![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
তখনো আরুর টিউমার এর কথা আমি জানতাম না। সবসময় হাসি খুশী থাকা মেয়েটা মনের মধ্যে এতোটা কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে এতোগুলো দিন তা আরুর এতোটা কাছে থেকেও আমি কখনো বুঝতে পারিনি। আরুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। তখন থেকেই এই মেয়েটাকে কেনো জানি একটু আল্লাদি মনে হয়েছিল। একটু বেশী চঞ্চল আর অনেক আদরের। সবার খেয়াল রাখতে পারে এমন। কাছের মানুষদের খুব যত্ন সে করতো। আরুকে দেখলেই কেমন জানি একটা ভালোলাগা কাজ করতো।
একদিন ওকে বলেছিলাম- "তোমার হাজবেন্ড অনেক সৌভাগ্যবান হবে।"
জবাবে বলেছিল - "তো তুমিই হয়ে যাও সেই সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি।"
মজার ছলে বলা আরুর ওইদিনের কথা আমি কখনো ভুলতে পারিনি। এরপর আরু নিজে থেকে অনেকবার নিষেধ করেছিল তার সাথে কোন প্রকার রিলেশানে না যেতে। কিন্তু যাকে দেখে পৃথিবীর সবকিছু থেমে যেতো, যার জন্য আরো একবার মানব জনমের সাধ জাগতো, যার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার জীবনের সেরা মুহুর্ত তাকে আমি হারাই কি করে। আমার বারংবার চেষ্টায় আরু একদিন রাজিও হয়ে গিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো আমাদের দুজনের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। একসাথে ক্লাসে যাওয়া, ক্লাস ফাকি দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসের কোনায় কোনায় ঘুরে বেড়ানো। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। আর আরুর কথা। টুকটাক গল্প লিখতাম আমি। আর আমার গল্পের কথা ছিল আরু। আমার গল্পের শব্দ সৃষ্টি করতো তার কথা। বৃষ্টিতে ভিজে ক্যাম্পাসের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি। ভেজা শরীরে ক্লাসে গিয়ে ঠান্ডা লাগানো, আবার সেই বাহানা ধরে পরের এক সপ্তাহ ক্লাসে না আসা। রাতে হল থেকে চুরি করে বের হওয়া। শহরের এ গলি ও গলি ঘুরে বেরানো। একসাথে বসে জীবনের প্রতিটা মুহুর্তই শেষমুহুর্ত ভেবে দিন কাটাতাম আমরা।
কখনো বিয়ে করবোনা বলে ঠিক করে আরু। বিয়ে করলে অনেক দায়ীত্ব। রোজ বাজার করা, চাকরী করা, সংসার এত্ত এত্ত ঝামেলা। এতো কিছুর ভীরে একদিন আমাদের ভালোবাসাই হারিয়ে যাবে।
আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতো - "আচ্ছা রুদ্র, আমরা কি লিভ টুগেদার করতে পারিনা?"
