![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
হাজারটা আয়োজনে সকালের শুরু।মুয়াজ্জিনের আযান, ঘন কালো আঁধার কেটে আলোর হাতছানি, পাখিদের কিচিরমিচির, নিস্তব্ধ প্রকৃতি, সকালের ঘ্রান, বাতাসে মিশে থাকা সতেজতা, কৃষাণের মাঠে ছুটে চলা, শ্রমিকের কাজের সন্ধান, ঘট ঘট করে ওঠা তাঁতের শব্দ, জেলেদের ব্যাস্ততা, সবজিওয়ালার ভ্যান, দোকানিদের তাড়াহুড়ো, একটি দুটি করে বাড়তে থাকা হাজার মানুষের আহ্বান। অথচ এতো কিছুর ভীরেও কারো কারো কাছে সকালের মানে কেবল, আর পাঁচটা দিনেরই শুরু, আরো একটি কর্মদিবসের শুরু।
কে জানতো আজকের সকালটা রুদ্রর জীবনের আর পাঁচটা সকালের থেকে ভিন্ন হবে। রুদ্রও কখনো ভাবেনি এমন। জীবনের ৩৩ টা বসন্ত পারি দিয়েছে সে। গত ছয় বছরে মেশিনের কাছাকাছি চলে গিয়েছে তার অবস্থান। কাজ ছাড়া আর কোনকিছুর যোগসূত্র নেই তার জীবনে। কতবার কত আত্মীয়ের কত চেষ্টা চলেছে রুদ্রর জীবনে অন্যকিছুর যোগসূত্র তৈরীতে, সবই গেছে বিফলে। পরিশ্রমের ফল সে পেয়েছে চাকরীর শুরুতেই। ২৭ বছর বয়সে জায়গা করে নিয়েছে নিজের পছন্দের যায়গা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় পড়াশুনা করেছে সে। গণিতের কারসাজি মাথায় ঘুরাফেরা করে সবসময়। সুনিপুণ হিসেব নিকেষে চলে জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ। শুধু পড়াশুনা নয় বাস্তব জীবনেই তার রয়েছে হাজারো অভিজ্ঞতা। প্রথম দেখাতেই একটা স্কেচ তৈরী করে ফেলতে পারে কারোর চরত্রের যেটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মিলে যায়।
এই চাকরীটা তার খুব শখের জায়গা। সারা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজকারবার। নানান জায়গায় ভ্রমন। পুরাতন জিনিসের মাঝে নতুনের যোগসূত্র তৈরী। আবিষ্কারের নেশায় মেতে থাকা সবসময়। খুব স্বল্প সময়েই অফিসের মহাপরিচালক এর নজরে সে। এর আগে অনেকবার একা একাই অনেক নিদর্শন গবেষণার কাজে গিয়েছে সে। আজকের সকালটা ভিন্নভাবে শুরু হলো তার। অফিসে গিয়েই জানতে পারলো নতুন একটি রাজবাড়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে। পাবনার সাথিয়া থানায় ইছামতী নদীর ধার ঘেঁষে। একটা পুরাতন শ্মশানঘাটের পাশে হঠাৎ দেখা গেছে এই রাজাবাড়ি। সেখানে যেতে হবে তাকে। পরিবর্তনটা হলো রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের একটা মেয়ে আসবে তাকে সহযোগীতা করতে।
আরুর নাম শুনেই মোটামুটি একটা ধারনা তৈরী করে ফেললো রুদ্র। আরুও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করেছে।পাশ করেই চাকরী। এটা তার প্রথম বাইরে কাজ করার অভিজ্ঞতা। মূলত আরুকে রুদ্রর সাথে রেখে কাজ শিখানোর জন্যই এই প্রজেক্টে আরুকে রুদ্রর সাথে পাঠানো হচ্ছে। একটু কালো বা শ্যমলা বলা যেতে পারে আরুর গায়ের রঙ। গোলাকার মুখে সবসময় একটা হাসি। যে হাসিতে ঘায়েল হয়েছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফিস সহকারীরাও।
