছিপে দেহ আর কাজল কালো চোখের আরুকে একবার দেখলে আর ভুলার উপায় নেই কারুর।অনেকেই তাকে দাম বলেও ডাকে।বিশেষত বয়স্কা মহিলারা তার চেহারার সাথে দামের চেহারা মিল আছে বলে দাবী করে।যদিও এদের কেউই নিজের চোখে দাম কে দেখেনি কখনো।নৃত্যদলের অধিকারিণী সে।আজ তাকে নৃত্যদলের সাথেও দেখা যাচ্ছেনা।এক কোনায় বয়স্ক মহিলাদের সাথে চুপ করে বসে আছে সে।কয়েকবার জোরজবরদস্তি করেও তাকে আজ নৃত্যে নামানো যায়নি।সবার নজরে ফাকি দিতে পারলেও রুদ্রর নজর এড়াতে পারেনি সে।

রুদ্র গায়ক দলের।প্রতিদিনই রুদ্রর গানের সাথে তাল মিলিয়ে নেচে যায় আরু।আজ আরু নৃত্যে নেই তাই রুদ্রও গাইছে বেদনার সুরে।অথচ আজ বিকেলের আবহাওয়া তাকে নিশ্চয়ই রোমান্টিক সুর দিয়েছিল।সারাদিনের বৃষ্টির পর বিকেলের চিকিচিকে রোদে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সে হয়তো রোমান্টিক কোন সুর বেধেছিল মনে মনে যা আরুর কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে নিমিষেই বেদনার সুরে বদলে গেছে।গান গাওয়ার সময় এক দৃষ্টিতে সে আরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে আজ।কয়েকবার আরুও বিষয়টি লক্ষ্য করেছে কিন্তু বারবারই এড়িয়ে যাচ্ছে বিষয়টা।গানের আর নাচের আসর ভেংগে গেছে। সবাই যার যার ঘরে চলে গেছে।

সারাদিনই ঘরে বসে কাটিয়েছে আরু।এখন তার ঘরেও মন বসছেনা।ইচ্ছে হচ্ছে বাইরে গিয়ে এ পাহাড় ও পাহাড় ঘুরে বেড়ায়।বারান্দা গিয়ে বসে আছে সে।আকাশে মেঘ কেটে গেছে এখন চাঁদ দেখা যাচ্ছে।সারাদিনের এমন বর্ষণের পর এমন চাঁদনী রাত ভাবাই যায়না।চাদের আবছা আলোতে দুরের পাহাড়গুলো আরো মায়াবী হয়ে উঠেছে।আরুর মা বার কয়েক ডাকাডাকি করে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেই শুয়ে পরেছে।এদিকে আঠারো বছরের আরু একা বারান্দায় বসে দুরের কোন পাহাড়ে হারিয়ে যেতে চাইছে।

চুপিসারে বারান্দার কাছে এসে ফিস ফিস করে আরু আরু বলে ডাকছে রুদ্র।রুদ্রর কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছে আরু।রোজই এই গলায় গান শুনে সে।নেশাভরা কন্ঠ তার।এই গলায় গান শুনলে সেই কন্ঠের নেশায় পরতে যে কেউই বাধ্য।রুদ্রর ডাকে সাড়া দিলো আরু।খুব আবেগ জড়ানো কন্ঠ নিয়ে রুদ্র আরুকে জিজ্ঞেস করছে, "এমনও রাতে একলা ঘরে মন বসছিলনা চলোনা দুজন কিছুটা সময় লেকের ধারে চাঁদ পাহারা দেই! "
আরু হয়তো এমন ডাকের অপেক্ষাতেই ছিল।সব বাধা চোখ বন্ধ করে মেনে নিয়ে এক বাক্যে হ্যা বলে রুদ্রর হাত ধরে বেরিয়ে পরলো সে।
পাহাড়ি রাস্তা জনশুন্য এখন।এই দুটি মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই।তবুও খুব সাবধানে চাদের আলোতে বৃষ্টিভেজা পাহাড়ি রাস্তা ধরে এ পাহাড় ও পাহাড় ঘুরে লেকের ধারে পৌঁছেছে তারা দুজন।সাক্ষী কেবল এই নিস্তব্ধ রাত্রি,রাত্রের কিছু নেশাচর প্রাণী আর দূর আকাশের একা চাঁদ।

এই লেকটার চারিদিকে পাহাড় মাঝখানে বেশ বড় একটি লেক।ভাবাই যায়না পাহাড়ের উপরে এমন লেক থাকতে পারে।ওদের পাড়ায় লোকবসতির সুত্রপাত এই লেকের জন্যই।লেকের পানিতে চাদের প্রতিফলিত ছবি যেনো স্বর্গ দেখার মতো সৌন্দর্য।লেকের বহমান পানি কোথাও ঝর্না হয়ে ঝরে যাচ্ছে।স্রষ্টার এমন অপুরুপ সৌন্দর্য আর কোথাও মেলা ভার।
এর আগেও আরুর সাথে কথা বলেছে আরু।কিন্তু আজ রাতে যেনো সবকিছুই গুলিয়ে যাচ্ছে।আরু কিন্তু মোটেও এসব নিয়ে চিন্তা করছেনা।মনের সব কথা বলে যাচ্ছে সে।সারাদিনে একাকী কারো ডাকের অপেক্ষার কথাও বলে দিয়েছে সে।রুদ্র নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।আরুর কথা শুনে যাচ্ছে সে।কথা বলতে বলতে হঠাৎই আরু জিজ্ঞেস করলো,
-চাঁদ পাহারা দেয়া শেষ হলো?
-না, এ চাঁদ আমি সারা জীবন পাহাড়া দিতে চাই।আমার জীবনের শেষ সময় অব্দি আমার সমস্ত কিছু দিয়ে হলেও আমি এই চাঁদ পাহারা দিবো।এই চাঁদ শুধুই আমার।
এমন উওরে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো আরু তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কাল আবার দেখা হবে বলে উঠে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো সে।

আজ সকালে অবশ্য গতকালের মতো মেঘলা আকাশ নেই।সবাই কাজে বের হয়েছে।এখানে সবাই কাজ করে।পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে দায়ীত্ব তুলে নেয় নিজের কাধে।শহর থেকে অনেক দূরে এখানে আসার জন্য পায়ে হেটে আসা ছাড়া কোন উপায় নেই।শহর থেকে এখানে কেবল জামাকাপড় আর টাকাটাই পৌছেছে।সভ্যতার আলো যেনো শহরেই আটকে গেছে হেটে আসার ভয়ে।তাইতো ছোট ছেলেমেয়েদেরও স্কুল কলেজের বালাই নেই।হাতের কাজে বেশ পটু এখানকার মেয়েরা। আর ছেলেরা কেউ কেউ সেগুলো নিয়ে যায় শহরের বাজারে।জীবন আর জীবিকা এখানে এখনও হিসেব কষে হয়না।

আরু সারাদিন অপেক্ষা করেছে কখন আবার রাত নামবে এ ধারায়।আজ সে অনেক উৎফুল্ল। নিজেই নৃত্য দলের দায়ীত্ব নিয়েছে।রুদ্রও গান গাইছে।দুজনেই অপেক্ষা করছে রাত গভীর হওয়ার।দুনিয়ার লোকচক্ষুর আড়ালে একাকী মিলনের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.