এইসবই ওর মজা ছিল। আসলেতো আরুও চাইতো আমাদের বিয়ে হোক, সংসার হোক অনেক গুলো বাচ্চা হোক। আর তাদের মাঝেই আমাদের ভালোবাসা সারাজীবন বেঁচে থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেই আমরা বিয়ে করি। পরিবারের সবাই আরুকে অনেক পছন্দ করে। করবেই না কেনো। এতো প্রানবন্ত মেয়েকে কেউ পছন্দ না করে থাকতে পারে। ওদের পরিবারের সবার সাথে আমারও একটা ভালো সম্পর্ক হয়।
সরকারী একটা অফিসে চাকরী হয় আমার। অল্প টাকা বেতন পেলেও অনেক বেশী আনন্দে দিন কাটে আমাদের। পরিবারের সবাইকে ছেড়ে, শহর ছেরে দূরের এক গ্রামে বসতি হয় আমাদের। চারপাশে অনেক বড় বড় গাছ আর শুনশান রাস্তা। বাড়ির পাশে নদী।
আরু আমাকে ওর স্বপ্নের কথা বলতো- "শহর থেকে দূরে কোথাও আমাদের সংসার হবে, অনেক ছোট কিন্তু অনেক ভালোবাসার।"
অফিস থেকে ফিরে আরুর দিকে তাকিয়ে আমি সব ভুলে যেতাম। আর সকালে ভেজা চুলে ও যখন নাস্তা বানাতো সে দৃশ্য আমার চোখে সারাদিন ভাসতো।
বিয়ের চার বছর হয়ে গেলেও আমাদের কোন সন্তান হয়না। এ নিয়ে পরিবারের অনেকেই আরুর সাথে কথা বলে আবার কেউ কেউ আমাকে বলে। আমি কয়েকবার ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য বললেও আরু রাজি হয়নি। অবশ্য আমি আরুকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত ছিলাম, ওর মধ্যে ডুবে ছিলাম যে সন্তান এর কথা ভুলেই বসেছিলাম। আমার জীবনে আরুই ছিল সবকিছু। আরু সারাদিন বাসায় একাই থাকতো এটা আমাকে প্রথম ভাবিয়ে তুলে। একজন থাকলে তাকে নিয়ে ওর সময় টা কেটে যাবে।
একদিন আমার এক ডাক্তার বন্ধুকে আমাদের এখানে আসতে বলি। আমার বন্ধুকে সব খুলে বলি আমি। পরদিন বিকেলে আমার বন্ধু ওর হাজবেন্ড আর পিচ্চি একটা বাচ্চা নিয়ে হাজির। আরুর হাতের রান্নার প্রশংসায় আরো দিন দশেক নদীর ধারের এই বাড়িতে থাকার পরিকল্পনা করে ফেলে ওর হাজবেন্ড। রাত্রে নদীর ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। আর তখনই কথাটা উঠায় আমার বন্ধু। আরু এসব নিয়ে একদমই কথা বলতে চাচ্ছিলনা। এবং আমার উপরে চরম আকারে খেপে যায়, ওকে না জানিয়ে এভাবে ডাক্তার ডাকার জন্য। শহরে গিয়ে কয়েকটা টেস্ট না করালে কিছুই বলা যাচ্ছেনা বলে আমার বন্ধু পরদিন বিকেলে বিদায় নেয়।
অগত্যা দশদিনের জন্য শহরে যাওয়া হবেনা। অফিসের এক ঝামেলায় আটকে যাই আমি। দশদিন পরে শহরে যাই আমরা। এতোদিন পর আবার শহরে। চেনা পরিচিত কতকিছু বদলে গেছে। অনেক মানুষের ভীর বেড়েছে। ভালোই হয়েছে আমরা শহর ছেড়েছি। আরুর এক মামার বাসা এখানে। আমরা ওর মামার বাসাতেই উঠবো। বিকেলে একবার ক্যাম্পাসে যাবো। ডাক্তারের এপোয়েনমেন্ট সন্ধ্যায়।
বেসরকারী ক্লিনিক। আরুর হাতে একটা ফাইল। বেশ পুরাতন। আগের কিছু রিপোর্ট এখানে আছে বলে আমার মনে হয়। আমার তখন থেকেই কেমন জানি খটকা লাগে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে তো আমি আরো বেশী অবাক হয়ে যাই। আরু যখন উচ্চমাধ্যমিক পড়ে তখনকার কিছু টেস্ট এগুলো। লিভারে সমস্যা ছিল আরুর। প্রতিনিয়ত চিকিৎসার উপরে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু এতোদিন ধরে আমাকে কিছুই বলেনি সে। আর চিকিৎসাও করেনি। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি, আরু তার অনেক পুরাতন পেশেন্ট। লিভারে সমস্যা ছাড়াও দুইটা টিউমার আছে। ও কখনো মা হতে পারবেনা, আর খুব বেশীদিন পৃথিবীর আলোও দেখতে পারবেনা। এটা অনেক আগেই আরু জানতো। আমি আর কিছু শুনতে পারিনি। এজন্যই আরু কখনো আমার সাথে কোন সম্পর্কে যেতে চায়নি। আর আমাকে বিয়েও করতে চায়নি। অনেক দেরী হয়ে গেছে আমার আরুকে জানতে।
