![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাচেলর ছেলে!!! ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rajshahjahan
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে একটা জিনিস বুঝেছি সেটা হলো আমার বাবা-মা, আমাকে চোখে হারায়। আমার বন্ধু হয়ে আমার পাশে থাকা থেকে শুরু করে শুধু আমার সুবিধার জন্য বাবার বেশী বেতনের চাকরী ছেড়ে দেয়া, আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর জন্য মা'য়ের চাকরী ছেড়ে দেয়া এগুলো সব কমন ব্যাপার ছিল। কিন্তু এর থেকেও অনেক বেশী সেক্রিফাইস এই দুইজন মানুষ আমার জন্য করেছে। সকালে স্বামীর জন্য নাস্তা বানানো আর আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া সমান ভাবে সামলেছে আমার মা। আর বাবা অফিসের পরে অবকাশ, আনন্দ আর ঘুরাঘুরি সব কিছুর মধ্যেই কেন জানি আমাকেই খুজে নিতেন।
প্রাইমারী আর হাইস্কুল পড়েছি বাসার পাশে ওয়াই ডাব্লিউ সি এ তে। বাসার পাশে হলেও বাবা অথবা মা কেউ একজন দিয়ে আসতো। আবার নিয়েও আসতো। বাইরের দুনিয়া আমার অজানা থাকবে সেটা নিয়েও প্ল্যান ছিল তাদের। অন্য সব বাচ্চাদের সাথে ক্লাস ফাকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া যেমন এলাউ করতেন আবার ছুটির দিনে বান্ধবীদের বাসায় পিকনিক বা সিনেমাও এলাউ করতেন।
কলেজ পড়েছি সিটি কলেজে। মেয়ে বড় হয়েছে বয়সে, শরীরে আর বাবা-মা'র চিন্তা বড় হবেনা। মাঝে মাঝে বাবা আর বেশীরভাগ সময়ই মা আমার পিছনে লেগেই থাকতো। আমাকে জ্বালাতে নয় বরং আমার সুবিধা দিতে। কলেজ লাইফে কোচিং এ গিয়ে যে কয়েকটা ছেলে বন্ধু হলো তাদের সাথে বাবা-মা দুইজনেরই পরিচয় ছিল। আমার কোথাও যাওয়ার বা রাস্তা দাঁড়িয়ে টং দোকানের চা খাওয়ার নিষেধ ছিলনা। কলেজ শেষ করে ভার্সিটি। পাবলিকে না হয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে প্রাইভেট। আমারতো না পাওয়ার খুদা ছিল বাবা-মা তাতেই খুশী।
এগুলো বলছি একারনে না যে, আমি কতটা সুখী সেটা সবাই দেখুক বা আমার বাবা-মা অনেক করেছে সেটা শো অফ করা। আমি জানি অনেক বাবা-মা এমন করতে চাইলেও ভাগ্যের ফেরে করতে পারেন না। আবার কারো কারো তো ভাগ্যের ফেরে বাবা-মা' ই থাকেনা। বলছি দুটো ঘটনা শেয়ার করার জন্য। আর এই ঘটনা দুটোর সাথে আমার পাস্ট লাইফ জড়িত।
ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি। ক্যাম্পাস ধানমন্ডি সাতাশে। সন্ধ্যায় একটা ল্যাব থাকে শেষ করতে করতে আটটা বেজে যায়। বাবা-মা কেউ একজন এসে নিয়ে যায়। প্রতিদিনের মতো ল্যাব থেকে বের হয়ে বাবা'কে ফোন দেয়ার জন্য ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই দেখি বাবা এর মাঝেই ১৭ বার কল দিয়ে ফেলছে। আমার তো হার্টবিট বেরে গেলো। কল দিলাম সাথে সাথে, আর বাবা হাসতে হাসতে, "আমি তোর ক্যাম্পাসের নীচে আসবো তবে একটু দেরী হবে তুই অপেক্ষা করিস একসাথে হাটতে হাটতে বাসায় যাবো।" বাবার ডায়াবেটিস আছে। এজন্য হাটাহাটি করে রেগুলার আর সেখানে বেশ কজন বন্ধুও আছে তার। তাদের সাথে বসলে ভালোই আড্ডা দেয় ইদানীং। আমি একা বসে আছি ক্যান্টিনে। প্রায় নয়টার দিকে বাবা আসলো। এসেই রাজ্য জয়করা একটা হাসি দিয়ে দিলো। আমার বাবা আমার আইডল। একসাথে হাটা শুরু করলাম। ধানমন্ডি সাতাশে সম্পানের পিছন দিক দিয়ে ৩২ হয়ে কলাবাগান আর তারপর কলাবাগানের ভেতর দিয়ে ক্রিসেন্ট রোড।