পরদিন সন্ধ্যার আগেই সাঁথিয়া পৌঁছে গেলো রুদ্র। কোথাও কোন সময় নষ্ট না করেই সরাসরি জমিদার বাড়ির গেটে চলে গেলো রুদ্র। ইতিমধ্যে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। একটা প্রাথমিক টিম দুই দিন ধরে কাজ করছে। বাড়ির ভিতরে বেশ কয়েকটা রুম এখনো বেশ পরিষ্কার। এখনো বসতের উপযোগী। রুদ্র যাওয়ার পরেই ওই টিমের একজন এসে কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট দিয়ে গেলো। আরু এসে পৌঁছেছে। যদিও পরদিন সকালে আসার কথা ছিল তার।
আজকের রাতটা বাড়ির ভিতরে থাকতে হবে। সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে তারা। আলোর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সরকারী কাজ পরদিন সকালে করলেও চলে তবে রুদ্রর নতুন নতুন এই নমুনা যেগুলো আগের যুগে ব্যাবহৃত হয়েছে সেগুলো দেখার নেশা তাকে আর অপেক্ষা করাতে পারছেনা। আরুও প্রস্তুত।
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই ফোনের নেটওয়ার্ক চলে গেলো। এটা স্বাভাবিকভাবেই হওয়ার কথা ছিল সমতল থেকে নীচের দিকে ফোনের নেটওয়ার্ক তেমন থাকেনা বললেই চলে। এতে মোটেও অবাক হয়নি রুদ্র এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে।
পূরাতন জমিদার বাড়ি। মেইন দরজা দিয়ে ঢুকেই বসার ঘড়। সারা ঘড়ে পুরাতন আসবাবপত্রের কিছুটা এখনো অবশিষ্ট আছে। বসার ঘড় থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে দোতালায়। সিঁড়ির পাশে অনেক পূরাতন তলোয়ার ঝুলানো আছে। এগুলো নিয়েই কাজ করবে রুদ্র। কোনটা কত বছর পুরোনো। কার হাতে চলতো সে অশ্বি। নীচতলার ঘরেই রাত কেটে যাবে। একটা একটা করে সমস্ত নমুনা গুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা হবে। প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরী এরপর আবার আরেকদলের হাতে সেগুলো যাচাই হবে তবেই না একটা পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে কার দখলে ছিল এই জমিদারবাড়ি আর কার আমলে ছিল তার জমিদারী।
মধ্যরাতে ঘুম ঘুম ভাব রুদ্র। টুকটাক কথা হয়েছে আরুর সাথে। একটা পরিষ্কার সাদা জামা পরেছে আরু। জমিদারবাড়ির সিঁড়ির দেয়ালে টানানো একটা ছবিতে সাদা জামা পরা একটা মেয়ের স্কেচ আঁকানো আছে। ওই মেয়েটার চোখের সাথে আরুর চোখের কিছুটা মিল আছে। ঘুমঘুম চোখে গুলিয়ে ফেলছে রুদ্র। ছবির মানুষটি সামনে নাকি সামনের মানুষটি ছবিতে।
কিছুক্ষণের কর্মবিরতি চলছে এখন। এতোক্ষণ রুদ্রর কথার রেকর্ড রাখছিল আরু। কিছিটা লিখে কিছুটা টেপরেকর্ডে। পরে এগুলো নিয়ে আরো কাজ করা হবে। আপদত চা চলছে। সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ আছে এখন। চা আর কিছু শুকনো খাবার নিয়ে প্রবেশ করেছিল তারা। পুরাতন জমিদারবাড়িতে মাঝ রাত্রিতে চা ভাবাই যায়না।