সবকিছু কেমন জানি উলটে পালটে গেলো একটা সন্ধ্যাতেই। রাত্রেই ট্রেনে ফিরে যাবো আমরা। সারারাত আরুকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম। একটা কথাও বলা হয়নি আরুর সাথে। সকালে নেমেই আমি অফিসে আর আরু বাসায় একা। অফিসে মন বসছেনা আমার। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। বাসায় ফিরে নদীর ধারে বসে আছি। পিছনে কখন যে আরু এসে দাঁড়িয়েছে আমি জানিনা।
-রুদ্র, আমি এজন্যই তোমাকে বলতে চাইনি।
-আরু
কেউ কোন কথা বলতে পারছিনা আমরা। শুধু একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি।
আজকে ছয় মাস কেটে গেছে আমরা আবার শহরে এসেছি। ঐদিন রাত্রেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আরুকে আবার চিকিৎসা করাবো। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। পরদিন সকালের ট্রেন ধরেই শহরে এসেছিলাম।
ডাক্তারের সাথে দেখা করে একগাদা টেস্ট। ক্লিনিকে ভর্তি। এতোদিন চিকিৎসা না করানোতে চান্স আরো কমে গিয়েছিল। তবুও আমি আশা ছাড়িনি। আরুর দিকে আমি তাকাতে পারতাম না। আরু সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। একদিন সন্ধ্যায় আরু আমাকে বলছিল - "দেখেছো এতোদিনের স্বপ্ন গুলো থেকে আমরা কত দূরে।"
আমি কিছুই বলতে পারিনি সেদিন। শুধু হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়া আমার আরুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। পরিবারের সাবাই মাঝে মাঝে আরুকে দেখতে আসতো। আমার তখন আরো বেশী ভয় হতো। মৃত্যু অনেক ভয়ংকর। সেখানে কোন সৌন্দর্যতা নাই।
আজকে আমাদের বিয়ের পঁচিশ বছর। আরুর স্বপ্ন থেকে আরু অনেক দূরে। আরু আমার কাছ থেকেও অনেক দূরে। আমার বাসার গেটের সামনেই ওর বসবাস। তবুও আমার থেকে অনেক দূরে। রোজ আমাদের দেখা হয়, আমাদের কথা হয়, আমরা একসাথে নদীর ধার দিয়ে একজন আরেকজনের হাত ধরে হাটি, বরাবরের মতোই আরু অনেক বেশী কথা বলে, আর আমি নীরবে শুনতে থাকি। আজকেও আমরা নদীর ধারে হাটতে যাবো। বর্ষার প্রথম কদম ফুল ফুটেছে আমাদের বাসার পিছে। সে কদম হাতে নিয়ে সাদা পাঞ্জাবী পরে নদীর ধারে যাবো আমি আর আগে থেকেই নীল রঙের শাড়ি পরে সেখানে থাকবে আরু। শাড়ি কিনতে হবে আরুর জন্য। বছর কুড়ি হলো শাড়ি কিনিনা আমি। আজকে আবার আরুর জন্য শাড়ি কিনতে হবে।
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩
পেইন-কিলার বলেছেন: লিখা ভাল হয়েছে, চরিত্র গুলো পরিষ্কার হবার দরকার আছে কিছুটা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:৪৯
নোয়াখাইল্ল্যা বলেছেন: সার্বিকভাবে সুন্দর,তবে শেষঅংশ আরেকটু গুছিয়ে লিখলে আরো সুন্দর হতো মনে হয়