সম্পানের সামনেই দেখলাম একটা পুলিশের গাড়ি। লেকে ঢুকার যে গেট তার সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলো আমার দিকে কেমনে যেনো তাকালো। আমার ঠিক সুবিধার মনে হলোনা। আমি বাবার হাত জোড়ে চাপ দিয়ে আঁকড়ে ধরলাম। ইভটিজিং করা বা বদ নজরে তাকানো অনেক ছেলে দেখেছি কিন্তু এরা সেরকম না। এদের চোখ অন্য কিছু চাচ্ছে। এদের যে কেউ এখন আমার শরীরের সমস্ত বর্ণনা দিতে পারবে। আমার বাবা আর আমি লেকের ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম ভিতরে বেশ কয়েকজন লোক এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছে ভাব ধরে আছে হাটার, বা কথা বলার, বা অন্য কোন কাজের কিন্তু এরা কেউই আসলে তা নয় যা এরা হওয়ার বা দেখানোর চেষ্টা করছে। সামনে আগাতেই দেখি দুইজন মহিলা ছোট ছোট তিন-চারটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাথায় লালা রঙের ফিতা দিয়ে বেনী করা, ঠোটে কমদামী লাল লিপিস্টিক, মুখে পাউডার দিয়ে এসেছে বুঝা যাচ্ছে। একজন পুলিশকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা গুজে নিয়ে লেক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ওটা টাকা হবে নিশ্চিত অনুমান করতে পারছি। আমার বাবা এই পথটুকু একটা কথাও বলেনি আমার সাথে। আমি একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলাম ওই মানুষগুলো ধীরে ধীরে ওই মহিলা দুইজনের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। বাবা দ্রুত পা ফেলছে। বাবার তো ডায়াবেটিস। বাবার আদর্শ দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে চলছে, চলছে বাবার লজ্জা, মান-সম্মান, সামাজিক মুল্যবোধ আর দেশপ্রেম। বাবার ডায়াবেটিস দ্রুত পা ফেলে শরীর থেকে চলে যাচ্ছে খুব ধীরে ধীরে কিন্তু ঠিক পা ফেলার গতিতে জার্মটা প্রবেশ করছে আমাদের সমাজে আর দেশে।
পরে জেনেছিলাম এখানে ১০০ টাকায় রোজ ধর্ষিত হয় আমার দেশ।
যাহোক বাবা'র সাথে আমি কথা না বলে থাকতে পারিনা। তাই বাবা'র সাথে জোড় করে কথা বলা শুরু করি এখন বাবা হয়তো সেসব কথা ভুলেই গেছে। পরদিনই বাবা বাসায় ঘরের মধ্যে দৌড়ানো যায় এমন মেশিন কিনে এনেছিলো। এরপর থেকে আমিও কখনো ওই রাস্তা হয়ে আসিনি। আমি দেখলাম, বাবাও মেশিনের উপরে দৌড়াচ্ছে আর আমিও সাথে আমার দেশটাও।
সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেছি তখন। বাবা-মা ভার্সিটিতে আসা কমায়া দিছে। আমিও এর ফলাফল নেয়া শুরু করেছি। ইচ্ছে হলেই বন্ধ বান্ধব মিলে ঘুরতে যাই। বাবাকে একটা কল করে শুধু বলে দেই যে লেট হবে। ব্যাস দায়ীত্ব শেষ।
ক্লাস শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আর তখনই সংসদ ভবনে যাওয়ার প্ল্যান হলো সবাই মিলে। গেলাম সংসদ ভবন। পশ্চিম পাশে ঢুকেই দেখলাম রাস্তার পাশে ওইদিনের মতো কয়েকজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। এদের দুই একজনকে দেখছি বোরকা পরা। কিন্তু এরা কেমন যেনো অশ্লীল ভাষায় কথা বলছে। সিগারেট খাচ্ছে কেউ কেউ। আর এদেরকে ঘিরে কিছু লোকের অভিনয় মেলা। বৃদ্ধ আংকেলদেরও দেখলাম দৌড়ানোর ভান করে মহিলাদের কানের কাছে ফিশফিশ করে কথা বলছে। আবার দৌড় আবার কথা বলার চেষ্টা। কত রকমের মানুষ এখানে কত রকমের সব চিন্তা মানুষের। পূর্ব পাশে গিয়েও একই অবস্থা।
আমার সাথে থাকা ছেলে বন্ধুগুলো বেশ দায়ীত্ব নিয়ে আমাকে ঘুরায়া নিয়ে আসলো। আমিও দেখলাম কতটা দায়ীত্ব নিয়ে আমার দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে সংসদের এপার থেকে ওপারে।
কিছু গল্পের কোন শেষ হয়না। আসলে আমরা শেষটা লিখতে চাইনা। আমারা শেষ হতেও চাইনা কিন্তু শেষ হয়ে যাই।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: শিরোনামে ও ভিতরে দেশ ধর্ষিত হয় না লিখে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করাই ভাল ছিল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৫৯
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ভাল-মন্দ মানুষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে।
তাই বলে কথায় কথায় নিজদেশকে গালমন্দ করলে তারে থাব্রাইতে মনচায়।