এমন সময় গান গেয়ে উঠলো আরু। কিছু মেয়ের জন্মই হয়েছে গানের জন্য। যাদের গলার সুর পুরুষ হৃদয়ে ঝড় তুলে। পুলকিত করে মন। নেশায় জড়ানো সে কণ্ঠ আরুর। আলো আধাঁরের আবছা খেলায় আরো মায়াবী হয়ে উঠছে আরু। নিজেকে সামলাতে ব্যাস্ত রুদ্র। গানের শব্দ আর চোখের চাহনী অশ্বিঘাতের ন্যায় ব্যাবচ্ছেদ করে চলেছে তার হৃদয়।
আবারো কাজে মন দিয়েছে তারা। নীচের ঘড় ছেড়ে এবার উপরের ঘরে। এখানে অনেক গুলো রুম। আরো বেশী পরিমানে নমুনা। মনের মধ্যে বেশ রোমাঞ্চকর অবস্থা রুদ্রর এতো এতো নমুনা নিয়ে কাজ। এতো ইতিহাস এ জাতির। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ডান দিকের দুইটা ঘড় পরেই একটা ফাকা ঘড়। বেশ বড় সে ঘড়। মাঝখানে গোলাকার একটু উঁচু জায়গা। চারপাশের দেয়ালে অনেক ছবি আঁকা। বেশিরভাগই মেয়েদের ছবি। নাঁচের পোষাক বুঝা যাচ্ছে। এ ঘড়েই জমিদারের মনোরঞ্জন হতো এটা বুঝার আর বাকি থাকেনা।
প্রায় শেষ রাতের দিক। আজকে আর কাজ করা হবেনা। রুদ্র একা হলে অবশ্য কাজ থামাতো না। নতুন এই মেয়েটা এতো ধকল নিতে পারবেনা। আরুর জন্যই আজকে কাজের বিরতি। সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে রুদ্র। ঘড়ের মাঝখানটাতে যেখানে একটু উঁচুমতো জায়গা সেখানে দাঁড়িয়ে আরু।
নাঁচতে শুরু করেছে আরু। দেয়ালে টানানো ছবির ন্যায় নাকে লম্বা নত, হাতে পুরাতোন সব বালা। গলায় হার, কানে ঝুমকো। কোমড়ে পায়ে সমস্ত অংগে অলংকার। অবিকল ছবির সেই মেয়েটা। রুদ্র বারবার চমকে যাচ্ছে আরুকে দেখে। এমন নাঁচ সে কখনো কোথাও দেখেনি। মনের আন্দদে নাঁচছে আরু। কাউকে দেখাতে নয়, কারো অনুরোধে নয় শুধু নিজের খুশিতে নিজের মনোরঞ্জনে। হাসিমুখে নেঁচেই যাচ্ছে আরু। পায়ের ঘুঙুর এর শব্দ মাতাল করে দিচ্ছে রুদ্র কে। ৩৩ বসন্ত পরে কাজ ছাড়াও অন্যকিছুর যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে রুদ্রর জীবনে।
সকাল হয়ে গেছে। বাইরে বের হবে ওরা। রুদ্র একাই মেইন ফটকের সামনে চলে এসেছে। আজকের সকালটাও অন্যরকম তার কাছে।পরিষ্কার সকাল। আরু সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বের হবে। মেইন ফটকে দাঁড়াতেই সে সামনে রিক্সা থেকে একটা মেয়েকে নামতে দেখলো। মেয়েটা রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
-আপনি নিশ্চয়ই রুদ্র। আমি আরু। গতকাল থেকে আপনার ফোনে ট্রাই করছিলাম কিন্তু আউট অফ নেটওয়ার্ক। আসলে আমি জানতে পেরেছিলাম আপনি রাত্রেই কাজে লেগে যাবেন তাই রিকোয়েস্ট করতে চেয়েছিলাম যে সকাল থেকে শুরুর জন্য। থাক সে কথা।
রুদ্র একবার আরুর দিকে তাকাচ্ছে আর একবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। আরু দিনের আলোর মতো সত্য নাকি রাতের আধাঁর।
গল্পঃ রুদ্রর ভূতোবাস
-রাজ, ৩০/০৫/১৭
৩১ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৪৭
শুন্য বাইট বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:৫১
চাঁদগাজী বলেছেন:
মোটামুটি